বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও প্রার্থীর দেখা নেই। নির্বাচন করতে পারেন কিংবা নির্বাচন করে থাকেন এমন ব্যক্তিরা এখনো নিশ্চুপ। ফলে নির্বাচনি হাওয়া কেমন হবে, তা বোঝা বড় দায়।
আগামী ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বাফুফের নির্বাচন। পরবর্তী ৪ বছর কারা দেশের ফুটবল পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, ১৩৩ জন ভোটারের রায়ে তা নির্ধারণ হবে। সেই ভোটার তালিকা এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। গঠন হয়েছে নির্বাচন কমিশন। অতি দ্রুত তারা সভা করে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করবেন। যারা প্রার্থী হতে চান, তফসিল অনুযায়ী তারা মনোনয়নপত্র কিনবেন। তখন বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে, কারা কোন পদে লড়তে চান।
কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে কারা সামিল হতে পারেন, এটা সাধারণত নির্বাচনের বেশ আগেই অনেকটা আঁচ করা যায়। এবার যা হচ্ছে না। এখানেই এবারের বাফুফে নির্বাচন অন্য যেকোনো বারের চেয়ে ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম আরও এক জায়গায়। এবারের নির্বাচনে থাকছেন না কাজী মো. সালাউদ্দিন। টানা ১৬ বছর বাফুফে সভাপতির পদ সামলানো সাবেক এই ফুটবলার এবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নিজের এই সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন অভিভাবক পাবে দেশের ফুটবল।
এখন পর্যন্ত বাফুফে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন মাত্র দুজন। একজন তরফদার মো. রুহুল আমিন, অন্যজন তাবিথ আওয়াল। দুজনই সভাপতি পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্য কোনো পদে এখন পর্যন্ত আর কেউ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেননি।
কাজী সালাউদ্দিন যে নির্বাচনে অংশ নেবেন না, এই ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন গত ১৪ সেপ্টেম্বর। এরপর দিনই (১৫ সেপ্টেম্বর) সভাপতি পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন আলোচিত ব্যবসায়ী তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন। বেশ কিছু সাবেক ফুটবলার ও সংগঠকদের পাশে নিয়ে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এর কিছুদিন পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর সভাপতি পদে লড়াই করার ঘোষণা দেন তাবিথ আওয়াল। দুজন সভাপতি পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়া মানে জমজমাট লড়াইয়ের বার্তা। কিন্তু এখানে সেটা হয়নি। রুহুল আমিন নিজেকে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার পর যতটুকু নির্বাচনি আমেজ তৈরি হয়ে ছিল, সেটা বরং স্তিমিত হয়ে যায় তাবিথ প্রার্থী হতে চাওয়ায়।
এর বড় কারণ, রুহুল আমিন যাদের পাশে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ স্তরের নেতা। এদিকে তাবিথ নিজেও বিএনপির জাতীয় কমিটিতে থাকা একজন শীর্ষ নেতা। ফলে তরফদার রুহুল আমিনকে যারা সমর্থন দিয়েছিলেন, তারাই একপর্যায়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যান এবং এখন পর্যন্ত সেই অস্বস্তিটা পরিষ্কার।
যাদের পাশে নিয়ে রুহুল আমিন সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ফুটবলার রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির। আছেন সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। এই দুজন রুহুল আমিনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার অনুষ্ঠানে রীতিমতো মঞ্চে ছিলেন। দুজনের সঙ্গেই কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নির্বাচন ইস্যুতে এখন দুজনই খুব বেশি কিছু বলতে চাচ্ছেন না। তারা অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন। তবে তাদের কথাতে এটা পরিষ্কার যে, তাদের অবস্থানটাও আর আগের মতো নেই।
এমন কি তরফদার রুহুল আমিন নিজেও এখন আর নির্বাচন করার কথা জোর দিয়ে বললেন না। তার সঙ্গেও আলাপ হয়েছে এই প্রতিবেদকের। যদিও তিনি প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকোচ করে দেননি। কিন্তু জোর দিয়ে বলেননি যে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেনই।
ফুটবল সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ তাই ধারণা করছেন, তাবিথ আওয়ালই এবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হতে পারেন। তিনি কাজী সালাউদ্দিন যুগে দু-দুবার সহসভাপতি পদে ছিলেন। কাজী সালাউদ্দিনের কমিটির অনেককে পাশে নিয়ে তিনি নিজের প্যানেল সাজাবেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। যদিও তাবিথ আওয়াল তার প্যানেলে কাদের রাখবেন, তার নির্বাচনি ইশতেহারই বা কি হবে, এ নিয়ে এখনো কোনো কিছু পরিষ্কার করেননি। নিজের সভাপতি পদে লড়াইর ঘোষণার দিন বলেছেন, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর এসব নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন। অর্থাৎ এ জন্য আরও কটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ও বাফুফের সহসভাপতি পদে থাকা ইমরুল হাসানও সভাপতি পদে নির্বাচন করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে খবরের কাগজকে তিনি বলেছেন, ‘আমি তো কোথাও বলিনি, আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হব। তবে যেহেতু ফুটবলের সঙ্গে আছি, তাই কোনো না কোনো ভূমিকাতে তো থাকতেই পারি। সেটা সময় এলেই সব পরিষ্কার হওয়া যাবে।’