
দৌড় শেষ হতেই সতীর্থদের মধ্যমনিতে পরিণত হলেন নাজিমুল হোসেন রনি। সিক্ত হলেন ফুলেল শুভেচ্ছায়। ছেলেদের ৪০০ মিটার হার্ডলসে সবার আগে দৌড় শেষ করেছেন। চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে সতীর্থদের এতটুকু উচ্ছ্বাস স্বাভাবিকই। এর মধ্যেই জানা গেল শুধু স্বর্ণ পদকই নয়, নাজিমুল ভেঙে দিয়েছেন ৩২ বছরের পুরোনো রেকর্ড। অথচ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই অ্যাথলেটের অভিব্যক্তি দেখে কে বলবে এমন দারুণ এক কীর্তি গড়েছেন তিনি!
জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসের দ্বিতীয় দিনে ৫০.৮৪ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেন ২৬ বছর বয়সী হার্ডলার নাজিমুল। এই ইভেন্টে আগের রেকর্ডটি ছিল আব্দুল রহিম নঈমের। তিনি রেকর্ডটি গড়েছিলেন সেই ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে। তার টাইমিং ৫১.৮৭ সেকেন্ড। তিন যুগেরও বেশি সময় পর একটা রেকর্ড ভাঙারও পর নাজিমুলকে কেমন নির্লিপ্তই লাগছিল। আসলে উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ খুব বেশি নেই তার মধ্যে। তবে এমন একটা কীর্তি গড়তে পেরে ভেতরে ভেতরে কম খুশি নন তিনি। অনুভূতি জানতে চাইলে বললেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। আমি অনেক দিন থেকে চেষ্টা করছিলাম যে রেকর্ডটা ভাঙবো। আমার কোচ এবং সহপাঠি সব সময় বলতো, তোকে দিয়ে সম্ভব এই রেকর্ডটা কাভার করা। আলহামদুলিল্লাহ, আজকে সেটা আমি করতে পেরেছি।’
৪০০ মিটার হার্ডলসই নাজিমুলের প্রধান ইভেন্ট। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এনিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই ইভেন্টে অংশ নিলেন তিনি। প্রথমবার অংশ নিয়ে জিতেছিলেন রুপা। গত বছর অনুষ্ঠিত ৪৭তম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে জেতেন স্বর্ণ। এবার তো রেকর্ডসহ স্বর্ণ। অর্থাৎ তার পারফরম্যান্সে ধারাবাহিক উন্নতির ছাপটা স্পষ্ট। এই ধারা বজায় রাখতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসেও (এসএ গেমস) ভালো কিছু সম্ভব বলে বিশ্বাস নাজিমুলের, ‘আমি যে টাইমিং করেছি তাতে আরেকটু চেষ্টা করলে এবং ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যদি ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমার মনে হয় সাফ গেমসে স্বর্ণ পদক আনা সম্ভব।’
একটা ইভেন্টে জাতীয় রেকর্ডধারী মানে এই ইভেন্টে এখন তিনিই দেশসেরা। অথচ হার্ডলস তো দূরে থাক, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে অ্যাথলেটিকস কী এটাই জানতেন না নাজিমুল। তার কথায়, ‘আমি আর্মিতে যোগ দেওয়ার আগে অ্যাথলেটিকস সম্পর্কে জানতামই না। হ্যাঁ, স্কুলে খেলতাম। কিন্ত সেটাকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বলে জানতাম। ওটাই যে অ্যাথলেটিকস, এটা জেনেছি আর্মিতে আসার পর।’
সাধারণ সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া নাজিমুলের। এরপর অ্যাথলেটিসকে এলেন কীভাবে? জানতে চাইলে এই অ্যাথলেট বলেন, ‘২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমি সেনাবাহিনীর ট্রেনিং শেষ করি। ইউনিটে আসার পর প্রথম প্রতিযোগিতা ছিল- আন্তঃইউনিট অ্যাথলেটিকস। আমার বডি ফিটনেস ভালো থাকার কারণে সিনিয়র খেলোয়াড়রা আমাকে অ্যাথলেটিকস দলে অনুশীলনের সুযোগ দেন। প্রথমবার আন্তঃইউনিট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই আমি স্বর্ণ পদক অর্জন করি। এভাবেই শুরু।’
২০২১ সালে সেনাবাহিনীর মূল দলেও সুযোগ পেয়ে যান নাজিমুল। সেবছরই জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। তবে সেবার অংশ নিয়েছিলেন ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে। স্বর্ণ পদকও অর্জন করেন তিনি। কিন্তু পরে ইভেন্ট পাল্টে ৪০০ মিটার হার্ডলসে অংশ নেওয়া শুরু করেন। আন্তঃমিটে হার্ডলসই বেশি খেলতেন বলে তার ইভেন্ট বদলানো বলে জানান তিনি।
বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার ছেলে নাজিমুল। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান ও এক ভাই-এক বোন নিয়ে তার সংসার। পরিবারের অন্য কেউ খেলাধুলায় নেই। অ্যাথলেট না হলে কি হতেন? জানতে চাইলে নাজিমুল মুখে হাসি নিয়ে বলেন, ‘অ্যাথলেট না হলে আমি ভালো সৈনিক হতাম।’
তোফায়েল/এমএ