অস্তিত্ব রক্ষার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের চেয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে তুলনামূলক ভালো, সেটিও ফুটে উঠেছে। শারজাহর মরুর বুকে রাতে ফ্লাড লাইটের আলোতে জয়ের ফুল ফুটানোর পর হেমন্তের হালকা কুয়াশায় শিশির ভেজা যে সকাল বাংলার আকাশে দেখা দেয়, সেটি ছিল আবার ক্রিকেটে অঙ্গনে একটি বিশেষ দিন। ২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পর ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছিল তাদের অভিষেক টেস্ট। সেই টেস্টে ভালো করার সম্ভাবনার আলো জ্বালিয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরেছিল ৯ উইকেটে। দুই যুগপূর্তিতে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে বিসিবির পক্ষ থেকে কোনো রকমের বিশেষ আয়োজন ছিল না এই দিনটিতে। কিন্তু আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া জয়টি।
কারণ প্রথম ম্যাচে ৯২ রানে হেরে ব্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশ। শুধু হারের ব্যবধানই যে বড় ছিল, তা কিন্তু নয়। ব্যাটিং ব্যর্থতার মহামারিও মর্মান্তিকভাবে ফুটে উঠেছিল। আফগানিস্তানের করা ২৩৫ রানের জবাব দিতে নেমে মাত্র ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলদেশের তল্পিতল্পা। মূলত টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও ব্যাটিং ব্যর্থতা ভয়ংকরভাবে ফুটে উঠার কারণেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয় পাওয়া নিয়ে সবার মনেই শঙ্কার কালো মেঘ দানা বেঁধে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত কালো মেঘ কেটে গিয়ে দেখা মিলে ৬৮ রানের জয়ের সূর্যের। যা নিয়ে আসে সিরিজে সমতা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচটি হয়ে উঠেছে দুই দলের জন্য অলিখিত ‘ফাইনাল’। শারজাহতেই আজ বিকেল ৪টায় শুরু হবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি।
শারজাহতে এবারের সিরিজের দুটি ম্যাচেই আগে ব্যাট করা দল জয়ী হয়েছে। দুবারই টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি অধিনায়কদের। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০ রানও নিরাপদ নয়। কিন্তু শারজাহতে এই রান আশাই করা যাচ্ছে না। কারণ আফগানিস্তান প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২৩৫ রানে অলআউট হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৫২ রান করতে পেরেছিল। আবার আরেকটি মিল আছে এই দুই ম্যাচে। রান তাড়া করতে নেমে ২০০ রান করতে পারেনি কোনো দলই। বাংলাদেশ ১৪৩ ও আফগানিস্তান ১৮৪ রানে অলআউট হয়েছিল। এই দুই ম্যাচের আলোকে তাই তৃতীয় ম্যাচকে সামনে রেখে অনায়েসেই বলা যায়, টস জিতে আগে ব্যাট করে আড়াই শ রানের ওপরে করতে পারলে, তা হয়ে উঠবে অনেক নিরাপদ।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। ২৩৫ রান তাড়া করতে নেমে ২ উইকেটে ১২০ রান থেকে ১৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ ভালো সূচনা করেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল। ২ উইকেটে ১৫২ রান থেকে ৬ উইকেটে দাঁড়ায় ১৮৪। সেখান থেকে অলআউট না হয়ে দলের রানকে আড়াই শ পার করে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন মূলত সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা নাসুম আহমেদ ও জাকের আলী। নাসুম আহমেদ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই প্রথম মাঠে নেমেছিলেন। জাকের আলীর ছিল অভিষেক ম্যাচ। জাকের ২৭ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে অপরাজিত ৩৭ ও নাসুম ২৪ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৫ রান করেছিলেন। নাসুম পরে বল হাতে ৮.৩ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলারও ছিলেন।
দুটি ম্যাচেই কিন্তু বাংলাদেশের মিডল অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল। মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ তাওহিদ হৃদয় নামের প্রতি মোটেই সুবিচার করতে পারেননি। অফ ফর্মে থাকা সৌম্য সরকার আবার দুটি ম্যাচেই মোটামুটি ভালো করেছেন যথাক্রমে ৩৩ ও ৩৫ রান করে। তানজিদ তামিম প্রথম ম্যাচে ৩ রান করলেও পরের ম্যাচ ১৭ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২২ রান করেছিলেন। তবে এই দুটি ম্যাচেই সবচেয়ে সফল ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই ম্যাচেই তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রথম ম্যাচে ৪৭ রান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচ করেন ৭৬ রান। দল জয়ী হওয়াতে অধিনায়ক নাজমুল খুশি হলেও নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন বলে জানান তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি জানিয়েছেন তার আরও লম্বা সময় ব্যাটিং করা উচিত ছিল।
দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশের পেসাররা ভালোভাবেই উতরে গেছেন। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে। তাসকিন ও মোস্তাফিজ ৪টি করে ও শরিফুল ১টি উইকেট নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে তাসকিন ও শরিফুল ১টি করে মোস্তাফিজ ২টি উইকেট নিয়েছেন। এই ম্যাচে আবার বেশি সময় ছিলেন স্পিনারার। নাসুম ছাড়া মিরাজ নেন ২ উইকেট।
দুই দলের এটি চতর্থ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। আগের তিন সিরিজের প্রথম দুটিতে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। তৃতীয় সিরিজ আফগানিস্তান জিতেছিল আবার একই ব্যবধানে। চলমান সিরিজ যে দলই জিতুক, ব্যবধানে হবে আগের মতোই ২-১?