
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অত্যাধুনিক চিপ তৈরির উদ্যোগ জোরদার করেছে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দুটি তিন ন্যানোমিটার চিপ ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে। চিপ উৎপাদনে হুয়াওয়ের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সফল হলে এটি বৈশ্বিক চিপ শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যম ইউডিএনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, হুয়াওয়ে তিন ন্যানোমিটার চিপ তৈরির জন্য দুটি কৌশল অবলম্বন করছে। এর একটি হলো গেট অল অ্যারাউন্ড (জিএএ) এফইটি ভিত্তিক ডিজাইন এবং অন্যটি ভবিষ্যতের কার্বন ন্যানোটিউব ভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর। ২০২৬ সালের মধ্যে এই চিপগুলো ‘টেপ আউট’ বা উৎপাদনের জন্য ডিজাইন চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৭ সালে শুরু হতে পারে বাণিজ্যিক উৎপাদন।
সম্প্রতি ৫ ন্যানোমিটার কিরিন এক্স৯০ চিপ উৎপাদনে সফলতার পর হুয়াওয়ে এই নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসএমআইসি এই চিপটি এএসএমএলের আধুনিক ইইউভি প্রযুক্তির পরিবর্তে পুরোনো ডিইউভি লিথোগ্রাফি ও মাল্টি প্যাটার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি করেছে। এই পদ্ধতি জটিল ও ব্যয়বহুল। তবে এর উৎপাদন হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ, যা প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান টিএসএমসির তুলনায় অনেক কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন ন্যানোমিটার জিএএ এফইটি চিপ আগের কিরিন চিপগুলোর তুলনায় শক্তি ব্যবহারে আরও কার্যকর ও পারফরম্যান্সে উন্নত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সময়ে, হুয়াওয়ে কার্বন ন্যানোটিউব ভিত্তিক তিন ন্যানোমিটার চিপ নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। নতুন এই প্রযুক্তি প্রচলিত সিলিকন ভিত্তিক চিপগুলোর চেয়ে উন্নত পারফরম্যান্স দিতে পারে। যদিও এর অগ্রগতি এখনো পরিষ্কার নয়। এই প্রকল্প এখনো গবেষণাধীন অবস্থায় রয়েছে।
তিন ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে উৎপাদন হার আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেবে। তবে হুয়াওয়ে এরই মধ্যে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে নিজস্ব ইইউভি প্রযুক্তির অগ্রগতির জন্য কাজ শুরু করেছে। ২০২৬ সাল নাগাদ এটি প্রস্তুত হতে পারে বলে ধারণা করছেন কিছু প্রযুক্তি বিশ্লেষক।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের একাংশ যেমন এ নিয়ে আশাবাদী, তেমনি অনেকে এটিকে বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন। ইইউভি প্রযুক্তিতে এএসএমএলের একচেটিয়া আধিপত্য এখনো অটুট রয়েছে। হুয়াওয়ে তাদের ইইউভি প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরবতা বজায় রেখেছে, যেমনটি তারা তাদের কিরিন ৯০১০ উন্মোচনের সময় করেছিল।
তবে হুয়াওয়ে যদি এই জটিল চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে সফলভাবে তিন ন্যানোমিটার চিপ উৎপাদনে সক্ষম হয়, তাহলে টিএসএমসি ও স্যামসাংয়ের সঙ্গে চীনের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০২৬ সালে প্রযুক্তি জগতে বড় চমক আসতে পারে হুয়াওয়ের দিক থেকে।