২০০২ সালের পর ব্রাজিল যখনই বিশ্বকাপে মাঠে নেমেছে তখনই তাদের মিশনের নাম হয়েছে ‘হেক্সা মিশন’। মানে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের যাত্রা। যদিও সেই মিশনটা আজ পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি তাদের। শুধু তাই নয়, ২০০২ সালের পর বিশ্বকাপের ফাইনালটাই সেলেসাওদের জন্য আজও অস্পর্শ। সর্বোচ্চ একবার সেমিফাইনালে উঠেছিল দলটি ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে। শেষ চারে যেখানে জার্মানির কাছে হলুদ শিবিরকে হজম করতে হয়েছিল সাত গোল।
তার পরও পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিল সবার চেয়ে এগিয়ে। এমন কৃতিত্ব নেই আর কারও। চারটি করে জিতে এই তালিকায় ব্রাজিলের পরেই দ্বিতীয় স্থানে আছে জার্মানি ও ইতালি। তিনবার জিতে তৃতীয় স্থানে আছে আর্জেন্টিনা। পাঁচ বিশ্বকাপ জয়ের মতো একটি রেকর্ড রয়েছে ব্রাজিলের, যা এখন পর্যন্ত কেউ ছুঁতে পারেনি। আর তা হলো বিশ্বকাপে টানা ১১ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড। ব্রাজিল এই রেকর্ডটি গড়েছিল ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ মিলিয়ে।
ব্রাজিলের এই অবিশ্বাস্য জয়ের ধারা শুরু হয়েছিল ২০০২ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে এবং শেষ হয়েছিল ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে। এই দুই আসরে তাদের দলে ছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার রবার্তো কার্লোস, রোনালদিনহো, রিভালদো ও রোনালদোর মতো তারকা ফুটবলাররা।
উত্তাল শুরু ও দাপুটে জয়
২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অভিযান শুরু হয়েছিল তুরস্কের বিপক্ষে নাটকীয় এক জয়ের মাধ্যমে। ম্যাচে প্রথমে পিছিয়ে পড়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু ‘ফেনোমেনোন’ খ্যাত রোনালদো সমতা ফেরান। আর শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে রিভালদোর গোল ব্রাজিলকে এনে দেয় দারুণ জয়।
এরপর থেকে ক্রমশ দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে হলুদ শিবির। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচেই জিতে তারা নকআউট পর্বে পা রাখে। গ্রুপ পর্বের বাকি দুই ম্যাচে উড়িয়ে দেয় চীন ও কোস্টারিকাকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে বেলজিয়াম এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তারা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল সেই তুরস্ক। রোনালদোর একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে জিতে ব্রাজিল উঠে যায় ফাইনালে।
রোনালদোর নৈপুণ্যে পঞ্চম শিরোপা
ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোনালদো আবারও নিজেকে প্রমাণ করেন। তার দ্বিতীয়ার্ধের জোড়া গোলেই ব্রাজিল ২-০ ব্যবধানে জার্মানিকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায়। পুরো টুর্নামেন্টে একের পর এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখানো রোনালদো জেতেন গোল্ডেন বুট অর্থাৎ আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার।
২০০৬ বিশ্বকাপে নতুন রেকর্ড
চার বছর পর ব্রাজিল বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে জার্মানিতে যায়। গ্রুপ পর্বে টানা তিনটি ম্যাচ জিতে (জাপান, ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া) তারা আবারও শতভাগ সাফল্য নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। এরপর ঘানাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা ১১ ম্যাচ জয়ের নতুন ইতিহাস গড়ে ব্রাজিল। যদিও রেকর্ডটি হয় অষ্টম ম্যাচেই (ইতালির জয় সাতটি)। সেখান থেকে আরও তিন ধাপ এগিয়ে থামে ব্রাজিল।
ফরাসি জাদুতে স্বপ্নভঙ্গ
কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্স। যে দলটি ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেদিনের নায়ক ছিলেন জিনেদিন জিদান, আর ২০০৬ সালেও তিনিই ব্রাজিলের স্বপ্ন ভেঙে দেন। যদিও শেষ আটের ম্যাচে জিদান গোল পাননি। তবে তার অসাধারণ অ্যাসিস্টে একমাত্র গোলটি করেছিলেন থিঁয়েরি অঁরি। ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। ১২তম ম্যাচে থেমে যায় ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়যাত্রা।
সেমিফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে ফ্রান্সের জয়ের নায়ক ছিলেন জিদান। তার গোলেই ফরাসিরা ওঠে ফাইনালে। ইতালির বিপক্ষে সেই ফাইনাল আজও আলোচিত। জিদানের ঢুস কাণ্ড ঘটে এই ম্যাচেই। মাতেরাজ্জিকে ঢুস দেওয়ায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জিদান। টাইব্রেকারে শেষ হাসি ইতালির।
বিশ্বকাপে টানা জয়
১. ব্রাজিল ১১ ম্যাচ (২০০২-০৬)
২. ইতালি ৭ ম্যাচ (১৯৩৪-৩৮)
৩. ইংল্যান্ড ৬ ম্যাচ (১৯৬৬-৭০)
(টানা ৬ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড আছে ৪ দলের পাঁচবার)
৪. উরুগুয়ে ৫ ম্যাচ (১৯৩০-৫০)
(উরুগুয়েসহ পাঁচ জয়ের ঘটনা ঘটেছে ১২ বার)