
একটু কল্পনা করে দেখুন তো, যদি কেউ আপনাকে বলে- সে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তার ছোট্ট রুমটিকে এক বিশাল মিলিয়ন ডলার প্রযুক্তিকেন্দ্রে পরিণত করেছে, আপনি কি তাকে বিশ্বাস করবেন?
অবশ্যই না। আসলে বিশ্বাস না করারই কথা, কারণ এটি বলতে গেলে একটি অসম্ভব বিষয়। কিন্তু এই অসম্ভবকেও একজন সম্ভব করেছে। তার নাম নিক ডি’অ্যালোসিও। এই তরুণ প্রডিজি মাত্র ১৮ বছর বয়সে টেক মিলিয়নিয়ার হয়েছেন।
তার এই পথচলায় ছিল অনেক প্রতিবন্ধকতা, কিন্তু সেসব প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আজ হয়েছেন তরুণ মিলিয়নিয়ার। নিক মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের এই পথচলা শুরু করেছেন। ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নিক। জন্মের পরপরই ডি’অ্যালোসিওর পরিবার অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমায়। মাত্র সাত বছর বয়সে নিক তার উকিল মা এবং ব্যাংকার বাবার সঙ্গে আবার যুক্তরাজ্যে ফেরত আসেন। এখানেই কিংস কলেজ স্কুল, উইম্বল্ডন থেকে এ লেভেল পরীক্ষা দেন। ছোটবেলা থেকেই নিক তার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের মতো ছিলেন না। অল্প বয়সে তিনি প্রযুক্তি ও প্রযুক্তির জগৎ নিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
মাত্র ১২ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের এই কৌতূহলী শিশুটি কিছু একটা করার তৃষ্ণা থেকে উদ্দীপিত হয়ে কোডিংয়ের জগতে পা রাখেন। আর কোনো প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই, শুধু ইউটিউব ও অনলাইন টিউটোরিয়ালের সাহায্যে তিনি নিজেই প্রযুক্তির ভাষা শিখেছিলেন। কিশোর বয়সেই নিকের চোখে পড়েছিল একটি সমস্যা, আর তা হচ্ছে ডাটা ওভার লোড। বিভিন্ন আর্টিকেলের বিশাল বিশাল টেক্সট হজম করা এবং সেগুলোর পেছনে সময় নষ্ট করতে নিক ক্লান্ত হয়ে তিনি নিজেই একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করলেন, যা আর্টিকেলগুলোকে ছোট ছোট অংশে সংক্ষিপ্ত করতে পারবে। আর সেই সুবাদে নিকের দীর্ঘ প্রচেষ্টা এবং কৌতূহলী মন জন্ম দিয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত অ্যাপ সামলি-এর। নিক বলেন, ‘আমি সবসময়ই আগ্রহী ছিলাম কীভাবে জিনিসগুলো কাজ করে তা জানা, বিশেষ করে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো। আমার মনে আছে অনলাইনে তথ্য খুঁজতে গেলে অনেক হতাশ লাগত, কারণ কিছু সার্চ করতে গেলে প্রচুর টেক্সটের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। আর এই ধারণা থেকেই সামলি-এর জন্ম।’
সময়টা তখন ছিল ২০০৭, যখন মোবাইল অ্যাপগুলো তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। নিক তার প্রচেষ্টা এবং দক্ষতা দিয়ে এমন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন, যা আসলেও সত্যিকারের যুগান্তকারী উদ্ভাবন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। তার তৈরি করা অ্যাপ প্রযুক্তি জগতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে খুব বেশি সময় নেয়নি। তারপর এমন কিছু হলো যা নিক কখনো কল্পনাও করতে পারেনি, মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিক একটি জীবন বদলানো প্রস্তাব পেল। ইয়াহু, যারা কিনা টেক জগতের বিশাল এক জায়ান্ট, তারা সামলিতে বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পেল, যা সেই সময় ২ লাখেরও বেশিবার ডাউনলোড হয় এবং এটি তারা আয়ত্ত করার জন্য নিককে ৩০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিল। আর এটি ছিল নিকের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। রাতারাতি নিক একজন মিলিয়নিয়ার হয়ে গেলেন, তার গল্প বিশ্বব্যাপী শিরোনামে এল এবং অগণিত তরুণ মনকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করল।
কিন্তু সামলি নিকের প্রথম উদ্ভাবন ছিল না, মূলত ২০১১-এর প্রথমে তিনি ট্রিমিট নামের একটি আইডব্লিউএস অ্যাপ্লিকেশন লঞ্চ করেছিলেন, যা কিনা বড় ই-মেইল ও ব্লগ পোস্টকে ১০০০, ৫০০ বা ১৪০ শব্দে রূপান্তরিত করতে পারত। এটি, এপল স্টোর-এ-১ লাখেরও বেশি ডাউনলোড হয়। পরবর্তী সময়ে চাইনিজ টাইকুন লি কা শিং-এর নজরে অ্যাপটি আসে এবং তিনি এতে ৩ লাখ ডলার ইনভেস্ট করেন, এরপর নিক ট্রিমিট অ্যাপ্লিকেশনকে রিডিজাইন করে এবং এর নতুন নাম দেয় সামলি।
জাহ্নবী