একবছর ধরে কোনো ম্যাচ জিততে না পারা এবং দলের কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হারানোর পর, কেউই আশা করেনি যে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এশিয়ান কাপের টিকিট নিশ্চিত করতে পারবে। কিন্তু গত সপ্তাহে মায়ানমারে বাছাইপর্বে তারা সবাইকে চমকে দিয়েছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮তম এবং এশিয়ায় ২৫তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ দল র্যাঙ্কিংয়ে তাদের ওপরে থাকা তিনটি দলের বিপক্ষে সব কটি ম্যাচই জিতে নিজেদের গ্রুপে শীর্ষে থেকে ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য নারী এশিয়ান কাপে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়- দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা সাবিনা খাতুনকে ছাড়াই অনন্য উচ্চতায় নারী দল। ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ফেব্রুয়ারিতে দল ত্যাগ করেন সাবেক অধিনায়ক। এখন দলের অবিশ্বাস্য সাফল্যের পর মুখ খুলেছেন বাটলার। জানালেন, প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠা, ৬টায় অনুশীলন, ৯০ মিনিটের উচ্চ-গতির ট্রেনিং- এসব মেনে নিতে পারছিলেন না সাবিনা এবং তার কিছু সতীর্থ। কোচের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন বিদ্রোহে, যারা নিজেরাই নিজেদের দলে রাখতেন!
৫৮ বছর বয়সী সাবেক ওয়েস্টহাম মিডফিল্ডার বাটলার গত বছর মার্চে বাংলাদেশ নারী দলের দায়িত্ব নেন। তিনি কঠোর অনুশীলন এবং তরুণ ও নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া শুরু করেন, যা বিদ্রোহের রূপ নেয়। সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার এবং মাসুরা পারভীনসহ একাধিক খেলোয়াড় চিঠির মাধ্যমে কোচের অপসারণ দাবি করেন। তারা বাটলারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অশালীন মন্তব্য এবং অপমান করার অভিযোগ তোলেন। সেসব অভিযোগ নিয়ে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন বাটলার। ইংলিশ কোচ বলেন, ‘আমি দলে আসার পর দেখি, কিছু খেলোয়াড় নিজেরাই নিজেদের দলে রাখছে। কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। শৃঙ্খলা ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না। কোনো কোচই চায় না তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উঠুক। সব কিছুই মিথ্যা ছিল। ক্লান্তিকর ও হতাশাজনক পরিস্থিতি। আমি কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে কিছু করিনি। সব কিছুই করেছি বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতির জন্য।’
মার্চে বাটলার বাফুফের সঙ্গে নতুন করে চুক্তিতে সই করার পর বিদ্রোহ থেমে যায়। তবে সাবিনা, সানজিদা ও মাসুরা আর জাতীয় দলে ফেরেননি। বাটলার অনুশীলনে ফিটনেসে জোর দেন এবং খেলোয়াড়দের কাছ থেকে কঠোর পরিশ্রম চান। তার কথায়, ‘প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠা, ৬টায় অনুশীলন, ৯০ মিনিটের উচ্চ-গতির ট্রেনিং, সহজ কিছু না। এটি ছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলে পরিবর্তনের মুহূর্ত, যেখানে শৃঙ্খলা প্রথমবার সামনে আসে।’
বাটলার নতুনদের দলে তুলে আনার নীতিতে অটল থাকেন। বাছাইপর্বের জন্য নেওয়া খেলোয়াড়দের অর্ধেকের বেশি ছিল ২০ বছরের নিচে, যারা আগেও কখনো সুযোগ পায়নি। এই শিষ্যদের নিয়ে এখন গর্বিত তিনি, ‘আমি খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। এই মেয়েরা অনেক ত্যাগ করেছে। তারা অনেক কষ্ট করেছে। আর এখন তার ফল পেয়েছে। নতুনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ায় সবাইকে কমফোর্ট জোন থেকে বের করে আমি সেটাই করেছি। আমাদের খেলার ধরণ অনেককে চমকে দিয়েছে। বিশ্বাস থাকতে হয়, আর আমি আমার খেলোয়াড়দের বিশ্বাস করতাম।’
এমন কোচকে কি ধরে রাখবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)? এই মুহূর্তে বাটলারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কারণ তার চুক্তি শিগগিরই শেষ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না আমি পরবর্তী টুর্নামেন্টেও থাকব কি না। আমার ভবিষ্যৎ কী হবে তাও জানি না। আমি থাকি বা না থাকি, সেটা মুখ্য নয়। আমি যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম, সেটি করেছি। আমরা ইতিহাস গড়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আমি বাংলাদেশের নারী ফুটবলের চিত্র বদলাতে সাহায্য করেছি।’