ঢাকা ১৩ চৈত্র ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১

দর্শকসারি থেকে মঞ্চে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
দর্শকসারি থেকে মঞ্চে বাংলাদেশ
ছবি : সংগৃহীত

১৯৯৮ সাল। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ তখনো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জায়গা করে নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়মিত খেলতে হলে আইসিসির টেস্ট ক্রিকেটের বনেদি পরিবারের সদস্য হতে হয়। সেই সদস্য পদ বাংলাদেশের ছিল না। আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ না পাওয়াতে বৈশ্বিক কোনো আসর আয়োজনও করতে পারেনি। তবে ১৯৮৮ সালে একবার এশিয়া কাপ ক্রিকেট আয়োজন করেছিল। এশিয়ার তিন সেরা দল পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার অংশগ্রহণে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। বাংলাদেশও খেলেছিল। এরপর ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেয়েছিল। কিন্তু এই আসর খেলার আগেই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো বাংলাদেশের হাতে আকাশের চাঁদ এসে ধরা দে ১৯৯৮ সালে। টেস্ট পরিবারের সদস্য না হওয়ার পরও আইসিসির নতুন ইভেন্ট নক আইটি ট্রফি বা মিনি বিশ্বকাপ (পরিবর্তিত নাম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) আয়োজন করার স্বত্ব পায়। সময়ের প্রেক্ষাপটে সেটি ছিল বাংলাদেশের জন্য অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা! আর এটি সম্ভব হয়েছিল বাঙ্গালিবাবু কলকাতার জগমোহন ডালমিয়ার কারণেই। তিনি ছিলেন সে সময় আইসিসির সভাপতি। 

বাংলাদেশের দর্শকদের ঘরের মাঠে বিশ্বমানের তারকাদের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা ছিল শুধু ১৯৮৮ সালের এশিয়া কাপই। সে সময় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তিন দেশে বিশ্বমানের তারকাদের ছড়াছড়ি ছিল। ভারতের মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, কপিল দেব, দিলিপ ভেংসরকার, মহিন্দর অমরনাথ, কিরন মোরে নভোজিৎ সিং সিধু, কৃষ্ণচামারি শ্রীকান্ত, পাকিস্তানের জাভেদ মিয়ানদাদ, আব্দুল কাদির, ওয়াসিম আকরাম, রমিজ রাজা, সেলিম মালিক, ইজাজ আহমেদ, শ্রীলঙ্কার অর্জুনা রানাতুঙ্গা, মাহানাম, অরবিন্দ ডি সিলভা, রঞ্জন মাদুগালে, দুলিপ মেন্ডিস, হাসান তিলকরত্নে। মিনি বিশ্বকাপ এই তিন দেশের অনেকের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের অনেক তারকা ক্রিকেটারদের খেলাও মাঠে বসে দেখার সুযোগ করে দেয়। যেখানে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ, মার্ক ওয়াহ, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, গ্লেন ম্যাকগ্রা, রিকি পন্টিং, মাইকেল বেভান, ইংল্যান্ডের নেইল ফেয়ারব্রাদার, অ্যাসলে জাইলস, গ্রায়াম হিক, অ্যাডাম হোলিওক, নিউজিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিং, ক্রিস হ্যারিস, ক্রেইগ ম্যাকমিলান, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, নাথান অ্যাসলে, দক্ষিণ আফ্রিকার হ্যানসি ক্রোনিয়ে, নিকি বোয়ে, মার্ক বাউচার, জ্যাক ক্যালিস, জন্টি রোডস, শন পোলক, মাখায় এনটিনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা, শিবনারায়ণ চন্দ্রপল, কার্ল হুপার, ফিল সিমন্স, জিম্বাবুয়ের অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, অ্যান্ড্রি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার,মারি গুডউইন, নেইল জনসন, হিথ স্ট্রিক, অ্যান্ডি হুইটাল। এ সমস্ত ক্রিকেটারদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছিল বাংলার জমিন। 

একসময় যাদের খেলা দেখার একমাত্র অবলম্বন ছিল টিভি পর্দা, সেখানে চোখের সামনে হাত ছোঁয়া দূরত্বে বিশ্বের সব সেরা ক্রিকেটার! সে কি উন্মাতাল হাওয়া বাংলার আকাশে। ক্রিকেট-জ্বরে রীতিমতো কাঁপছিল দেশ। কিন্তু এতো উত্তাল আনন্দের মাঝে সেখানে ছিল না বাংলাদেশ দল। কারণ আইসিসির প্রথম এই আসর আয়োজন করেছিল শুধু টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে নিয়েই। বাংলাদেশ তখনো আইসিসির সহযোগী সদস্য ছিল। তারা পূর্ণ সদস্য হয়েছিল ২০০০ সালে। যে কারণে মিনি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ছিল নিজ দেশে পরবাসীর মতো। বাংলাদেশ স্বাগতিক হওয়ার দরুন এক অন্য রকম সুখানুভুতি উপভোগ করেছিল দর্শকসারিতে বসে। 

প্রথম আসর ছিল নকআউট। হারলে বিদায়, জিতলে টিকে থাকা। যে কারণে ৯ দলের আসরের আয়ু খুব বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। ২৪ অক্টোবর শুরু হয়ে ১ নভেম্বর শেষ হয়েছিল। ৯ দলের আসর হওয়াতে নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েকে দিয়ে শুরু হওয়া ম্যাচটি ছিল অনেকটা প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের মতোই। দলগুলোর র‌্যাঙ্কিং করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফলাফল অনুযায়ী। জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড বাকি ৭ দলের মাঝে জায়গা করে নেয়। এরপর একে একে হয় কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শেষ হাসি হাসে দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার এটিই আইসিসির প্রথম ও একমাত্র শিরোপা। 

আইসিসির এই টুর্নামন্টে বাংলাদেশকে খুব বেশি সময় দর্শক হয়ে থাকতে হয়নি। নিজ দেশে পরবাসী থাকলেও ২০০০ সালে কেনিয়াতে পরের আসরেই বাংলাদেশ সুযোগ পায় নিজেদের মঞ্চস্থ করার। আইসিসির ৯ পূর্ণ সদস্য দেশের সঙ্গে দুই সহযোগী সদস্য বাংলাদেশ ও কেনিয়াও খেলেছিল। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে থামে বাংলাদেশের অভিষেক আসরের যাত্রা। ২০০৯ ও ২০১৩ সালে পরপর দুই আসরে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে না থাকাতে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পায়নি। এ ছাড়া প্রতি আসরেই খেলেছে। সেখানে তাদের সেরা সাফল্য ছিল সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অষ্টম আসরে সেমিফাইনাল খেলা। 

এবারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসর। আগের ৮ আসরের ৫টিতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ২টিতে। যার একটি ছিল গতবার ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। ‘এ’ গ্রুপের কার্ডিফে অনুষ্ঠিত ম্যাচে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এক জয়েই ওঠে গিয়েছিল সেমিতে। গ্রুপ পর্বে বৃষ্টির কল্যাণে নিশ্চিত হারা ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ড্র করে এক পয়েন্ট পেয়েছিল। এই ড্র-ই যেমন পরে বাংলাদেশকে সেমিতে খেলতে বিরাট সহযোগিতা করেছিল, তেমনি কপাল পুড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। তারা সেমিতে যেতে পারেনি। এই জয় ছাড়া বাংলাদেশের অপর জয় ছিল ২০০৬ সালের আসরে বাছাইপর্বে। ভারতে অনুষ্ঠিত সেই আসরে ৪ দলের বাছাইপর্বে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১০১ রানে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে। বাছাইপর্ব তৃতীয় হয়ে বাংলাদেশ বাদ পড়েছিল। এই দুই জয়েই বাংলাদেশের ৩টি সেঞ্চুরি ছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শাহরিয়ার নাফীস করেছিলেন ১২৩ রান। বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ২৩১ রান। জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছিল ১৩০ রানে। কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। নিউজিল্যান্ডের ৮ উইকেটে করা ২৬৫ রানের জবাব দিতে নেমে এক পর্যায়ে ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। পরে পঞ্চম উইকেট জুটিতে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ ২২৪ রান যোগ করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। সাকিব ১১৪ রান করে আউট হলেও মাহমুদউল্লাহ ১০২ রান করে অপরাজিত ছিলেন। এই দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফীস ও সাকিব আল হাসান।

এবার নবম আসরে বাংলাদেশের ষষ্ঠ অংশগ্রহণ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দেশবাসীকে শুনিয়ে গেছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গল্প! 

২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ সিমন্স

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:০০ পিএম
২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ সিমন্স
ছবি : সংগৃহীত

চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তার সঙ্গে মেয়াদ ছিল ২০২৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ ভালো করতে না পারলেও ফিল সিমন্সের মেয়াদ বাড়ার গুঞ্জন ছিল।

শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হয়েছে। সিমন্সের সঙ্গে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। 

গতকাল  (২৫ মার্চ) রাতে বিসিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে।

বিসিবির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে ফিল সিমন্স বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এই দলের মধ্যে যে প্রতিভা রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না এবং আমি বিশ্বাস করি আমরা একসঙ্গে দারুণ কিছু অর্জন করতে সক্ষম হব। আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করে সিমন্স বলেন, ‘ইতোমধ্যে কিছু অসাধারণ খেলোয়াড়ের সঙ্গে কাজ করে, আমি এই দলের মধ্যে অপরিসীম প্রতিশ্রুতি দেখতে পাচ্ছি। তাদের দক্ষতা এবং খেলার প্রতি আবেগ আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। একসঙ্গে আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এবং আমরা সত্যিই বিশেষ কিছু তৈরি করতে পারি।’

গেল বছর অক্টোবর বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় টেস্ট সিরিজে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও পরাজিত হয়। ক্যারিবীয়দের মাটিতে টেস্ট সিরিজ ড্র করে, ওয়ানডেতে হার এবং টি-টোয়েন্টি জিতে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপজয়ী তিন গোলরক্ষকের এক কীর্তি

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
বিশ্বকাপজয়ী তিন গোলরক্ষকের এক কীর্তি
ছবি : সংগৃহীত

গোলপোস্টের নিচে তারা অতন্দ্রী প্রহরী। কেউ বা বনে যান চীনের প্রাচীর। যে যত গোল রুখে দিতে পারেন, তাদের নামের পাশে যোগ হয় নানা বিশেষণ। ফুটবল বিশ্বে তিন গোলরক্ষক আছেন যারা একই কীর্তি গড়ে এখনো স্বমহিমায় ভাস্বর। বিশ্বকাপ ফুটবলে এই তিন গোলরক্ষক জিতেছেন সোনালি ট্রফি, কিন্তু বিশ্বকাপের গোটা আসরে গোল হজম করেছেন মাত্র দুটি। তারা হলেন ফাবিয়েন বার্তেজ (ফ্রান্স), জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি) ও ইকার ক্যাসিয়াস (স্পেন)। বিশ্বকাপজয়ী দলের হয়ে সবচেয়ে কম, মাত্র দুটি গোল হজম করার গৌরব শুধ এই তিনজনেরই। 

ফাবিয়েন বার্তেজ (ফ্রান্স ১৯৯৮)

টাক মাথার গোলরক্ষক বার্তেজের সৌভাগ্যের গল্পে বিশেষ এক অধ্যায় আছে। প্রতিটি ম্যাচের আগে তার মাথায় চুমু খেতেন ফরাসি ডিফেন্ডার লরেন্ট ব্লাঁ। সৌভাগ্যের এই রীতিটি দারুণ কাজে দেয়। বার্তেজের অসাধারণ পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স।

গ্রুপ পর্বে ডেনমার্কের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল হজম করেন বার্তেজ, গোলদাতা ছিলেন মাইকেল লাউড্রুপ। তবে ফ্রান্স ম্যাচটি ২-১ ব্যবধানে জিতে চলে যায় দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেমিফাইনালে ডেভর সুকারের গোলে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে গেলেও লিলিয়ান থুরামের জোড়া গোলে জয় নিশ্চিত করে ফরাসিরা।

ফাইনালে নিষিদ্ধ ব্লাঁকে ছাড়াই খেলতে নামে ফ্রান্স, তবে রীতি ভাঙেননি তিনি- আগেভাগেই চুমু দিয়ে শুভকামনা জানিয়ে গিয়েছিলেন! আর বার্তেজও ছিলেন দুর্দান্ত, রোনালদোর ব্রাজিলকে হতাশায় ডুবিয়ে ৩-০ ব্যবধানে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স। গোলপোস্টে বার্তেজ যেন ছিলেন দেবদূত। 

জিয়ানলুইজি বুফন (জার্মানি ২০০৬)

বার্তেজের এই কীর্তির সমতাই গড়েছিলেন ইতালির লিজেন্ডারি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন। তবে তার রেকর্ড আরও বিস্ময়কর, কারণ ওপেন প্লেতে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় তাকে পরাস্ত করতে পারেনি!

গ্রুপ পর্বে একমাত্র গোলটি হজম করেন নিজেদের খেলোয়াড়ের ভুলে। ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান জাকার্দো বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই জড়িয়ে ফেলেন। এরপর ফাইনালে জিনেদিন জিদান তাকে পরাস্ত করেন পেনাল্টি থেকে, যা এক আশ্চর্য চিপ শটে ক্রসবারে লেগে গোললাইনের ওপারে পড়ে।

সেই ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে জিদানের হেড অবিশ্বাস্যভাবে আটকে দেন বুফন, ম্যাচ নিয়ে যান টাইব্রেকারে। এরপর পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে ইতালি। গোলপোস্টের নিচে অবিশ্বাস্য সব সেভ করা বুফন পরিচিত পান সুপারম্যান হিসেবে। 

ইকার ক্যাসিয়াস (দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০) 

রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি ইকার ক্যাসিয়াস ২০১০ বিশ্বকাপে জয়ের নায়ক ছিলেন স্পেনের। ফাইনালে ডাচ ফরোয়ার্ড আরিয়েন রোবেনের শট পায়ের টোকায় দারুণভাবে রুখে দিয়ে দলের বিশ্বকাপ জয়ের পথ নিশ্চিত করেন।

এর আগেই ক্যাসিয়াস নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে গোলশুন্য অবস্থায় প্যারাগুয়ের অস্কার কারদোসোর পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন। পরে ১-০ গোলে জিতে সেমিফাইনালে যায় স্পেন। এভাবে ক্যাসিয়াস বিশ্বকাপের দুই আসরে পেনাল্টি সেভ করা প্রথম গোলরক্ষক বনে যান (টাইব্রেকার বাদে)।

স্পেন পুরো টুর্নামেন্টে দুটি গোল হজম করে, দুটিই গ্রুপ পর্বে। সুইজারল্যান্ডের হয়ে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগান গেলসন ফার্নান্দেজ। আর চিলির হয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে এক ডিপ্লেক্টেট শটে গোল করেন রদ্রিগো মিলার। শেষ পর্যন্ত স্পেন ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো জেতে বিশ্বকাপ। আর ক্যাসিয়াস ছিলেন সেই দলের অপরিহার্য অংশ। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কও। 

এই ভালোবাসা তামিমের প্রাপ্য

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
এই ভালোবাসা তামিমের প্রাপ্য
ছবি : সংগৃহীত

একটাই অনুরোধ করব সবাইকে, ‘আমাকে মনে রাইখেন মানে ভুলে যাইয়েন না।’ এই ছোট্ট কথাটা নিশ্চয়ই সবাই মনে করতে পারছেন। ২০২৩ বিশ্বকাপের দলে নিজের নাম প্রত্যাহারের কারণ জানাতে করা তামিম ইকবালের ভিডিওবার্তার শেষ কথা এটা।

১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের সেই ভিডিওবার্তা তামিমের ফেসবুকে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ দল ভারতের প্লেন ধরার পরই। তামিম নিজেকে বাকিদের মনে জায়গা করানোর যেই আকুতিটা জানিয়েছিলেন তা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। কিন্তু সেই সমালোচকরাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন তামিমের অনুরোধ মেটাতে।

হার্ট অ্যাটাক থেকে লাইফ সাপোর্ট, বিকেএসপির আকাশের কালো মেঘ এসে ভর করে ক্রিকেটপাগল দেশটার কোটি মানুষের মনেও। জীবন ও যমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা তামিমের জন্য গণমানুষের হৃদয়ের আকুতিতেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা এই যাত্রায় ফিরিয়ে দিয়েছেন ওয়ানডে দলের সাবেক অধিনায়ককে। তীব্র সমালোচকদের মনটাও ভারী হয়েছে সাবেক অধিনায়কের অসুস্থতার খবরে।

পেশাদার ক্রিকেটার তামিম ইকবালের জনপ্রিয়তা ও অর্থের ঘাটতি নেই। সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, মনুষ্যত্ব। সেটিও তার মাঝে আছে ঢের বেশি। এই তো তামিমের লাইফ সাপোর্টের খবরেই একে-একে সেই মনুষ্যত্বের খবর সামনে আসতে শুরু করে। কবে কার হার্টে রিং পরানো ব্যয়ভার তামিম বহন করেছেন। কিছুদিন আগে দাবার প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার ছেলের পাশে দাঁড়ানো, জাতীয় দলের লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বাবার হৃদরোগের চিকিৎসায়ও ছিল তামিমের অবদান। করোনাকালীন সময়ে যখন কোনো হাসপাতালে সিট পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন সহযোগিতার হাতটা এই তামিমই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

জনপ্রিয়তায় আড়াল হয় মানুষের মানবিক গুণাবলি, এমন একটা অভিযোগ সমাজে প্রচলিত আছে। তামিম যেন বাস্তব জীবনে ঠিক তার উল্টো। শত জনপ্রিয়তাও তার বিনয়ে চিড় ধরাতে পারেনি একটুও। এই বিনয়টাই বোধহয় তামিমের প্রতি মানুষের উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। যে উদ্বেগ এসেছে দেশ ছাড়িয়ে সীমানার ওপার থেকেও।

দেশসেরা ওপেনারের দুঃসময়ে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা, দিমুথ করুণারত্নে ভারতের দুই সাবেক যুবরাজ সিং ও মনোজ তিওয়ারি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই তালিকায় আছেন দেশটির ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলেও। এসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব ও আইপিএলের কলকাতা নাইট রাইডার্স ফ্র্যাঞ্চাইজিও সুস্থতা কামনা করে তামিমের।

মাঠে ও মাঠে বাইরে যেকোনো ক্রিকেটার আলোচিত ও সমালোচিত দুটোই হয়ে থাকেন। শুধু ক্রিকেটার নন, যেকোনো পেশার মানুষই এমনটার আওতাভুক্ত। এটি তো পেশাগত জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসবকে মিলিয়ে জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। ভারসাম্য বজায়ে কিছুটা এদিক-ওদিক হলেই অনেক উজ্জ্বল সম্পর্কই হয়ে পড়ে মলিন।

সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সম্পর্কটার কথাই ভাবুন। সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্বটাও ফিকে হয়ে গিয়েছিল সময়ের পরিক্রমায়। যেই সাকিব বিশ্বকাপের আগে তামিমের উন্মুক্ত সমালোচনা করেছিলেন টিভিপর্দায়, তিনিই নিজের জন্মদিনের সেরা উপহার হিসেবে তামিমের জন্য সবার কাছে দোয়া চাইলেন। আর তাতেই সাকিব প্রমাণ করলেন বন্ধুত্ব কখনোই ফুরায় না। বিপদেই তো বন্ধুর পরিচয়। কলকাতা নাইট রাইডার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলার সময় তো একাধিকবার সাকিব ‘বেস্টফ্রেন্ড’ হিসেবেই উল্লেখ করেছিলেন।

হার্ট অ্যাটাকের ঘটনায় তামিম শুধু জীবন নয়, ফিরে পেয়েছেন নিজের হারিয়ে ফেলা বন্ধুত্বটাও। বন্ধুহীন জীবনের কোনো অর্থ নেই। সবকিছুই ভালোর জন্য হয়- কথাটা মিলে যাচ্ছে তামিমের বেলায়। হাসপাতাল থেকে মাঠের ক্রিকেটে তামিম ফিরুক আর নাই ফিরুক, নিজের হারিয়ে ফেলা বন্ধুত্বটা ফিরে পাওয়া নিয়ে তামিম নিশ্চিতভাবেই পুলকিত হবেন। সব খারাপেরও তো কিছু ভালো আছে। তাকে নিয়ে বন্ধু সাকিবের উদ্বেগ তো সেটারই ইঙ্গিত করে।

তামিম সুস্থভাবে ফিরে আসুক। এসে জানুক তার কথা সবাই রেখেছে। সবাই তাকে মনে রেখেছিল নিজ নিজ প্রার্থনায়। লর্ডসের শতক উদযাপনের চেয়েও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ও সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসার এই মুহূর্তটাই হয়তো তামিমের জীবনের বিশেষ প্রাপ্তি হয়ে থাকবে।

রাফিনিয়াকে স্কালোনির ক্ষমা

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:০০ পিএম
রাফিনিয়াকে স্কালোনির ক্ষমা
ছবি : সংগৃহীত

আর্জেন্টিনাকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ব্রাজিলের রাফিনিয়া। ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি নিজেও গোল করার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু মাঠে ঘটেছে পুরোপুরো তার উল্টো। ৪-১ গোলে লিওনেল স্কালোনির শীষ্যদের কাছে বিধ্বস্ত হতে হয়েছে রাফিনিয়ার ব্রাজিলকে।

ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন রাফিনিয়া তাই স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিলেন তিনি। তবে জাতীয় দলের অবস্থা অনেকটাই দুর্বল। ফলে সুবিধা করতে পারেনি হলুদ জার্সিধারিরা।

সবশেষ ২০১২ সালের পর আজ আবারও ৪ গোল হজম করে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল দরিভালের শীষ্যরা। এমনকি ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের হারের পর এবারই প্রথম ৪ গোল হজম করেছে ব্রাজিল। 

দারুণ এই জয়ের পরও তেমন উল্লাস করতে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিকে। ম্যাচশেষে ছিলেন অনেকবেশি শান্ত । তাকে প্রশ্ন করা হয় রাফিনিয়াকে নিয়ে। সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তিনি। 

স্কালোনির ভাষ্য, ‘এটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, এই ম্যাচ নিয়ে এমন সব কথা বলার দরকার নেই। আমরা সে জন্য এভাবে খেলিনি। আমি রাফিনিয়াকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ, আমি জানি সে ইচ্ছা করে এটা বলেনি; সে তার দলের হয়ে বলেছে।’

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের বিপক্ষে জয় পেলে স্বাভাবিকভাবেই আনন্দটা বেড়ে যায়। দলের সবাই হয়ে পড়ে উজ্জীবিত। অনেক খেলোয়াড়ের কাছে এটি সেরা ম্যাচ হলেও স্কালোনির ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম, ‘এটা দলীয় জয়। আমরা দল হিসেবে খেলেছি বলেই ব্রাজিলকে হারাতে পেরেছি। এমন খেলোয়াড়দের হারানোর এটাই উপায় দলগত খেলা। তবে বলতে পারব না, এটাই সেরা জয় কি না। দারুণ একটা ম্যাচ আমরা খেলেছি।’

এই জয়ের আগেই ২০২৬ বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। কনমেবল অঞ্চল থেকে সবার আগে তারাই গিয়েছে বিশ্বকাপে। 

রাফিনিয়াকে কথা কমাতে বললেন ওতামেন্দি

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ পিএম
রাফিনিয়াকে কথা কমাতে বললেন ওতামেন্দি
ছবি : সংগৃহীত

দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের লড়াইকে কেন্দ্র করে মাঠে ও মাঠের বাইরে কথা চালাচালি হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেমনটা ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া করেছিলেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।

কিন্তু ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে ৪-১ ব্যধানে বিধ্বস্ত করে রাফিনিয়ার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে আর্জেন্টাইনরা। ম্যাচশেষে তো আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দি মুখ বন্ধ রাখার কথা আলাদাভাবে বলেই দিলেন রাফিনিয়াকে।

আগেরদিন আলবিসেলেস্তেদের হুমকি দেওয়া ব্রাজিলের রাফিনিয়ান আজকের ম্যাচের পুরো সময়জুড়ে কেবল শুনে গেছে দুয়োধ্বনি। 

২০২৩ সালের নভেম্বরে মারাকানা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে জাতীয় সঙ্গীতের সময় আর্জেন্টিনার সমর্থকদের ব্রাজিলের সমর্থকরা দুয়ো দিলে দু পক্ষের মধ্যে দাঙ্গা বেঁধে যায়। পরে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের লাঠিপেটা করেন এবং সফরকারী সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুঁড়ে মারে। সেই ঘটনার পর আজই প্রথমবার মুখোমুখি হলো দুই দল।

ম্যাচের ৩৮ মিনিটে রাফিনিয়া তালিয়াফিকোকে ফাউল করলে। ওতামেন্দি, পারদেস, রদ্রিগো ডি পলরা রাফিনিয়ার দিকে তেড়ে যান। তখনই রাফিনিয়াকে ওতামেন্দি বলেছেন, ‘কথা কম বলো’।

রাফিনিয়ার মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি আর্জেন্টাইন সমর্থকেরাও। ম্যাচ শেষে টিওয়াইসি স্পোর্টস রাফিনিয়ার মন্তব্য নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা রাফিনিয়াকে নিম্নমানের ভীত ফুটবলার বলেছেন। পুরো ম্যাচেও আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কাছ থেকে দুয়োধ্বনি শুনেছেন এই ব্রাজিলিয়ান।