ছবি : সংগৃহীত
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ট্যাক্সিক্যাব ছুটে চলেছে। রাস্তার যেদিকেই দৃষ্টি যাক না কেন, দেখা যায় উড়ে বেড়াচ্ছে মেঘমল্লার। সেই মেঘের বুক চিরে কখনো কখনো দূরের উঁচু পাহাড়ের টিলাগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। অনেক টিলা আবার মুহূর্তেই হারিয়ে যাচ্ছে মেঘের রাজ্যে। কোথাও আবার পাহাড়ের বুক চিরে জলের ধারা বইয়ে যাওয়ার মনমুগ্ধকর দৃশ্যেরও দেখা মিলছে। সিলেটের তামাবিল বন্দর দিয়ে শিলং আসতে প্রকৃতির এতসব সুধা একসঙ্গে পানের সুযোগ মিলেছে।
মেঘালয় রাজ্যের শহর শিলংয়ে আসার উদ্দেশ্য আগামী ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচ কাভার করা। এই শহরের বিশ্বজোড়া পরিচিতি পর্যটন নগরী হিসেবেই। সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা জটিলতায় খুব বেশি বাংলাদেশির আনাগোনা ভারতের কোনো রাজ্যেই নেই। শিলংও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে যেসব শহর বাংলাদেশের মানুষকে চম্বুকের মতো টানে, তার অন্যতম এই শিলং। একে তো সিলেটের খুব কাছে। তার ওপর পাহাড়, মেঘ, ঝরনাধারার প্রাকৃতিক লিলার অপরূপ পসরা, তা এই শহরে ফুটবলের উন্মাদনাটা কেমন?
বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে, পোলো গ্রাউন্ড নামেও এটি পরিচিত। এখন পর্যন্ত এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে মাত্র একটি। তাও খুব বেশি দিন আগে নয়। সময়ের হিসাবে এক সপ্তাহও পার হয়নি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ভারত। মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচটির আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খেলেছেন সুনিল ছেত্রিরা। আর জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা হয়েছে মূলত বাংলাদেশ ম্যাচকে সামনে রেখেই। এতটুকু পড়ে এটা ভাবা অবান্তর হবে যে, এই শহরের মানুষের মনে ফুটবল নেই। আদতে শিলংয়ের মানুষ বেশ ফুটবলপ্রিয়। এখানকার দল শিলং লাজং খেলে আইলিগে। নেহরু স্টেডিয়াম তারা নিজেদেরই মাঠ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসিও মাঠটিকে নিজেদের হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। নর্থইস্ট ইউনাইটেড আবার শিলংয়েরই অদূরের শহর গোয়াহাটির দল। ফলে এক অর্থে এই দলটি শিলংয়ের মানুষেরও। সবমিলিয়ে ভারতীয় ফুটবলে শিলংয়ের একটা আলাদা জায়গা আছে।
তামাবিল ও ডাউকি বন্দর পাড়ি দিয়ে শিলং পর্যন্ত আসার সময়ে ফুটবলের তেমন কোনো ছোঁয়া পাওয়া যায়নি। এমন কি বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচের প্রচারণার অংশ হিসেবেও কোনো কিছু চোখে পড়েনি। খেলাধুলাসংক্রান্ত কোনো কিছুই যেন নেই। শুধু শিলংয়ের মূল প্রাণকেন্দ্রে প্রবেশমুখে একটি বিলবোর্ডে পাওয়া গেল সুনীল গাভাস্কারকে। এমন কি আইপিএল নিয়েও তেমন কোনো কিছু নেই। তবে হোটেল চেকইন সেরে মাঠে যেতেই ধারণাটা বদলে যায়। বাংলাদেশ দল গতকাল অনুশীলন করেছে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ড টু-তে। যে ট্যাক্সিতে করে মাঠে যাওয়া, সেই ট্যাক্সি ড্রাইভার তো বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে রীতিমতো রোমাঞ্চিত। বেশ কয়েক দিন আগেই এক বন্ধুর মাধ্যমে তিনি টিকিট সংগ্রহ করে রেখেছেন। তার ধারণা ম্যাচটিতে স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে। বাংলাদেশি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নিজে থেকেই ফুটবল নিয়ে অনেক কিছু বলে গেলেন। যদিও ভারতকেই সমর্থন করবেন টেলান নামের ওই তরুণ ড্রাইভার। তবে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটির খেলোয়াড় হামজা চৌধুরীর খেলা দেখতে মুখিয়ে আছেন তিনি। হামজা খেলবেন বলে অন্য রকম একটা আকর্ষণ অনুভব করছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে পওয়া যায় আরেক অভিজ্ঞতা। পাশের টেবিলে বসা স্থানীয় দুই যুবকের কথোপকথনে হঠাৎ কানে আসে তাদের আলাপের প্রসঙ্গ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। একজন আরেকজনকে বলছিলেন, ম্যাচের টিকিট পেয়েছিস? ম্যাচটা দেখতে হবে। খানিক পরেই ওই তরুণের প্রস্তাব, বাজি লাগবি ম্যাচটি নিয়ে? এভাবেই শিলংয়ের মানুষের মনে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তেজনা বেশ ভালোভাবেই পেয়ে বসেছে!