২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ৪-০ গোলে হেরে এসেছিল বার্সেলোনা। কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে ফিরতি লেগে জয়ের ব্যবধানটা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ন্যু ক্যাম্প বলেই ঝলসে উঠতে পেরেছিল কাতালানরা। নেইমারের শেষ মুহূর্তের গোলে পিএসজিকে ৬-১ গোলে হারিয়ে প্রত্যাবর্তনের নতুন সংজ্ঞাই তৈরি করেছিল বার্সা। স্মরণীয় এই প্রত্যাবর্তনকে স্প্যানিশ মিডিয়া নাম দিয়েছিল রেমোন্তাদা, মানে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে আসা।
ন্যু ক্যাম্পের সেই আবহ নিয়েই আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মাঠে নামছে রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে এমবাপ্পেদের প্রতিপক্ষ আর্সেনাল। প্রথম লেগে ৩-০ গোলের জয়ে যারা স্বপ্ন দেখছে সেমিতে যাওয়ার। স্বপ্নিল প্রত্যাবর্তন নাকি বিদায় ঘণ্টা বাজবে আজ চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের? কোটি টাকার প্রশ্ন এটি। তবে সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ বার্নাব্যুতে। অন্যদিকে প্রথম লেগে ২-১ গোলে জেতা ইন্টার মিলানকে আজ ঘরের মাঠে আতিথেয়তা দেবে বায়ার্ন মিউনিখ। রিয়ালের মতো জার্মান জায়ান্টদেরও আজ ঘরের মাঠে ফিরে আসার গল্প লিখতে হবে। না হলে নিতে হবে বিদায়।
আলোচনায় ফ্রি কিক
রিয়ালের সবচেয়ে আলোচিত তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে এখনো সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে গোলের খাতা খুলতে পারেননি। অথচ আর্সেনালের ১০৫ মিলিয়ন পাউন্ডের কেনা ডেক্লান রাইস তাকে (এমবাপ্পে) যেন শেখাতে এসেছিলেন সেট-পিসের পাঠ! মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে দুটি দারুণ ফ্রি-কিকে গোল করে তাক লাগিয়ে দেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। তার অসাধারণ দুই গোলেই এমিরেটসে বাজেভাবে হারতে হয় রিয়ালকে। বার্নাব্যুতে তাই আজ থাকবে ফ্রি কিকের চ্যালেঞ্জও।
প্রত্যাবর্তন
রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপীয়ান কাপ কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে মাত্র পাঁচবারই প্রথম লেগে তিন বা ততোধিক গোলের ব্যবধানে হেরেছে রিয়াল। এর মধ্যে চারবারই বেজেছে বিদায় ঘণ্টা। ব্যতিক্রম একবারই। সেটাও ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে ডার্বি কাউন্টির বিপক্ষে প্রথম লেগে ৪-১ গোলে হেরে দ্বিতীয় লেগে ৫-১ জিতে কোয়ালিফাই করেছিল রিয়াল। তার মানে ইতিহাস খুব একটা রিয়ালের পক্ষে নেই।
দুই দলের হালহকিকত
গত রবিবার আলাভেসের বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচে ক্যামাভিঙ্গার গোলে ১-০ ব্যবধানে জেতে রিয়াল। যে ম্যাচে এমবাপ্পে লাল কার্ড দেখেন। তবে ইউরোপীয় ম্যাচে তার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নয়। তবে প্রথম লেগে হলুদ কার্ডের কারণে নিষিদ্ধ ক্যামাভিঙ্গা থাকবেন না দ্বিতীয় লেগে। ইনজুরিতে রয়েছেন এদার মিলিতাও ও দানি কারভাহাল। শঙ্কায় আছেন ফেরলান মেন্ডি ও লুনিনও।
আর্সেনালের জন্য বড় ধাক্কা ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ম্যাচে জর্জিনহো ও পার্টের চোট। যদিও গুরুতর কিছু নয়। বেঞ্চে থাকা জুরিয়েন টিম্বার ফিরছেন মূল একাদশে। বেঙ্কস থেকে ফিরবেন সাকা, ওডেগার্ড, মেরিনোরা। তবে ইনজুরি তালিকায় আছেন জেসুস, গ্যাব্রিয়েল, হ্যাভার্টজ, টমিয়াসু ও ক্যালাফিওরি।
মার্সেলোর হুমকি
রিয়াল মাদ্রিদের অনেক স্মরণীয় সাফল্যের সাক্ষী মার্সেলো। এর মধ্যে আছে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ কিছু রঙিন অধ্যায়ও। এখন তার তিনি রিয়ালে নেই। তবে ব্রাজিলের সাবেক এই ফুটবলারের বিশ্বাস, রিয়াল ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদকে কখনোই বিবেচনার বাইরে রাখা যাবে না। যদিও ৩ গোল মানে অনেক বড় কিছু। তবে রিয়াল মাদ্রিদকে ভাবনায় রাখতেই হবে এবং আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে তারা ঘুরে দাঁড়াবে। রিয়াল মাদ্রিদ ইজ রিয়াল মাদ্রিদ এবং তারা সবসময় ঘুরে দাঁড়ায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফিরতি লেগ হচ্ছে বার্নাব্যুতে। সমর্থকেরা দারুণ প্রেরণা জোগাবে এবং ফুটবলাররা আত্মবিশ্বাসী যে, তারা পারবে। অবশ্যই আমরা জানি না, মাঠে ফল কী হবে। তবে আমাদের সবটুকু বিশ্বাস আছে, রিয়াল মাদ্রিদ পারবে ঘুরে দাঁড়াতে।’
রিয়াল মাদ্রিদ: ব্যাক টু দ্য ওয়াল
মনস্তাত্ত্বিক চাপ: প্রথম লেগে বাজে হারের পর আর কিছু নেই হারানোর, এটাই হতে পারে মাদ্রিদের জন্য বড় মোটিভেশন।
রাতের জাদু: অতীতে বার্নাব্যুতে যে কত অঘটন ঘটেছে, তার সাক্ষী পুরো ফুটবল বিশ্ব। তবে রাতের জাদুতে এগিয়ে থাকছে রিয়ালই।
দুর্বলতা: রক্ষণভাগ ভঙ্গুর। ১০টি টানা হোম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা গোল হজম করেছে। তা ছাড়া ইনজুরিতে ভুগছেন মেন্ডি, লুনিন; কারভাহাল।
তরুণ রক্তে ভরসা: বেলিংহ্যাম-ভিনিসিউস-রদ্রিগো-এমবাপ্পে— একেকজন একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
আর্সেনাল: শান্ত, সচেতন, সাহসী
দারুণ ফর্মে: টানা ৯ ম্যাচ অপরাজিত, আক্রমণভাগে ধারাবাহিকতা।
রাইস ও মেরিনো ফ্যাক্টর: রাইস যেমন মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি মেরিনো এবার চারবার গোল করেছে রিয়ালের বিপক্ষে- এটা কিন্তু তুরুপের তাস!
চ্যালেঞ্জ: লিড ধরে রাখা, রক্ষণে মনোযোগ ও ইনজুরি সমস্যা সামাল দেওয়া।
উইং গেম দুর্দান্ত: সাকা-মার্তিনেল্লির গতি রিয়ালের ফুল-ব্যাকদের হিমশিম খাওয়াতে পারে।