![হারের কপালে সান্ত্বনার প্রলেপ](uploads/2024/12/14/BD-WI-ODI-Series-Post-Palas-1734153838.jpg)
সময় (বাজে গেলে) খারাপ হলে যা হয়। সেই বাজে সময়টা যেন জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশ দলের কাঁধে চেপে বসেছে। গুমট আকাশ। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বাতাসে শোঁ শোঁ শব্দ। কী অশনিসংকেত সামনে অপেক্ষা করছে, কে জানে? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথ চলা কখনো মসৃণ ছিল না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। একটু ব্যতিক্রমী ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেখানেও খেয়েছে প্রচণ্ড হোঁচট। তাই এখানেও মসৃণভাবে চলার পথে বিশাল এক প্রশ্ন সামনে এসেছে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির মতো ওয়ানডেতেও হয়তো এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে। এরপর ১৬, ১৮ ও ২০ ডিসেম্বর সেন্ট লুসিয়াতে অনুষ্ঠিত হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
এটা সত্য তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে। কোনো ম্যাচেই লড়াই করতে পারেনি। কিন্তু লড়াই করতে না পারলেও খুব যে বাজে খেলেছে তা কিন্তু বলা যাবে না। তিনটি ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয়টি ছাড়া বাকি দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশ কিন্তু বড় সংগ্রহ করে হেরেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ২২৭ রান করে অলআউট হয়েছিল। বাকি দুই ম্যাচে আর অলআউট হয়নি। স্কোর বোর্ডে রানও জমা করেছিল বলার মতো। প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে ২৯৪, তৃতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে ৩২১ রান।
কিন্তু বড় সংগ্রহ পেয়েও বাংলাদেশ ম্যাচ জেতা তো দূরের কথা, লড়াইও করতে পারেনি। এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটাররা শাসন করলেও বোলাররা শোষিত হয়েছেন। অথচ দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছিল এই বোলারদের জন্যই। দুই ইনিংসে বাংলাদেশের রান ছিল যথাক্রমে ১৬৪ ও ২৬৮। সেই বোলাররাই গোটা ওয়ানডে সিরিজে হয়েছেন শোষিত।
ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনন্য এক রেকর্ডকে সঙ্গী করে। ২০১৮ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছিল অপরাজেয়। টানা ১১ ম্যাচ আর চারটি সিরিজ জয়। কিন্তু এবার সবই বিসর্জন গিয়েছে ক্যারিবিয়ান সাগরে। ম্যাচে বাংলাদেশ ২৯৪ ও ৩২১ রান করে হেরেছে। সেই দুই ম্যাচে কিন্তু বোলাররা দারুণ শুরু করেছিলেন। প্রথম ম্যাচে ২৭ রানে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বোলাররা। এরপর শতরানের আগে তুলে নিয়েছিলেন আরও এক উইকেট। কিন্তু তার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। রাদারফোর্ডেও (১১৩) সেঞ্চুরি আর অধিনায়ক শাই হোপের ৮৬ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে ১১ ম্যাচ পরে হারের স্বাদ দিয়েছিল। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের রান ছিল আরও বেশি ৩২১। স্বাগতিকদের শুরুটাও ছিল আরও বাজে। ৩১ রানে নেই ৩ উইকেট। শতরানের আগে নেই আরও এক উইকেট। এ রকম অবস্থায় ম্যাচ বাংলাদেশেরই নিয়ন্ত্রণে। জয়টা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু না, এবারও ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। আর সেই কাজটি করেন প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা আমির জাঙ্গো অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস খেলে। সঙ্গে ছিল কেসি কার্টির ৯৫ রানের ইনিংস। ২৪ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আমির জাঙ্গো অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছেন। এর আগে এই কীর্তি ছিল ডেসমন্ড হেইন্সের। ১৯৭৮ সালে অ্যান্টিগাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ১৪৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অভিষেকে।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে হারের মাঝেও বাংলাদেশ যেমন কিছু রেকর্ড করেছে, তেমনি তাদের বিপক্ষেও হয়েছে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ২৯৪ রান তাড়া করে জয় ছিল নতুন রেকর্ড। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ওয়ার্নার পার্কে দলগত সর্বোচ্চ (৩২১/৬) রানের ইনিংস গড়ে। এবার সেই রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরও নতুন করে রেকর্ড গড়ে। ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলীর অবিচ্ছিন্ন ১৫০ রানের জুটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুল কায়েস করেছিলেন ১২৮ রানের জুটি। আবার শেষ ম্যাচে ৩২১ রান ক্যারিবিয়ানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ওয়ার্নার পার্কে ২০১৮ সালে ৬ উইকেটে ৩০১ রান।
৩২১ রান করেও কোনো রকম লড়াই করতে না পেরে হেরে যাওয়ায় যেন বধির হয়ে গেছেন অধিনায়ক মিরাজ। বিশ্বাস করতে পারছেন না হারকে। হতাশ বদনে বলেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এ ম্যাচ আমরা হারতে পারি।’ দায় দিয়েছেন তিনি বোলারদের, ‘যেভাবে বল করা দরকার ছিল, আমরা সেভাবে করতে পারিনি। সম্ভবত সমস্যা এটাই ছিল। আমরা ছোট ছোট ভুল করেছি। যদি ওই ভুলগুলো না করতাম, এর চেয়ে ভালো করতে পারতাম।’
হোয়াইটওয়াশ হওয়া সিরিজে প্রাপ্তি বলে কিছু থাকে না। তার পরও সেখানে প্রাপ্তি আছে। টানা তিন ম্যাচেই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাফ সেঞ্চুরি। অপরাজিত ৫০, ৬২ ও অপরাজিত ৮৪। সব মিলিয়ে এটি তার টানা চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে তিনি ৯৮ রান করেছিলেন। সিরিজে ১৯৪.০০ গড়ে তিনিই সর্বোচ্চ রানের মালিক।