
তিনি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলন কিংবা অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা, সব জায়গায় তারই উপস্থিতি। কিন্তু ম্যাচ টাইমের ক্ষেত্রে তিনি থেকে যাচ্ছেন উপেক্ষিত। বলা হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কথা। অধিনায়ক হওয়া স্বত্বেও গত মার্চে শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে একাদশেই জায়গা হয়নি তার। এমনকি বদলি হিসেবে এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। অথচ হামজা চৌধুরী আসায় ম্যাচটা নিয়ে যখন তুমুল উন্মাদনা, তখনো অধিনায়ক হিসেবে সব জায়গায় দেখা গেছে জামাল ভূঁইয়াকে।
শিলংয়ে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও ছিলেন জামাল। কিন্তু তার ম্যাচে এক মিনিটও সুযোগ না পাওয়া ছিল বড় বিস্ময়ের। একই সঙ্গে এটা তার জাতীয় দলে শেষের ইঙ্গিত কিনা সেই প্রশ্নও জোড়ালো হয়ে দেখা দিয়েছিল। যে প্রশ্ন থাকছে আজ ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই ম্যাচ ঘিরেও। ভুটান ম্যাচকে সামনে রেখে গতকাল অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জামাল। এ সময় তাকে সরাসরিই করা হয়েছে প্রশ্নটা। আগামীকালের ম্যাচে আপনি থাকছেন তো? জামাল হেসে বলেছেন, ‘এগুলো আমার হাতে নেই।’ কোচের কাছ থেকেও জামালের ম্যাচ টাইম নিয়ে পরিস্কার কোনো বার্তা মেলেনি।
আসলে পরিস্থিতি এখন এমন যে জামালের একাদশে জায়গা পাওয়াটা খুব চ্যালেঞ্জিং। কারণ মিডফিল্ডে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে তার তো জায়গায়ই হয়নি। এর আগের ম্যাচগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, জামালের ম্যাচ টাইম খুব কমে গেছে। গত বছর নভেম্বরে মালদ্বীপের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে জামাল পারিবারিক কারণে স্কোয়াডে ছিলেন না। তার আগে ভুটান সফরে অধিনায়ক হিসেবে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ম্যাচেই তিনি শুরুর একাদশে ছিলেন না। প্রথম ম্যাচে ৭৪ মিনিট ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৫ মিনিটে তাকে মাঠে নামান বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তার আগের ম্যাচগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায় জামাল ৯০ মিনিট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, এমন উদাহরণ খুব কম। আর এখন তো মিডফিল্ডে ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা চৌধুরী আছেন। জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা কানাডা প্রবাসী সামিত সোমও একজন মিডফিল্ডার। ইতালিয়ান প্রবাসী ফাহামেদুলের পজিশনও তাই। দেশিদের মধ্যে তরুণ মোহাম্মদ হৃদয়, সোহেল রানা, মুজিবুর রহমান জনিরা আছেন। সব মিলিয়ে ১২ বছর ধরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা জামালকে নিজের জায়গার জন্য তুমুল যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
তারপরও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এরপরও জামালকে অধিনায়ক রেখে দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনেও তাকেই হাজির করছে। যা কিছুটা হলেও অবাক করার মতো এবং অনেকে এ নিয়ে সমালোচনাও করছেন। জামাল যে তার জাতীয় দল ক্যারিয়ারের শেষ দিকে পৌঁছে গেছেন, এমনও বলছেন কেউ কেউ। তবে একজন জামাল ভূঁইয়া বাংলাদেশের ফুটবলে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, এ নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয় কারও। ডেনমার্ক প্রবাসী এই ফুটবলার ২০১৩ সালের আগস্টে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান। এরপর থিতু হতে তার সময় লেগেছে। পরে থিতু হওয়ার পর জাতীয় দলে তিনিই সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিলেন। এখন পর্যন্ত ৮৭টি ম্যাচ খেলেছেন। যা বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। আর বাংলাদেশ দলে প্রবাসী ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তির শুরুটা হয়েছিল জামালকে দিয়েই। এখন তো সংখ্যাটা ৬ জন।
এ নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে জামাল গর্বের কথাই বললেন, ‘আমি আসলে খুব খুশি। ওই সময়, এমনকি যখন তারিক জয়েন করছে। তখনো আমি চিন্তা করেছি আর কেউ জয়েন করবে না। কিন্তু এখন দেখছি সংখ্যাটা বাড়তেছে। আমি মনে করি এটা দেশের জন্য ভালো হবে। অবশ্যই লোকাল যারা আছে তারা ভালো খেলবে। কিন্তু আপনি যদি দেখেন সবচেয়ে বেস্ট উদাহরণ হচ্ছে ফ্রান্স টিম, তাদের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই বাইরের। তারা কিন্তু বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে।’