২৪৪ রান ছিল লড়াকু পুঁজি। তবে ব্যাট হাতে রহমানুল্লাহ গুরবাজ হয়ে ওঠলেন ভয়ংকর। করলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। ৭০ রানের হার না মানা মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেললেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। সুবাদে শারজায় তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ (২-১) জিতেছে আফগানিস্তান।
সোমবার (১১ নভেম্বর) টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে আফগানিস্তান জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছায় ১০ বল হাতে রেখে। উইকেট হারায় মাত্র ৫টি। বাংলাদেশের বিপক্ষে পরপর দুটি সিরিজ জিতল আফগানিস্তান। গত বছর বাংলাদেশে এসে ২-১ ব্যবধানেই সিরিজ জিতেছিল তারা। আর সব মিলিয়ে আফগানদের এটি টানা তৃতীয় সিরিজ জয়।
আফগানিস্তানের হয়ে দারুণ সেঞ্চুরি করেন ওপেনার গুরবাজ। ১২০ বলে ১০১ রান করে তিনি মিরাজের শিকার। তবে জয়ের জন্য বাকি কাজটুকু করেন আজমতউল্লাহ ও মোহাম্মদ নবী। দুজনের ৫৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি আফগানদের পাইয়ে দেয় দাপুটে জয়। ওমরজাই ৭০ ও নবী ৩৪ রানে ছিলেন অপরাজিত।
এর আগে, টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের হয়ে শুরুতেই জীবন পান তানজিদ হাসান। তৃতীয় ওভারে ফজল হকের বলে স্লিপে ক্যাচ দিলেও তা নিতে পারেননি গুলবাদিন। পরের ওভারেও দিয়েছিলেন ক্যাচ। ঘাজানফারের বলে সেই ক্যাচ নিতে পারেনিন হাশমতউল্লাহ। তানজিদের ব্যক্তিগত রান তখন ৭। ৫০ পেরুতেই ভাঙে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। বিদায় নেন সৌম্য সরকার। আজমতউল্লাহর অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন ৩ চারে ২৩ বলে ২৪ রান করা এই অভিজ্ঞ ওপেনার।
দশম ওভারে বিদায় নেন দুইবার জীবন পাওয়া তানজিদ। মোহাম্মদ নবীর প্রথম বলেই কভার পয়েন্টে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ওপেনার। ৩ চারে ১৯ রান করতে ২৯ বল খেলেন তানজিদ। ৫৩ রানে নেই তখন দুই উইকেট। দলীয় ৫৮ রানেই বাংলাদেশ হারায় তৃতীয় উইকেট। দীর্ঘ দিন পর ফেরার ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক রানআউট জাকির হাসান। মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে তার ইনিংস শেষ হয় সাত বলে মাত্র ৪ রান করে। পয়েন্ট থেকে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ছত্রখান করেন খারোটে।
একপ্রান্ত আগলে ধরে খেলতে থাকেন শান্তর অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে অপর প্রান্তে তাওহীদ হৃদয় টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ১৫তম ওভারে আক্রমণে এসেই সাফল্য পান রশিদ খান। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৪ বলে সাত রান করা হৃদয়। ব্যাট হাতে সিরিজটা বড্ড বাজে গেল তার। তিন ম্যাচে তার মোট রান ২৯।
১৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৭৩ রান। মেহেদী হাসান মিরাজের নতুন সঙ্গী অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটিই বাংলাদেশেকে দেয় স্বস্তি। চাপের মুখে ক্রিজে গিয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে ফিফটি উপহার দেন মাহমুদউল্লাহ। চারটি চার ও এক ছক্কায় ৫০ স্পর্শ করেন ৬৩ বলে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৯তম ফিফটি এটি তার।
এরপর ফিফটির দেখা পান মিরাজও। তবে ৫০ করতে তিনি বল খরচ করেন ১০৬টি। ক্যারিয়ারের চতু্র্থ ফিফটির ইনিংসে বাউন্ডারি সাকুল্যে দুটি। ১০৬ বলে ফিফটি করে জাভেদ ওমরের ১৯ বছর আগের ইনিংস স্মরণ করিয়ে দিলেন যেন মিরাজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালে ১১৩ বলে ফিফটি করেছিলেন সাবেক ওপেনার। এরপর গত ১৯ বছরের মধ্যে মিরাজের ১০৬ বলের ফিফটিই বাংলাদেশের মন্থরতম। সবশেষ ২০১০ সালে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিফটি করতে ১০৫ বল খরচ করেছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিকি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
মিরাজের বিদায়ের পর ভাঙে পঞ্চম উইকেট ১৪৫ রানের জুটি (১৮৮ বলে)। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ জুটি এখন এটি। ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর ৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন আমিনুল ইসলাম ও আকরাম খান।
দলীয় ২১৭ রানে ভাঙে এই জুটি। ব্যক্তিগত ৬৬ রানের মাথায় মিড অফে গুলবাদিনের হাতে ধরা পড়েন মিরাজ। ১১৯ বলের ইনিংসে মিরাজ হাঁকান চারটি চার। ক্রিজে ৮৪ বলে ৮২ রানে অপরাজিত তখন মাহমুদউল্লাহ। ৪৭তম ওভারে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি। তবে শেষটা আক্ষেপে মোড়ানো তার। ৯৭ রানে স্ট্রাইকে যাওয়া মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি পেতে লাগত তখন তিন রান। ইনিংসের শেষ বলে তিনি নিতে পারেন মাত্র এক রান। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে হন রানআউট।
৯৮ বলে ৯৮ রানের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ হাঁকান সাতটি চার ও তিনটি ছক্কা। তার বিদায়ের আগে অবশ্য সাজঘরে ফেরেন জাকের আলী (১) ও নাসুম আহমেদ (৫)।
বল হাতে আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ নবী ও রশিদ খান।
চঞ্চল/সালমান/