
মায়ানমারে চলমান এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে অভাবনীয় সাফল্যের গল্প লিখেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। বাছাই পেরিয়ে প্রথমবার এশিয়ান কাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করেছে লাল-সবুজের মেয়েরা। সেটাও এক ম্যাচ হাতে রেখে। আর এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর ঋতুপর্ণা চাকমা। স্বাগতিক মায়ানমারের বিপক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তার জোড়া গোলেই ধরা দিয়েছিল জয়। যা পরে বাংলাদেশকে চূড়ান্ত পর্বে তুলে দেয়।
অথচ ঋতুপর্ণার কল্পনাতেও ছিল না বাংলাদেশ এবার মূল পর্ব নিশ্চিত করবে। গতকাল বাফুফের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ভিডিওতে এমনটাই বলেছেন এই পাহাড়ি কন্যা, ‘আমরা যখন জানতে পারি যে, আমরা কোয়ালিফাই করেছি, এটা আসলে কল্পনার বাইরে ছিল। আমরা বহু বছর পর এত কষ্ট করে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছি। এটা আমাদের জন্য একটা বড় অর্জন।’
আসলেই তাই। এশিয়ার সেরা ১২ দল নিয়ে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান কাপের ২১তম আসর। সেখানেই থাকবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব। এই আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল উঠতে পারলে ২০২৮ অলিম্পিকের দুয়ার খুলে যাবে। একই সঙ্গে ২০২৭ বিশ্বকাপও নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। কারণ এশিয়া কাপের সেরা ছয়টি দল সরাসরি বিশ্বকাপের টিকেট পাবে। সপ্তম ও অষ্টম দলেরও সুযোগ থাকবে। কারণ তারা প্লে-অফের সুযোগ পাবে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সামনে নতুন এক দিগন্তই উন্মোচিত হয়েছে। ঋতুপর্ণা জানালেন, এই স্বপ্নটাই সব সময় লালন করেছেন তিনি ও তার দলের অন্যরা। ‘আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল। আমরা যেহেতু দুবার সাফ চ্যাম্পিয়ন, এখন আবার কোয়ালিফাই করলাম। ধীরে ধীরে আমার লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপ খেলার। বাংলাদেশ দলকে একটা ভালো পর্যায় ও ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। সেটাই আমরা ধীরে ধীরে করছি’- বলেন ঋতুপর্ণা।
‘সি’ গ্রুপ থাকা বাংলাদেশের জন্য বাছাই পেরিয়ে এশিয়ান কাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করাটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ প্রতিপক্ষগুলো ছিল বেশ শক্তিশালী। তবে মূল পর্বের লক্ষ্যের কথা জানিয়েই মায়ানমার পাড়ি দিয়েছিল পিটার বাটলারের শিষ্যরা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা বাহরাইনের মুখোমুখি হয়। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা দলটিকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় তারা। এরপর মায়ানমারের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় তুলে নেয়। বাঁ পায়ের জাদুতে ঋতুপর্ণা যে গোল দুটি করেন, তা ফুটবল সমর্থকদের হৃদয়ে গেঁথে থাকার মতো।
মায়ানমারের সঙ্গে জয়ে বাংলাদেশের মূল পর্বের পথে এক পা দেওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়। পরে একই দিন তুর্কমেনিস্তান ও বাহরাইন ম্যাচ ড্র হলে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই এশিয়া কাপ নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। ঋতুপর্ণা জানালেন ম্যাচের পর প্রথম মাকে ফোন দেন তিনি, ‘সর্বপ্রথম আমি মাকে কল দিয়েছি। মা এবং পরিবারের সবাইকে। তারা সবাই খুব খুশি, দুটি গোল করেছি দেখে। মা তো অসুস্থ। আমার গোল করার কথা শুনে মা অনেক খুশি, বলছে যে মনে হচ্ছে না সে অসুস্থ অনুভব করছে।’ দুই জয়ে এশিয়ান কাপ নিশ্চিত হলেও বাংলাদেশ দল উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়নি তখন। আজ তুর্কমিনিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে আসল উদযাপন করতে চান ঋতুপর্ণারা, ‘আমরা আসলে কোনো উদযাপনই করিনি। আরেকটা ম্যাচ বাকি আছে। তারপর উদযাপন করার পরিকল্পনা আছে।’
ইয়াংগুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। ঋতুপর্ণার মতো দলের গোলরক্ষক কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বলও জানিয়েছেন একই কথা, ‘ম্যাচ নিয়ে মেয়েরা খুবই সিরিয়াস এবং মনোযোগী। আমরাও তাদের প্রতিনিয়ত বলছি, আমাদের বাছাই এখনো শেষ হয়নি এবং যেহেতু উদযাপন করিনি, ইনশাল্লাহ আগামীকালের (আজ) ম্যাচে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে আমরা উদযাপনটা করতে চাই।’
বাংলাদেশ দল এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করার পর থেকেই বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন অনেক সমর্থক। অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তি বলেছেন, তিনিও তার দলকে বিশ্বকাপে দেখতে চান। ‘দলকে আমি বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখতে চাই। যেহেতু আমাদের সামনে সুযোগটা আসছে, আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগাতে’- বলেন প্রান্তি।