
বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই হামজা চৌধুরী ঘোষণা দিলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা উইন করমু।’ এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচে ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে হামজা চৌধুরীর অভিষেক হবে বাংলাদেশের জার্সিতে। এই ম্যাচ খেলার জন্য তিনি গতকাল ম্যানচেস্টার থেকে সরাসরি সিলেটে এসে নেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সিলেটের আঞ্চিলক ভাষায় তিনি ভারতকে হারানোর এ কথা বলেন।
রবিবার নিজের একটি ফুটবল ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় বিমানে উঠে গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে হামজাকে বহনকারী বিমান সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি বের হয়ে আসার পর তাকে বরণ করে নিতে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। চরম অব্যবস্থাপনার মাঝেই হামজা চৌধুরীকে ফুলের তোড়া দিয় বরণ করে নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বর্তমানে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা বা সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থায় কোনো কমিটিই নেই। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে দেয়।
যে কারণে হামজাকে বরণ করতে সাংগঠনিকভাবে কোনো আয়োজন ছিল না। বাফু্ফের কার্যনির্বাহী পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে উপস্থিত ছিল। উপস্থিত ছিলেন হামজাদের নতুন স্পন্সর ইউসিবির প্রতিনিধিরাও। সেই সঙ্গে ছিলেন ঢাকা ও সিলেটের স্থানীয় প্রচুর সাংবাদিক। সকাল থেকেই ফুলের তোড়া হাতে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। একদিকে হামজার চেহারা আগে টিভিতে দেখানোর প্রতিযোগিতায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি গেটে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। অন্যদিকে হামজার ভক্ত-সমর্থকরা ফুল নিয়ে অবস্থান করেন। এই দুই দলের ধাক্কাধাক্কিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয়ে পুলিশ বাহিনীকে। সংবাদকর্মী, হামজা চৌধুরীর ভক্ত, পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।
বাফুফে ও ইউসিবির পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দেওয়ার পর হামজাকে নিয়ে আসা হয় সাংবাদিকদের সামনে। এ সময় হামজা হামজা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সিলেট বিমানবন্দর প্রাঙ্গণ। এ সময় হামজা সিলেটি ভাষায় বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা উইন করমু। আমরা উইন করিয়া প্রোগ্রেস করতে পারমু।’
কিন্তু হুড়োহুড়ি ও হইচইয়ের কারণে হামজা চৌধুরী এখানে খুব বেশি কথা বলতে পারেননি। অল্প সময়ের কথাই তিনি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের কথা বলেন। দেশের মানুষের এ রকম আগ্রহ দেখে তিনি নিজের প্রতিক্রিয়া চেপে রাখতে পারেননি। ইংরেজি ভাষায় বলেন, ‘অ্যামাজিং অ্যামাজিং। অনেক দিন পরে এসেছি। আমি খুবই রোমাঞ্চিত।’ তুমুল হট্টগোলের মাঝে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। তার কিছু বোঝা যাচ্ছিল, কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। হামজা নিজেও না বোঝার কথা বলছিলেন। এ সময় বাফুফের কর্মকর্তারা তাকে সেখান থেকে নিয়ে যান। পরে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি ছাদখোলা গাড়িতে করে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী আগেই সিলেট চলে এলেও হামজার সঙ্গে ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন তার মা, স্ত্রী, সন্তানসহ ৯ জন।
রাস্তার দুই পাশে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে হামজা হবিগঞ্জে এসে পৌঁছান বেলা ৩টার দিকে। বাঁশি-ঢোল বাজিয়ে অভ্যর্থনা জানান এলাকার যুবকরা। মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে নিয়ে আসেন নিজ গ্রামে। হামজা চৌধুরী যখন নিজ বাড়িতে প্রবেশ করেন, তখন এক অন্য রকম পরিবেশ। হামজা হামজা স্লোগানে মুখরিত চারপাশ। প্রথমবারের মতো পুত্রবধূ বাড়িতে এসেছেন। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বরণ করে নেওয়া হয়। বাড়িতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর মঞ্চে ওঠেন হামজা। এ সময় গ্রামবাসীর ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। তবে দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্ত থাকায় ভক্ত-দর্শনার্থীর উদ্দেশে তেমন কোনো বার্তা দেননি। শুধু শুভেচ্ছা জানিয়েই মঞ্চ ত্যাগ করেন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত হামজা চৌধুরী।
হামজা চৌধুরীর বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘হামজা তার নিজের গ্রামকে অনেক ভালোবাসে। যে কারণে সে দেশে ফিরেই প্রথমে বাড়িতে এসেছে। এখানে সে এক দিন থাকবে। গ্রাম ঘুরে দেখবে, গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলবে। পরে সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে।’ এলাকার যুবক রাজু আহমেদ বলেন, ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় আমরা খুবই খুশি। আশা করছি এভার বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন কিছু হবে। হামজার প্রতি আমাদের যে আশা, সেটি তিনি পূরণ করবেন।’ আরেক যুবক সুয়েব মিয়া বলেন, ‘হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ভারতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা অবসরে যাওয়া সুনীলকে আবার দলে ফেরত আনছে। এতেই বোঝা যায় হামজা আমাদের দেশের কত বড় সম্পদ। আমরা আশা করি তিনি বাংলাদেশকে দ্রুতই বিশ্বকাপে নিয়ে যাবেন।’