ঢাকা ২৬ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

টিনএজারদের ঘরের কাজ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
টিনএজারদের ঘরের কাজ
মডেল রূপাঞ্জেল। ছবি: আদিব আহমেদ

দিনের বেশির ভাগ সময় আমরা কাটাই নিজের বাড়িতে। এখানেই আমাদের আশ্রয়স্থল, সুখ-দুঃখ, ভালোবাসার জায়গা। ঘর গুছানো থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, পরিচ্ছন্নতা, পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনা এমন অনেক কাজ থাকে বাড়িতে। মা-বাবা, গৃহকর্মীদের যত্ন ও পরিশ্রমে সাজানো-গোছানো ঘর হয়ে ওঠে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। বড়দের পাশাপাশি তোমরাও অংশ নিতে পারো ঘরের কাজে। তাহলে নিজের ঘর ও পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়বে। তেমনি নতুন নতুন দক্ষতাও তৈরি হবে।

নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখা

বাড়িতে তোমাদের নিজের একটি ঘর থাকে। সেই ঘরের বিছানা, পড়ার টেবিল, আলমারি এসবও কিন্তু তোমাদেরই। তাই এসবের যত্ন নেওয়ার দায়িত্বও তোমাদের। ঘুম ভাঙার পর নিজের বিছানা, বালিশ ঝাড়ু দিয়ে দিন শুরু করলে কেমন হয়? তোমাদের বই-খাতা, কাপড়-চোপড়, প্রয়োজনীয় জিনিস এসবও নিজের হাতে গুছিয়ে রাখ। তাহলে প্রয়োজনের সময় সেগুলো সহজেই খুঁজে পাবে। তা ছাড়া কীভাবে গুছিয়ে রাখলে কাজের সময় সুবিধা হবে সেটাও কিন্তু তুমিই ভালো জানবে। ভাইবোনের সঙ্গে এক ঘরে থাকলে বিছানা গুছানো, ঘর ঝাড়ু দেওয়া এসব কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পার।

কাপড় ধোয়া

বাড়িতে অনেক সদস্য থাকে। সবার কাপড় একজন গৃহকর্মীর পক্ষে ধোয়া কষ্টসাধ্য। অনেক বাড়িতে কোনো গৃহকর্মী থাকে না। তখন ছেলেমেয়েদের কাপড় অনেক সময় মায়েরাই ধুয়ে দেন। অন্যের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে নিজের ব্যবহৃত কাপড় নিজেই ধুয়ে ফেলো। পাশাপাশি পরিবারের অসুস্থ কিংবা বয়স্ক সদস্যদের কাপড় ধুয়ে দিয়ে সাহায্য করতে পারো। কাপড় ধোয়ার পর সেগুলো রোদে শুকানো, ভাঁজ করা, ইস্ত্রি করা এগুলোও নিজে করার অভ্যাস করো।

রান্না করা

এখন অনেক টিনএজার রান্না করতে বেশ পছন্দ করে। ইউটিউব দেখে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকম রান্নার এক্সপেরিমেন্ট কর। রান্না করার এই অভ্যাসকে নিয়মিত কাজে লাগানো যায়। ভাত, ডাল, ডিম ভাজি এগুলো প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ও সহজ পদ। শখের রান্নার পাশাপাশি এ ধরনের সহজ কিছু রান্নাও শিখে রাখতে পারো। নিজের চা, কফি, জুস প্রতিদিন নিজেই বানিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করো। অসুস্থতার সময় প্রয়োজনীয় স্যুপ, সুষম খাবার এগুলোও মায়ের কাছ থেকে শিখে রাখো। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে তখন সাহায্য করতে পারবে। তা ছাড়া রান্নার কাজে মাকে সাহায্য করতে পার অবসর সময়ে। এতে করে সম্পর্কও মধুর হবে।

বাগানের যত্ন

বাগান করা অনেকেরই শখের কাজ। গাছ লাগানো, যত্ন নেওয়া, চাষ করা এসব কাজ আমাদের মন ভালো রাখে। বাড়ির ছাদে, আঙিনায় কিংবা বারান্দায় ছোট বাগান থাকলে তার দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে পারে টিনএজাররা। পরিবারের প্রয়োজনীয় শাকসবজি ফলের চাষও করতে পারো। প্রতিদিন গাছে পানি দেওয়া, ওষুধ দেওয়া, পাতা ছেঁটে দেওয়া এসব কাজের জন্য সময় বেশি লাগে না। তবে পুরোপুরিভাবে বাড়ির একটি কাজের দায়িত্ব নিলে বড়দের কাজের চাপ কমানো যায়। সেই সঙ্গে পারিবারিক কাজে নিজের অবদান রাখা যায়।

লাইব্রেরির দায়িত্ব

অনেকের বাড়িতে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকে। ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকা মানে বইয়ের বিশাল সমাহার। লাইব্রেরি না থাকলেও পরিবারের সব সদস্যের সংগ্রহ মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এসব বই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে পারে ঘরের টিনএজ সদস্যরা। নির্দিষ্ট সময় পরপর বই রোদে দেওয়া, বুকশেলফে ওষুধ দেওয়া, পুরোনো বইয়ে মলাট লাগানো, বইয়ের তালিকা করা এসব কাজ ভাগাভাগি করে নিতে পার ভাইবোনদের সঙ্গেও।

বড়দের দায়িত্ব

শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত আমরা অনেক কিছুর জন্যই পরিবারের বড় সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল। তবে বড়রাই কি শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করবে? টিনএজ বয়স থেকে তোমরাও বড়দের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে পারো। আমাদের বাবা-মায়েরা হয়তো মধ্য বয়স পার করছেন। এ সময় অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এসব রোগে ভোগেন। তাদের সময়মতো ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব রাখতে পার নিজের কাছে। এ ছাড়া বয়স্ক সদস্য থাকলে তাদের চলাফেরা, কাজেকর্মে সাহায্য ও দেখভাল করলে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায়।

পোষা প্রাণীর যত্ন

বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য অনেকে কুকুর, বিড়াল পুষেন। শখের বশেও অনেকে বিভিন্ন, প্রাণী বা পাখি পুষে থাকেন। ঘরে থাকা পোষা প্রাণীটিও যেন পরিবারের সদস্যের মতোই। তাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খেলতে ভালোবাসে টিনএজ সদস্যরা। শুধু খেলাই নয় বরং তাদের খাবার দেওয়া, গোসল করানো, অসুখ হলে লক্ষ রাখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্বও নিতে পারে টিনএজাররা।

ঘরের কাজ কেন করবে

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শৈশব থেকেই ছেলেমেয়েদের ঘরের কাজ শিখানো হলেও আমাদের দেশে তার রীতি নেই। বরং শৈশব, কৈশোরে সন্তানদের কাজ না করানোটাই বাবা-মায়েরা আদরের বহিঃপ্রকাশ ভাবেন। তবে বিভিন্ন গবেষণায় ওঠে এসেছে, কিশোর-কিশোরীরা ঘরের কাজে অংশ নিলে বাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তা ছাড়া নিজের ঘর গুছানো, কাপড় ধোয়া, রান্না করা এগুলো একদমই ব্যক্তিগত কাজ। জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়তই এসব কাজের প্রয়োজন পড়ে। টিনএজ বয়স পার হলেই বেশির ভাগ পড়াশোনার উদ্দেশ্যে বাইরে চলে যায়। সেখানে ব্যক্তিগত, ছোটখাটো কাজ করার জন্য কিন্তু পরিবারের লোক থাকে না। বাড়িতে আগেই এসব কাজ করার অভ্যাস থাকলে জীবনে চলার পথে অসুবিধা হয় না। ঘরের কাজ করা, পরিবারের সদস্যদের কাজে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে টিনএজ বয়স থেকেই দায়িত্বশীল মানসিকতা গড়ে উঠে। এতে করে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।

/আবরার জাহিন

টিনএজ রহস্য সিরিজ

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
টিনএজ রহস্য সিরিজ
ইয়েলো জ্যাকেটস সিরিজের একটি দৃশ্য ছবি: সংগৃহীত

রোমাঞ্চকর আর দুর্দান্ত সব রহস্য গল্পের প্লট দর্শকদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শকদের বেঁধে রাখতে পারে উত্তেজনা, অনুমানের খেলা আর মুগ্ধতায়। আর যদি সেই গল্পের প্লট হয় টিনএজ দর্শকের জন্য তবে তো কথাই নেই। বিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে টিনএজ টিভি সিরিজে জনপ্রিয় হতে শুরু করে রহস্য জনরা। এখন পর্যন্ত টিনএজারদের কাছে রহস্য সিরিজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সমসাময়িক জনপ্রিয় টিনএজ রহস্য সিরিজ নিয়ে আজকের গল্প। 

ইয়েলো জ্যাকেটস (২০২১)

নির্মাতা অ্যাশলে লাইল ও বার্ট নিকারসনের নির্মিত জনপ্রিয় রহস্য সিরিজ ইয়েলো জ্যাকেটস। ২৫ বছর আগে বিমান দুর্ঘটনার শিকার একদল কিশোর-কিশোরীর গহীন জঙ্গলে টিকে থাকার লড়াই দিয়ে সাজানো এই গল্পের প্লট। ২৫ বছর পর হাই স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দেখা হয় দুর্ঘটনায় শিকার সেই বন্ধুদের। পূর্ণবয়স্ক বন্ধুদের মনে করতে দেখা যায় দুর্ঘটনায় আক্রান্ত সেই দিনগুলো। সেসব দিনের ভয়, ক্ষত এখনো তাড়া করে বেড়ায় তাদের। বন্ধুত্ব কিংবা পেশা জীবনে যার প্রভাব রয়ে গেছে ২৫ বছর পরও। গল্পের পর্দায় উঠে আসে দুর্ঘটনার পর অজানা, অনিরাপদ জায়গায় টিকে থাকার সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলো।

 

দ্য মিডনাইট ক্লাবের চরিত্ররা

 

দ্য মিডনাইট ক্লাব (২০২২)

ভৌতিক গল্প ভালোবাসেন যারা, সেই টিনএজারদের জন্য দ্য মিডনাইট ক্লাব হতে পারে সেরা পছন্দ। এটি মাইক ফ্লানাগন ও লিয়াহ ফংয়ের নির্মিত জনপ্রিয় আমেরিকান ভৌতিক রহস্য সিরিজ। মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা অসুস্থ কয়েকজন টিনএজারদের নিয়ে তৈরি হয়েছে এই গল্পের প্লট। কিশোররা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকার সময় নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ভৌতিক ও রহস্য ঘটনা একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে। ভৌতিক ধাঁচের গল্প হলেও কিশোরদের বন্ধুত্ব, বন্ধন ও গল্পের ঘটনায় দেখানো হয়েছে ভালোবাসা, ত্যাগ ও বিচ্ছেদের গল্প।

আমেরিকান ভ্যান্ডাল (২০১৭)

ড্যান পেরাল্ট ও টনি ইয়াসেন্ডা নির্মিত আমেরিকান ভ্যান্ডাল জনপ্রিয় ব্যাঙ্গাত্মক ক্রাইম সিরিজ। অপরাধমূলক বেশ কয়েকটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে ফিকশন দেখানো হয়েছে এই সিরিজে। সিরিজের টিনএজ চরিত্র স্যাম ও পিটার। নিজেদের স্কুলে ঘটে যাওয়া ভাঙচুর ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে তারা। আরেকটি এপিসোডে ক্যাথলিক হাই স্কুলে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে দেখা যায় তাদের। স্কুল জীবনের ঘটনা ও টিনএজ অনুসন্ধানকারী চরিত্রের জন্য সিরিজটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

চিলিং অ্যাডভেঞ্চার্স অব সাবরিনা (২০১৮)

বিকাশ রবার্তো-আগুইতে সার্কাসা নির্মিত চিলিং অ্যাডভেঞ্চার্স অব সাবরিনা মূলত সুপার ন্যাচারাল হরর সিরিজ। সিরিজে প্রধান চরিত্র হাই স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরী। পাশাপাশি সে একজন জাদুকর। জাদুর পৃথিবীর বাইরে সাধারণ কিশোরীর মতো স্কুলে পড়াশোনা, বন্ধুবান্ধব ও ঘুরে বেড়ানো সাবরিনার ভেতর জোগায় নতুন এক অনুভূতি। তার মনের ভেতরের রহস্য, অভিজ্ঞতা উঠে আসে সিরিজে, স্ক্রিনের পর্দায়। 

 

 

প্রশান্ত মহাসাগরে আলদির ৪৯ দিন

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম
প্রশান্ত মহাসাগরে আলদির ৪৯ দিন
বাবা-মায়ের সঙ্গে আলদি ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক জাহাজ, নৌকা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কিংবা সরঞ্জাম এসবের কিছুই নেই। সামান্য খড়কুটা আঁকড়ে ধরে গভীর সমুদ্রে দিন যাপনের কথা কি ভাবতে পারো? তাও যদি হয় প্রশান্ত মহাসাগর? অসম্ভব এই ঘটনাই সম্ভব করেছিলেন ইন্দোনেশিয়ান কিশোর আলদি নভেল আদিলাং। তাও আবার একদিন, দুদিন নয়। পুরো ৪৯ দিন ভেসে বেড়িয়েছেন মহাসাগরের জলে। 

আজ থেকে সাত বছর আগে ২০১৮ সালের ঘটনা। ইন্দোনেশিয়ার সুলাবেসি দ্বীপে বসবাস করতেন ১৯ বছর বয়সী কিশোর আলদি। তিনি কাজ করতেন সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকায়। মাছ ধরার জন্য ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ভেলা ‘রমপং।’ ভেলাগুলো মাছ ধরার জন্য পৌঁছে যেত গভীর সমুদ্রে। আলদি রমপংয়ে বাতি জ্বালানোর কাজ করতেন। মাছকে আকৃষ্ট করতে ব্যবহার করা হতো এই বাতি। ১৬ বছর বয়স থেকেই বাতি জ্বালানোর এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন আলদি। পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ কাজের মধ্যে এই পেশা অন্যতম। কারণ, কুঁড়েঘরের মতো দেখতে এসব ভেলায় মাঝ সমুদ্রে একাকী অবস্থান করতে হয় কয়েক সপ্তাহ। মাছ ধরার মৌসুমে রমপংয়ে করে খাবার-দাবারসহ গভীর সমুদ্রে যাত্রা করেন জেলেরা।

সে বছর জুলাইয়ে আদলির ভেলাসহ আরও ৫০টি ভেলা নোঙরসহ সমুদ্রে মাছ ধরতে যাত্রা করে। উদ্দেশ্য সমুদ্রে অনেক দিন থাকবে এবং মাছ ধরবে। কিন্তু জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে এক দুর্ঘটনা। সমুদ্রের তলদেশে ফেলে রাখা হতো রমপংয়ের নোঙর। উপকূল থেকে সমুদ্রের ১২৫ কিলোমিটার গভীরে ফেলা ছিল নোঙরটি। হঠাৎ প্রবল ঝড়ে নোঙর ছিঁড়ে ছিটকে যায় আলদির ভেলা। দল থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায় সে। ভগ্ন ভেলায় খড়কুটা আর কিছু খাবার আঁকড়ে ধরে একা ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন গুয়াম দ্বীপের কাছে।

সমুদ্রে যখন ভাসছিলেন আলদি তখন তার কাছে ছিল মাত্র কয়েকদিনের খাবার। খাবার শেষ হয়ে গেলে শুরু করেন মাছ ধরা। ভেলায় থাকা কাঠ দিয়ে মাছ পুড়িয়ে করেন খাবারের ব্যবস্থা। তবে সবচেয়ে বিপদে পড়েন খাবার পানি নিয়ে। চারপাশে অথই সাগর। তবে পুরোটাই লবণাক্ত। বেঁচে থাকতে গেলে প্রয়োজন খাবার উপযোগী পানি। এ সময় নিজের গায়ের কাপড় দিয়েই করেন পানি ফিল্টার করার ব্যবস্থা। সমুদ্রের পানি জামায় নিয়ে লবণ যতটা সম্ভব ছেঁকে নিতেন। এভাবেই নিজের খাবার ও পানির ব্যবস্থা করে চলছিলেন আলদি।

মাছ ধরার ইন্দোনেশিয়ান ভেলা রমপং

 

এর ভেতর সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় আলদির ভেলার পাশ দিয়ে চলে যায় অন্তত ১০টি জাহাজ। আলদি কাপড় নেড়ে চিৎকার করে আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। তবে নজর দেয়নি কেউ। প্রচণ্ড ভয় আর হতাশায় একসময় সিদ্ধান্ত নেন সমুদ্রের জলে ডুবে মরবেন। কিন্তু সে সময় মনে পড়ে নিজের বাবা-মায়ের কথা। বিপদের সময় প্রার্থনা করতে আর সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাওয়ার পরামর্শ দিতেন বাবা-মা। সেই মতোই প্রচণ্ড মনোবল আর সাহস সঞ্চার করে আবার সংগ্রাম শুরু করেন আলদি। বাবা-মাকে আরও একবার দেখতে পাওয়ার আশাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল সে সময়। 

অবশেষে সাগরে ভেসে থাকার ৪৯ দিন পরে এমভি আরপেজিও নামে একটি জাহাজ দেখতে পান তিনি। আলদি প্রথমে কাপড় নেড়ে জাহাজের ক্রুদের দৃষ্টি আকর্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কেউ তাকে দেখেনি। তারপর সে তার রেডিও থেকে একটি জরুরি সংকেত পাঠায় জাহাজে। আলদির জানা একমাত্র ইংরেজি শব্দ ‘হেল্প’ ‘হেল্প’ বলে চিৎকার করছিলেন তিনি। একসময় জাহাজের লোকজন তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে। দুর্বল এবং পানিশূন্য আলদিকে নিয়ে জাহাজটি রওনা দেয় জাপানে। পরে ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা তাকে বাড়ি ফিরে যেতে সাহায্য করে। আলদির এই বেঁচে ফেরার লড়াই সেসময় বিস্মিত হতবাক করে দেয় সবাইকে। মনোবল, দক্ষতা আর নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে মৃত্যুর দুয়ার থেকেও যেন ফিরে আসা যায়। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ আলদির ঘটনা।

 

পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম
পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক

পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে কিশোর ও তরুণদের জন্য চলছে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতাটি চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। 

দেশব্যাপী এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করেছে দেশের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি। ‘আপনার কমিউনিটি, আপনার দায়িত্ব’ থিমে এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের চারপাশের পরিবেশ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারবেন। ১২ থেকে ২৩ বছর বয়সী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ লিখতে পারবেন পানি, স্যানিটেশন ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যা নিয়ে। IFIC EcoSolve এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের লেখা প্রবন্ধ পাঠাতে পারবেন অংশগ্রহণকারীরা। প্রতিযোগিতার সংশ্লিষ্টরা জানান, এই আয়োজন টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সচেতনতার জন্য কিশোর-তরুণদের দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলার একটি আন্দোলন। 

বাটন ফোনে ফিরছে টিনএজাররা

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
বাটন ফোনে ফিরছে টিনএজাররা
ছবি সংগৃহীত

১৭ বছর বয়সী কানাডিয়ান টিনএজার গ্যাভিন ম্যাকনিল ভালোবাসতেন নিজের আধুনিক ফিচার সম্পন্ন আইফোনে গান শুনতে, ভিডিও দেখতে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটাতে। তবে গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ১১ গ্রেডে ওঠার পর প্রিয় আইফোনটি বদলে ব্যবহার করতে শুরু করেন ফিচার বিহীন পুরোনো যুগের বাটন ফোন। 

টিনএজারদের প্রিয় সেলফোনের কথা উঠলেই হয়তো তালিকায় চলে আসবে স্যামসাং, অ্যাপল, গুগল পিক্সেলের মতো কোম্পানির নতুন মডেলের অত্যাধুনিক সব স্মার্টফোনের নাম। তবে অবাক করার বিষয় ম্যাকনিল এর মতো বাটন ফোন ব্যবহার করা টিনএজার ও তরুণদের সংখ্যাও এখন কম নয়। আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিজেদের উদ্যোগেই বাটন ফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছে টিনএজাররা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি ও স্ক্রিন টাইম কমিয়ে সময় বাঁচাতে এই পথ বেছে নিয়েছে অনেকে।

বাটন ফোন নামে বেশি পরিচিত এই মোবাইল ফোনকে ফ্লিপ ফোনও বলা হয়। ২০০০ সালে বাজারে আসা ফ্লিপ ফোনের রাজত্ব ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। নম্বর প্যাডযুক্ত এসব ফোনে কথা বলা, বার্তা পাঠানো, ম্যাপ দেখার মতো কাজগুলোর বাইরে আর কোনো কাজই করা যেত না। পরে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অত্যাধুনিক স্মার্টফোন জায়গা করে নেয় বাজারে। এমনকি শিশুরাও ফ্লিপ ফোনের পরিবর্তে ব্যবহার করতে শুরু করে স্মার্টফোন।

এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি এবং অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম থেকে শারীরিক মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে বাটন ফোনে আগ্রহী হচ্ছে টিনএজাররা। ১৬ বছর বয়সী আরেক কানাডিয়ান কিশোর লুক মার্টিন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে মার্টিন বলে, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আসক্তি দিন দিন তাকে অন্য সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন, হতাশ করে দিচ্ছিল। একসময় সে ও তার বন্ধু দৈনিক ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা স্মার্টফোনে সময় কাটাত। বাটন ফোনে এখন দৈনিক সময় কাটানো হয় গড়ে মাত্র ২০ মিনিট। সে মনে করে, এখন শুধু প্রয়োজনবশতই ফোন ব্যবহার করা হয়। এতে সময় ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

মার্টিনের মতো স্মার্টফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানোর কারণে মানসিক সমস্যার শিকার অনেক টিনএজার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, টিনএজে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের সময় মস্তিষ্কের যে অংশ উদ্দীপিত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও ওই একই অংশ উদ্দীপিত হয়। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসক্তি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে টিনএজারদের মধ্যে।

এ ছাড়া স্মার্ট ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে টিনএজারদের চোখের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা, অবসাদ ও বিষণ্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন গবেষক ও চিকিৎসকরা। এমন সময় টিনএজারদের বাটন ফোনে ফিরে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত সাধুবাদ জানান মা-বাবা ও গবেষকরা।

পারমাণবিক যুদ্ধের বিপরীতে স্মরণীয় সামান্থা স্মিথ

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
পারমাণবিক যুদ্ধের বিপরীতে স্মরণীয় সামান্থা স্মিথ
সামান্থা রিড স্মিথ ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে যত সমরাস্ত্র রয়েছে তার ভেতর পারমাণবিক অস্ত্র সবচেয়ে ভয়াবহ। কোনো অঞ্চলে পারমাণবিক হামলা ধ্বংস করে দিতে পারে একটি দেশ, জাতিকে। এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধ ঘটলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পুরো পৃথিবী। তবুও কেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা হয় বিশ্বের মানুষের প্রশ্ন। পারমাণবিক যুদ্ধের বিপক্ষে আওয়াজ তুলে ইতিহাস হয়েছেন আমেরিকান শিশু শান্তিকর্মী সামান্থা রিড স্মিথ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বদলে যাচ্ছিল আমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক। মতের অমিল, ক্ষমতার লড়াই, অস্ত্র শক্তির প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ। দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে চলছিল পুরোদমে। সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় শিগগিরই পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে আমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই যুদ্ধ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে গেলে ধ্বংস হবে কত দেশ, জাতি। এমন সময় ১৯৮২ সালের নভেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা নির্বাচিত হন ইউরি আন্দ্রোপভ। আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের আতঙ্ক তখন আরও বেড়ে যায়। আন্দ্রোপভ সমগ্র ইউরোপ দখল করবেন। সেই সঙ্গে দ্রুতই আমেরিকায় পারমাণবিক হামলা করবেন এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের মানুষের মনে।

পশ্চিমা মিডিয়াগুলো একের পর এক সংবাদ করে যাচ্ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের এই নেতাকে নিয়ে। বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্দ্রোপভ সম্পর্কে। অনেকের মতোই সেটি চোখে পড়ে ১০ বছর বয়সী আমেরিকান বালিকা সামান্থা রিড স্মিথের। প্রতিবেদন পড়ার পর ছোট্ট স্মিথ ভাবেন, আমেরিকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক হামলা নিয়ে সবার মনেই আতঙ্ক ও ধোঁয়াশা। তবে এর সত্যি উত্তরটা জানেন একমাত্র আন্দ্রোপভ। কেন কেউ তার কাছে জানতে চাইছে না সত্যিই তিনি পারমাণবিক হামলা করবেন কি না? মায়ের কাছে জানতে চান সামান্থা স্মিথ। আন্দ্রোপভকে চিঠির মাধ্যমে এই প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন মা।

১৯৮২ সালের ডিসেম্বর মাস। আমেরিকার অঙ্গরাজ্য মেইন-এর হল্টন শহর থেকে স্মিথ চিঠি লিখেন আন্দ্রোপভকে। প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই চিঠি পৌঁছে যায় রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মস্কো শহরে। ১০ বছর বয়সেই আমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বন্দ্বের কারণ ও পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতেন স্মিথ। আন্দ্রোপভকে সম্বোধন ও অভিবাদন জানিয়ে স্মিথ চিঠিতে লেখেন, ‘আমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আমি দুশ্চিন্তা অনুভব করি। আপনি পারমাণবিক হামলার পক্ষে নাকি বিপক্ষে? যদি বিপক্ষে হন তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে কীভাবে আমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বন্দ্ব মিটাবেন? যদি পক্ষে থাকেন তাহলে বলুন কেন আপনি আমেরিকা বা বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে চান?’ চিঠিতে আরও লেখেন, ‘মানুষের একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। একে অন্যের সঙ্গে যুদ্ধ কিংবা কারও একার ক্ষমতা দখলের জন্য নয়।’ রাষ্ট্রনেতাদের পৃথিবীতে শান্তি ছড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

সারা বিশ্ব তখন পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমন সময় ১০ বছরের মেয়ে স্মিথের এই চিঠির কথাগুলো যেন ছিল বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কথা। তবে ছোটরাই হয়তো পারে পারমাণবিক যুদ্ধের বিপরীতে এমন সহজ সরল প্রশ্ন করতে। স্মিথের এই চিঠি ছুঁয়ে যায় বিভিন্ন দেশ ও মানুষের মন। 

স্মিথের লেখা ঐতিহাসিক চিঠি ছবি: সংগৃহীত

 

স্মিথের এই চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল সোভিয়েতের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘প্রাভদা’তে। ১৯৮৩ সালের ২৬ এপ্রিল স্মিথের চিঠির উত্তর দেন ইউরি আন্দ্রোপভ। স্মিথের সাহসিকতা ও সততার প্রশংসা করে আন্দ্রোপভ জানান, সোভিয়েত ইউনিয়নের শিশু, পেশাজীবী, নারী, পুরুষ কেউ যুদ্ধ চায় না। শুধু আমেরিকাই নয়, পৃথিবীর কোনো প্রান্তই ধ্বংস হোক দেখতে চায় না তারা। চিঠির সঙ্গে স্মিথকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান আন্দ্রোপভ।

১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের বিপক্ষে আমেরিকা-সোভিয়েত ইউনিয়নের শুভেচ্ছাদূত হয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণে যান সামান্থা স্মিথ। তিনিই ছিলেন আমেরিকার সর্বকনিষ্ঠ কূটনীতিক ও শুভেচ্ছাদূত। আন্দ্রোপভের অতিথি হিসেবে দুই সপ্তাহের সফরে স্মিথের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে। কিন্তু স্মিথ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাধারণ শিশু ও মানুষদের সঙ্গে থাকার জায়গা বেছে নেন। সাধারণ ভ্রমণকারীর মতো ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন জায়গা, সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে।

দেশে ফিরে এসে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেন নিজের বই, ‘জার্নি টু দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন।’ বইয়ের মাধ্যমে স্মিথ জানান, আমেরিকা ও সোভিয়েত দুই দেশের শিশু ও বড়রা একই রকম। তারাও আনন্দে ও শান্তিতে বাঁচতে চায়। স্মিথ জানান দেন, পৃথিবীর সব দেশের মানুষ যুদ্ধের বদলে শান্তি চায়। সব দেশের মানুষ একে অপরের প্রতি আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ কেউ কাউকে আক্রমণ করতে চায় না। স্মিথের এই ভাবনা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা দুই দেশের নাগরিকই স্মিথের এই সফরকে সাধুবাদ জানায়।

ইতিবাচক কাজে পরিপূর্ণ স্মিথের জীবনটা ছিল খুবই ছোট। সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর শেষে শান্তিকর্মী হিসেবে বিশ্বে কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। পাশাপাশি আমেরিকায় শিশু উপস্থাপক ও অভিনয় শিল্পী হিসেবে পর্দায় আনেন নিজেকে। ১৯৮৫ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান স্মিথ। তবে পৃথিবী থেকে এখনো শেষ হয়নি পারমাণবিক অস্ত্রের আতঙ্ক। যেকোনো যুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু ও টিনএজাররা। পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রনেতাদের করা ছোট্ট সামান্থার প্রশ্ন আজও প্রাসঙ্গিক।