দুয়ারে কড়া নাড়ছে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আগামী ১৭ থেকে ৩০ অক্টোবর নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ এই ফুটবল প্রতিযোগিতা। যেখানে বাংলাদেশের মেয়েদের মিশন হবে শিরোপা ধরে রাখা।
দুই বছর আগে এই নেপালে অনুষ্ঠিত নারী সাফের ষষ্ঠ আসরে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছিল সাবিনা খাতুনরা। সেই একই ভেন্যুতে হবে এবারের প্রতিযোগিতা। তবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলটা ঠিক দুই বছর আগের দলটি নেই। দুই বছর খুব অল্প সময় হলে কি হবে, এই সময়ের মধ্যেই অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এরপর সাবিনারা যে নিজেদের সেরা ছন্দটা খুঁজে পেয়েছেন এমনও নয়। তাই তো শিরোপা ধরে রাখার প্রশ্নে বাংলাদেশ দলের অন্দরমহলে আত্মবিশ্বাস অতটা জোড়ালো নয়।
গতবারের মতো এবারও কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে মেয়েদের সাফের সবগুলো ম্যাচ। প্রথম পর্বে ৭টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী ভারত ও পাকিস্তান। ‘বি’ গ্রুপে স্বাগতিক নেপালের সঙ্গে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান। আগের ছয়টি আসরের পাঁচবারই চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছিল ভারত। তবে গতবার তারা সেমিফাইনালে হেরে যায় নেপালের সঙ্গে। ভারত ও পাকিস্তান গতবারও ছিল বাংলাদেশের গ্রুপে। সঙ্গে আরও ছিল মালদ্বীপ। বাংলাদেশের মেয়েরা তিনটি ম্যাচই জিতে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিফাইনালে পা রাখে। সেমিতে ভুটানকে গুঁড়িয়ে ওঠে ফাইনালে। আর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে বাংলাদেশ।
এবার যদিও ভারত ও পাকিস্তানই বাংলাদেশের গ্রুপ সঙ্গী, কিন্তু সাবিনাদের গ্রুপসেরা হওয়ার দাবিটাও জোড়ালো নয়। পাকিস্তান ম্যাচকে পাখির চোখ করে সেমিফাইনালের ছক কষছেন তারা। কারণ তিন দলের গ্রুপ হওয়ায়, একটি জয়েই মিলে যেতে পারে সেমির টিকিট। সেমিফাইনালে যেতে পারলে ফাইনাল নিয়ে ভাবনা, এরপর শিরোপা। এভাবে ধাপে ধাপে নিজেদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। টিম ম্যানেজমেন্টের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে এমনটাই জানা গেছে।
শিরোপা ধরে রাখার বিষয়ে ওই সূত্র জোড় দিয়ে কিছু বলতে পারেনি। তার কথার সারমর্ম- এবার অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় নেই। এর মধ্যে আফঈদা খন্দকার প্রান্তি, শামসুন্নাহার জুনিয়রের মতো খেলোয়াড়দের বেশ দেরিতে ক্যাম্পে পাওয়া গেছে। কারণ এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ক্যাম্পের বাইরে ছিলেন তারা।
বাংলাদেশের মেয়েরা সাফের প্রস্তুতি সারছেন ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের কোচিংয়ে। ২০২২ সালে সাবিনা-কৃষ্ণারা সাফ শিরোপা জিতেছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটনের কোচিংয়ে। নারী ফুটবলে বাংলাদেশের যত অর্জন, তার প্রায় সবই এসেছিল ছোটনের হাত ধরে। কিন্তু ২০২৩ সালে তিনি হঠাৎই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে সাফ শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা রাখা সিরাত জাহান স্বপ্নারা, আনুচিং মগিনি, সাজেদা খাতুনরা চলে যান অবসরে। বাফুফে ক্যাম্প ছেড়ে চীনে পাড়ি জমান দেশের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। ওই সময় বেশ তোলপাড়ই হয়েছিল এসব নিয়ে।
সাফ জয়ের পরও দীর্ঘ ৯ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে ছিল মেয়েরা। গত বছর জুলাইয়ে নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতিম্যাচ দিয়ে ফুটবলে ফিরেন সাবিনারা। ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের সিরিজটিতে কোচের দায়িত্বে ছিলেন মাহবুবুর রহমান লিটু। ছোটনের সঙ্গে যিনি দীর্ঘ দিন সহকারী কোচের ভূমিকায় ছিলেন। লিটু এখনো মেয়েদের দলের সহকারী কোচ। তবে মাঝে সাইফুল বারী টিটু প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করে গেছেন।
টিটুর কোচিংয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়ান গেমস বাছাইয়ে তিনটি ও ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছে। এরপর দায়িত্বে আসেন বাফুফের এলিট একাডেমির কোচ পিটার বাটলার। তার কোচিংয়ে গত মে-তে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুটি ও জুলাইয়ে ভুটানের বিপক্ষে থিম্পুতে দুটি প্রীতিম্যাচ খেলে সাবিনারা। শক্তিশালী চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে দুটি ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রথমটি ৪-০ ও দ্বিতীয়টি ১-০ গোলে হারে মেয়েরা। এরপর ভুটানের বিপক্ষে প্রথমটি ৫-১ ও দ্বিতীয়টি ৪-২ গোলে জিতে সাবিনারা।
এই ম্যাচগুলোতে মাঠের খেলায় সাবিনা-মারিয়াদের ঠিক আগের মতো গোছালো দেখা যায়নি। এর মধ্যে সাফ ঘনিয়ে এলেও কোনো প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যবস্থা করতে পারেনি বাফুফে। সব মিলিয়ে বাস্তবতা হচ্ছে, এবার বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য শিরোপা ধরে রাখাটা খুব কঠিন। এই কঠিনেরে জয় করতে পারবেন কি সাবিনারা?