কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে হলে মনে তাড়না থাকতে হয়। তাহলে কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। ভুটান সফরে নিজেদের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের ফুটবলারদের অন্তত তাড়নার অভাব নেই। তাই তো ৮ বছর আগে যে চাংলিমিথাং স্টেডিয়াম নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো বাংলাদেশের ফুটবলকে, সেই মাঠে ফের খেলতে নেমে জয় তুলে নিতে কষ্ট হয়নি হাভিয়ের কাবরেরার দলের।
গত বৃহস্পতিবার সফরের প্রথম প্রীতি ম্যাচে জয় পাওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য এবার দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচেও পূর্ণ তিন পয়েন্ট তুলে নেওয়া। দল এতটাই উদগ্রীব যে, অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া প্রীতি ম্যাচটিকেও ফাইনাল হিসেবে ঘোষণা দিতে দ্বিতীয়বার ভাবছেন না।
থিম্পুর চাংলিমিথাংয়ে আজ রবিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবেন জামাল-তপুরা। প্রথম প্রীতি ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতেছিল হাভিয়ের কাবরেরার দল। এই ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য আরও ভালো ফল করা। গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে জামাল তো এভাবেই বলেছেন, ‘আমরা আমাদের মিশনের ৫০ শতাংশ শেষ করতে পেরেছি। এখন আরও ৫০ শতাংশ বাকি আছে। আগামীকাল (আজ) দলের জন্য ফাইনাল। কারণ আমরা প্রথম জিতেছি এবং আরও তিন পয়েন্ট নিতে চাই। তাই লক্ষ্য তিন পয়েন্ট। সেটা করতে পারলে বাংলাদেশে আমরা খুশি মনে ফিরতে পারব।’
এই মুহূর্তে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১৮৪তম) থেকে দুই ধাপ এগিয়ে থাকা দল ভুটান (১৮২)। তবে শক্তিতে তারা যে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে, এটা বলার উপায় নেই। পরিসংখ্যানই আসলে বলে দেয় দুই দলের ব্যবধান। এখন পর্যন্ত ১৫ মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশের জয় ১২টিতেই। দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে, ভুটান জিতেছে মাত্র একটি। ভুটানের সেই একটি জয়ই বাংলাদেশের ফুটবলে অন্ধকার নামিয়ে দিয়েছিল। ২০১৬ সালে এশিয়ান কাপের প্লে অব ম্যাচটি হারার পর প্রায় ২ বছর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। তীব্র হতাশায় ডুবে ছিল লাল-সবুজের ফুটবল।
পরে সেই হতাশা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়েছে দল। সেই হারের পর চলতি সফরের প্রথম প্রীতি ম্যাচটি দিয়ে ভুটানের বিপক্ষে আরও পাঁচবার খেলল বাংলাদেশ। জিতেছে সবগুলোতেই। আজকেও তাই ফলাফল ভিন্ন কিছু হলে সেটা হবে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য চরম ব্যর্থতা।
তুলনায় সমশক্তির বা কিছুটা পিছিয়ে থাকা দল হওয়ার পরও সেপ্টেম্বরের ফিফা উইন্ডোতে প্রীতি ম্যাচ খেলতে ভুটানকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নেয় বাংলাদেশ। এর বড় কারণ, দুটি ম্যাচেই যেন জয় আসে। সেটা হলে র্যাঙ্কিংয়ে আগানো যাবে। যার পুরস্কার হিসেবে এশিয়ান কাপের গ্রুপ পর্বের তুলনায় কিছুটা সহজ গ্রুপে পরার সম্ভাবনা বাড়বে।
বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ ও সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন গতকালও বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন। ‘আপনারা জানেন এখানে আমরা এসেছি মূলত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির জন্য। আমরা যেহেতু আগে বড় বড় দলের বিপক্ষে খেলেছি, এখন আমাদের থেকে যারা একটু ছোট বা সমশক্তির, তাদের সঙ্গে আমরা জিততে চাই। আমাদের দল মানসিকভাবে সেভাবেই তৈরি হচ্ছে’- বলেন মামুন।
তবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার দেশ হওয়ায় ভুটানে খেলাটা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সেই সঙ্গে থিম্পুতে খেলা হয় টার্ফে। এটাতেও অভ্যস্ত নয় বাংলাদেশের ফুটবলাররা। মামুন এই চ্যালেঞ্জগুলোর কথা উল্লেখ করে বলছেন, ‘আমরা অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি। আশাকরি কালকে (আজ) একটা বেটার ম্যাচ খেলবে দল। প্রথম ম্যাচে ছোটখাটো যে সমস্যাগুলো ছিল, সেই সমস্যাগুলো এই ম্যাচে কাটিয়ে বিজয়ী হয়ে ফিরব ইনশাআল্লাহ।’
প্রথম ম্যাচে চোট পাওয়া ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনকে যে এ ম্যাচে পাওয়া যাবে না, তা আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। গতকাল মামুন নিশ্চিত করেছেন, রাকিব আজ খেলছেন না। তবে স্বস্তির কথাও শুনিয়েছেন তিনি, ‘ইনজুরিটা এত ব্যাপক না যে তাকে লম্বা সময়ের জন্য বসিয়ে রাখবে। আশাকরি খুব দ্রুতই সে দলের সঙ্গে ফিরবে।’