গোলপোস্টের নিচে তারা অতন্দ্রী প্রহরী। কেউ বা বনে যান চীনের প্রাচীর। যে যত গোল রুখে দিতে পারেন, তাদের নামের পাশে যোগ হয় নানা বিশেষণ। ফুটবল বিশ্বে তিন গোলরক্ষক আছেন যারা একই কীর্তি গড়ে এখনো স্বমহিমায় ভাস্বর। বিশ্বকাপ ফুটবলে এই তিন গোলরক্ষক জিতেছেন সোনালি ট্রফি, কিন্তু বিশ্বকাপের গোটা আসরে গোল হজম করেছেন মাত্র দুটি। তারা হলেন ফাবিয়েন বার্তেজ (ফ্রান্স), জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি) ও ইকার ক্যাসিয়াস (স্পেন)। বিশ্বকাপজয়ী দলের হয়ে সবচেয়ে কম, মাত্র দুটি গোল হজম করার গৌরব শুধ এই তিনজনেরই।
ফাবিয়েন বার্তেজ (ফ্রান্স ১৯৯৮)
টাক মাথার গোলরক্ষক বার্তেজের সৌভাগ্যের গল্পে বিশেষ এক অধ্যায় আছে। প্রতিটি ম্যাচের আগে তার মাথায় চুমু খেতেন ফরাসি ডিফেন্ডার লরেন্ট ব্লাঁ। সৌভাগ্যের এই রীতিটি দারুণ কাজে দেয়। বার্তেজের অসাধারণ পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স।
গ্রুপ পর্বে ডেনমার্কের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল হজম করেন বার্তেজ, গোলদাতা ছিলেন মাইকেল লাউড্রুপ। তবে ফ্রান্স ম্যাচটি ২-১ ব্যবধানে জিতে চলে যায় দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেমিফাইনালে ডেভর সুকারের গোলে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে গেলেও লিলিয়ান থুরামের জোড়া গোলে জয় নিশ্চিত করে ফরাসিরা।
ফাইনালে নিষিদ্ধ ব্লাঁকে ছাড়াই খেলতে নামে ফ্রান্স, তবে রীতি ভাঙেননি তিনি- আগেভাগেই চুমু দিয়ে শুভকামনা জানিয়ে গিয়েছিলেন! আর বার্তেজও ছিলেন দুর্দান্ত, রোনালদোর ব্রাজিলকে হতাশায় ডুবিয়ে ৩-০ ব্যবধানে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স। গোলপোস্টে বার্তেজ যেন ছিলেন দেবদূত।
জিয়ানলুইজি বুফন (জার্মানি ২০০৬)
বার্তেজের এই কীর্তির সমতাই গড়েছিলেন ইতালির লিজেন্ডারি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন। তবে তার রেকর্ড আরও বিস্ময়কর, কারণ ওপেন প্লেতে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় তাকে পরাস্ত করতে পারেনি!
গ্রুপ পর্বে একমাত্র গোলটি হজম করেন নিজেদের খেলোয়াড়ের ভুলে। ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান জাকার্দো বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই জড়িয়ে ফেলেন। এরপর ফাইনালে জিনেদিন জিদান তাকে পরাস্ত করেন পেনাল্টি থেকে, যা এক আশ্চর্য চিপ শটে ক্রসবারে লেগে গোললাইনের ওপারে পড়ে।
সেই ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে জিদানের হেড অবিশ্বাস্যভাবে আটকে দেন বুফন, ম্যাচ নিয়ে যান টাইব্রেকারে। এরপর পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে ইতালি। গোলপোস্টের নিচে অবিশ্বাস্য সব সেভ করা বুফন পরিচিত পান সুপারম্যান হিসেবে।
ইকার ক্যাসিয়াস (দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০)
রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি ইকার ক্যাসিয়াস ২০১০ বিশ্বকাপে জয়ের নায়ক ছিলেন স্পেনের। ফাইনালে ডাচ ফরোয়ার্ড আরিয়েন রোবেনের শট পায়ের টোকায় দারুণভাবে রুখে দিয়ে দলের বিশ্বকাপ জয়ের পথ নিশ্চিত করেন।
এর আগেই ক্যাসিয়াস নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে গোলশুন্য অবস্থায় প্যারাগুয়ের অস্কার কারদোসোর পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন। পরে ১-০ গোলে জিতে সেমিফাইনালে যায় স্পেন। এভাবে ক্যাসিয়াস বিশ্বকাপের দুই আসরে পেনাল্টি সেভ করা প্রথম গোলরক্ষক বনে যান (টাইব্রেকার বাদে)।
স্পেন পুরো টুর্নামেন্টে দুটি গোল হজম করে, দুটিই গ্রুপ পর্বে। সুইজারল্যান্ডের হয়ে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগান গেলসন ফার্নান্দেজ। আর চিলির হয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে এক ডিপ্লেক্টেট শটে গোল করেন রদ্রিগো মিলার। শেষ পর্যন্ত স্পেন ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো জেতে বিশ্বকাপ। আর ক্যাসিয়াস ছিলেন সেই দলের অপরিহার্য অংশ। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কও।