সংগৃহীত
এবারের বিপিএলে মানহীন ক্রিকেটারে ভরপুর থাকার পরও চার-ছক্কার বৃষ্টি দর্শকদের মন জয় করেছিল। কিন্তু সেখানে মানহীন ক্রিকেটাররা নিজেদের মানসম্মত করে তুলতে পারেননি। দেশি ক্রিকেটারদের পাশাপাশি, মানসম্মত বিদেশি ক্রিকেটাররা জমিয়ে তুলেছিলেন আসর। এবারের মতো এত বেশি পরিমাণে মানহীন ক্রিকেটার অতীতে বিপিএলে কখনো খেলতে দেখা যায়নি। যে কারণে কোনো দল একাধিক ক্রিকেটারকে এক ম্যাচের বেশি খেলাতে সাহস করেননি। মানহীন ক্রিকেটার সবচেয়ে বেশি খেলেছেন সিলেট ও ঢাকায়। অন্য দলগুলোতেও কম-বেশি নামসর্বস্ব ক্রিকেটার খেলেছেন। শুধু রংপুরে নামসর্বস্ব ক্রিকেটার খেলতে দেখা যায়নি কাউকে। এক নজরে চোখ বুলিয়ে দেখা যাক এসব নামসর্বস্ব ক্রিকেটারের মাঠের পারফরম্যান্সের।
ফরচুন বরিশাল
চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের বিদেশি ক্রিকেটার খেলেছে মোট ৯ জন। মানহীন ক্রিকেটার বলতে গেলেন ছিলেন একজনই পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ ইমরান। পাকিস্তানের বাইরে বিপিএলই ছিল তার প্রথম কোনো টুর্নামেন্ট। তিনি এসেছিলেন পাকিস্তানের ঘরোয়া ৫৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে। বরিশালের হয়ে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচটি শুধু খেলেছিলেন। ৪ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে উইকেট শূন্য নিতে পারেননি।
চিটাগং কিংস
রানার্সআপ চিটাগং কিংসে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মোট ১০ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। নামসর্বস্ব ক্রিকেটার ছিলেন শ্রীলঙ্কার লাহিরু মিলানথা ও দক্ষিণ আফ্রিকার থমাস ও’কনেল। লাহিরুর শ্রীলঙ্কার বাইরে যুক্তরাস্ট্রের মেজর লিগ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বিপিএলে খেলতে এসেছিলেন ৪৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে। চিটাগং তাকে ১টি ম্যাচ খেলিয়েছিল। রান করেছিলেন ৬। অস্ট্রেলিয়ার থমাস ও’কনেল বিপিএলে খেলার আগে অস্ট্রেলিয়াতে মাত্র ৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন। বিগব্যাশে তার দল মেলবোর্ন স্টার্স। তাকেও ১টি ম্যাচ খেলানো হয়েছিল খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। ব্যাট হাতে প্রথম বলেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন। বল হাতে ২ ওভারে ২৫ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন। আফগানিস্তানের জোবায়েদ আকবারিকেও অনেকটা একই কাতারে ফেলা যায়। দেশের হয়ে ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে তিনি রান করেছিলেন মাত্র ৮। তার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল ২৭টি। ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ১টি ম্যাচ ওপেনিংয়ে নেমে ২৩ রান করেছিলেন। এরপর চুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত এই তিন ক্রিকেটারই দলের সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু তাদের কোনো ম্যাচ আর খেলানো হয়নি।
খুলনা টাইগার্স
সবচেয়ে বেশি ১১ জন ক্রিকেটার খেলেছেন খুলনা টাইগার্সে। দলের ইংল্যান্ডের পিটার শিবলীকে মানহীন ক্রিকেটারের তালিকায় ফেলা যাবে না। কারণ তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ২২টি টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি কোনো ম্যাচ খেলেননি। তার টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল ৪৬টি ম্যাচের। সব কটিই ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট টুর্নামেন্টে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তিনি দেশের বাইরে বিপিএলেই প্রথম খেলেছেন। চিটাগংয়ের বিপক্ষে ১টি ম্যাচ খেলে রান করেছিলেন ৩।
দুর্বার রাজশাহী
এবারের আসরে সবচেয়ে বিতর্কিত দল রাজশাহীর রায়ান বার্ল ও মোহাম্মদ হারিসকে বাদ দিলে বাকি সবাই ছিলেন নামসর্বস্ব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মার্ক দিয়াল বিপিএল খেলতে এসেছিলেন ৪৬টি ম্যাচ খেলে। তবে সেগুলো জাতীয় দলের হয়ে নয়। বিপিএলে ৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৩ রান করেন। মিগুয়েল কামিন্স ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৪ টেস্ট ও ১১ ওয়ানডে খেললেও কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি। এবার ১ ম্যাচ খেলে ৮ রান করেন, উইকেট নেন ১টি। শ্রীলঙ্কার হয়ে ১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ধর্সানা সামারাক। বিপিএলেও তিনি ১ ম্যাচ খেলে রানও করতে পারেননি,উইকেটও পাননি। আফতাব আলম আফগানিস্তানের হয়ে ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ১২টি। সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৮ সালে। বিপিএলে ৩ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ৩টি।
ঢাকা ক্যাপিটালস
মানহীন ক্রিকেটার খেলানোর ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে ছিল এবারের বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত দল ঢাকা ক্যাপিটালস। যে কারণে তাদের ভরাডুবিও হয়েছে। ভারতে জন্ম নেওয়া সুবহাম রঞ্জন মূলত যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ খেলে থাকেন। কিন্তু পরিসংখ্যান জানান দেয় খুব একটা ভালো করতে পারেননি। বিপিএলে খেলতে এসেছিলেন ৩৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে। যেখানে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস ছিল মাত্র একটি। এবার ৩ ম্যাচ খেলে ৬২ রান করেন, উইকেট নেন ৩টি। আফগানিস্তানের ফারমানউল্লাহকে কেন নিয়ে আসা হয়েছিল, তা ঢাকা ক্যাপিটালসের কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। আফগানিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট ৩৭টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩৮৬ রানের পাশে উইকেট আছে ১২টি। এমন ক্রিকেটারকে এনে ঢাকা ৭টি ম্যাচ খেলিয়েছিল। দলকে উপহার দিয়েছেন তিনি ৫৫ রান ও ৫টি উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার স্টিফেন এসকিনাজি ১১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও দেশের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি। এমন কি নিজ দেশে এসএ২০ টুর্নামেন্টেও খেলার সুযোগ পাননি। বিপিএলে ৪ ম্যাচ খেলে ৬৮ রান করেন।
সিলেট স্ট্রাইকার্স
মানহীন ক্রিকেটার খেলানোর ক্ষেত্রে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। পয়েন্ট টেবিলে সবার তলানিতে ছিল। এতেই বুঝা যায় তারা কী মানের দল গড়েছিল? পাকিস্তানের আহসান ভাট্টিকে নিয়ে এসেছিল, যার অভিজ্ঞতা ছিল ঘরোয়া মাত্র ২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের। সিলেটও তাকে ২টি ম্যাচ খেলিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজরে লুক জাগেসার বিপিএল খেলতে আসার আগে ঘরোয়া ২১ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে বিপিএলেই তার প্রথম কোনো টুর্নামেন্ট। কোনো বিবেচনায় এ রকম ক্রিকেটারকে সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলভুক্ত করেছেন, সে ব্যাখ্যা তারাই ভালো দিতে পারবেন। ৫ লাখ টাকার ওপরে শুধু বিমান ভাড়া দিয়ে তাকে উড়িয়ে এনে মাত্র ১টি ম্যাচ খেলানো হয়। রান করেন ৫ রান ও উইকেট নেন ২টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ক্রিকেটার খাদেম আলিয়ান। ৩ ম্যাচ খেলে তিনি রান করেন মাত্র ১০। তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঘরোয়া মাত্র ১৮টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে। কোনো হাফ সেঞ্চুরি ছিল। না। কিন্তু তবুও তাকে মনে ধরেছিল সিলেটের মালিকদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ক্রিকেটার রাকিন কর্নওয়েল। খেলা দিয়ে নয়, বিশাল শরীর দিয়ে তিনি ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি পেয়ে গেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডই তাকে শুধু টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বিবেচনা করে থাকে। অথচ সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে টি-টোয়েন্টির জন্য মহামূল্যবান মনে করেছেন! এমন নয় যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে তার সুখ্যাতি আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে বিপিএলেই তার একমাত্র ঠিকানা।