স্টেডিয়ামগুলো ফুটবলের কেন্দ্রবিন্দু, যা ভক্তদের তাদের আবেগ প্রকাশ করতে এবং স্মৃতি তৈরি করতে দেয়। তাই প্রতিটি স্টেডিয়াম গড়ে উঠে নিজস্ব নকশায় এবং দলের রঙে। আধুনিক যুগে এটা আরও বেশি বিকশিত হয়েছে। নতুনত্বের ছোঁয়ায় পুরোনো স্টেডিয়ামগুলো বহুকেন্দ্রিক এবং বিলিয়ন খরচে শোভা পাচ্ছে আধুনিক স্থাপত্য ও হচ্ছে বৃহদাকৃতির। যেমন- টটেনহাম হটস্পার স্টেডিয়াম। সংস্কার কাজ শেষে এই মাঠটি এখন ফুটবলের পাশাপাশি অন্যান্য খেলায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এমনই এক প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন স্যার জিম র্যাটক্লিফ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন মালিক ঘোষণা করেছেন- ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১ লাখ আসনসংখ্যার নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করবেন তিনি, যার খরচ পড়বে ২ বিলিয়ন পাউন্ড। র্যাটক্লিফের এমন ঘোষণা সাড়া ফেলেছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে। কেননা, তার প্রস্তাবি প্রজেক্ট শেষে ওল্ড ট্রাফোর্ড বনে যাবে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং বড় স্টেডিয়াম। বিশ্বের ব্যয়বহুল পাঁচটির একটি।
ব্যয়বহুল ১০টি ফুটবল স্টেডিয়াম
স্টেডিয়াম দেশ ব্যয় (পাউন্ড) আসনসংখ্যা
ইয়াঙ্কি স্টেডিয়াম যুক্তরাষ্ট্র ১.৫ বিলিয়ন ৪৬,৫৩৭
মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়াম যুক্তরাষ্ট্র ১ বিলিয়ন ৭১,০০০
সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল স্টেডিয়াম সিঙ্গাপুর ১ বিলিয়ন ৫৫,০০০
টটেনহাম হটস্পার স্টেডিয়াম যুক্তরাজ্য ১ বিলিয়ন ৬২,৮৫০
ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম যুক্তরাজ্য ১ বিলিয়ন ৯০,০০০
অলিম্পিক স্টেডিয়াম কানাডা ১ বিলিয়ন ৫৬,০০০
এস্তাদিও ন্যাশনাল ব্রাজিল ৬০০ মিলিয়ন ৩৭,৫৯৩
সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্পেন ৫০০ মিলিয়ন ৮১,০০০
ক্রেসতোভিস্কি স্টেডিয়াম রাশিয়া ৫০০ মিলিয়ন ৬৮,০০০
লন্ডন স্টেডিয়াম যুক্তরাজ্য ৪৮৬ মিলিয়ন ৬২,৫০০
বিশ্বের চতুর্থ ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম হবে
র্যাটক্লিফের নতুন প্রজেক্ট ম্যানইউর বর্তমান মাঠটির ইতি ঘটাবে, যা ১৯১০ সাল থেকে ক্লাবের প্রধান মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দীর্ঘ আলোচনা এবং অনেক ভাবনার পরই রেড ডেভিলস একটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণের সিদ্ধান্তে এসেছে। নতুন প্রজেক্টে স্টেডিয়ামটি পাবে ছাতার আকৃতি, যেখানে থাকবে একটি বিশাল পাবলিক প্লাজা এবং ওল্ড ট্রাফোর্ডকে দেবে নতুন রূপ। বিশাল এই প্রজেক্টের জন্য অর্থায়ন কীভাবে হবে তা জানাতে পারেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষ, যাদের মাথায় ইতোমধ্যে ১ বিলিয়ন ইউরোর ঋণের বোঝা রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা রাষ্ট্রীয় তহবিলের আশায় রয়েছে। যাই হোক সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে- ম্যানইউর নতুন স্টেডিয়ামটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে কোথায় স্থান পাবে?
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি স্টেডিয়ামের বেশির ভাগই মার্কিন মুল্লুকে। এই তালিকায় সেরা দশে রয়েছে ফুটবলের দুটি স্টেডিয়াম: টটেনহাম হটস্পার স্টেডিয়াম নবম স্থানে এবং ওয়েম্বলি সপ্তম স্থানে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম হলো লস অ্যাঞ্জেলেসের সোফি স্টেডিয়াম, যা র্যামস এবং চার্জেসের হোম গ্রাউন্ড। ৫.০৫ বিলিয়ন ইউরো খরচে এনএফএলের ভেন্যুটি উম্মুক্ত করা হয় ২০২০ সালে। ম্যানইউর নতুন স্টেডিয়ামটি খরচের দিক থেকে সোফি স্টেডিয়ামের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারবে না।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নিউইয়র্কে ইয়াঙ্কি স্টেডিয়াম। এই ভেন্যুটির খরচ ২.১ বিলিয়ন ইউরো। বিলাসবহুল স্টেডিয়ামের মধ্যে আরেকটি হলো ইনটুইট ডোম। মাত্র ১৮ হাজার ধারণক্ষমতার এই মাঠ নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছিল ১.৮৩ বিলিয়ন ইউরো। এখন প্রস্তাবিত প্রজেক্ট অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিশ্বের চতুর্থ ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম হবে ওল্ড ট্রাফোর্ড। কারণ ইউরো বিবেচনায় এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ১.৮ বিলিয়ন, যা পেছনে ফেলবে লস ভেগাসের অ্যালেজিয়েন্ট স্টেডিয়ামকে। লস ভেগাস রাইডার্সের হোম গ্রাউন্ডটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১.৭৪ বিলিয়ন ইউরো।
আসনসংখ্যায় সেরা ১০-এর বাইরে
সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে ওয়েম্বলি, টটেনহাম হটস্পার এবং সিঙ্গাপুর জাতীয় স্টেডিয়াম। এই ভেন্যুগুলোতে ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার পর্যন্ত। সবগুলোকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস খেলবে ওল্ড ট্রাফোর্ড। যদিও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে আসন সংখ্যায় সেরা ১০-এর বাইরেই থাকবে ম্যানইউর প্রস্তাবিত মাঠটি।
স্টেডিয়াম দেশ আসনসংখ্যা
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম ভারত ১,৩২,০০০
রানরাডো ফাস্ট মে স্টেডিয়াম নর্থ কোরিয়া ১,১২,২৮১
মিশিগান যুক্তরাষ্ট্র ১,০৭,৬১০
বিয়াভার স্টেডিয়াম যুক্তরাষ্ট্র ১,০৭,২৮২
ওহিও স্টেডিয়াম যুক্তরাষ্ট্র ১,০২,৭৮০
কাইল ফিল্ড যুক্তরাষ্ট্র ১,০২,৭৩৩
টাইগার স্টেডিয়াম যুক্তরাষ্ট্র ১,০২,২৩১
নেইল্যান্ড স্টেডিয়াম যুক্তরাষ্ট্র ১,০১,৯১৫
টেক্সাস মেমোরিয়াল যুক্তরাষ্ট্র ১,০০,১১৯
ব্রায়ান্ট-ডেনি স্টেডিয়াম যুক্তরাষ্ট্র ১,০০,০০৭
পাঁচ বছরের চ্যালেঞ্জ
ম্যানইউ কর্তৃপক্ষ তাদের মেগা প্রজেক্টকে বলেছে, ম্যানচেস্টারে হবে ‘নর্থ অব দ্য ওয়েম্বলি’। তাদের বিশ্বাস যে নতুন স্টেডিয়ামটি পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে। যদিও এই আকারের একটি প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। তবে ক্লাবটি মনে করে, ম্যানচেস্টারে জাহাজের যে বাড়তি সুবিধা রয়েছে তার মাধ্যমে অর্ধেক সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব।
র্যাটক্লিফ বলেছেন, ‘সাধারণত যদি আপনি স্থলভাগের মাধ্যমে ১ লাখ আসনের একটি স্টেডিয়াম তৈরি করেন, তা হলে এটি একটি ১০ বছরের প্রকল্প। কিন্তু যদি আমরা সরকারকে সঙ্গে রেখে এগিয়ে যাই তবে আমি মনে করি এটি একটি পাঁচ বছরের প্রজেক্ট, ১০ বছরের প্রজেক্ট নয়।’
ব্যর্থ হলে বিদায় নেবে মাস্টারমাইন্ড
স্যার জিম র্যাটক্লিফ বলেছেন, ক্লাবের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হলে তিনি ম্যানইউ ছেড়ে চলে যাবেন। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে তারা সঠিক পথেই আছেন।
র্যাটক্লিফের আইএনইওএস ২০২৪ ফেব্রুয়ারিতে গ্লেজার পরিবারের কাছ থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্লাবের সিংহভাগ অংশীদারিত্ব কিনে ক্লাবটির ফুটবল কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন থেকেই উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন দেখছেন র্যাটক্লিফ। সম্প্রতি দ্য টাইমসকে তিনি বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, যদি আমি ব্যর্থ হই তা হলে পদত্যাগ করব। কিন্তু আমার মনে হয় না আমি ব্যর্থ হব। যত তাড়াতাড়ি আমরা ভালো ফুটবল খেলতে শুরু করব এবং জিততে শুরু করব, তত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি বদলে যাবে।’