এমনিতেই মাঠে শিষ্যদের নিয়ে ভালো সময় যাচ্ছে না পেপ গার্দিওলার। সবশষ চার প্রিমিয়ার লিগের স্বাদ পাওয়া এই কোচ এখন আছেন শিরোপা হাতছাড়ার পথে। মাঠের দুঃসময়ের মতো অবস্থা মাঠের বাইরেও। খবর বেরিয়েছে ইতি টেনেছেন স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত জানিয়েছে, গার্দিওলা ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিনা সেরা তাদের ৩০ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন।
১৯৯৪ সাল থেকেই একসঙ্গে বসবাস করছেন পেপ গার্দিওলা ও ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ও লেখ ক্রিস্টিনা। তবে বিয়ে করেছেন এক দশক আগে ২০১৪ সালে বার্সেলোনায়। ১০ বছরের বৈবাহিক জীবনের পর বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুইজনই।
এই দম্পতির রয়েছে তিন সন্তান। তাদের বড় সন্তান মারিয়ার বয়স ২৪, ছেলে মারিয়ার বয়স ২২ এবং ছোট মেয়ে ভালেন্তিনার বয়স ১৭।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ৫ বছর আগে বার্সেলোনায় ফিরে যান ক্রিস্টিনা ছোট মেয়ে ভালেন্তিনাকে নিয়ে পারিবারিক ফ্যাশন কোম্পানিকে সাহায্য করার জন্য। অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার সিটির কোচের দায়িত্ব পালন করা গার্দিওলা অবস্থান ম্যানচেস্টারেই। ফলে গেল ৫ বছর আলাদাই থেকেছেন তারা।
তবে এর মানে এই নয় যে তখনই তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। সেই পাঁচ বছরেও তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে বহুবার। স্ত্রী ও পরিবারকে সময় দিতে নিয়মিত বার্সেলোনা ভ্রমণে যেতেন গার্দিওলাও। তবে এবার পাকাপাকিভাবে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়ে নিলেন এই দম্পতি।
স্পোর্ত জানিয়েছে, গেল ডিসেম্বরেই নিজেদের দাম্পত্যের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গার্দিওলা ও ক্রিস্টিনা। খবরটি জানতেন কেবল তাদের অল্প কিছু মানুষই শুধু ঘনিষ্ঠ মানুষজন। এই খবরটি তাদের বাইরে যাতে না যায় সেই অনুরোধও জানান এই দুজন।
গেল বছর জুনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির ঐতিহাসিক ট্রেবল জেতার সময়ও ইস্তাম্বুলে গার্দিওলার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ক্রিস্টিনা।
মাসখানেক পর গত জুলাইয়ে তাদের একসঙ্গে দেখা যায় অল ইংল্যান্ড ক্লাবে বসে উইম্বলডন উপভোগ করার সময়ও।
ফুটবলে শীতকালীন ট্রান্সফার বন্ধ হয়েছে কয়েক দিন আগে। বছরের শুরুতে খেলোয়াড় কেনা-বেচা চলছে ১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। সবচেয়ে খরুচে ক্লাব ছিল ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটি। সবচেয়ে বড় সাইনিং করেছে সৌদি প্রো-লিগের আল নাসর। তাদের খরচের বিপরীতে আয়ের শীর্ষে ছিল প্রিমিয়ার লিগের অ্যাস্টন ভিলা। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে খবরের কাগজে। শীতকালীন উইন্ডো নিয়ে এবার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ফিফা। বিশ্ব ফুটবল সংস্থার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ ব্যয় করা হয়েছে ২০২৫ ট্রান্সফারে।
গতকাল ফিফা জানিয়েছে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পুরুষদের ফুটবলে আন্তর্জাতিক ট্রান্সফারে বিশ্বব্যাপী ক্লাবগুলো রেকর্ড ২.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে। এটা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে শীতকালীন ট্রান্সফারে মোট খরচ হয়েছিল ১.৫৭ বিলিয়ন ডলার। এতদিন এটাই সবচেয়ে বড় ব্যয় ছিল। এর চেয়ে ৪৭.১ শতাংশ বেশি খরচে নতুন রেকর্ড হয়ে গেল এবার। ট্রান্সফার সংখ্যাতেও হয়েছে রেকর্ড। ১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৮৬৩টি আন্তর্জাতিক ট্রান্সফার হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ১৯.১ শতাংশ বেশি।
ব্যয়ের খাত ভারী হয়েছে ইংলিশ ক্লাবগুলোর বদৌলতে, মোট ৬২১.৬ মিলিয়ন খরচ করেছে। ম্যানসিটিই খরচ করেছে ২২৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি। কিনেছে ওমর মার্মৌশ, নিকো গঞ্জালেস, আবদুকোদির খুসানভ, ভিটর রেইস এবং জুমা বাহকে। সবচেয়ে দামি ফুটবলার ছিলেন কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড জন ডুরান। ৭৯.৯৭ মিলিয়ন ডলার খরচে তাকে অ্যাস্টন ভিলা থেকে উড়িয়ে নিয়েছে নাসর। ব্যয়ের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচটি দেশের তালিকাও প্রকাশ করেছে ফিফা। সবার ওপরে রয়েছে জার্মানি। দেশটির ক্লাবগুলো ট্রান্সফার মার্কেটে খরচ করেছে ২৯৫.৭ মিলিয়ন ডলার। পরের চার স্থানে রয়েছে যথাক্রমে- ইতালি (২২৩.৮ মিলিয়ন), ফ্রান্স (২০৯.৭ মিলিয়ন) এবং সৌদি আরব (২০২.১ মিলিয়ন)।
অপরদিকে, ফ্রান্সের ক্লাবগুলো ট্রান্সফার ফি হিসেবে সর্বোচ্চ ৩৭১ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এই তালিকায় পরের দেশগুলো হলো- জার্মানি (২২৬.২ মিলিয়ন), ইংল্যান্ড (১৮৫.২ মিলিয়ন), পর্তুগাল (১৭৬.৪ মিলিয়ন) এবং ইতালি (১৬২ মিলিয়ন)। ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ট্রান্সফার (৪৭১) হয়েছে, যেখানে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (২৫৫)। শুরু পুরুষদের ক্ষেত্রে নয়, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নারী ফুটবলেও ট্রান্সফার ফি বাবদ রেকর্ড ৫.৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। ৪৫৫টি আন্তর্জাতিক ট্রান্সফারের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ, যা পূর্বের রেকর্ডের তুলনায় ১৮০.৬ শতাংশ বেশি।
নারী ফুটবলেও ইংলিশ ক্লাবগুলো এগিয়ে ছিল। খেলোয়াড়দের পেছনে ব্যয় করেছে ২.৩ মিলিয়ন ডলার। করেছে সর্বোচ্চ ৩৯টি চুক্তি।
গতকাল ফরচুন বরিশাল পুনরায় শিরোপা ধরে রাখার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিপিএলের একাদশ আসর। সদ্যসমাপ্ত এই আসরে রান হয়েছে বেশ। রান হওয়ায় গ্যালারিতে দর্শকদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
তবে এসবের মাঝেও আছে অনিয়মের খবর। যেমন দুর্বার রাজশাহী খেলোয়াড়দের ঠিকঠাক পেমেন্ট না দেওয়া। একাধিকবার চেক বাউন্সের ঘটনা ঘটেছে। চিটাগং কিংসের ওপরও রয়েছে এমন অভিযোগ।
ভবিষ্যতে এমনসব বিড়ম্বনা এড়াতে বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক, ম্যাচ ফি, হোটেল ব্যবস্থাপনা ও টুর্নামেন্ট শেষে ফেরার ব্যবস্থা করবে বিসিবি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে বিপিএলে অংশ নিতে আসা বিদেশিদের ব্যবস্থাপনা নিজেরাই করবে তারা। ড্রাফটে থাকা সকল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হবে বিসিবি কর্তৃক। নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে ম্যাচ ফি’র এবং সময় মতো পারিশ্রমিক পরিশোধের বিষয়টি নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে প্রদাণ করবে।
এমনকি বিদেশি ক্রিকেটারদের থাকা-খাওয়ার বিষয়টিও বিসিবি দ্বারা দেখভাল করা হবে। টুর্নামেন্ট শেষে তারা যাতে করে ঠিকঠাক দেশে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও বিসিবিই করবে। বিসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে কঠোর হবে, খেলোয়াড়দের সেফগার্ডিং ও পারিশ্রমিকের পদ্ধতি কঠোর করবে।
বিসিবির বার্তায় বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘বিসিবির উদ্যোগ প্রমাণ করে বিপিএলের সততা নিশ্চিত করতে এবং দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের পেশাদার অভিজ্ঞতা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিপিএলের পরিচালনা ও আর্থিক বিষয় শক্তিশালী করতে বোর্ড সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সর্বদা যুক্ত থাকবে।’
টানা দ্বিতীয়বার বিপিএলের শিরোপা জিতেছে ফরচুন বরিশাল। চিটাগং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল। সদ্যসমাপ্ত এই আসরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। চলুন জেনে নেওয়া যাক পুরস্কার হিসেবে কত টাকা জিতেছেন তারা।
মেহেদী হাসান মিরাজ, খুলনা টাইগার্স (টুর্নামেন্ট সেরা) : ব্যাট হাতে করেছেন ৩৫৫ রান আর বল হাতে শিকার করেছেন ১৩ উইকেট। তার পারফরম্যান্সেই কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নিয়েছিল তার দল। তবে চিটাগং কিংসের কাছে হেরে বাদ পড়তে হয়েছিল। দারুণ এই পারফরম্যান্সে জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। আর এই পুরস্কারের অর্থ হিসেবে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন মিরাজ।
তামিম ইকবাল, ফরচুন বরিশাল (ফাইনাল সেরা) : অধিনায়ক তামিম ইকবালের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা ঘরে তুলেছে ফরচুন বরিশাল। ব্যাট হাতে দারুণ পারফর্ম করেছেন তিনি এবারের বিপিএলেও। ফাইনাল ম্যাচেও খেলেছেন ২৯ বলে ৫৪ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। যেখানে ছিল ৯টি চার ও ১টি ছয়। যেই ইনিংসেই তিনি পেয়েছেন ফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কার। অর্থ হিসেবে তিনি পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছেন।
মোহাম্মদ নাইম শেখ, খুলনা টাইগার্স (সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক) : ব্যাট হাতে এবারের বিপিএলে দারুণ সময় পার করেছেন খুলনা টাইগার্সের মোহাম্মদ নাইম শেখ। এক শতক ও তিন অর্ধশতকে তার নামের পাশে মোট ৫১১ রান। যা কিনা এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ। দারুণ এই পারফরম্যান্সের সুবাদে পেয়েছেন সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের পুরস্কার। একাদশ আসরের সেরা ব্যাটার হয়ে নাইম পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার।
তাসকিন আহমেদ, দুর্বার রাজশাহী (সেরা বোলার) : দুর্বার রাজশাহী মাঠের বাইরে একের পর এক অনিয়ম করে বিপিএলকে করেছে কলুষিত। তবে এরপরও দলটি সম্ভাবনা জাগিয়েছিল প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়ার। এনামুল হক বিজয়কে সরিয়ে তাসকিন আহমেদকে অধিনায়ক করার পর ছন্দে ফিরতে শুরু করে দলটি। একের পর এক চেন্স বাউন্সের খবরের মাঝেও রাজশাহী পারফরম্যান্সে কিছুটা মন জয় করার চেষ্টা করে সেসময়। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও উজ্জ্বল ছিলেন তাসকিন। এক ম্যাচে ৭ উইকেটসহ ১২ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা বোলার হয়েছেন তাসকিন। দুর্বার রাজশাহীর এই পেসার পেলেন পাঁচ লাখ টাকা।
মুশফিকুর রহিম, ফরচুন বরিশাল (সেরা ফিল্ডার) : উইকেটের পেছনে ১২ ক্যাচ ও ২ স্টাম্পিং করে মুশফিকুর রহিম হয়েছেন সেরা ফিল্ডার। পেয়েছেন তিন লাখ টাকা।
তানজিদ হাসান তামিম, ঢাকা ক্যাপিটালস (সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার) : প্রথমবার বিপিএলে অংশ নিয়ে বেশ হতাশ করেছে ঢাকা ক্যাপিটালস। দলগতভাবে সফল হতে না পারলেও ঢাকার জুনিয়র তামিম এক আসরে সর্বোচ্চ (৩৬ ছক্কা) ছক্কা মারার কীর্তি গড়েছেন। ১ শতক ও ৪ অর্ধশতকে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৮৫ রান করে সংগ্রাহক সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কারটি পেয়েছেন। এই কীর্তি গড়ে তানজিদ তামিম তিন লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন।
এবারের বিপিএলে বিতর্ক যতই থাকুক না কেন, মাঠের ক্রিকেট দর্শকদের মন ভরাতে পেরেছে। মাঠে টেনে নিয়ে আসতে পেরেছে। আসরের শুরুর দিন তো টিকিট না পেয়ে দর্শকরা টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই চাহিদা ক্রমেই বেড়েছে। ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম সর্বত্রই টিকিটের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী। যে কারণে কালোবাজারে চড়া মূল্যে টিকিট বিক্রি হয়েছে। এবারের বিপিএল নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের মাত্রা এত বেশি ছিল, কালোবাজারে চড়া দামে টিকিট কিনতেও দ্বিধা করেননি। তার পরও দেখা গেছে, টিকিট না পেয়ে দর্শকরা মাঠে বসে খেলা দেখতে পারেননি। এই চাহিদা বেশি ছিল প্লে-অফের ম্যাচগুলোতে। যে কারণে ফাইনাল খেলা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে ওঠে। আর এই সুযোগে একটি অসাধু গোষ্ঠী জাল টিকিট ছাপিয়ে কালোবাজারে দ্বিগুণের বেশি দামে দেদারছে বিক্রি করে ফাইনাল খেলা দেখতে আসা দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করে। কারণ জাল টিকিট কিনে কোনো দর্শকই মাঠে প্রবশে করতে পারেননি। পরে প্রতারিত দর্শকরা জাল টিকিট বিক্রিকারী কয়েকজনের সন্ধান পেয়ে তাদের উত্তম-মধ্যম দেন।
খবরের কাগজের হাতে কয়েকটি জাল টিকিট এসেছে। দেখে মনেই হবে না জাল টিকিট। কারণ মূল টিকিট আর জাল টিকিটের সঙ্গে পার্থক্য বের করা সাধারণ দর্শকদের পক্ষে সম্ভব না। এই জাল টিকিট ধরা পড়ে মাঠে প্রবেশ করতে গিয়ে কিউআর কোড স্ক্যানিং করার সময়। টিকিট জাল হওয়াতে কিউআর কোড স্ক্যানিং হয়নি। বিভিন্ন গেটে দায়িত্ব পালনরত কমিটির সদস্যরা জাল টিকিট চিহ্নিত করে সেই সব দর্শকদের ফিরিয়ে দেন। দর্শকরাও তখন বুঝতে পারেন, তারা প্রতারিত হয়েছেন। তারিক হাসান মিথুন, সাজিদ, মারুফ, রঞ্জন এ রকমই ৭ জন বন্ধু এসেছিলেন বেইলি রোড থেকে। তারা পূর্ব গ্যালারির ৪০০ টাকা দামের টিকিট প্রতিটি কিনেছিলেন ১১০০ টাকা করে, ফাইনালের আগের দিন বৃহস্পতিবার। ৭,৭০০ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়েও তাদের আফসোস ছিল ফাইনাল খেলা মাঠে বসে দেখতে না পারাতে। তারিক হাসান মিথুন বলেন, ‘ফাইনাল খেলা দেখার জন্য আমরা বন্ধুরা আগে থেকেই অনেক প্ল্যান করে রেখেছিলাম। যে কারণে ৭০০ টাকা বেশি দিয়েও আমরা টিকিট কিনতে দ্বিধা করিনি। ফাইনালের দিন টিকিট না পেতে পারি এই শঙ্কা থেকে ঝুঁকি এড়াতে আমার আগের দিনই মিরপুরে এসে টিকিট কিনে রেখেছিলেম। এখন টাকাও গেল, টিকিট গেল, খেলাও দেখা হলো না। আর পরিশ্রম তো আছেই।’ মারুফ বলেন, ‘আগেও ব্লাকে টিকিট বিক্রি হয়েছে। জাল হয়েছে। কিন্তু এখন এসব করছে কারা। বিসিবিতে কী দেখার কেউ নেই।’ সাজিদ বলেন, ‘আগেও জাল টিকিট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এত অধিক পরিমাণে এবং ওপেন বিক্রি আগে কখনো হয়নি। বিসিবিকে কঠোরভাবে বিষয়টি দেখা উচিত।’ তাদের কাছেই জানা যায়, আরেক গ্রুপ ১৩ হাজার টিকিট কিনে প্রতারিত হয়েছেন।
ফাইনালের দিন মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে দর্শকদের লম্বা সারি। ছবি : খবরের কাগজ।
স্টেডিয়ামের ৪ ও ৫ নম্বর গেটের মাঝামাঝি জাল টিকিট বিক্রি করা নারী ও পুরুষ দুজনকে ধরে প্রতারিত হওয়া দর্শকদের কয়েকজন বেশ উত্তম-মধ্যম দেন। ফুটপাতের একটি হোটেলের ভেতর আশ্রয় নেওয়া জাল টিকিট বিক্রি করা পুরুষকে প্রতারিত দর্শকরা প্রথমে বের করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সঙ্গে থাকা নারী নিয়ে আসতে বাধা দিলে দর্শকরা পরে তার ওপরও চড়াও হন। ধানমণ্ডি থেকে আসা নাবিল নামের এক ছাত্র তার জাল টিকিট উঁচিয়ে ধরে বলতে থাকেন, ‘এই দেখেন আমার টিকিট জাল। ঢোকার সময় জাল টিকিট ধরা পড়ে। পরে এটি ছিঁড়ে ফেলা হয়।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা তো নিজ থেকেই বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনেছি খেলা দেখার জন্য। কিন্তু ওরা জাল টিকিট বিক্রি করে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করবে কেন?’ এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে আশপাশে দেখা যায়নি।
জাল টিকিটের ফাঁদে পড়ে দর্শকরা প্রতারিত হলেও ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংসের ফাইনাল খেলা দেখার জন্য দর্শকদের ঢল নেমেছিল। দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে যান-চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। এক পাশের রাস্তা তো বন্ধই হয়ে যায়। জাল টিকিটের বিষয়টি ছাড়া গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। বিপিএলের শেষ দিন হওয়াতে দুই দলের জার্সিও কম দামে বিক্রি করা হয়। ৪০০ টাকার জার্সি ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দর্শকরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে দুই দলের জার্সি কিনেছেন। বেশি বিক্রি হয়েছে বরিশালের জার্সি। মাঠে বরিশালের দর্শক উপস্থিতিও ছিল বেশি। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়াতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেলা দেখতে আসেন।
জাল টিকিট। ছবি : খবরের কাগজ।
এদিকে স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়াতে টিকিটি কেটেও অনেকে মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একদিকে জাল টিকিট কিনে প্রতারিত দর্শকদের প্রতিবাদ অন্যদিকে আবার টিকিটি কেটে ঢুকতে না পারাদের ক্ষোভ, সব মিলে বাইরের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা করে উত্তেজিত দর্শকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকা প্রচুর দর্শককে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২৬ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে দর্শক ৩০ হাজারের বেশি ছিলেন! এত দর্শক কোথা থেকে কীভাবে এলেন- এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও বিসিবির কাউকে পাওয়া যায়নি।