
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। এবার বিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেমের বিবরণ প্রকাশ করেছে, যা জটিল রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের চেয়েও বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে। ‘মেডিকেল সুপারইন্টেলিজেন্সের পথে’ এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রযুক্তি উদ্ভাবক মুস্তাফা সুলেইমানের নেতৃত্বাধীন মাইক্রোসফটের এআই ইউনিট এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেছে যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি প্যানেলকে অনুকরণ করে। এই চিকিৎসকরা ‘রোগ নির্ণয়ে জটিল ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চ্যালেঞ্জিং’ কেস মোকাবিলা করে থাকেন। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, ওপেনএআই-এর উন্নত ৩ এআই মডেলের সঙ্গে মিলে তাদের সিস্টেম ১০টির বেশি কেস স্টাডির মধ্যে ৮টি সফলভাবে ‘সমাধান’ করতে পেরেছে। অথচ একই কেস স্টাডিগুলো যখন প্রকৃত চিকিৎসকদের (যাদের কাছে সহকর্মী, বই বা চ্যাটবটের সহায়তা ছিল না) মাধ্যমে সমাধান করানো হয়- তাদের সফলতার হার ছিল মাত্র ২টি। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসকদের তুলনায় খরচও কম হয়। এটি পরীক্ষার নির্দেশনা আরও দক্ষতার সঙ্গে দিতে পারে। মাইক্রোসফট বলেছে, এআই চিকিৎসকদের কাজের জায়গা দখল করবে না; বরং সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে।
এক ব্লগপোস্টে তারা লিখেছে, ‘চিকিৎসকদের ভূমিকা কেবল রোগ নির্ণয় নয়, বরং তারা অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করে এবং রোগী ও তার পরিবারের সঙ্গে একটি বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা এআই এখনো করতে পারে না।’ তবে ‘মেডিকেল সুপারইন্টেলিজেন্সের পথে’ স্লোগানটি স্বাস্থ্যসেবা খাতে মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) এমন একটি সিস্টেমকে বোঝায় যা যেকোনো কাজেই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যের সমান। আর সুপারইন্টেলিজেন্স বলতে বোঝায় এমন একটি সিস্টেমকে যা সর্বক্ষেত্রে মানুষের মেধাকে অতিক্রম করে যায়।
মাইক্রোসফট এআই-এর সিইও সুলেইমান দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, এই সিস্টেম আগামী এক দশকের মধ্যে নিখুঁতভাবে কাজ করবে। এটি স্পষ্ট যে, আমরা এমন একটি পথে আছি যেখানে এই সিস্টেমগুলো আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে প্রায় নিঃশব্দে ত্রুটিহীন হয়ে উঠবে। এটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাগুলোর ওপর থেকে বিশাল চাপ কমাবে।
মাইক্রোসফট বলছে, তারা এমন একটি সিস্টেম তৈরি করছে যা বাস্তবের চিকিৎসকদের মতো ধাপে ধাপে প্রশ্ন করে এবং নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত রোগ নির্ণয়ে পৌঁছায়। যেমন হাঁচি-কাশি ও জ্বর থাকা একজন রোগীর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া নির্ণয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা এবং এক্স-রে লাগতে পারে। এই নতুন পদ্ধতিতে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের জটিল কেস স্টাডি ব্যবহার করা হয়েছে।
সুলেইমানের টিম ৩০০টিরও বেশি কেস স্টাডিকে ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ কেস চ্যালেঞ্জ’-এ রূপান্তর করে। এর মাধ্যমে তারা তাদের পদ্ধতি পরীক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট ওপেনএআই (চ্যাটজিপিটি), মেটা, অ্যানথ্রপিক, গ্রোক এবং গুগলের জেমিনির মতো বিভিন্ন এআই মডেল ব্যবহার করেছে। মাইক্রোসফটের মতে, এই পদ্ধতির ‘জ্ঞানগত ব্যাপকতা ও গভীরতা’ যেকোনো মানব চিকিৎসকের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ এটি একাধিক চিকিৎসা শাখাকে একত্রে ধরতে সক্ষম। তবে মাইক্রোসফট স্বীকার করেছে, এই পদ্ধতি এখনো সরাসরি ক্লিনিক্যাল ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়। এর পারফরম্যান্স আরও সাধারণ উপসর্গের ক্ষেত্রে কেমন হবে, তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান