কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গেমিং-শিল্পে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রাখে, তবে তিনি বিশ্বাস করেন এটি কখনোই মানুষের তৈরি গেমগুলোর মতো ‘মানবিক আবেদন’ সৃষ্টি করতে পারবে না বলে মনে করেন গেম নির্মাতা-প্রতিষ্ঠান সনি প্লে-স্টেশনের প্রধান হারম্যান হুলস্ট।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সনি প্লে-স্টেশন কনসোলের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে হারম্যান হুলস্ট এবং তার সহ-সিইও হিদেয়াকি নিশিনো ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
সনি গত কয়েক বছরের বেশ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্লে-স্টেশন ৫ কনসোল এবং গেমগুলোর অবিশ্বাস্য সাফল্য সত্ত্বেও বড় ধরনের কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়েছে। যা পুরো গেমিং-শিল্পে একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গেম ডেভেলপাররা মনে করেন, করোনার মহামারির পর চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তারা।
তবে কিছু ব্যক্তি মনে করেন, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে গেম তৈরি মানুষের কর্মস্থলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে গেম ডেভেলপমেন্টের অনেক সাধারণ অংশ স্বয়ংক্রিয় করা সম্ভব হলেও, সৃজনশীল কাজেও এআইকে ব্যবহার করা হতে পারে। এই বিষয়টি গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে গেমিং-শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়েস আর্টিস্টরা তাদের কাজকে প্রতিস্থাপন করতে পারে এমন আশঙ্কায় ধর্মঘট শুরু করেছে।
হুলস্ট এআই-এর প্রভাবের কথা মেনে নিয়ে বলেছেন, মানুষের তৈরি গেম ডেভেলপারদের জন্য ভবিষ্যতে সবসময় একটি জায়গা থাকবে।
তিনি বিবিসিকে বলেন ‘আমি মনে করি, গেমিংয়ে দুই ধরনের অংশ থাকবে; এর একটি এআই দ্বারা পরিচালিত উদ্ভাবনী কৌশল এবং অন্যটি মানুষের তৈরি চিন্তাশীল কনটেন্ট।’
তিনি আরও বলেন ‘এআই এবং মানবিক আবেদনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
১৯৯৪ সালে জাপানে চালু হয় সনি প্লে-স্টেশন। পরে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে এর যাত্রা করার পর এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সনি আজ পর্যন্ত চারটি প্লে-স্টেশন কনসোলের মাধ্যমে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া গেমিং কনসোলগুলির একটি ইতিহাস তৈরি করেছে।
এছাড়া, নিশিনো তার শৈশবকালের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘আমি যখন গেমিং শুরু করি, তখন আমার নিজের কোনো কনসোল ছিল না। আমি বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে খেলতাম।’
অপরদিকে, হুলস্ট তার শখের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমার মা একটি খেলনা দোকানের মালিক ছিলেন। তিনি প্রযুক্তি নিয়ে ভয় পেতেন এবং আমি তাকে গেম ডিভাইসগুলো ডেমো দিতে সাহায্য করতাম।’
তারা দুজনে বলেন, প্লে-স্টেশন ভবিষ্যতে গেমিং এবং বিনোদন-শিল্পের নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রযুক্তি এবং মানবিক সৃষ্টির মিশ্রণ থাকবে।
কনকর্ড গেমের ব্যর্থতা এবং প্লে-স্টেশনের নেতৃত্ব সংকট
এ বছর জুনে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে হুলস্ট এবং নিশিনো অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এআই সৃষ্ট তাদের অত্যন্ত প্রতীক্ষিত শুটিং গেম ‘কনকর্ড’ বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে। গেমটি যারা কিনে খেলেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয় এবং একইসঙ্গে তাদের স্টুডিওটিও বন্ধ করে দিতে হয়।
হুলস্ট বলেন, ‘কনকর্ডের কিছু দিক অসাধারণ ছিল কিন্তু কিছু অংশ খেলোয়াড়দের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি, যার ফলে আমরা গেমটি অফলাইনে নিয়ে আসি।’
প্লে-স্টেশন পোর্টাল এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ
প্লে-স্টেশন এখন গেমের সীমানা ছাড়িয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে আরও সক্রিয় হতে চায়। তারা আগের সময়ের মতো গেমভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চায়। এর আগে যেমন ১৯৯৩ সালের সুপার মারিও ব্রোস এবং ১৯৯৪ সালের স্ট্রিট ফাইটার গেমভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হলেও তা সমালোচকদের দ্বারা নিন্দিত হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক নির্মিত যেমন মারিও, সোনিক, এবং পোকেমন সিনেমাগুলো সফলতা পেয়েছে।
এছাড়া, সনির ২০২৩ সালের দ্য লাস্ট অব আস সিরিজ এবং ২০২২ সালের আনচার্ড চলচ্চিত্রে অংশীদার হিসেবে ছিল। যা সনি নিয়ন্ত্রিত নটি ডগ স্টুডিওর গেমস থেকে তৈরি।
হুলস্ট তার ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি আশা করি প্লে-স্টেশন শুধুমাত্র গেমিং ক্যাটাগরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এটি বড় ধরনের বিনোদন শিল্পের মধ্যে জায়গা করে নেবে।’ সূত্র: বিবিসি
তাওফিক/অমিয়/