প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপ হকিতে কোয়ালিফাই করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল। দারুণ এই অর্জন নিয়ে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে ওমান থেকে দেশে ফিরে মেহরাব, রাকিব, আমিরুলরা। এদিন দুপুরেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হলে খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেয় হকি ফেডারেশন। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে প্রথমবারের মতো কোয়ালিফাই করা দলকে পুরস্কার হিসেবে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা।
১৮ জন খেলোয়াড়, সঙ্গে একজন করে কোচ, ফিজিও ও ম্যানেজার মিলিয়ে যুব এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বহর ছিল ২১ সদস্যের। সেই হিসেবে দারুণ এই অর্জনের সারথিরা জনপ্রতি পাবেন ২৪ হাজারেরও কম (২৩ হাজার ৮০৯.৫২ টাকা)। অথচ হকি খেলোয়াড়দের একজোড়া বুট কিনতেই লাগে প্রায় ২০ হাজার টাকা। হকিস্টিক কিনতে লাগে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। পুরস্কারের টাকায় তাই বুট কিংবা স্টিক, বড়জোড় যেকোনো একটি কিনতে পারবেন খেলোয়াড়রা।
অথচ এই খেলোয়াড়দের বড় কোনো সম্মাননা দেওয়া হোক, এমনটাই চাচ্ছিলেন হকি অঙ্গনের সবাই। খবরের কাগজকে জাতীয় দলের ডিফেন্ডার আশরাফুল ইসলাম যেমন বলেছিলেন, ‘এই খেলোয়াড়দের যেন সর্বোচ্চ সম্মাননা দেওয়া হয়।’ যুব এশিয়া কাপে পঞ্চম হয়ে যুব বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা খেলোয়াড়দের চাওয়াও বড় কিছুই ছিল। ফেডারেশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরুর আগে দলের অন্যতম সেরা এক পারফর্মার খবরের কাগজকে বলেছিলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপের মতো আসরে কোয়ালিফাই করে এসেছি। টিম গেমে ক্রিকেটের পর আমাদের হাত ধরে এত বড় সাফল্য এসেছে। আমরা আশাবাদী যে কিছু ঘোষণা আসবে।’ এই ঘোষণা বলতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বড় সংবর্ধনার কথা বোঝাচ্ছিলেন তিনি, ‘যেহেতু মেয়েরা সাফ গেমস জিতে এসে বড় সংবর্ধনা পেয়েছে। আমরা যেহেতু বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করে এসেছি, আমাদেরও তাই সংবর্ধনা দেওয়া উচিত।’ কিন্তু এখন পর্যন্ত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বা সরকারের অন্য কোনো মহল থেকে এই খেলোয়াড়দের জন্য কোনো ঘোষণা আসেনি।
হকি ফেডারেশন যে সংবর্ধনা দিয়েছে, তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন সভাপতি ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রথমে খেলোয়াড়দের প্রত্যেককে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেন তিনি। এরপর ১৫ মিনিটের মতো বক্তৃতায় খেলোয়াড়দের অর্জনের প্রশংসার পাশাপাশি তাদের উদ্দেশে বিভিন্ন বার্তা দেন। একই সঙ্গে হকি নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। এই খেলোয়াড়দের কীভাবে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হবে, সে নিয়েও প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। বলেন, বিশ্বকাপের আগে খেলোয়াড়দের ৬ মাসের ক্যাম্পে রাখতে চান তারা। ফেডারেশন সভাপতি তার বক্তৃতার একপর্যায়ে উল্লেখ করেন, ‘আমি একটি ভালো খবর দিয়ে শেষ করব।’
তার সেই ভালো খবরটিই ছিল যুব বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেরা দলের জন্য ৫ লাখ টাকা পুরস্কার। তিনি ঘোষণাটি দিয়েছেন এভাবে- ‘তোমাদের এই অর্জনে আমরা খুশি হয়েছি। যদিও আমাদের আর্থিক অবস্থা এতটা ভালো না। এরপরও আমি তোমাদেরকে ৫ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা করছি। যাতে তোমরা এই বিজয়টাকে সুন্দরভাবে উদযাপন করতে পারো।’
পুরস্কারের যে অঙ্ক, তাতে খেলোয়াড়দের মধ্যে হতাশার ছবিটা ছিল স্পষ্ট। যদিও কোচ-খেলোয়াড়দের কেউই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। তবে অনেকের সঙ্গেই কথা বলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা আরও বড় কিছুই আশা করেছিলেন। অন্তত বড় কোনো সংবর্ধনার ঘোষণা আসতে পারে, এমনও ভেবেছিলেন কেউ কেউ। আদতে যার হয়নি কিছুই। যে কারণে সবাই হতাশা নিয়েই বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হল ছেড়েছেন।
গত মঙ্গল ও বুধবার টানা দুই দিনে দুটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার স্থান নির্ধারণী ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৭-২ গোলে হারানোর মাধ্যমে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে যুবারা। বুধবার চীনকে ৬-৩ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতার পঞ্চম স্থান। আগের টানা দুই দিন দুটি ম্যাচ খেলা, সঙ্গে বিমান ভ্রমণ, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের চোখে-মুখে খানিকটা ক্লান্তির ছাপ উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু সবাই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে। খেলোয়াড়দের ইন্টারভিউ নেওয়ার প্রতিযোগিতাতেই মেতে উঠেছিল সংবাদকর্মীরা।
যুব এশিয়া কাপে পঞ্চম হওয়া বাংলাদেশকে যুব বিশ্বকাপের মঞ্চে অনেক বড় পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ আগামী বছরের ডিসেম্বরে ভারতে হতে যাওয়া সেই আসরে খেলবে ইউরোপ, আমেরিয়ার সেরা সেরা সব দল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের অন্যতম সেরা তারকা আমিরুল ইসলাম খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপে বলেন, ‘এখন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প প্রয়োজন। ইউরোপের দলগুলোর সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ দরকার। এগুলো করলে আমাদের দল আরও শক্তিশালী হবে।’ অধিনায়ক মেহরাব হাসানও কথা বলেছেন একই সুরে, ‘যত দ্রুত সম্ভব আমাদের অনুশীলন যেন শুরু করা হয় এবং বাইরের দেশের সঙ্গে প্র্যাকটিস ম্যাচের ব্যবস্থা করা হয়, এটাই চাওয়া থাকবে।’