
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) ওয়েব ক্রলার বা বটগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করার ঘোষণা দিয়েছে ইন্টারনেট অবকাঠামো প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ার। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থার নিয়মে বড় পরিবর্তন আনবে। এতে এআই প্রতিষ্ঠানগুলো সব ওয়েব থেকে তথ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকবে।
ক্লাউডফ্লেয়ার এমন এক প্রতিষ্ঠান, যার সেবা ব্যবহার করে হাজারও ওয়েবসাইট অনলাইনে সক্রিয় থাকে এবং সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষা পায়। তাদের নতুন পদক্ষেপের ফলে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ওয়েবপেজ স্ক্যান করে তথ্য সংগ্রহকারী স্বয়ংক্রিয় বটগুলো এখন আর আগের মতো নির্বিচারে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে না। চ্যাটজিপিটির মতো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তাদের কার্যকারিতা উন্নত করতে বিপুল পরিমাণ প্রশিক্ষণের তথ্য ব্যবহার করে। অনেক এআই প্রতিষ্ঠান এই তথ্য সংগ্রহের জন্য ওয়েবপেজ থেকে ডেটা স্ক্র্যাপ করে নিজেদের সিস্টেমে ব্যবহার করে আসছিল।
ক্লাউডফ্লেয়ার বলছে, কোনো ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলে এআই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকে অনুমতি নিতে হবে কিংবা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওয়েবসাইট প্রকাশকরা চাইলে নির্দিষ্টভাবে এসব বটকে প্রবেশে অনুমতি দিতে পারবেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ‘পে-বাই-ক্রল’ নামের একটি নতুন মডেল চালুর পরিকল্পনাও করছে। এর আওতায় এআই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে।
এআই সিস্টেমে প্রশিক্ষণে অনলাইন লেখালেখি ও কনটেন্ট ব্যবহার বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে অন্যতম বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক প্রকাশক এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিনা অনুমতিতে কনটেন্ট ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন অনেকে।
২০২৩ সালে ক্লাউডফ্লেয়ার ওয়েবসাইটে একটি ট্যাগ যুক্ত করার বিষয়টি জানায়, যার মাধ্যমে ওয়েব ক্রলারকে বন্ধ করা যেত। তবে সেটি কার্যকর হয়নি। পরবর্তীতে এআই বট শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করার প্রযুক্তি চালু করে ক্লাউডফ্লেয়ার। এবার সেই ফিচার সব ওয়েবসাইটের জন্য ডিফল্টভাবে সক্রিয় করা হচ্ছে। ক্লাউডফ্লেয়ারের প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ প্রিন্স ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে বলেন, ‘এটি ক্লাউডফ্লেয়ারের মাধ্যমে ইন্টারনেটের নিয়ম বদলে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত।’ তার মতে, এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমাহীন তথ্য সংগ্রহ মানুষের মধ্যে কনটেন্ট প্রকাশের আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে, যা ইন্টারনেটের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি।
ক্লাউডফ্লেয়ারের এই পদক্ষেপ ইন্টারনেটে ডেটা ব্যবহার ও এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, তা এখন দেখার বিষয়।