
ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন ফেডারেশনের পদে থেকে যারা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে যারা দুর্নীতি ঘটিয়েছে, আমরা ফেডারেশনগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি আপনারা ব্যবস্থা নিন। ফেডারেশনগুলো প্রাথমিক তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে দুদকে যাবে। ক্রীড়াক্ষেত্রে যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারকাজ চলমান রেখেছে। ক্রীড়াঙ্গনও এর বাইরে নয়। গত সেপ্টেম্বরেই ৪০টির বেশি ফেডারেশনের সভাপতিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারে গঠন করা হয় সার্চ কমিটিও। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দুই ধাপে ১৬টি ফেডরেশনে অ্যাডহক কমিটি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। যে ফেডারেশনগুলো নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে।
যেসব ফেডারেশনে এখনো অ্যাডহক কমিটি দেওয়া হয়নি, তাদের অনেক সক্রিয় আছে। আবার সক্রিয় না থাকার সংখ্যাটাও অনেক। আসলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই বেশির ভাগ ফেডারেশনের শীর্ষকর্তারাই চলে যান আত্মোগোপনে। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর শীর্ষকর্তারা রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হয়ে থাকেন। ফেডারেশনের পদে থেকে তারা দুর্নীতিতেও জড়িয়ে যান। বিগত সময়ে দুর্নীতি হয়েছে কি না সেটারই তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকটা ফেডারেশনকে আমরা বলেছি পূর্ববর্তী দুই বছরের অডিট রিপোর্ট জমা না দিলে আমরা বাজেট ছাড় দেব না। বাজেট ছাড়ের ক্ষেত্রে আমরা অডিট রিপোর্ট গাইডলাইনের মধ্যে নিয়ে এসেছি। আমরা অডিট রিপোর্ট নেব। কোনো প্রকার দুর্নীতি আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখব।’
বিগত সরকারের সময়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে এই সংস্কার কাজ শুরু হলেও এখনো তা পুরোপুরি শেষ হয়নি। এই সংস্কার কাজ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সংস্কার কাজের নামে অনেক অনিয়মের বিষয়ও সামনে এসেছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এই স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজের যে উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে, আমরা দেখেছি সেটার ফিজিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু আমাদের প্রায়োরিটি ছিল, কাজটা বন্ধ না করে যেন শেষ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫-৬ বছর ধরে স্টেডিয়ামটির সংস্কার কাজ চলছে। এই সময়ে তো ২-৩টি স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলা যায়। আমি আসার পর আমার কাছে আবারও সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বলেছি এই সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। মাঠ খেলার উপযোক্ত হয়ে গেছে। বাফুফেকে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাইটসহ আরও কিছু কাজ বাকি আছে। সেটা মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। আশাকরি এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং আবার এখানে আন্তর্জাতিক ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলা আয়োজন করা যাবে।’
ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ডের খেলাগুলোতে বাংলাদেশ মোটেও অগ্রসর নয়। এ নিয়েও এদিন আক্ষেপ ধরে ক্রীড়া উপদেষ্টার কণ্ঠে, ‘অ্যাথলেটিকসে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের এখন পর্যন্ত বড় কোনো অর্জন নেই। অলিম্পিকে তো বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে আমাদের কোনো পদক নেই। এর একটা অন্যতম কারণ প্রান্তিক পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দের উঠে না আসা। একই সঙ্গে তাদেরকে যে উন্নত মানের ট্রেনিং আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়ার কথা ছিল, সেটা এতদিন দিতে না পারা। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এই বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করিছি। খেলাধুলার বিকেন্দ্রীকরণ, সঠিকভাবে ট্যালেন্টহান্ট, তাদের পরিচর্যার, একই সঙ্গে উন্নতমানের ট্রেনিংয়ের জন্য স্পোর্টস ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা আশা করি সামনের দিনে অ্যাথলেটিকসের যে খেলাগুলো আছে, সবগুলো আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে।’
ক্রীড়া উপদেষ্টা কথা বলেছেন হকি ও ফুটবলের দুটি আলোচিত বিষয় নিয়েও। হকিতে সম্প্রতি ৩২ বছরের বেশি বয়সী খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে বিবেচনায় না নেওয়ার অলিখিত একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন। বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনো অবগত নই। এনএসসি থেকে হকি ফেডারেশনের সঙ্গে অবশ্যই এ বিষয়ে কথা বলা হবে। তারপর আপনাদের জানানো হবে।’
নারী ফুটবলারদের বিদ্রোহের বিষয়ে বদলে গিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা শৃঙ্খলার বিষয়টিতেই গুরুত্বারোপ করেছেন, ‘এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং সমাধান করার দায়িত্ব বাফুফের। বাফুফে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রণালয় তার জায়গা থেকে সমন্বয় করে। আমরা সমন্বয় করছি। এ বিষয়ে বাফুফেই সমাধানে পৌঁছাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে স্পোর্টসের সঙ্গে জড়িত সবার শৃঙ্খলার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করি।’