
দিনের বেশির ভাগ সময় আমরা কাটাই নিজের বাড়িতে। এখানেই আমাদের আশ্রয়স্থল, সুখ-দুঃখ, ভালোবাসার জায়গা। ঘর গুছানো থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, পরিচ্ছন্নতা, পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনা এমন অনেক কাজ থাকে বাড়িতে। মা-বাবা, গৃহকর্মীদের যত্ন ও পরিশ্রমে সাজানো-গোছানো ঘর হয়ে ওঠে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। বড়দের পাশাপাশি তোমরাও অংশ নিতে পারো ঘরের কাজে। তাহলে নিজের ঘর ও পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়বে। তেমনি নতুন নতুন দক্ষতাও তৈরি হবে।
নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখা
বাড়িতে তোমাদের নিজের একটি ঘর থাকে। সেই ঘরের বিছানা, পড়ার টেবিল, আলমারি এসবও কিন্তু তোমাদেরই। তাই এসবের যত্ন নেওয়ার দায়িত্বও তোমাদের। ঘুম ভাঙার পর নিজের বিছানা, বালিশ ঝাড়ু দিয়ে দিন শুরু করলে কেমন হয়? তোমাদের বই-খাতা, কাপড়-চোপড়, প্রয়োজনীয় জিনিস এসবও নিজের হাতে গুছিয়ে রাখ। তাহলে প্রয়োজনের সময় সেগুলো সহজেই খুঁজে পাবে। তা ছাড়া কীভাবে গুছিয়ে রাখলে কাজের সময় সুবিধা হবে সেটাও কিন্তু তুমিই ভালো জানবে। ভাইবোনের সঙ্গে এক ঘরে থাকলে বিছানা গুছানো, ঘর ঝাড়ু দেওয়া এসব কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পার।
কাপড় ধোয়া
বাড়িতে অনেক সদস্য থাকে। সবার কাপড় একজন গৃহকর্মীর পক্ষে ধোয়া কষ্টসাধ্য। অনেক বাড়িতে কোনো গৃহকর্মী থাকে না। তখন ছেলেমেয়েদের কাপড় অনেক সময় মায়েরাই ধুয়ে দেন। অন্যের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে নিজের ব্যবহৃত কাপড় নিজেই ধুয়ে ফেলো। পাশাপাশি পরিবারের অসুস্থ কিংবা বয়স্ক সদস্যদের কাপড় ধুয়ে দিয়ে সাহায্য করতে পারো। কাপড় ধোয়ার পর সেগুলো রোদে শুকানো, ভাঁজ করা, ইস্ত্রি করা এগুলোও নিজে করার অভ্যাস করো।
রান্না করা
এখন অনেক টিনএজার রান্না করতে বেশ পছন্দ করে। ইউটিউব দেখে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকম রান্নার এক্সপেরিমেন্ট কর। রান্না করার এই অভ্যাসকে নিয়মিত কাজে লাগানো যায়। ভাত, ডাল, ডিম ভাজি এগুলো প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ও সহজ পদ। শখের রান্নার পাশাপাশি এ ধরনের সহজ কিছু রান্নাও শিখে রাখতে পারো। নিজের চা, কফি, জুস প্রতিদিন নিজেই বানিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করো। অসুস্থতার সময় প্রয়োজনীয় স্যুপ, সুষম খাবার এগুলোও মায়ের কাছ থেকে শিখে রাখো। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে তখন সাহায্য করতে পারবে। তা ছাড়া রান্নার কাজে মাকে সাহায্য করতে পার অবসর সময়ে। এতে করে সম্পর্কও মধুর হবে।
বাগানের যত্ন
বাগান করা অনেকেরই শখের কাজ। গাছ লাগানো, যত্ন নেওয়া, চাষ করা এসব কাজ আমাদের মন ভালো রাখে। বাড়ির ছাদে, আঙিনায় কিংবা বারান্দায় ছোট বাগান থাকলে তার দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে পারে টিনএজাররা। পরিবারের প্রয়োজনীয় শাকসবজি ফলের চাষও করতে পারো। প্রতিদিন গাছে পানি দেওয়া, ওষুধ দেওয়া, পাতা ছেঁটে দেওয়া এসব কাজের জন্য সময় বেশি লাগে না। তবে পুরোপুরিভাবে বাড়ির একটি কাজের দায়িত্ব নিলে বড়দের কাজের চাপ কমানো যায়। সেই সঙ্গে পারিবারিক কাজে নিজের অবদান রাখা যায়।
লাইব্রেরির দায়িত্ব
অনেকের বাড়িতে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকে। ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকা মানে বইয়ের বিশাল সমাহার। লাইব্রেরি না থাকলেও পরিবারের সব সদস্যের সংগ্রহ মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এসব বই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে পারে ঘরের টিনএজ সদস্যরা। নির্দিষ্ট সময় পরপর বই রোদে দেওয়া, বুকশেলফে ওষুধ দেওয়া, পুরোনো বইয়ে মলাট লাগানো, বইয়ের তালিকা করা এসব কাজ ভাগাভাগি করে নিতে পার ভাইবোনদের সঙ্গেও।
বড়দের দায়িত্ব
শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত আমরা অনেক কিছুর জন্যই পরিবারের বড় সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল। তবে বড়রাই কি শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করবে? টিনএজ বয়স থেকে তোমরাও বড়দের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে পারো। আমাদের বাবা-মায়েরা হয়তো মধ্য বয়স পার করছেন। এ সময় অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এসব রোগে ভোগেন। তাদের সময়মতো ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব রাখতে পার নিজের কাছে। এ ছাড়া বয়স্ক সদস্য থাকলে তাদের চলাফেরা, কাজেকর্মে সাহায্য ও দেখভাল করলে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায়।
পোষা প্রাণীর যত্ন
বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য অনেকে কুকুর, বিড়াল পুষেন। শখের বশেও অনেকে বিভিন্ন, প্রাণী বা পাখি পুষে থাকেন। ঘরে থাকা পোষা প্রাণীটিও যেন পরিবারের সদস্যের মতোই। তাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খেলতে ভালোবাসে টিনএজ সদস্যরা। শুধু খেলাই নয় বরং তাদের খাবার দেওয়া, গোসল করানো, অসুখ হলে লক্ষ রাখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্বও নিতে পারে টিনএজাররা।
ঘরের কাজ কেন করবে
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শৈশব থেকেই ছেলেমেয়েদের ঘরের কাজ শিখানো হলেও আমাদের দেশে তার রীতি নেই। বরং শৈশব, কৈশোরে সন্তানদের কাজ না করানোটাই বাবা-মায়েরা আদরের বহিঃপ্রকাশ ভাবেন। তবে বিভিন্ন গবেষণায় ওঠে এসেছে, কিশোর-কিশোরীরা ঘরের কাজে অংশ নিলে বাড়ি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তা ছাড়া নিজের ঘর গুছানো, কাপড় ধোয়া, রান্না করা এগুলো একদমই ব্যক্তিগত কাজ। জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়তই এসব কাজের প্রয়োজন পড়ে। টিনএজ বয়স পার হলেই বেশির ভাগ পড়াশোনার উদ্দেশ্যে বাইরে চলে যায়। সেখানে ব্যক্তিগত, ছোটখাটো কাজ করার জন্য কিন্তু পরিবারের লোক থাকে না। বাড়িতে আগেই এসব কাজ করার অভ্যাস থাকলে জীবনে চলার পথে অসুবিধা হয় না। ঘরের কাজ করা, পরিবারের সদস্যদের কাজে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে টিনএজ বয়স থেকেই দায়িত্বশীল মানসিকতা গড়ে উঠে। এতে করে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
/আবরার জাহিন