
শ্রীলঙ্কা সিরিজে ওয়ানডে অভিষেক। যদিও ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে রাঙাতে পারেননি, তবে নিজের জাত চেনাতে খুব বেশি সময় নেননি তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের ৫ উইকেট শিকারে জয় ধরা দিল বাংলাদেশের হাতে। যদিও সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতেছে টিম টাইগার্স।
আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে পরাস্ত করেছে লাল-সবুজ দল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ দলের ইনিংস। এরপর তানভীরের ঘূর্ণিতে দিশেহারা লঙ্কানরা থামে ২৩২ রানে। এই জয়ে সিরিজে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ। আগামী মঙ্গলবার দুই দল তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে।
কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপ তছনছ করে দেন তানভীর। ১০ ওভারে মাত্র ৩৯ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন তিনি। তার ঘূর্ণি জাদুতে ১৭০ রানেই ৮ উইকেট খুইয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। তবে নাহ, হেসেখেলে জেতা হয়নি টাইগারদের। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে জানিথ লিয়ানাগে আশার প্রদীপ। দুসমন্থা চামিরাকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেন চীনের প্রাচীর। দুজনের অবিশ্বাস্য এক জুটিতে জয়ের স্বপ্ন তাজা হয় লঙ্কান শিবিরে। কারণ শেষ ১৮ বলে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ২৭ রান।
আরও হারের লজ্জা যখন উঁকি দেয় বাংলাদেশের আকাশে, তখন ত্রাণকর্তা রূপে আবির্ভাব হন মোস্তাফিজুর রহমান। ৪৮তম ওভারে তার প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান লিয়ানাগে। শ্রীলঙ্কাও জয় থেকে ২১ রান দূরে ছিল। দ্বিতীয় বলে প্রাণ ফিরে টাইগার শিবিরে। ব্যাট চালাতে গিয়েও হঠাৎ থেমে যাওয়া লিয়ানাগে ক্যাচ দেন বোলার মোস্তাফিজকেই। লঙ্কান ব্যাটার আউট হন ৭৮ রান করে। এখানেই শেষ শ্রীলঙ্কার জয়ের আশা, যা সুনিশ্চিত করেন তানজিম হাসান সাকিব। ৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে চামিরাকে (১৩) শিকার বানিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তির জয় উপহার দেন।
নাটকীয় সমাপ্তির আগে, তানভীর ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। শ্রীলঙ্কার চার টপ-অর্ডার ব্যাটারের তিনজনকেই মাঠছাড়া করেন এই ঘূর্ণিবাজ। আউট করেন নিশান মাদুশকা (১৭), কুশল মেন্ডিস (৫৬) এবং কামিন্দু মেন্ডিসকে (৩৩)। তার অপর দুই শিকার হলেন- দুনিথ ভেল্লালাগে (১) এবং মহেশ থিকসানা (২)। তানভীরের দিনে তানজিম সাকিব পান ২টি উইকেট এবং মোস্তাফিজ, মেহেদি হাসান মিরাজ ও শামীম হোসেন ১টি করে।
জয়ের দিনের ব্যাটিংয়ে ছিল চিরচেনা ধস। পারভেজ হোসেন ইমন (৬৭) এবং তাওহিদ হৃদয়ের (৫১) হাফসেঞ্চুরিতে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল ৩৯ ওভারে ৬ উইকেটে ২০৪ রান। সেখান থেকে ৪৫.৫ ওভারে অলআউট হয় দল। সর্বসাকুল্যে করতে পারে ২৪৮ রান। এটাও সম্ভব হতো না যদি শেষ মুহূর্তে তানজিম সাকিব জ্বলে না উঠতেন। তিনি ২১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। যদিও এই রানকেই জয়ের জন্য পর্যাপ্ত ভেবেছিলেন মিরাজ।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন ছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা ২৪৮ রান ডিফেন্ড করতে পারব। তারা সত্যিই ভালো খেলেছে এবং সেই মুহূর্তে আমাদের উইকেটের প্রয়োজন ছিল। আমি তানভীরকে বলেছিলাম যে আমাদের উইকেটের প্রয়োজন এবং আমি বোলারকে ইতিবাচক কথা বলার চেষ্টা করেছি কারণ আমাদের উইকেটের প্রয়োজন ছিল। অন্যথায় আমরা জিততে পারব না।’
অপরদিকে, অধিনায়ক মিরাজের প্রশংসায় মাতেন ম্যাচসেরা তানভীর। দলের জয়ের নায়ক বলেন, ‘সত্যিই ভালো লাগছে। সঠিক জায়গায় বল করেছি, আগের ম্যাচের তুলনায় ভালো উইকেট ছিল। খেলার আগে তাকে আত্মবিশ্বাস দেওয়ার জন্য অধিনায়কের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, শুধু আটকে রাখার চেষ্টা নয়, উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করো।’