
তখনো টি-টেয়েন্টি ক্রিকেটের প্রচলন হয়নি। বাংলাদেশও টেস্ট মর্যাদা পায়নি। যে কারণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেত কালেভদ্রে। তাও ওয়ানডে ম্যাচ। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে সেই ম্যাচগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে আনন্দের ঢেউ খেলে যেত। ২০০০ সালে আইসিসির কাছ থেকে টেস্ট খেলার ছাড়পত্র পাওয়ার পর বাংলাদেশ দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার খরা কেটে যায়। এখন হরহামেশাই খেলছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। যেন অনেকটা মামাবাড়ির দুধ-ভাতের মতো।
বাংলাদেশের জায়গায় এখন দাঁড়িয়ে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলার ছাড়পত্র পায়নি। ফলে তাদেরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ঘাটতি আছে। তবে বাংলাদেশের মতো ব্যাপকভাবে নয়। এর কারণ আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ না পাওয়া দেশগুলো নিজেদের মাঝে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে থাকে। এই ম্যাচ আবার বেশি খেলে থাকে তারা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কিন্তু তারপরও টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বিপক্ষে খেলার মর্যাদাই আলাদা। আমিরাতকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। বিসিবি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করেছে, যেখানে স্বাগতিক আবার আরব আমিরাতই। প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আজ শারজাহতে। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। পরের ম্যাচের ভেন্যুও এই শারজাহ। খেলাও শুরু হবে একই সময়ে।
বিসিবি এই সিরিজের আয়োজন করেছিল মূলত বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরকে সামনে রেখে। বাংলাদেশ দল যেহেতু দুবাই হয়ে পাকিস্তান যাবে, সেই কারণে যাত্রা পথে দুটি ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করে। আরব আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডও বিসিবির এমন প্রস্তাব লুফে নেয়। পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে একসময় বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আমিরাত সফর আবার ঠিকই ছিল। পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির পর বাংলাদেশ সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়াতে এখন আবার বাংলাদেশ দল পাকিস্তান খেলতে যাবে। তবে আগের সূচি অনুযায়ী নয়। আগের সূচিতে ছিল আমিরাতে দুই ম্যাচ খেলে সেখান থেকেই পাকিস্তান যাবে। এখন বাংলাদেশ দল আমিরাত থেকে দেশে ফিরে এসে তারপর যাবে পাকিস্তান। এদিকে পাকিস্তান সফরের সূচিতেও এসেছে পরিবর্তন। ২৫ মে তারিখের পরিবর্তে এখন সিরিজ শুরু হবে ২৭ মে।
আমিরাতের বিপক্ষে এই সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ এ বছর প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামবে। আমিরাতও তাই। বাংলাদেশ সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিল গত বছর ১৯ ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট ভিনসেন্টে, আমিরাত খেলেছিল তার দুই দিন পর ২১ ডিসেম্বর কুয়েতের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে (দুবাইয়ে)। দুই দলই জয় পেয়েছিল।
বাংলাদেশ যখন আইসিসির পূর্ণ সদস্য ছিল না, তখন তারা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ কম পেলেও আমিরাতের ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। তারা অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে ১৮২টি, যার অধিকাংশই আইসিসিরি পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে। আমিরাত খেলেছে ১১৮টি। তবে এখানে প্রতিপক্ষ বেশি আইসিসির সহযোগী দেশ। পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে তারা ম্যাচ খেলেছে ৩৫টি। যেখানে আছে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ। সব কটিতেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ খেলেছিল ২০১৬ সালে মিরপুরে এশিয়া কাপে। ৫১ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দলের একমাত্র সৌম্য সরকার আছেন বর্তমান দলে। পরের দুই ম্যাচ হয়েছিল দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। এই সিরিজও হয়েছিল বর্তমান সিরিজের মতো বিসিবির উদ্যোগেই। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খেলেছিল। এই দুই ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড গিয়ে পাকিস্তানের অংশগ্রহণে খেলেছিল তিন জাতির টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। এটাও ছিল টি-টেয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ। আমিরাতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ ও ৩২ রানে। এই সিরিজ খেলা লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম কেবল আছেন বর্তমান দলে। লিটন দাস আবার দলকে দেবেন নেতৃত্ব। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দলের সর্বশেষ খেলা তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ, যেখানে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল, সেই দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন এই সিরিজে। উপরের চারজন ছাড়া বাকিরা হলেন তানজিদ তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, জাকের আলী, শেখ মাহেদী হাসান (সহঅধিনায়ক), শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব, হাসান মাহমুদ।
এদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে আমিরাত ক্রিকেট বোর্ড দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে একটি শক্তিশালী দল ঘোষণা করেছে। গত ডিসেম্বর কুয়েতের বিপক্ষে খেলা ২২ জনের দল থেকে ১২ জনকেই বাদ দিয়েছে। দল ঘোষণা করেছে ১৫ জনের। দলে সুযোগ পাওয়া ৫ জনই নতুন মুখ। এদের মাঝে দুই পেসার- সাঘির খান ও মোহাম্মদ জোহাইদ এবং স্পিনার হায়দার আলী প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। অপর দুই নতুন মুখ- ব্যাটার ইথান ডি সুজা ও পেসার মাতিউল্লাহ খান। তারা এর আগে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন যথাক্রমে ৩টি ও ১টি। দলটিকে নেতৃত্ব দেবেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। তিনি ৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন দেশের হয়ে। আবার দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানও (২৫১৫) তার।
প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস আবার শঙ্কার। যেখানে আছে পচা শামুকে পা কাটার মতো ঘটনা। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচই হেরে গিয়েছিল। আবার তাদের হারের তালিকায় আছে হংকং, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড (দুই বার)। এ রকম অঘটন ওয়ানডে ম্যাচের তুলনায় টি-টোয়েন্টিতেই বেশি। কাজেই এই শঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে?