
ম্যাচ শুরুর ঠিক আধা ঘণ্টা আগে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের ঘোষক দুই দলের একাদশ জানালেন। সবার আগে স্বাগতিক ভারতের একাদশই ঘোষণা করলেন তিনি। জার্সি নম্বর ইলেভেন- সুনীল ছেত্রী বলতেই হর্ষধ্বনি উঠল গ্যালারিতে। ১৫ হাজার ১০০ জন ধারণক্ষতার নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারি অবশ্য তখনো পুরোপুরি ভরে ওঠেনি। এর পরও দর্শকদের সেই হর্ষধ্বনি বুঝিয়ে দিল এ ম্যাচের অন্যতম চরিত্রের নাম সুনীল ছেত্রী। তবে বড় চরিত্র যে আছেন আরও একজন, সেটাও খানিক পর বুঝিয়ে দিলেন সেই ঘোষক। বাংলাদেশের একাদশ ঘোষণার সময় তিনি ‘জার্সি নম্বর এইট’ কথাটা লম্বা টানে বললেন। যেন বাড়তি উত্তেজনা ছড়াতে চাইলেন তিনি। তার নিজের কণ্ঠেও তখন রোমাঞ্চ।
জার্সি নম্বর এইট হলেন হামজা চৌধুরী। এ নামটিও যখন উচ্চারিত হলো, একই রকম হর্ষধ্বনি উঠল গ্যালারিতে। উঠবেই তো! হাজমা যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার। বাংলাদেশের জার্সিতে তার অভিষেক হলো এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের এই ম্যাচ দিয়ে। ওদিকে এএফসি এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার লক্ষ্য পূরণে অবসর ভেঙে সুনীল ছেত্রীকে ফিরিয়ে এনেছিল ভারত। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আবরণে এই লড়াইটা অনেকটা হামজা-সুনীলের লড়াই হিসেবেই পরিচিতি পায়।
জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ম্যাচটি শুরু হয়। তবে দুপুর গড়াতেই ‘পোলো গ্রাউন্ড’ নামে পরিচিত নেহরু স্টেডিয়ামের আঙিনায় আলাদা প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়। ম্যাচটি ঘিরে জার্সি-পতাকা বিক্রির ধুম পড়েছিল। এখানে অবশ্য স্বাগতিক ভারতের জার্সি-পতাকারই আধিক্য। কেউ বাংলাদেশের পতাকা, জার্সি বিক্রি করছেন এমন কিছু চোখে পড়েনি। দর্শকদের আধিক্যও ছিল ভারতেরই। বাংলাদেশের সমর্থক বলতে ঢাকা থেকে আসা বাফুফের কর্মকর্তা, সংবাদকর্মী ও কয়েকজন সাবেক খেলোয়াড়ই।
পাশের দেশে খেলা। বাংলাদেশি দর্শকদেরও ঢল নামতে পারত শিলংয়ের গ্যালারিতে। কিন্তু সেটা হয়নি মূলত ভিসা জটিলতায়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশিরা যে ভারতের ভ্রমণ ভিসা পাচ্ছেনই না বলা চলে। তাই তো বিকেল নাগাদ শিলংয়ের পোলো গ্রাউন্ডে দর্শকদের যে স্রোত দেখা গেল, তার পুরোটাই আসলে ভারতীয়। সেই দর্শকদের কণ্ঠে শুধু সুনীল-সুনীল রব। একজন সুনীল আছেন তো, তাদের জয় নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। দার্জিলিং থেকে সপরিবারে খেলা দেখতে আসা চিরঞ্জিত বোস যেমন বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘ম্যাচটা আমরা ২-০তে জিতব।’ শিলংয়ে তিনি বেড়াতে এসেছিলেন। ফিরে যেতেন আগেই। কিন্তু ভারতের খেলা বলে অন্তত আরও একটা দিন থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চিরঞ্জিত বোস মোহনবাগানের পাঁড়ভক্ত। বললেন, ‘আমি যেখানেই যাই মোহনবাগানকে বুকে নিয়ে থাকি।’ এদিন ভারতের পতাকার সঙ্গে মোহনবাগানের পতাকা নিয়েও মাঠে ঢুকেছেন তিনি।
ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে সুনীল ও হামজার দ্বৈরথ নিয়ে এই ফুটবল ভক্তের কথা, ‘সুনীল ছেত্রী এমন একজন খেলোয়াড়, যার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। এ জন্য কোচ তাকে ফিরিয়ে এনেছে। ৯৫টি গোল করেছেন তিনি। আশা করি ৯৬ নম্বর গোলটি তিনি আজ করবেন। আর হামজা চৌধুরী ইংল্যান্ডে খেলে এসেছেন। অবশ্যই তিনি ভালো খেলোয়াড়। তবে আমি মনে করি ফুটবল দলগত খেলা। একটা খেলোয়াড় কিছু করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। তবে বাংলাদেশ দলকে আমার শুভ কামনা, আপনারা ভালো খেলুন। কিন্তু আশা করি আপনাদের নিরাশ হয়েই ফিরতে হবে।’
স্ত্রী মন্দিরা বোসের কথা, ‘দুই দলেই খুব ভালো খেলোয়াড় আছে। ফলাফল যেকোনো কিছুই হতে পারে। তবে ভারতীয় হিসেবে আমি চাইব আমার দেশ জিতুক।’ মেয়ে প্রিয়দর্শিকা বোস ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীর খেলা দেখতে রোমাঞ্চিত বলেই জানালেন। তবে এটাও বলতে ভুললেন না, ‘আমার মনপ্রাণ উজাড় করে আমি আমার দলকে সাপোর্ট দেব। তবে আশা করি আমার দল জিতবে।’