
দীর্ঘ প্রেমের পর এ শতাব্দীর শুরুর দিকে ঘর বেঁধেছিলেন দুই তারকা শুটার সাবরিনা সুলতানা ও সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকি। পরের দশকে একে অপরের সঙ্গে বাধা পড়েন ব্যাডমিন্টনের উজ্জ্বল দুই মুখ এনায়েত উল্লাহ খান ও এলিনা সুলতানা। আর সদ্যই ভারোত্তোলেন তারকা মাবিয়া আক্তার সীমান্ত জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন সতীর্থ ভারোত্তোলক শাকায়েত হোসেন প্রান্তকে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে খবরের কাগজ তুলে ধরছে এই তিন দম্পতির গল্প। তিনটি ভিন্ন দশকে ঘর বাঁধা এই দম্পতিদের গল্পে উঠে এসেছে ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডের সেকাল-একালও। লিখেছেন- তোফায়েল আহমেদ
রিংকি-সাবরিনার ১১ বছরের প্রেম
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম সফল দুই ক্রীড়াবিদ সাবরিনা সুলতানা ও সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকি। দুজনই দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে একাধিক স্বর্ণ পদক জিতেছেন। কমনওয়েলথ শুটিংয়েও সোনার পদক আছে সাবরিনার ঝুলিতে। ২০০৩ সালে তারা ঘর বাঁধেন। তার আগে দুজনের মধ্যে ছিল দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্ক। ১৯৯২ সালে একে অপরকে মন দেন। সেই সময়টায় ভ্যালেন্টাইনস ডে কীভাবে উদযাপন করতেন তারা?
রিংকির কথায়, ‘সেই সময় আমাদের তো একটা পরিচিতি ছিল। অনেক কিছু হিসাব করেই করতে হতো। চাইলেই শুধু দুজন মিলে একসঙ্গে ঘুরতে পারতাম না।’
সাবরিনার কথায়, ‘আমাদের ওই সময়ে আসলে ভ্যালেন্টাইনস ডে এখনকার মতো এতটা জনপ্রিয় ছিল না। তবে পহেলা ফাল্গুনটা উদযাপন করতাম। আমরা সব শুটার মিলে বইমেলায় যেতাম। মেয়েরা শাড়ি পরত, ছেলেরা পাঞ্জাবি। দিনে সকালে শুটিং করে বিকেলে সবাই দিনটা উদযাপন করতাম।’
এটা সাবরিনার বিয়ের আগের কথা। তবে বিয়ের পর তো আর কোনো বাধা ছিল না। আর ততদিনে পহেলা ফাল্গুনের মতো ভ্যালেন্টাইনস ডেও বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য উদযাপনের উপলক্ষে পরিণত হয়েছে। সাবরিনা বলেন, ‘বিয়ের পর পর দুজনে মিলে একটু বাইরে যাওয়া, ঘোরা এগুলো তো হতোই। ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের বিষয় মাথায় রেখে সে অনুযায়ী শাড়ি পরতাম, যেটা রিংকি পছন্দ করত।’
এখনো দিনটি উদযাপন করে এই দম্পতি। তবে কিছুটা হলেও বদলে গেছে উদযাপনের রং। রিংকি বলেন, ‘বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তো অনেক কিছুই বদলে যায়। এখন বাচ্চারা আছে। ওদের নিয়েই সব। ওদের সঙ্গে নিয়েই দিনটি উদযাপন করি। বাইরে বের হই।’ সাবরিনা বলেন, ‘আগের দুজন ছিলাম, এখন তো চারজন। দুই ছেলে আমাদের। এখন চারজন মিলেই উদযাপন করি। বাচ্চাদের ছাড়া এখন আসলে কিছুই হয় না।’
এলিনা-এনায়েতের ১৪ বসন্ত
দুজনই ব্যাডমিন্টনের সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। এনায়েত খেলা ছেড়ে এখন পুরোদস্তুর কোচ-সংগঠক। এলিনাও মনোনিবেশ করেছেন কোচিংয়ে। ২০১১ সালে দুজন ঘর বাঁধেন। এরপর একে একে ১৪টি বসন্ত পাড়ি দিয়েছেন। দুজন থেকে তারকা দম্পতির সংসার এখন পাঁচজনের।
তাদের ঘর আলো করে রেখেছে তিন সন্তান। এলিনা-এনায়েতের ভালোবাসা দিবসের কেন্দ্রেও এখন তাদের সন্তানরা। এলিনার কথায়, ‘প্রথম দিকে সবারই একটু ভিন্নভাবে কাটে। এটাই স্বাভাবিক। ভালোবাসাটা শুধু তো আর স্বামী-স্ত্রীকেন্দ্রিক না। ভালোবাসাটা ছেলেমেয়ে, বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে নিয়ে। আমরা দুজনই যেহেতু ব্যস্ত, ছুটির দিন হলে পরিবারের সবাই মিলে ঘোরা যায় কি না, এটা লক্ষ্য থাকে।’
এনায়েতের কথায়, ‘ভালোবাসা অনুভূতির বিষয়। এটা তো শুধু একটি নির্দিষ্ট দিনকেন্দ্রিক হয় না। প্রতিদিনই আসলে ভালোবাসার। আমার স্ত্রীর কথা বলব- অনেক ভালোবাসি তাকে। আর এখন আমাদের এক ছেলে-দুই মেয়ে। ওদের নিয়ে খুব ভালো আছি। ভালোবাসার প্রকৃত রূপ যেটা, সেটা তো আসলে বাচ্চারা। ওদের নিয়ে প্রতিদিনই এখন ভালোবাসার দিন।’
এনায়েত-এলিনা দম্পতি বিয়ের আগে যে লম্বা প্রেম করেছেন এমন নয়। এলিনা তো তাদের বিয়েকে প্রেমের বিয়ে বলতেই চান না, ‘আমাদের এ ধরনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। পুরোপুরি পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে। ভেবেছিলাম, যেটাই হোক না কেন বিয়ের পরই হোক (হাসি)।’
এনায়েতের কথায়, ‘ওকে আমার খুব ভালো লাগত। একসঙ্গে অনেক দেশ ঘুরেছিলাম আমরা। এক দিন সাহস করে ওকে ভালোলাগার কথাটি বলেই ফেলি। পরবর্তী সময়ে পারিবারিকভাবে বিয়ে।’ বিয়ের শুরুর দিকে অবশ্য ভ্যালেন্টাইনস ডে বিশেষভাবেই উদযাপন করতেন তারা। এখন সবকিছু সন্তাদের ঘিরে হলেও এলিনা কিন্তু দিবসটি উপলক্ষে গিফট পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেন না। না হলে কেন বলবেন, ‘ভ্যালেন্টাইনস ডেতে হাজবেন্ডের কাছ থেকে গিফট নেওয়ার অপশন ছাড়া যাবে না। এটা নারী জাতির অধিকার (হাসি)।’
প্রেম করার সময় পাননি মাবিয়া-প্রান্ত
সদ্যই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন তারকা ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। জীবনসঙ্গী হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন সতীর্থ ভারোত্তোলক শাকায়েত হোসেন প্রান্তকে। সদ্য বিয়ে, আপাতত তাদের প্রতিটি দিনই তো উদযাপনের। এর মধ্যে সপ্তাহ ঘুরতেই হাজির ভ্যালেন্টাইনস ডে। দিনটা কীভাবে উদযাপন করবেন এই নব দম্পতি?
মাবিয়ার কথায়, ‘আমাদের তো প্রেম করার সময় হয়নি। একসঙ্গে এটাই প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে আমাদের। চেষ্টা করব আমাদের জন্য দিনটি যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে। বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। অবশ্যই তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এখন তিনি আমাকে কী সারপ্রাইজ দেবেন, সেটা আমি জানি না (হাসি)।’
মাবিয়া যোগ করেন, ‘দিনটি অবশ্য শবেবরাত পড়েছে। এদিন বাসায় কাজ থাকবে। যদি বের হতে না-ও পারি তাহলে পরের দিন আমরা ভ্যালেনটাইনস ডে উদযাপন করব। একটু ঘুরতে যাওয়া, রেস্টুরেন্টে যাওয়া… এসব আরকি।’
প্রান্ত বলেন, ‘আমাদের জন্য খুব দ্রুতই এসে গেছে দিনটি। ভাবতেছি কী করা যায়? তবে এখনো কনফার্ম কিছু ভাবিনি। যেহেতু প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে, দিনটিকে স্মরণীয় তো করতেই হবে।’
মাবিয়া-প্রান্ত একই ভুবনের বাসিন্দা। চেনা-জানা তাদের আগে থেকেই। তবে বিয়েটিকে প্রেমের বিয়ে নয় বলেই দাবি দুজনের। মাবিয়ার কথায়, বছর দুই আগে প্রান্ত তাকে নিজের মনের অনুভূতির কথা জানিয়েছিলেন। মাবিয়া বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের ওপর। এরপর পারিবারিকভাবেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের চার হাত এক হয়েছে।
প্রান্ত বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে প্র্যাকটিস করতাম। ওকে আমার ভালো লাগত। এক দিন প্রকাশও করি। পরে ওদের পরিবারকেও জানাই। ওরা আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে কথাবার্তা বলতে বলেন। এভাবেই আসলে সবকিছু এগিয়েছে।’