বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমী উদ্বোধনীর পর ১৬ দিনব্যাপী পদকের লড়াই। সাড়ে ১০ হাজার অ্যাথলেটের মিলনমেলায় দেখা মিলল রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলা, হাসি-কান্না, চীনকে ছাপিয়ে মার্কিনিদের দাপট, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ চার পদকজয়ী ফরাসি লিও মার্শের দাপট, সর্বশেষ নয়নকাড়া সমাপনী অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে মনে রাখার মতো এক অলিম্পিক বিশ্বকে উপহার দিল প্যারিস। পরশু স্তাদ দ্য ফ্রান্সে মনোমুগ্ধকর সমাপনী অনুষ্ঠানে পর্দা নেমেছে প্যারিস অলিম্পিকের। একই সঙ্গে স্বাগত জানানো হয়েছে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিককে।
প্রতিটি অলিম্পিকেই আয়োজক শহরের প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জাঁকালো করতে। সেই তুলনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকে না তেমন জৌলুশ। তবে প্যারিস অলিম্পিকের শুরু ও শেষে তেমনটি বলা যাচ্ছে না। কারণ সমাপনীতেও নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে ফ্রান্স। নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি পরবর্তী অলিম্পিকের আয়োজক লস অ্যাঞ্জেলেস তথা আমেরিকার সংস্কৃতিও তুলে ধরা হলো। যেখানে মূল ভূমিকায় ছিলেন হলিউড অভিনেতা টম ক্রুজ। যার ‘স্টান্ট’ মুগ্ধতা ছড়িয়েছে দর্শকদের মাঝে।
প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধন হয়েছিল প্যারিসজুড়ে। সিন নদী থেকে শুরু করে আইফেল টাওয়ার, সর্বত্র ছিল পারফরমারদের দখলে। সমাপ্তি অনুষ্ঠান পুরোটাই হয়েছে ইউরোপের অন্যতম বড় স্টেডিয়াম স্তাদ দ্য ফ্রান্সে। সমাপনীতে টম ক্রুজের আগমনটা ছিল চোখে পড়ার মতো। পায়ে হেঁটে নয়, ক্রুজ মঞ্চে এলেন স্তাদ দ্য ফ্রান্সের ছাদ থেকে ঝাঁপ মেরে, অনেকটা ‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজের ‘ফলআউট’-এর মতো। মঞ্চে তাকে স্বাগত জানান লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস। মার্কিন অ্যাথলেট বাইলসের হাত থেকে পতাকা নিয়ে মোটরবাইকে চেপে স্টেডিয়াম ঘুরে বেরিয়ে যান ক্রুজ।
শুধু ক্রুজ নন, সমাপনী অনুষ্ঠান রাঙিয়েছেন আরও অনেকে। এর মধ্যে ছিল ‘গোল্ডেন ভয়েজার’। অলিম্পিকের ‘রিং’গুলোকে শূন্যে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাঁচটি ‘রিং’ পাঁচটি মহাদেশের প্রতীক। সেই পারফরম্যান্স চলাকালীনই ফ্রান্সের পিয়ানিস্ট তথা অপেরা গায়ক বেঞ্জামিন বার্নহাইম গাইলেন ‘হিম টু অ্যাপোলো’।
ফ্রান্সের রক ব্যান্ড ‘ফিনিক্স’ উপহার দিল একের পর এক গান। ড্রাম আর ইলেকট্রিক গিটারের মূর্ছনায় মুগ্ধ হলেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৭০ হাজার দর্শক। ফিনিক্স-এর সঙ্গে গাইলেন আরেক ফরাসি শিল্পী কাভিনস্কি। গেয়েছেন রক ব্যান্ড ‘রেড হট চিলি পিপার্স’। সব শেষে অলিম্পিকের মশাল নিয়ে হাজির হন ফ্রান্সের চার সোনাজয়ী সাঁতারু লিও মার্শ। এরপর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখ ঘোষণা করেন প্যারিস অলিম্পিকের সমাপ্তি।
প্যারিস অলিম্পিকে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে টানা চার আসরে পদক তালিকায় সবার ওপরে মার্কিনিরা। এবার তারা জিতেছে ৪০ সোনা, ৪৪ রুপা ও ৪২ ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ১২৬টি পদক। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীন পেয়েছে ৪০টি সোনা, ২৭টি রুপা, ২৪টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৯১টি পদক। ২০টি সোনা, ১২টি রুপা, ১৩টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৪৫টি পদক নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে জাপান। স্বাগতিক ফ্রান্স ১৬টি সোনা, ২৬টি রুপা, ২২টি ব্রোঞ্জসহ ৬৪টি পদক নিয়ে তালিকায় আছে পঞ্চম স্থানে।
দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে পদক জয়ের স্বাদ পেয়েছে কেবল পাকিস্তান ও ভারত। বর্শা নিক্ষেপে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে পাকিস্তানকে স্বর্ণ উপহার দেন আরশাদ নাদিম। তবে এবার সোনা জয়ের স্বাদ পায়নি ভারত। তারা জিতেছে ১টি রুপা ও ৫টি ব্রোঞ্জ।
বাংলাদেশের প্যারিস অলিম্পিক অভিযান শেষ হয় অনেক আগেই। সব ইভেন্টে প্রাথমিক লেভেলেই বাদ পড়েন শুটার রবিউল হাসান, আর্চার মোহাম্মদ সাগর ইসলাম, অ্যাথলেট ইমরানুর রহমান ও দুই সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া খাতুন। অলিম্পিকের মতো বৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞে কোনো সাফল্য না পেলেও বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড়ের পর বোমা ফাটান দেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর। তার পেটের পেশি ছিঁড়ে গিয়েছিল আগেই, কিন্তু ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের ‘চাপে’ তথ্য গোপন করে দৌড়াতে হয়েছে তাকে।