২০১৭ সালের ৩০ জুলাই। ইউনাইটেড হাসপাতালের রোগী ভর্তির তালিকায় লেখা আছে Sedative overdose অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট সেবন। রোগী ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির সাবেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। অবস্থা অবনতি হওয়াতে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তার আগে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে, কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তখন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিসিবির ব্যবস্থাপনায় এয়ার অ্যাম্বুলেস ভাড়া করে সিঙ্গাপুরের গ্রিন ঈগল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে খালেদ মাহমুদ সুজন সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। করতে থাকেন আগের মতোই স্বাভাবিক জীবনযাপন।
এটি ছিল প্রকৃত ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনা অদৃশ্য কারণে বিসিবির পক্ষ থেকে ধামাচাপা দেওয়া হয়। কোনো সংবাদমাধ্যমে এখন পর্যন্ত নিউজ হয়নি। বিসিবি থেকে জানানো হয় খালেদ মাহমুদ সুজন ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তার জীবন সংকটাপন্ন। সে সময় সংবাদমাধ্যমে সুজনের অবস্থা জানিয়ে বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ কোনো কোনো পরিচালকও কথা বলেছিলেন।
বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, ‘আমরা জানি সে একেবারেই কলাপস করেছে।’ সে সময় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এমআরআই হয়তো কালকে করবে সকালে। করলে হয়তো কিছু বোঝা যাবে। এ মুহূর্তে আমরা কিছুই জানি না।’
এ সময় নাজমুল হাসান পাপনের কণ্ঠ ধরে আসছিল। চেহারা ছিল মলিন আর চিন্তার ভাঁজ। সুজনের বড় ভাইও কান্না জড়িত কণ্ঠে দেশবাসীর কাছে সুজনের জন্য দোয়া চেয়েছিলেন। কিন্তু সুজনের অবস্থা জানিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের কোনো ডাক্তার মিডিয়ার সামনে সে সময় কোনো কথা বলেননি।
খালেদ মাহমুদ সুজন মূলত আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তার এই আত্মহত্যার ঘটনা ধামাপাচা দিতেই বিসিবির পক্ষ থেকে সে সময় সব ধরনের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। খালেদ মাহমুদ সুজন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে খুবই পরিচিত মুখ। তার জীবনসংকটাপন্ন হয়ে যাওয়াতে আপডেট খবরা-খবর জানার জন্য ক্রিকেটপ্রেমীরা উদগ্রীব হয়ে উঠেন। এরকম পরিস্থিতি সাধারণত কোনো ডাক্তারই কথা বলার কথা। কিন্তু সে দিন ইউনাইটেড হাসপাতালের কোনো ডাক্তার মিডিয়ার সামনে কথা বলতে আসেননি। কারণ তারা এলে তো আর মিথ্যা তথ্য দিতে পারতেন না। সুজনের এই সংবাদ আবার যাতে কোনো সংবাদমাধ্যমেও প্রচার বা প্রকাশিত না হয়, সে পদক্ষেপও বিসিবি নিয়েছিল। পরবর্তিতে সুজনকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে সবার ধরাছুঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যে কারণে সুজনের আত্মহত্যা করার চেষ্টার ঘটনাটি বিসিবি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছিল।
খালেদ মাহমুদ সুজনের যে ব্রেন স্ট্রোক করেনি তা বোঝা যায় তার সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর স্বাভাবিক জীবন-যাত্রার মাঝে। কারণ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে বিদেশে পাঠানো ব্রেন স্টোকে আক্রান্ত রোগীর অবস্থা সাধারণত খুবই বিপজ্জনক হয়ে থাকে। সুস্থ হয়ে এলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা আর সম্ভব হয়ে উঠে না। শরীরে কোনো না কোনো অঙ্গে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু সুজনের ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর তাকে দেখা বোঝার উপায়ই ছিল না তার ম্যাসিভ ব্রেন অ্যাটাক হয়েছিল। তিনি যথারীতি কোচিং করিয়েছেন। খেলাধুলা করেছেন।
খালেদ মাহমুদ সুজনের ব্রেন স্ট্রোক হয়নি। কিন্তু তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন কেন? জানা গেছে তার আত্মহত্যার চেষ্টা করার পেছনে রয়েছে নারী ঘটিত ঘটনা। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন সুজন। তার স্ত্রীর নাম ছিল রিপা। তাদের ঘরে দুই সন্তান। দীর্ঘদিনের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। সেখানে সুজন অন্য এক নারীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। জানা গেছে, তার নাম সাদিয়া। এ নিয়ে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার বাদানুবাদ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। তারই এক পর্যায়ে তিনি অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। সুজন আত্মহত্যার চেষ্টা করার আগে কক্সবাজার থেকে এসেছিলেন। সেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি মাস্টার্স ক্রিকেটের অন্যতম উদ্যোক্ততা ছিলে তিনি। আসরের মাঝ পথেই তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিজ বাসায় ফিরে আসেন। তারপরই ঘটে এই ঘটনা। দীর্ঘদিন প্রেম করে বিয়ে করা স্ত্রী রিপার সঙ্গে তারা বিচ্ছেদ ঘটে। যে নারীর কারণে সুজনের সংসার ভেঙে ছিল, পরে তিনি সেই নারীকে বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেও দুই সন্তান এসেছে।
এ ব্যাপারে খালেদ মাহমুদ সুজনের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।