২০০০ সালে যখন আমরা টেস্ট খেলি, তখন খেলার মাঠে নামার আগ পর্যন্ত আমাদের জন্য একটা স্বপ্ন ছিল। টেস্ট যখন খেললাম, সেই স্বপ্নটা খুব সুন্দর হলো। প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান। তো ফার্স্ট ইনিংস খেলার পরে মনে হলো যে, আমরা টেস্ট খারাপ খেলব না। অনেক চাপ ও ভয় কাটিয়ে উঠলাম। পরবর্তী সময়ে আপনি যদি বলেন যে ২৪ বছরে উন্নতির অংশটা খুবই কম। হ্যাঁ! আমরা ঘরে-বাইরে কিছু ম্যাচ জিতেছি। তা ছিল নদীর মতো ঢেউ। নদীর ঢেউ অল্প। গ্রাফট যতটা উপরে উঠার, এই ২৪ বছরে ততটা উপরে উঠেনি।
আমরা ২৪ বছরে কয়েকটা প্রজন্ম পেয়েছি। একটা আকরাম ভাই-বুলবুল ভাইদের, তারপর আমাদের প্রজন্ম। আমাদের পর মাশরাফি-আশরাফুলদের, এরপর সাকিবদের। তারপর এখন যারা খেলছে। এই ৪-৫টা প্রজন্মে আমাকে টপকে মুশফিক এসেছে। মুশফিককে বা সাকিবকে টপকে আরও যে ভালো খেলোয়াড় আসবে, সেই জায়গাটা আমার মনে হয় নিচে নামা শুরু করে দিয়েছে। ফলে ২০ বছরে উপরের দিকে কিছুটা গিয়ে, আবার নিচের দিকে চলে এসেছে। এটা আসলে খেলোয়াড়দের দোষ না। এই উন্নতির পেছনে যারা কারিগর ছিলেন, তারা কখনোই দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা করেননি, যে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ৫-১০ বছর কিংবা ১০-২০ বা ২৫-৩০ বছর কোথায় দেখতে চাই। ওই কারিগররা কখনোই ভালো ছিল না, হয়তো কিছু ভালো ছিল। কখনোই প্রকল্প ডিজাইন ছিল না।
উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে ১০০ মাইল গতিতে রেল আবিষ্কার করেছে। পরবর্তীতে ২০০ মাইলের করেছে, এরপর ৩০০ মাইল গতির রেল বানাল। তো আমাদের এই ক্রিকেটে ৩০০ মাইল গতিতে যাওয়ার জন্য ওই পরিকল্পনা কখনোই করা হয়নি। এখন যারা আছেন তারাও করছেন না। সবাই ভাবে যে শর্ট টাইম পিরিয়ড। এটা বলতে বুঝাচ্ছি যদি না থাকি, আমি আমার মতো করে এই সময়টা পার করে দিই!
আমাদের সবচেয়ে বড় একটা সমস্যা হচ্ছে যে, এখানে টেকনিক্যাল লোকরা আসতে পারে না। এখানে আসলে গঠনতন্ত্রটা এমনভাবে করা আছে যে, প্রভাবশালী লোকদের জন্য এটা সহজ। যেহেতু এখানে অনেক টাকা, লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে, গ্ল্যামার আছে। বোর্ডের পরিচালক হতে পারলে সমাজের অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ব্যবসায়িক উন্নতি ও পিআর তৈরি হয়, এই জন্যই এক শ্রেণির খারাপ মৌমাছি চলে আসে। ভালো মৌমাছি আসে না।
আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র তৈরি হয়েছে এমনভাবে যে, গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা কেউ করেনি। চট্টগ্রাম, খুলনা কিংবা সিলেট থেকে কে আসবে? তারা কমপক্ষে প্রথম শ্রেণি খেলার অভিজ্ঞ টেকনিক্যাল লোক হতে হবে। আর কিছু করপোরেট লোক থাকবে। টেকনিক্যাল লোক আসবে একটা ক্যাটাগরিতে। আরেকটা মার্কেটিংয়ের লোক আসবে কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি বা কোম্পানি যারা অসময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাশে সবসময় ছিল। ওদের গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের আরও নতুন কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হয়েছে তাদেরও নিয়ে আসা।
ম্যাচ খেলতে খেলতে একটা সময় কিন্তু দুয়েকটা ম্যাচ জিতবেন আপনি। কিন্তু এটা তো গ্রাফটাকে উন্নতি করেন না। ১০টা ম্যাচ খেলেন, ৮টা ম্যাচই হারবে। তো এভাবে তো আপনি উন্নতি করতে পারবেন না। তার মানে আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছে। বরঞ্চ বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা সম্ভাবনা ছিল সেটা আমরা ২০ বছরে নষ্ট করে ফেলেছি। গোটা বাংলাদেশে কোনো লীগ হয় না, এটা কে করবে? জেলা ক্রিকেট সংস্থাগুলো তো রাজনৈতিক হয়ে গেছে। পুরাটা দুর্নীতির ভেতরে ঢুকে গেছে। আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচে এসব করা হয় শুধু পরিচালক হওয়ার জন্য, ক্ষমতা ভোগ করার জন্য। তো ক্ষমতার নিয়মটা সরিয়ে ফেলতে হবে।
বর্তমানে যারা আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর, তিন মাস হয়ে গেল। তারা যা করেছেন এগুলো তো রুটিন ওয়ার্ক। নতুন কি কি আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি, পরবর্তীতে আরও ৩-৪টা কীভাবে যোগ করব তা দেখতে পেলাম না। এই তিনটা মাসকে তো আপনার তিন বছরের মতো ব্যবহার করা উচিত ছিল।