
ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েই চলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ। বোর্ডগুলোও ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে। এখনকার মতো ক্রিকেট সবসময় টাকা আয়ের যন্ত্র ছিল না। চোখ রাখা যাক আড়াই দশকেরও পেছনে, বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে। সে বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আরও বেশি দেশে খেলাটি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তহবিল খুঁজছিল। অর্থ সংগ্রহ করতে তৎকালীন চেয়ারম্যান জগমোহন ডালমিয়া চালু করেন ‘নকআউট ট্রফি।’ ৯৯ বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে বিশেষ এই আয়োজন পায় মিনি-বিশ্বকাপ তকমা।
সময়ের স্রোতে টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেছে, কিন্তু গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণে। ক্রমাগত ঘষা-মাজার মাধ্যমে বৈশ্বিক এই ইভেন্টটি ক্রিকেটারদের জন্য এখন লড়াইয়ের রঙিন এক মঞ্চ। ১৯৯৮ সালে টুর্নামেন্টের প্রথম সংস্করণের নাম ছিল উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ। স্বাগতিক দেশ ছিল বাংলাদেশ। মজার বিষয় হলো, আয়োজক দেশের জাতীয় দলের অংশগ্রহণ ছিল উদ্বোধনী আসরে। কারণ ইন্টারন্যাশনাল কাপে খেলার যোগ্যতা ছিল না টিম টাইগার্সের (টেস্ট স্ট্যাটাস ছিল না)।
যাইহোক, অর্থ আয়ের ভাবনা ডুবতে চলেছিল পানিতে। ওই বছর ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ঢাকায়। উপায়ান্তর না দেখে টুর্নামেন্টটি সম্পূর্ণরূপে ভারতে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু খেলার সময় আসার আগেই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং আইসিসিকে দেয় সবুজ সংকেত। বলাই যায়, ভাগ্যক্রমে ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছিল বাংলাদেশ। কারণ ভেন্যু হিসেবে তৃতীয় অপশন ছিল ঢাকা। প্রথম পছন্দ ছিল ফ্লোরিডার ডিজনিওয়ার্ল্ড এবং দ্বিতীয়টি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
প্রথমে আসরে অংশ নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে। নামিদামি দলগুলোর খেলা দেখতে সে সময় ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভক্তদের ভিড় ছিল বিশাল। টুর্নামেন্ট ছিল অনেক দ্রুতগতির, ২৪ অক্টোবর শুরু হয়ে শেষ হয়েছিল ১ নভেম্বর (১৯৯৮ সালে)। এ জন্য সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্রামের দিনও ছিল না। পরের দিন ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ক্লান্ত ক্যারিবীয়রা উদ্বোধনী সংস্করণে পেয়েছিল রানার্সআপ ট্রফি।
আসরজুড়ে বল নিচু এবং ধীরগতিতে থাকায় পিচগুলো ব্যাটিংবান্ধব ছিল না। কেবল ভারতই (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে) ৩০০ রানের কোটা অতিক্রম করতে পেরেছিল। সর্বনিম্ন স্কোর ছিল চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার। বৃষ্টিবিঘ্নিত একটি ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল ১৩২ রানে। তবে যে লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল কাপের সেটা পূরণ হয়েছিল আইসিসির। টুর্নামেন্ট থেকে আয় করেছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন পাউন্ড। পরবর্তী টুর্নামেন্টও খুব বেশি দীর্ঘ ছিল না, মাঠে গড়িয়েছিল প্রথমটির ন্যায় নকআউট ফরম্যাটে।
২০০২ সালে বদলে যায় নাম। নতুন নামকরণ করা হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এখন পর্যন্ত পরিচিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নামেই। ওই বছর প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলেছিল টুর্নামেন্ট। ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ২ বছরান্তে মাঠে গড়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। পরের আসরের পর্দা উঠেছিল ৩ বছর পর। এর কারণও আছে। ২০০৮ সালের ভেন্যু ছিল পাকিস্তান। কিন্তু নিরাপত্তা জনিত কারণে তা সরিয়ে নিয়ে ২০০৯ সালে আয়োজন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। তারপর সিদ্ধান্ত হয় যে ৪ বছরান্তে হবে এই টুর্নামেন্ট। সে অনুযায়ী ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে মাঠে গড়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এরপরই লম্বা বিরতি। মূলত আইসিসি চেয়েছিল সব ফরম্যাটের জন্য একটি টুর্নামেন্ট রাখতে। কিন্তু ২০২১ সালে বদলে যায় সিদ্ধান্ত এবং তখনই বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানিয়েছিল ২০২৫ সালে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরের আসর।