
এবারের বিপিএলে বিতর্ক যতই থাকুক না কেন, মাঠের ক্রিকেট দর্শকদের মন ভরাতে পেরেছে। মাঠে টেনে নিয়ে আসতে পেরেছে। আসরের শুরুর দিন তো টিকিট না পেয়ে দর্শকরা টিকিট কাউন্টার ভাঙচুর করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিলেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই চাহিদা ক্রমেই বেড়েছে। ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম সর্বত্রই টিকিটের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী। যে কারণে কালোবাজারে চড়া মূল্যে টিকিট বিক্রি হয়েছে। এবারের বিপিএল নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের মাত্রা এত বেশি ছিল, কালোবাজারে চড়া দামে টিকিট কিনতেও দ্বিধা করেননি। তার পরও দেখা গেছে, টিকিট না পেয়ে দর্শকরা মাঠে বসে খেলা দেখতে পারেননি। এই চাহিদা বেশি ছিল প্লে-অফের ম্যাচগুলোতে। যে কারণে ফাইনাল খেলা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে ওঠে। আর এই সুযোগে একটি অসাধু গোষ্ঠী জাল টিকিট ছাপিয়ে কালোবাজারে দ্বিগুণের বেশি দামে দেদারছে বিক্রি করে ফাইনাল খেলা দেখতে আসা দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করে। কারণ জাল টিকিট কিনে কোনো দর্শকই মাঠে প্রবশে করতে পারেননি। পরে প্রতারিত দর্শকরা জাল টিকিট বিক্রিকারী কয়েকজনের সন্ধান পেয়ে তাদের উত্তম-মধ্যম দেন।
খবরের কাগজের হাতে কয়েকটি জাল টিকিট এসেছে। দেখে মনেই হবে না জাল টিকিট। কারণ মূল টিকিট আর জাল টিকিটের সঙ্গে পার্থক্য বের করা সাধারণ দর্শকদের পক্ষে সম্ভব না। এই জাল টিকিট ধরা পড়ে মাঠে প্রবেশ করতে গিয়ে কিউআর কোড স্ক্যানিং করার সময়। টিকিট জাল হওয়াতে কিউআর কোড স্ক্যানিং হয়নি। বিভিন্ন গেটে দায়িত্ব পালনরত কমিটির সদস্যরা জাল টিকিট চিহ্নিত করে সেই সব দর্শকদের ফিরিয়ে দেন। দর্শকরাও তখন বুঝতে পারেন, তারা প্রতারিত হয়েছেন। তারিক হাসান মিথুন, সাজিদ, মারুফ, রঞ্জন এ রকমই ৭ জন বন্ধু এসেছিলেন বেইলি রোড থেকে। তারা পূর্ব গ্যালারির ৪০০ টাকা দামের টিকিট প্রতিটি কিনেছিলেন ১১০০ টাকা করে, ফাইনালের আগের দিন বৃহস্পতিবার। ৭,৭০০ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়েও তাদের আফসোস ছিল ফাইনাল খেলা মাঠে বসে দেখতে না পারাতে। তারিক হাসান মিথুন বলেন, ‘ফাইনাল খেলা দেখার জন্য আমরা বন্ধুরা আগে থেকেই অনেক প্ল্যান করে রেখেছিলাম। যে কারণে ৭০০ টাকা বেশি দিয়েও আমরা টিকিট কিনতে দ্বিধা করিনি। ফাইনালের দিন টিকিট না পেতে পারি এই শঙ্কা থেকে ঝুঁকি এড়াতে আমার আগের দিনই মিরপুরে এসে টিকিট কিনে রেখেছিলেম। এখন টাকাও গেল, টিকিট গেল, খেলাও দেখা হলো না। আর পরিশ্রম তো আছেই।’ মারুফ বলেন, ‘আগেও ব্লাকে টিকিট বিক্রি হয়েছে। জাল হয়েছে। কিন্তু এখন এসব করছে কারা। বিসিবিতে কী দেখার কেউ নেই।’ সাজিদ বলেন, ‘আগেও জাল টিকিট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এত অধিক পরিমাণে এবং ওপেন বিক্রি আগে কখনো হয়নি। বিসিবিকে কঠোরভাবে বিষয়টি দেখা উচিত।’ তাদের কাছেই জানা যায়, আরেক গ্রুপ ১৩ হাজার টিকিট কিনে প্রতারিত হয়েছেন।

স্টেডিয়ামের ৪ ও ৫ নম্বর গেটের মাঝামাঝি জাল টিকিট বিক্রি করা নারী ও পুরুষ দুজনকে ধরে প্রতারিত হওয়া দর্শকদের কয়েকজন বেশ উত্তম-মধ্যম দেন। ফুটপাতের একটি হোটেলের ভেতর আশ্রয় নেওয়া জাল টিকিট বিক্রি করা পুরুষকে প্রতারিত দর্শকরা প্রথমে বের করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সঙ্গে থাকা নারী নিয়ে আসতে বাধা দিলে দর্শকরা পরে তার ওপরও চড়াও হন। ধানমণ্ডি থেকে আসা নাবিল নামের এক ছাত্র তার জাল টিকিট উঁচিয়ে ধরে বলতে থাকেন, ‘এই দেখেন আমার টিকিট জাল। ঢোকার সময় জাল টিকিট ধরা পড়ে। পরে এটি ছিঁড়ে ফেলা হয়।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা তো নিজ থেকেই বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনেছি খেলা দেখার জন্য। কিন্তু ওরা জাল টিকিট বিক্রি করে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করবে কেন?’ এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে আশপাশে দেখা যায়নি।
জাল টিকিটের ফাঁদে পড়ে দর্শকরা প্রতারিত হলেও ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংসের ফাইনাল খেলা দেখার জন্য দর্শকদের ঢল নেমেছিল। দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে যান-চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। এক পাশের রাস্তা তো বন্ধই হয়ে যায়। জাল টিকিটের বিষয়টি ছাড়া গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। বিপিএলের শেষ দিন হওয়াতে দুই দলের জার্সিও কম দামে বিক্রি করা হয়। ৪০০ টাকার জার্সি ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দর্শকরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে দুই দলের জার্সি কিনেছেন। বেশি বিক্রি হয়েছে বরিশালের জার্সি। মাঠে বরিশালের দর্শক উপস্থিতিও ছিল বেশি। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়াতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেলা দেখতে আসেন।

এদিকে স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়াতে টিকিটি কেটেও অনেকে মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একদিকে জাল টিকিট কিনে প্রতারিত দর্শকদের প্রতিবাদ অন্যদিকে আবার টিকিটি কেটে ঢুকতে না পারাদের ক্ষোভ, সব মিলে বাইরের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা করে উত্তেজিত দর্শকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। টিকিট কেটে ভেতরে ঢোকা প্রচুর দর্শককে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২৬ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে দর্শক ৩০ হাজারের বেশি ছিলেন! এত দর্শক কোথা থেকে কীভাবে এলেন- এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও বিসিবির কাউকে পাওয়া যায়নি।