ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

সাইকেল যার ধ্যান-জ্ঞান

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
সাইকেল যার ধ্যান-জ্ঞান
তাম্মাত ও তার সাইকেল

তাম্মাত বিল খয়ের। সাইকেল নিয়ে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এর মধ্যেই সাইকেল নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন হাজার হাজার মাইল পথ।

তাম্মাতের জন্ম চট্টগ্রামে। বাবা চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনস মসজিদের ইমাম, মা গৃহিণী। সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তাম্মাত। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনসে। পড়াশোনা করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তাম্মাত প্রথমে সাইকেল চালানো শেখেন ভাইয়ের কাছে। বাবা-মা চাইতেন না তাম্মাত সাইকেল চালানো শিখুক। কারণ পুলিশ লাইনসের পাশেই রয়েছে মেইন রোড। সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাম্মাতকে সাইকেল কিনে দিতে চাননি বাবা-মা। ছোটবেলায় তাম্মাত বিটিভিতে দেখতে পান একজন লোক সাইকেল চালিয়ে পুরো বাংলাদেশ ঘুরছেন। এটা তাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করে। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন বড় হয়ে সাইকেলে বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ছোটবেলা থেকেই গণিতে ভালো ছিলেন। অষ্টম শেণিতে পড়ার সময়ই সহপাঠীদের পড়িয়ে অর্থ উপার্জন করতেন। সেই টাকা দিয়ে কলেজে পড়ার সময় একটি সাইকেল কেনেন। এরপর একদিন সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। সেটা তার জীবনের অন্যতম খারাপ একটি দিন ছিল। সাইকেল হারানোর কষ্টে সেই রাতে বেশ কান্নাকাটি করেছিলেন তাম্মাত।

তাম্মামের অর্জন

 

কলেজজীবন শেষে আরেকটি সাইকেল কেনেন। ঢাকা থেকে লুকিয়ে সাইকেলটা কিনে আনেন। ২০১৬ সালে কমিউনিটি সাইকেলের সঙ্গে যুক্ত হন। চট্টগ্রামের সাইকিলিং গ্রুপগুলো চট্টগ্রামে রাইড দেয়। তাদের সঙ্গে থেকে নানা বিষয় শেখেন। আর তখন থেকেই বুঝতে পারেন, এমনি সাইকেল চালানো আর সাইকেল নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য সাইকেল চালানো আলাদা বিষয়।

কমিউনিটির সবাই ততদিনে জেনে যায় যে, তাম্মাতের লক্ষ্য সাইকেলে ঘুরবেন সারা বাংলাদেশ। এরপর গ্রুপের নোমান ও বাবুলের সঙ্গে পরিচয় হয় তাম্মাতের। যারা কয়েক বছর আগেই সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন ২৯ দিনে। নোমান ভাইয়ের কাছ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ নেন। এরপর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা পাড়ি দেওয়ার জন্য বের হন। যদিও পরিবারকে জানান যে, সঙ্গে আরও ২০-২৫ জন আছে। মিথ্যা ধরা পড়ার ভয়ে এক রাতে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। সে রাত তাম্মাতের জীবনের অন্যতম আনন্দ ও আতঙ্কের রাত।

পরিবার ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের বাইরে কখনো না যাওয়ার করণে তাম্মাত বেশ ভয় পেতে থাকেন। এরপর চট্টগ্রাম শহর পার হওয়ার পর দুর্ঘটনায় পড়েন। তখনই মত বদলে বাড়ির পথ ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরণের পথেই এগোলেন। সেই রাতকে তাম্মাত তার জীবন পাল্টনো রাত বলেন।

সাইকেলসহ ভারতে

ঝুঁকি এড়াতে তাম্মাত সঙ্গে রাখতেন সাইকেলের সাধারণ সমস্যা ঠিক করার যন্ত্রপাতি এবং দুই সেট কাপড়। শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম দিয়ে। ধীরে ধীরে ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা যান। মাত্র ২৫ দিনে ৬৪ জেলা ঘোরা শেষ করেন।

এই যাত্রা শেষ করার পর সব ভয় কেটে যায় তার। ভ্রমণের বিষয়ে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালের পর সিদ্ধান্ত নেন প্রতি বছর কোনো না কোনো অ্যাডভেঞ্চার করবেন।

এলাকার বড় ভাইদের সঙ্গে বান্দরবান যেতেন সাইকেল নিয়ে। তাঁবু গেড়ে থাকতেন এবং নিজেরাই রান্না করে খেতেন। চার-পাঁচ দিন তাদের সঙ্গে পাহাড়ে হাঁটতেন এবং বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। পাহাড় থেকে মজার আম খেয়ে ২০ কেজি ব্যাগে করে নিয়েও আসেন দুই দিন পাহাড়ে ট্র্যাকিং করে। এরপর কমিউনিটির সবাই পাগল বলতে থাকে তাম্মাতকে।

চট্টগ্রামের এক স্থানীয় ম্যারাথনে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ১ হাজার কিলোমিটার হাঁটবেন। ২০১৮ সালে হেঁটে পাড়ি দেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ফোসকা পড়ে যায়। ডাক্তারের বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও কানে তোলেননি। আবারও শুরু করেন হাঁটা। তাম্মাতের এই গল্প ছড়িয়ে পড়লে তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধা তার সঙ্গে হাঁটেন অনেক তরুণ; যা তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। পাশাপাশি নানা ম্যারাথনে অংশ নিতেন। বন্ধুদের থেকে টাকা ধার করে নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন এবং প্রথম থেকে তৃতীয় হতেন, সেখান থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে ধার শোধ করতেন। একবার তো এক বন্ধুর হানিমুনের টাকা নিয়ে এক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশের ম্যারাথনেও অংশ নেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয়োজনে বগা থেকে কেওক্রাডংয়ের ম্যারাথনে অংশ নিয়ে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হন।

এরপর তাম্মাত ভাবলেন ২৫ দিনে নয়, আরও কম সময়ে বাংলাদেশ সাইকেলে পাড়ি দেওয়া সম্ভব। এরপর ঢাকায় আসেন স্পন্সর খুঁজতে। তবে সাড়া পাননি। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা তুলতে সক্ষম হন তাম্মাতরা। সে সময় অনেকেই সন্দেহ করেছিল, এই ছেলে বাস-ট্রাকে করেও সাইকেল নিয়ে সারা দেশ ঘুরতে পারে। এরপর তিনি ঠিক করলেন সঙ্গে রাখবেন একজন ক্যামেরাম্যান, যিনি লাইভে সব কার্যক্রম দেখাবেন। বাইকসহ আরও দুজন তাম্মাতের সঙ্গী হন। হিসাব করে দেখলেন টাকা প্রয়োজন ১ লাখ ২০ হাজার কিন্তু টাকা আছে ৩০ হাজার। জমানো ৪০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। সেই যাত্রায় সাহস জোগান নাজিউর ও মণি নামে তাম্মাতের দুই সহযোদ্ধা। মণি ভাই বাকি অর্থ জুগিয়ে সহযোগিতা করেন। এরপর শুরু হয় যাত্রা।

নানা রকম বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ১৫ দিনে রাইড শেষ করেন। এটাই এখনো রেকর্ড হয়ে আছে।

তাম্মাতের ভাই তাকে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিতে থাকেন। করোনার আগে অনূর্ধ্ব ২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তিনি নির্বাচিত হন। কিন্তু করোনার কারণে আর অংশ নেওয়া হয়নি। এরপর বিভিন্ন বাহিনী থেকে আমন্ত্রণ পেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত দুবার দুটো দলের হয়ে দুটো পদকও অর্জন করেন।

ছোটবেলা থেকেই তাম্মাত আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ভক্ত। বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখার সময় করে বসেন অদ্ভুত এক কাণ্ড। মেসির জীবনের ১০০৩তম মেস থাকায় ঘোষণা দেন, আর্জেন্টিনা ট্রফি জিতলে সাইকেলে ১০০৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন। আর সেটা উৎসর্গ করা হবে মেসিকে। বিশ্ব কাপের পর তার এই ১০০৩ কিমি. পাড়ি দেওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের সময় তাম্মাত শুরু করেন ব্লগিং। সাইকেল চালানোর সঙ্গে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরতে থাকেন চারপাশের পরিবেশ। যেখানেই যান সেখানকার প্রকৃতি ও চারপাশ উঠে আসে তাম্মাতের ভিডিওতে। ভিডিওতে মাঝে মাঝে সচেতনতামূলক অনুরোধ করেন তাম্মাত।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের ইস্টওয়েস্ট হাইওয়ে ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়িও দেন।

নেপাল থেকে ফিরে তাম্মাত সিদ্ধান্ত নেন প্রতিদিন ঘুরবেন একটি করে জেলা অর্থাৎ ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা। ৬৪ জেলা ভ্রমণের উদ্দেশ্য- প্রত্যেক জেলার কমিউনিটির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আগ্রহী ছেলেমেয়েদের অ্যাডভেঞ্চারের জন্য অনুপ্রেরণা দেন।

এর মধ্যেই ভারতের দীর্ঘতম সড়ক কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়িও দেন তিনি। তাম্মাত বিশ্বাস করেন, তারুণ্যের শক্তিই পারে দেশকে বদলে দিতে। আর বিশ্বাস নিয়েই তিনি এগিয়ে চলছেন নতুন কিছু করতে।

জাহ্নবী

আজ বিশ্ব ইচ্ছা দিবস

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
আজ বিশ্ব ইচ্ছা দিবস

ইচ্ছা কিংবা স্বপ্ন নেই এমন মানুষ হয়তো পৃথিবীতে একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনের ভেতরের ইতিবাচক ইচ্ছাগুলোই আমাদের জীবনে গতি এনে দেয়। আর শিশু-কিশোরদের কল্পনাপ্রবণ উচ্ছ্বল মনের স্বপ্নের সীমানা যেন আকাশ পর্যন্ত। ২৯ এপ্রিল বিশ্ব ইচ্ছা দিবস। ‘মেক এ উইশ’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে দিনটি পালন করা হয় বিশেষত শিশু-কিশোরদের জন্য। বিশেষ এই দিবসের শুরুও এক বালকের ইচ্ছা পূরণের মধ্য দিয়ে। চলো জেনে নেই এই দিবসের আদ্যোপান্ত।

২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল পালন করা হয় বিশ্ব ইচ্ছা দিবস। তবে কিভাবে এই দিন উদযাপনের শুরু হল সেটি জানতে ফিরে যেতে হবে বছর তিরিশ পেছনের গল্পে। সময় ১৯৮০ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার বাসিন্দা ৭ বছর বয়সী ক্রিস্টোফার জেমস গ্রিসিয়াস লড়াই করছিল দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধি লিউকেমিয়ার সঙ্গে। বড় হয়ে নিজেকে পুলিশ অফিসার হিসেবে দেখতে চাইত গ্রিসিয়াস। কিন্তু শরীরে রোগ বাসা বাঁধায় তার বড় হয়ে উঠাই ছিল অনিশ্চিত। কোনো এক ভাবে গ্রিসিয়াসের ইচ্ছার কথা পৌঁছে যায় অ্যারিজেনোর পুলিশ বিভাগের কানে। তার স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে আসে অ্যারিজোনার পুলিশ বিভাগ, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধুরা। ১৯৮০ সালের ২৯ শে এপ্রিল এই দিনটির জন্য অ্যারিজেনোর ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পায় গ্রিসিয়াস। সেদিন রোগাক্রান্ত গ্রিসিয়াসের মনের অফুরন্ত আনন্দ চোখ এড়ায়নি কারো। তার মতোই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের মনের ইচ্ছা পূরণের মধ্য দিয়ে তাদের মনে সাহস আনন্দ বাড়াতে এক হতে থাকে চিকিতসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী মানুষ। এই থেকেই গড়ে উঠে শিশু-কিশোরদের ইচ্ছা পূরণের আমেরিকান অলাভজনক সংগঠন ‘মেক এ উইশ।’ 

এখন পর্যন্ত ‘মেক এ উইশ’ এর উদ্যোগে পূরণ হয়েছে বিভিন্ন দেশের ৫ লক্ষ্য দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের ছোট-বড় স্বপ্ন। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই নয়। বিশ্বের ৪৫ টি দেশে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক। শিশু-কিশোরদের মনের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষাগুলোই তাদের শক্তির উৎস। তাদের স্বপ্ন ও ইচ্ছাকে উদযাপন করতেই গ্রিসিয়াস এর পুলিশ অফিসার হবার দিনটিকে কেন্দ্র করে সংস্থাটি ২৯ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্ব ইচ্ছা দিবস। স্বপ্ন আর ইচ্ছা শক্তির মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোররা আনন্দে বাঁচুক এটাই আজকের দিনের কামনা।

 

 

 

উদ্যোক্তা যখন টিনএজার

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম
উদ্যোক্তা যখন টিনএজার

সফলতার পথে বয়স কোনো বাধা নয় নানা সময় নানা দেশে কথা প্রমাণ করেছে অনেক টিনএজার বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত এমন কয়েকজন টিনএজার উদ্যোক্তার কথা জেনে নাও আজকের লেখায়।

ড্যানি ড্যারেনবার্গ

যুক্তরাজ্যের টিনএজার ১৭ বছর বয়সী ড্যানি ড্যারেনবার্গডগ অ্যাডভাইজরসংস্থার প্রতিষ্ঠাতা একদিন পথ চলতে চলতে ড্যানির বন্ধু জানায় সে রাস্তায় একটি কুকুর ছানা কুড়িয়ে পেয়েছে কুকুরটি সঙ্গে তুলে আনলেও কীভাবে তার যত্ন করবে বুঝে উঠতে পারছে না বন্ধুর এমন প্রশ্নে ড্যানির মাথায় আসে যারা নতুন নতুন কুকুর পালছেন তাদের অনেকেই হয়তো বুঝে উঠতে পারেন না ঠিক কীভাবে যত্ন নেবেন অনেক সময় মালিকের অজ্ঞতার কারণে ছোটখাটো অসুখে অকালে প্রাণ হারাতে দেখা যায় অনেক কুকুরকে তাই মানুষের চারপেয়ে এই বন্ধুর জন্য ড্যানি শুরু করেন কুকুরের লালন-পালন সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ওয়েবসাইট তৈরির পর থেকে ডগ অ্যাডভাইজার কুকুরের যত্ন, লালন-পালন নিয়ে ১০০টিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ডগ অ্যাডভাইজরের সাপ্তাহিক পাঠক ছাড়িয়েছে হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ছাড়া তার উদ্যোগে তৈরি একটি এআই চ্যাটবট কুকুর মালিকদের জন্য তাৎক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকে ২০২৪ সালে ডগ অ্যাডভাইজর সর্বাধিক পোষ্য পণ্য বিভাগে ইউকে বিজনেস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে

আলফোনস কোলম্যান

১৪ বছর বয়সী আলফোনস কোলম্যানের যাত্রা শুরু হয় স্কুল কার্যক্রম থেকে স্কুল প্রজেক্ট হিসেবে কোলম্যান তৈরি করেছিলেন পরিবেশবান্ধব মোমবাতি নারকেল থেকে তৈরি মোমবাতিগুলো পরবর্তী সময়ে বিক্রি করেন হাজার ইউরো মূল্যে কোলম্যান বলেন, মোমবাতি নিয়ে তার মা বেশ শৌখিন তার মা সব সময় সাশ্রয়ী, সুন্দর ঘ্রাণযুক্ত মোমবাতি খুঁজতেন মায়ের সহযোগিতায় প্রাকৃতিক পণ্য দিয়ে তিনি এমন মোমবাতি তৈরি করে ফেলেন যেগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির জন্য কোলম্যান ১৪ বছর বয়সেই উদ্যোক্তা বৃত্তি পায় কিশোর এই উদ্যোক্তা মনে করে, কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য বুড়ো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে নেই বরং আপনার যা আছে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে যান

 

জাচ ইয়াদেগারি

প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের প্রতি জাচের ছিল ছোটবেলা থেকেই আলাদা ভালোবাসা মাত্র সাত বছর বয়সেই কোডিং আয়ত্ত করে ফেলেন জাচ কোডিং শেখার কিছু সময় পর যাচ তৈরি করে ফেলেন টোটালি সায়েন্স নামে একটি গেমিং ওয়েবসাইট কৈশোরের শুরুতেই চড়া মূল্যে নিজের গেমিং ওয়েবসাইট বিক্রি করেন জাচ ১৭ বছর বয়সে জাচ সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তৈরি করেন পুষ্টি ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন ক্যাল এআই মাত্র ১০ মাসের ভেতর তার এআই অ্যাপ্লিকেশনটি . মিলিয়ন ডাউনলোড এবং বার্ষিক ৩০ মিলিয়ন ডলার আয় করে

 

 

জোসেপ সিতাম

১৯ বছর বয়সী জোসেপ সিতাম পুরুষদের জনপ্রিয় ফ্যাশন অনুষঙ্গ গহনা বিক্রির -কমার্স প্রতিষ্ঠান আইসকার্টেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশন, ব্র্যান্ডিং নিয়ে আলাদা আগ্রহ ছিল জোসেপের সেই আগ্রহ কাজে লাগিয়ে ছয় বছর ধরে গড়ে তুলেছে আন্তর্জাতিক মানেই -কমার্স ব্র্যান্ড বর্তমানে আইসকার্টেলের বাৎসরিক আয় ছয় অঙ্কের রাজস্বে পৌঁছেছে জোসেপ মনে করেন, ব্র্যান্ডিং মোটেই সহজ কাজ নয় তবে সৃজনশীল পণ্য, ভোক্তাদের মন সমসাময়িক বাজার বুঝতে পারলে সফলতা অনেকটা সহজেই
ধরা দেয়

 

ত্বক সুন্দর রাখতে

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম
ত্বক সুন্দর রাখতে
মডেল: ফারিয়া ছবি: আদিব আহমেদ

নিজেকে সুন্দর দেখতে কে না চায়! সময়টা যখন কৈশোর সেই চাওয়া যেন আরেকটু বেশি। টিনএজাররা তো সাদাসিধাভাবেই সুন্দর। এই বয়সে অতিরিক্ত সাজগোজ না করতেই পরামর্শ দেন সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা। বরং পরিমিত খাবার গ্রহণ, শরীরের সুস্থতা আর ত্বকের যত্ন ধরে রাখলেই টিনএজারদের বেশ প্রাণবন্ত দেখায়।

ত্বকের ধরন জেনে নাও

টিনএজ বয়স হলো নিজেকে জানা ও বোঝার সময়। নিজের অনুভূতি, দক্ষতা সম্পর্কে বুঝে ওঠার পাশাপাশি এ সময় থেকে সচেতন হয়ে ওঠে নিজের শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও। এ সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে টিনএজ ত্বক কখনো শুষ্ক, কখনো তৈলাক্ত আবার কখনোবা মাঝামাঝি হয়। তাই ত্বকের আসল ধরন কোনটি বোঝা দায়! তবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে এর ধরন বুঝেই। তাই সুন্দর থাকতে প্রথম ধাপ তোমার ত্বকের ধরন কেমন নিশ্চিত হওয়া। এর জন্য প্রথমে ডাবল ক্লিনজিংয়ের মাধ্যমে মুখ ধুয়ে হালকাভাবে মুছে নাও। এরপর ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করো। এই অবস্থায় ত্বকের ধরন যেমন দেখতে পাও এটিই তোমার ত্বকের বৈশিষ্ট্য। ত্বকের ধরন বুঝেই ক্রিম ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করো।

মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকো

টিনএজ বয়সে মুখে ব্রণ কিংবা দাগ হওয়া স্বাভাবিক। অনেককেই আনমনে ব্রণ ও দাগের ওপর খোঁচাতে দেখা যায়। ত্বকের জন্য এটি ক্ষতিকর। এতে দাগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ কোনো কারণ ছাড়াই মুখে হাত দেয়। এতে আঙুলের মাধ্যমে জীবাণু মুখের ত্বকে প্রবেশ করে। তাই টিনএজ বয়সে এমন অভ্যাস থাকলেও বিরত থাকার চেষ্টা করো।

হাইড্রেটেড থাকো

সুস্থ ও সুন্দর ত্বক মানেই যেন হাইড্রেটেড ত্বক। তবে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন নেই। এর জন্য নিয়মিত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করো। পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়মিত যেকোনো একটি ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে পার। ত্বকের ধরন তৈলাক্ত হলে পাতলা ঘনত্বের ক্রিম বেছে নাও।

সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করো

পরিবারের বড় সদস্যদের মতো টিনএজ সদস্যদেরও প্রায় নিয়মিত বাইরে চলাফেরা করতে হয়। সূর্যের অতিবেগুনি আলোক রশ্মি কিন্তু সব বয়সী মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। তাই কৈশোর কাল থেকে বাইরে বের হওয়ার আগে নিয়মিত সানব্লক ক্রিম ব্যবহার করো। এতে ত্বকের স্বাভাবিক রং ও কমনীয়তা প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায়েও নষ্ট হবে না। আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী ৩০ থেকে ৪০ এসপিএফ মাত্রার ক্রিম ব্যবহার করতে পারো। বাইরে যাওয়ার ২০ মিনিট আগে উন্মুক্ত ত্বকে ক্রিম ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবে।

মেকআপ ব্যবহারে সচেতন হও

প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় টিনএজ ত্বক অনেকটাই অপরিপক্ব। তাই ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ ও মেকআপ সরঞ্জাম অনেক সময় টিনএজ ত্বক রুক্ষ করে তোলে। বাজারে টিনএজারদের উপযোগী বিভিন্ন নন-টক্সিক মেকআপ সরঞ্জাম পাওয়া যায়। তাই নিজের বয়স অনুযায়ী মেকআপ সরঞ্জাম কেনার চেষ্টা করো। নিজেকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করতে মেকআপের প্রতি টিনএজারদের ঝোঁকই বেশি। মেকআপ করাই যে টিনএজ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এমনটাও নয়। তবে এ বয়সে ত্বককে সুরক্ষা দিতে বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া নিয়মিত মেকআপ এড়িয়ে চলো।

অধিকার কর্মীরা যখন এক সুতোয় গাঁথা

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪১ পিএম
অধিকার কর্মীরা যখন এক সুতোয় গাঁথা
কোপেনহেগেন পিপল পাওয়ার সম্মেলনে প্রাপ্তি তাপসী(বা থেকে চতুর্থ)

অ্যাকশন এইড ডেনমার্ক আয়োজিত কোপেনহেগেন পিপল পাওয়ার সম্মেলন বিশ্বব্যাপী অধিকারকর্মীদের এক মিলনমেলা। গত ৮ থেকে ১০ এপ্রিল ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ সম্মেলনে নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের নবীন-প্রবীণ অধিকারকর্মীরা। বাংলাদেশি তরুণ অধিকারকর্মী হিসেবে সেখানে আমন্ত্রণ পান তাপসী দে প্রাপ্তি। সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন আজকের লেখায়।

কোপেনহেগেন পিপল পাওয়ার সম্মেলনে এ বছর অংশ নেন বিশ্বের ২৭টি দেশের ৩ শতাধিক অধিকারকর্মী। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল শান্তির জন্য সামাজিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে অধিকারকর্মীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত হয় প্রায় ২৪টি বৈঠক। বৈঠকে আমরা অধিকারকর্মীরা কীভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে পারি, সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বিপরীতে যেভাবে সামাজিক আন্দোলন শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে, বৈশ্বিক ক্ষমতা নির্দিষ্ট কিছু দেশ ও নীতিনির্ধারকের হাতে কুক্ষিগত না হয়ে যেভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে এমন সব বিষয় উঠে আসে পারস্পরিক আলোচনায়। আবার আমাদের দেশের মতো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নানা সময় ঘটে গেছে বিপ্লব, গণ-অভ্যুথান। বিভিন্ন দেশের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের কৌশল, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগ হয় সম্মেলনে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ছিল ‘ডে আফটার টুমোরো’ শীর্ষক বৈঠক। বিশ্বের যেসব দেশে সম্প্রতি ঘটে গেছে গণ-অভ্যুথান, সেসব দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন বৈঠকে। গণ-অভ্যুথান-পরবর্তী বাংলাদেশের কথা জানাতে তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিই প্যানেলিস্ট হিসেবে। প্যানেলে আরও ছিলেন শ্রীলঙ্কা ও সার্বিয়ার প্রতিনিধিরা। সেখানে বাংলাদেশের ওপর গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী অর্থনৈতিক চাপ, বিভিন্ন বিষয়ে বহির্বিশ্বের অযাচিত চাপ, গুজব প্রচার প্রসঙ্গে মতামত প্রকাশের সুযোগ হয় সবার সঙ্গে। আবার একই সঙ্গে বাহরাইন, সিরিয়ার মতো দেশগুলোর প্রতিনিধিদের কাছেও জানতে পারি তারা কীভাবে যুদ্ধাবস্থায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং সেগুলো সামাল দিচ্ছে।
সম্মেলনজুড়ে মনে হয় ইউক্রেন থেকে মায়ানমার, ফিলিস্তিন থেকে সার্বিয়া প্রতিটি দেশের সাধারণ মানুষের যুদ্ধটা যেন একই সূত্রে গাথা। দেশ, জাতি ভিন্ন হলেও শোষণের বিরুদ্ধে সবার গল্প অনেকটা একইরকম। আবার ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে অনেকেই বলে থাকেন, দীর্ঘ সময় নিপীড়নে জর্জরিত ফিলিস্তিনের মানুষ সুখ চায়। তবে সম্মেলনে ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর মনে হয়েছে, ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ সুখের চেয়েও বেশি স্বাধীনতা চায়। 
সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের নারী অধিকারকর্মীরা। আফগানিস্তান, ইরানের মতো রক্ষণশীল দেশের নারীরা কীভাবে আজও স্বাভাবিক জীবন যাপন এবং মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছেন, সে গল্প উঠে আসে মুখোমুখি। মনে হয়, বিশ্বব্যাপীই নারীদের অধিকারের স্বাধীনতা ও অধিকারের লড়াইটা সহজ নয়। বরং সমতার জন্য এই লড়াই আরও সময়সাপেক্ষ। পৃথিবীর যেসব দেশে যুদ্ধ চলছে সেখানে নারী ও শিশুদের অবস্থা আরও নাজুক। তবে সেখানে অসীম সাহসিকতায় কীভাবে নারীরা লড়াই করে চলছেন, সে অভিজ্ঞতাও জানান দেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নারী অধিকারকর্মীরা।
এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য সব দেশের মানবাধিকারকর্মীকে একই সুতোয় গাঁথা। সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেও নিয়মিত যোগাযোগ হয় ভিনদেশি অধিকর্মী বন্ধুদের সঙ্গে। পৃথিবীটা যেন এভাবেই আরও ছোট হয়ে এসেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লড়াই, বিপ্লবের প্রক্রিয়া একেক রকম। সম্মেলনে একে অন্যের অভিজ্ঞতায় পেয়েছি সাহস ও ঋদ্ধতা।

 

হুলি কিশোরদের ব্যতিক্রমী উইগ স্কুল

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
হুলি কিশোরদের ব্যতিক্রমী উইগ স্কুল
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীজুড়ে কত রং, কত বৈচিত্র্য। ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস আর ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে প্রত্যেকের সংস্কৃতি ভিন্ন। তাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কিশোর-কিশোরীদের বেড়ে ওঠার ধরন, জীবনযাপনও একরকম নয়।

প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনির নাম হয়তো তোমরা শুনেছ। সে দেশের হেলা প্রদেশের তাগারি নদী অববাহিকায় বাস করে এক আদিম অধিবাসী। তাদের নাম হুলি জাতি। আধুনিক পৃথিবীর সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবনযাপন থেকে হুলি জাতি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, আলাদা।

বিশেষত বয়ঃসন্ধিতে পা দিলে হুলি কিশোরদের জন্য রয়েছে বিশেষ এক নিয়ম। পৃথিবীর আর দশজন সাধারণ টিনএজারের মতো প্রাতিষ্ঠানিক স্কুলে যাওয়ার রীতি নেই হুলি কিশোর-কিশোরীদের। তবে এই জাতির প্রথা অনুযায়ী ছেলেরা সাবালক হলে বা ১৪ বছর বয়সে পা দিলে বাধ্যতামূলক অংশ নিতে হয় ব্যতিক্রমী এক উইগ স্কুলে।

হুলি গোষ্ঠীর সমাজে পুরুষদের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মাথায় লক্ষ করা যায় কয়েক বছর ধরে যত্নে তৈরি করা উইগ বা পরচুলা। এই উইগকে ধরা হয় পুরুষদের শক্তি, গৌরব ও হুলিদের সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে।

হুলি নারী ও পুরুষদের বসবাসের জায়গা আলাদা। ছেলেরা সাধারণত ১০ বছর বয়সে পা দিলেই মাকে ছেড়ে চলে যেতে হয় পুরুষদের আস্তানায়। সেখানে বয়স্ক পুরুষেরা তাদের শেখাতে শুরু করে শিষ্টাচার, সামাজিক রীতি-নীতি ও আদব কায়দা। ১৪ বছর বয়স থেকে ছেলেদের সাবালক ধরা হয় হুলি সমাজে। কেউ ১৪ বছর বয়সে পা দিলে তাকে পাঠানো হয় উইগ স্কুলে। উইগ স্কুলে থাকেন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ উইগ মাস্টার। তার নেতৃত্বে নিজেদের মাথার চুল বড় করে, বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে নিজেদের উইগ তৈরি করে স্কুলে অধ্যয়নরত প্রত্যেক কিশোর। বিশেষ আকৃতির এই উইগ তৈরিতে সাধারণত ব্যয় হয় কয়েক বছর। উইগ মাস্টার সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেই কৃতিত্বের সঙ্গে স্কুল জীবন শেষ করতে পারে কিশোররা। এর মধ্য দিয়ে হুলি কিশোররা সমাজে স্বীকৃতি পায় প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে।

হুলিদের বাৎসরিক হেগেন উৎসবে নাচ, গান, খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি নতুন উইগ স্কুল পাস করা ছাত্রদের জানানো হয় বিশেষ অভ্যর্থনা। এদিন নিজেদের নতুন উইগের সঙ্গে রং আর নানা ধরনের গহনায় সেজে ওঠে সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা। কৈশোরে মায়ের কাছ থেকে আলাদা হওয়া, কয়েক বছরব্যাপী গোপন স্কুলে কাটানো হুলি কিশোরদের জীবন অনেকের কাছে কঠিন, বিস্ময়কর। তবে আধুনিক পৃথিবীর কিশোরদের থেকে তারা আজও স্বকীয় জীবনধারায় নিরবচ্ছিন্ন।