
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সামনে রেখে অন্য দলগুলো যেখানে ওয়ানডে ম্যাচ খেলে নিজেদের প্রস্তুতি সেরেছে, সেখানে বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি নিয়েছে বিপিএল খেলে। যেখানে আবার জাতীয় দলের ব্যাটারদের মাঝে দু-একজন ব্যতীত বাকিরা ছিলেন না ফর্মে। তার পরও দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছিলেন তারা চ্যাম্পিয়ন হতে চান। কিন্তু সেখানে আসর শুরু হওয়ার আগেই বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। চিরাচরিত ব্যাটিং ব্যর্থতার আরেকটি চিত্র প্রদর্শন করে পাকিস্তান শাহিনসের (পাকিস্তান ‘এ’ দল) কাছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ মাত্র ২০২ রানে অলআউট হয়। পাকিস্তান শাহিনস সেই রান টপকে যায় ৩৪.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৬ রান করে।
২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দল এই একটিই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। অন্য দলগুলো যেখানে খেলেছে নিজেদের মাঝে ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বাংলাদেশ দল সেখানে নিজেদের প্রস্তুতি সেরেছে বিপিএলে দিয়ে! বিপিএলেও ব্যাটারদের দু-একজন ছাড়া বাকিরা ছিলেন ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতার মহামারিতে থেকে তারা প্রস্তুতি ম্যাচেও বের হয়ে আসতে পারেননি। এমন নয় যে প্রতিপক্ষ খুব শক্তিশালী। আইসিসির যেকোনো টুর্নামেন্টের আগে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য আইসিসি একাধিক প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এবার সেখানে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। মাত্র চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ তারা আয়োজন করেছে। তাও আফগানিস্তানের জন্য দুটি, বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের জন্য একটি করে। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান শাহিনস। এই দল আবার করা হয়েছে দুটি। একটি খেলছে পাকিস্তানে, আরেকটি দুবাইয়ে। যে কারণে শাহিনসকেও দুটি দল করতে হয়েছে। দুটি দল করতে গিয়ে স্বাভাবিক কারণে শক্তি ভাগাভাগি হয়েছে। সেই খর্ব শক্তির বিপক্ষেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেমন নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি, তেমনি বোলাররাও। তাই প্রস্তুতির দৈন্যদশা নিয়েই তারা ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবেন।
বাংলাদেশের ইনিংস যে এত অল্প রানে গুটিয়ে যাবে, সে রকম কোনো সংকেত ছিল না। বরং সেখানে ছিল বড় সংগ্রহেরই আভাস। দলীয় ৬৪ রানে দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকারের সঙ্গে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বিদায় নেন। সৌম্য ৩৮ বলে চারটি চারে ৩৫ রান করে রানআউটের শিকার হয়ে বিদায় নেন। তানজিদ তামিম ও নাজমুল নামের পাশে বড় সংগ্রহ যোগ করতে পারেননি। এই তিন ব্যাটারকে হারানোর পর মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাওহিদ হৃদয় দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই জুটিতে ১০.৫ ওভারে ৫৬ রান আসার পর ভেঙে যায় তাওহিদ ২০ রান করে আউট হলে। এরপর লাগে মড়ক। পড়তে থাকে দ্রুত উইকেট। মুশফিকুর রহিম দ্রুত বিদায় নেওয়ার পর ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী মিরাজও আউট হয়ে যান ৫৩ বলে ৩ চারে ৪৪ রান করে। জাকের আলীও ৪ রান করে পথ দেখেন ড্রেসিং রুমের। ফলে ৩ উইকেটে ১১৯ রান থেকে দলের রান পরিণত হয় ৭ উইকেটে ১৩৭। ১৮ রানে নেন ৪ উইকেট। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ দল। পরবর্তিতে তানজিম সাকিব ২৭ বলে চারটি চার ও ইনিংসের একমাত্র ছক্কায় ৩০ ও নাসুম আহমেদ ১৬ বলে দুটি চারে ১৫ রান করলে দলের সংগ্রহ ২০০ অতিক্রম করে।
ছোট টার্গেটের পেছনে ছুটে জয় পেতে কোনো সমস্যাই হয়নি পাকিস্তান শাহিনসের। বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে একটু চাপে ফেলেছিলেন ৬৯ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে। তানজিম সাকিব, নাহিদ রানা ও মিরাজ একটি করে উইকেট তুলে নেন। কিন্তু এই শেষ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ হারিস ও মোবাশির খান দলকে আর কোনো উইকেটের পতন হতে না দিয়ে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। হারিস ৭৬ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট করেন। মোবাশির খান ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০২/১০, ওভার ৩৮.২ (মিরাজ ৪৪, সৌম্য সরকার ৩৫, তাওহিদ হৃদয় ২০, তানজিম সাকিব ৩০, নাসুম আহমেদ ১৫, রিশাদ হোসেন ১৪, নাজমুল হোসেন শান্ত ১২, মুশফিকুর রহিম ৭, তানজিদ তামিম ৬, জাকের আলী অনিক ৪, তাসকিন আহমেদ ৪*; ওসামা মীর ৪/৪৩, মুবাশির খান ২/৪২, মুসা খান ১/১৬, সুফিয়ান মুকিম ১/৩২, আলী রাজা ১/৪০)।
পাকিস্তান শাহিনস: ২০৬/৩, ওভার ৩৪.৫ (মোহাম্মদ হারিস ৭৬ (রিটায়ার্ট হার্ট), মোবাশির খান ৬৮*, শাহিবজাদা ফারহান ২১; নাহিদ রানা ১/১১, তানজিম সাকিব ১/১৫, মেহেদি মিরাজ ১/৩৯।