পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে কিশোর ও তরুণদের জন্য চলছে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতাটি চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
দেশব্যাপী এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করেছে দেশের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি। ‘আপনার কমিউনিটি, আপনার দায়িত্ব’ থিমে এই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের চারপাশের পরিবেশ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারবেন। ১২ থেকে ২৩ বছর বয়সী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ লিখতে পারবেন পানি, স্যানিটেশন ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যা নিয়ে। IFIC EcoSolve এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের লেখা প্রবন্ধ পাঠাতে পারবেন অংশগ্রহণকারীরা। প্রতিযোগিতার সংশ্লিষ্টরা জানান, এই আয়োজন টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সচেতনতার জন্য কিশোর-তরুণদের দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলার একটি আন্দোলন।
ছবিতে ক্র্যাক প্লাটুনের কয়েকজন সদস্য। ছবি: সংগৃহীত
ক্র্যাক প্লাটুন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় শহুরে তরুণদের নিয়ে সংগঠিত এক স্বতন্ত্র গেরিলা দল। মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে গঠিত এই দলের কাজ ছিল গোপনে ঢাকা ও তার আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় অতর্কিত হামলা করা। উদ্দেশ্য বিশ্ব দরবারে আমাদের যুদ্ধাবস্থার কথা জানান দেওয়া এবং ঢাকায় অবস্থিত পাক সেনাদের আতঙ্কিত করে তোলা। এই দলের বেশির ভাগই ছিলেন তরুণ মেধাবী, সচ্ছল ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। জীবনজুড়ে যাদের ছিল অপার সম্ভাবনা। কারও কারও ছিল উন্নত দেশে কর্ম-বাসস্থানের সুযোগ। সব ভোগ-বিলাস ফেলে যারা এই গেরিলা দলে নাম লিখিয়েছিলেন তাদের অনেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে হারিয়ে যান চিরতরে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ক্র্যাক প্লাটুন এক অনস্বীকার্য নাম।
শুরুর গল্প
মে মাস, ১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ভারতের মেঘালয়ে পুরোদমে চলছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষণ। অন্যদিকে পূর্ব বাংলায় রাজধানী ঢাকা তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এক সুরক্ষিত দুর্গ। এ ছাড়া যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকাতেই আসেন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, কূটনীতিক ও সাংবাদিকরা। কড়া নিরাপত্তায় জড়িয়ে ঢাকার পরিস্থিতি যদি শান্ত দেখানো যায় তাহলে বিদেশিদের চোখে সহজেই ফাঁকি দেওয়া যাবে শহরে, গ্রামেগঞ্জের আনাচে-কানাচে বাঙালিদের ওপর নির্মম নিপীড়নের চিত্র। এক ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ অবস্থান দেখানো আর মুক্তিযোদ্ধাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে উপস্থাপন করাই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য। পাকিস্তানি জান্তার এই পরিকল্পনা ভণ্ডুল করতেই সেক্টর কমান্ডার ঘোষণা করেন বিশেষ এক আরবান গেরিলা স্কোয়াড গঠন করার। উদ্দেশ্য গোপনে অতর্কিত হামলা করে ঢাকায় অবস্থান নেওয়া পাক সেনাদের আতঙ্কিত করে তোলা। আর ঢাকায় আসা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্ব মিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ চলমান- এ কথা জানান দেওয়া। মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিশেষ এই গেরিলা দলে প্রথমে সদস্য ছিল মোট ১৬ জন। চোখে মৃত্যু আর বুকে সাহস নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকায় ফেরেন হাবিবুল আলম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আব্দুস সামাদ, শ্যামল, জিয়াউদ্দিন আলী আহমেদ প্রমুখ।
প্রথম অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল
১৯৭১ সালের ৯ জুন। এদিন সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্বব্যাংকসহ বেশ কিছু দাতা সংস্থা ও বিদেশি সাংবাদিকদের নিমন্ত্রণের আয়োজন করে পাকিস্তানি আমলা ও কর্মচারীরা। উদ্দেশ্য ঢাকাকে শান্ত ও নিরাপদ শহর দেখিয়ে ২০০ কোটি ঋণের টাকা বাগে আনা। বলাবাহুল্য ঋণের এই টাকা ব্যয় হতো বাঙালি দমন, নিপীড়নের কাজে। এই আয়োজনের কথা জানতেন তরুণ গেরিলা দলের সদস্যরা। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় দলনেতা হাবিবুল আলমের নেতৃত্বে নীল ডাটসান ১০০০ গাড়িতে করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাছে পৌঁছে যায় গেরিলা জিয়া, মায়া, স্বপন ও বাদল। গাড়ি থেকে নেমে সুযোগ বুঝে প্রথম গ্রেনেড ছুড়েন জিয়া। এরপরই বেশ কয়েকটি এলোপাতাড়ি গ্রেনেড ছুড়েন মায়া ও আলম। আত্মরক্ষার জন্য স্বপন কাপড়ের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন পিস্তল। আর গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে বসেছিলেন বাদল। গ্রেনেডের ধোঁয়া আর হোটেলের ভেতর হুলুস্থূল কাণ্ডের ভেতর চোখের পলকে গেরিলারা বেরিয়ে পড়েন। গাড়িতে উঠতেই বাদলের গাড়ি চালানোর দক্ষতায় অদৃশ্য হয়ে পড়েন নিমিষেই। এর ভেতর পাকিস্তানের পরিস্থিতি যে মোটেই স্বাভাবিক নয় তা বুঝতে বাকি থাকে না বিদেশি অতিথিদের। মুহূর্তেই বাতিল হয়ে যায় ২০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা। এটিই ছিল আরবান তরুণ গেরিলাদের প্রথম সফলতা।
‘দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল’
সেদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে। বিবিসি ও ভয়েস আমেরিকাতে উঠে আসে ইন্টারকন্টিনেন্টালে হামলা ও পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানে চলমান যুদ্ধাবস্থার কথা। রেডিওর খবর শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন খোদ মেজর খালেদ মোশাররফ। খালেদ মোশাররফের প্রত্যাশা ছিল অনুষ্ঠান চলাকালীন সদরঘাট ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় গেরিলারা গ্রেনেড ছুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করবেন। কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেই আক্রমণের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়েছিলেন মেজর মোশাররফ। বিস্ময় আর মুগ্ধতায় মেজর তরুণদের উদ্দেশ করে বলে বসেন, ‘দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল।’ সেই থেকে এই গেরিলা বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে পরিচিত হয়ে উঠে ক্র্যাক প্লাটুন নামে।
ক্র্যাক প্লাটুনের তাক লাগানো অপারেশন
সব অপারেশনে ক্র্যাক প্লাটুনের সম্বল ছিল ছোট আকারের পাইন্যাপল গ্রেনেড, সাধারণ মানের পিস্তল, নিজেদের জোগাড় করা গাড়ি আর বুক ভরা সাহস। ছোটখাটো এমন সরঞ্জাম নিয়েই প্লাটুনের গেরিলারা পরিচালনা করেছিলেন প্রায় ৮২টি দুর্ধর্ষ অপারেশন। বেশির ভাগ অপারেশন হতো হুটহাট, উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে। অনেকটা ঠিক অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো। প্লাটুনের মূলমন্ত্র ছিল ‘হিট অ্যান্ড রান।’ অর্থাৎ দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। তরুণ গেরিলাদের নতুন নতুন কারিশমা আর আচমকা আক্রমণে ক্রমেই নাজেহাল হয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এমনকি একসময় ভয়ে সন্ধ্যার পর ঢাকায় টহল দিতেও ভয় পেতে শুরু করে তারা।
সিনেমাটিক ব্যাংক লুট
১ নভেম্বর, ১৯৭১। ক্র্যাক প্লাটুনের কাছে চিঠি আসে যে করেই হোক আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য টাকার জোগাড় করতে হবে। গেরিলা আসাদের নেতৃত্বে ঠিক হলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর শীর্ষ ধনী আদমজী পরিবারের ব্যাংক লুট করা হবে। ৩ নভেম্বর অপারেশনের উদ্দেশ্যে সদস্যরা পৌঁছে যায় মুসলিম ব্যাংক কমার্শিয়ালের সামনে। কারাতে জানা গেরিলা ফিরোজের আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ব্যাংকের দারোয়ান। আর সবাই তখন ঢুকে পড়েন ব্যাংকের ভেতর। ভেতরে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান তারাও মুক্তিবাহিনীর পক্ষে। কর্মকর্তাদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে আবার অদৃশ্য হয়ে পড়েন তরুণরা।
পাকিস্তানি বাহিনীর ভেতর যুদ্ধ লাগানো
জুলাই মাসের শেষ দিকের ঘটনা। ঢাকার সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী পুল ধরে হরহামেশাই যাতায়াত করে পাকিস্তানি মিলিটারি। সেই রাস্তায় গেরিলারা পুঁতে রাখল জর্দার ডিব্বার মতো দেখতে তিনটি ছোট আকারের মিনি মাইন। এবার মিলিটারির গাড়ি চললেই সেগুলো বিস্ফোরণের অপেক্ষা। রাত ১টার দিকে কয়েকটি মিলিটারি গাড়ির প্রবেশে বিস্ফোরিত হয়ে উঠল মাইনগুলো। এদিকে যাত্রাবাড়ী মিলিটারি চেকপোস্টের পাকিস্তানি সেনারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ভেবে বসল মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ। ঘটনা বুঝে উঠার আগেই বিস্ফোরণের মুখে পড়া মিলিটারি আর যাত্রাবাড়ী চেকপোস্টের মিলিটারির মধ্যে শুরু হয়ে গেল পাল্টাপাল্টি আক্রমণ। আর ততক্ষণে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল তরুণ গেরিলারা।
সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ি এই পুলেই মাইন ফেলে রেখেছিলেন গেরিলারা
আকাশজুড়ে বাংলাদেশের পতাকা
১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট ছিল পাকিস্তানের জন্মদিন। এদিন হঠাৎ ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় লাল-সবুজের বাংলাদেশের পতাকায়। গ্যাস বেলুনে বাংলাদেশের পতাকা যুক্ত করে এভাবেই আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিল ক্র্যাক তরুণ দলের সদস্যরা। বলাবাহুল্য, সেদিন সব কাজ ফেলে গুলি করে বেলুন ফুটো করতেই নাজেহাল হয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা!
ক্র্যাক প্লাটুনের শহিদরা
ক্র্যাক প্লাটুনের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর উপর ব্যতিক্রমী আক্রমণ করে গোপন আস্তানায় মিলিয়ে যাওয়া। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এই যুদ্ধে অংশ নিয়ে অনেক তরুণ গোপনে মিলিয়ে গেছেন পৃথিবীর অন্তরালে। ক্র্যাক প্লাটুনের অতর্কিত হামলায় দিশেহারা পাকিস্তানি সেনার চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন দলের সদস্যরা। তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর পাকিস্তানি বাহিনী যাদের সন্ধান পেয়েছিল প্রত্যেকেই হয়েছিলেন নির্মম নির্যাতনের শিকার।
ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা সদস্য বদিউল আলম বদি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২৯ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনীর পুরস্কারের লোভে বদিকে ধরিয়ে দেন তারই বন্ধু ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের ছেলে ফরিদ। নাখালপাড়া টর্চার সেলে বন্দি করে অমানবিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল বদিকে। পাশবিক অত্যাচারের মুখেও বদি স্বীকার করেননি প্লাটুনের অন্য সদস্যদের নাম। গেরিলা মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ ছিলেন ঢাকার শীর্ষ ধনী পরিবারের সন্তান। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হিট লিস্টে। তাকে আটক করে রাখার স্থানের খোঁজ পেয়ে সেখানে দেখা করতে গিয়েছিলেন আজাদের মা। শেষ সাক্ষাতে মায়ের রান্না করা ভাত খেতে চেয়েছিলেন নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত আজাদ। পরদিন মা ভাত নিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি ছেলের। জীবদ্দশায় আর কোনোদিন ভাত খাননি শহিদ আজাদের মা।
এলিফ্যান্ট রোডের এক বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছিল দুই গেরিলা ভাই রুমী-জামী, শরীফ ইমামসহ আরও কয়েকজন সদস্যকে। তারা কেউই টর্চার সেল পেরিয়ে দেখতে পাননি পৃথিবীর আলো। ক্র্যাক প্লাটুনের এই তরুণ গেরিলারাই আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতার সুপার হিরো।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিরিশ সুবাস আমেরিকার জর্জিয়ার বাসিন্দা। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিরিশ আবিষ্কার করে ফলের কীটনাশক যাচাইয়ের জন্য এআইনির্ভর টেস্ট কিট পেস্টস্ক্যান্ড। গত বছর আমেরিকা টপ ইয়াং সায়েন্টিস্ট চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় তার এই আবিষ্কার সাড়া ফেলে দেয় ক্ষূদে বিজ্ঞানী মহলে।
ছোটবেলায় ফলমূল খাওয়ার আগে আর সব মায়ের মতো শিরিশ সুবাসের মা ও ফলমূল ধুয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। শিরিশের মনে তখন থেকেই মনে প্রশ্ন জাগে মা কেন তাকে সব সময় ফলগুলো ধুয়ে খেতে বলেন। কৌতূহলী কিশোর শিরিশ ভাবত এভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই কি ফলের জীবাণু, কীটনাশক দূর করা সম্ভব? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানতে পারে, ৭০ ভাগ খাবার ধোয়ার পরও কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যায়। যা থেকে ক্যানসার এবং আলঝেইমারের মতো রোগ হতে পারে। শিরিশ ভাবে যদিও সে এগুলো শনাক্ত করতে পারে তাহলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
এই ভাবনা থেকেই সে উদ্ভাবন করে পেস্টিস্ক্যান্ড নামের এক বিশেষ টেস্ট কিট। এআইনির্ভর এই যন্ত্রটি খাবার স্ক্যান করতে সক্ষম। এটি স্পেকট্রোফটোমেট্রি ব্যবহার করার মাধ্যমে ফল এবং সবজির পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত আলো পরিমাপ করে। আলোর এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় অবশিষ্ট থাকা কীটনাশক। খাবার স্ক্যান করার পর, পেস্টিস্ক্যান্ড এআই মেশিন লার্নিং মডেল ব্যবহার করে আলোক তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে কীটনাশকের উপস্থিতি নির্ধারণ করে। এতে ব্যবহার করা সেন্সর ও প্রসেসর দিয়ে স্ক্যানারটি ৮৫ শতাংশ নির্ভুলভাবে কাজ করে। যদিও বর্তমানে এটি একটি প্রোটোটাইপ আকারে বানিয়েছে সে। শিরিশ তার পরীক্ষায় আপেল, পালংশাক, স্ট্রবেরি এবং টমেটোর ১২ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করেছে।
শিরিশ এই যন্ত্রটি বানিয়ে গত বছর থ্রি এম ইয়াং সায়েন্টিস্ট চ্যালেঞ্জে ২৫ হাজার ডলার পুরস্কার জিতে নেয়। সেই সঙ্গে আমেরিকার অন্যতম কিশোর বিজ্ঞানীর খেতাব অর্জন করে। প্রতিযোগিতায় চার মাস ধরে তার প্রকল্পটি নিয়ে লড়েছিল শিরিশ। তারপর ফাইনালে মাত্র ২০ ডলার দিয়ে বানানো পেস্টিস্ক্যান্ডের জন্য বিজয়ী হয় সে।ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পেস্টিক্যান্ড বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে শিরিশের। শিরিশের পছন্দের বিষয় পদার্থবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ে পৃথিবীর অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় মেসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়ার স্বপ্ন দেখে সেই কিশোর।
অন্যদের তুলনায় বেশি বিষণ্নতায় ভুগে ধূমপায়ী টিনএজাররা। ছবি: এআই
তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ বা ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো বড় ক্ষতিগুলোর কথা তোমরা নিশ্চয়ই জানো। এছাড়া বয়সভেদে ধূমপানের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব। সাধারণত কিশোর বয়সেই কৌতুহল বশত ধূমপানে অভ্যস্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্ত কৈশোরের শারীরিক বিকাশ ও মানসিক অবস্থায় ভিন্নতা থাকায় এসময় ধূমপানে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সবচেয়ে বেশি। কিশোর বয়সে ধূমপান করার রয়েছে বিশেষ কিছু ক্ষতি।
ধূমপানের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হিসেবে ধরা হয় বয়ঃসন্ধিকাল থেকে সদ্য তরুণকাল পর্যন্ত। এ সময় মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ বেশি থাকায় সিগারেটের প্রতি আসক্তি তৈরি হয় সহজে। সাধারণত ২৪ বছর বয়স থেকে কেউ নতুন করে সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হন না। তাই কিশোর বয়সে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে বাকি জীবন অধূমপায়ী হিসেবে কাটানো মোটেই কঠিন নয়।
আমেরিকায় ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীই প্রথম সিগারেট খাওয়া শুরু করেন তাদের টিনএজ বয়সে। পৃথিবীর সব দেশেই এই চিত্র প্রায় একই রকম। কৈশোরে সাধারণত কৌতূহলবশত কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে মজার ছলেই সিগারেট খেতে শুরু করে ছেলেমেয়েরা। এর ভেতর ৩০ শতাংশ টিনএজারের ধূমপানের এই অভ্যাস থেকে যায় সারা জীবন।
১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ধূমপায়ীদের একই বয়সের অধূমপায়ীদের তুলনায় মদ্যপানের ঝুঁকি পাঁচগুণ এবং গাঁজা আসক্তির ঝুঁকি ১৩ গুণ বেশি থাকে। আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জরিপে ওঠে এসেছিল এমন তথ্য। পাশাপাশি ধূমপায়ী কিশোররা বেশি হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভোগেন বলেও জানায় গবেষণা।
বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতোই ফুসফুসের বৃদ্ধি ও কার্যক্ষমতার বিকাশ ঘটতে থাকে। তাই প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কিশোর-কিশোরীরা ধূমপানের কারণে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ধূমপায়ী কিশোর-কিশোরীদের হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের ক্ষমতা কম থাকা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কিশোরদের জন্য বাজারে পাওয়া যায় ভ্যানিলা, চকলেট, ব্লুবেরি এমনকি বিভিন্ন ফলের স্বাদ-গন্ধযুক্ত সিগারেট। তরুণদের জন্য বাজারে রয়েছে ইলেকট্রনিক সিগারেট, হালকা ও ফিল্টারযুক্ত তামাকদ্রব্য। নতুন স্বাদযুক্ত আধুনিক এসব মাদকদ্রব্যে স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়- তামাক কোম্পানির এমন প্রচারণা কিন্তু এটি একদমই সত্য নয়। বরং অতিরিক্ত লাভের আশাতেই এমন মিথ্যা প্রচারণা চালায় তামাক কোম্পানিগুলো। বাস্তবে দীর্ঘদিন ধরে টিনএজার ও তরুণরা আধুনিক এসব তামাকদ্রব্যে ঝুঁকলেও মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে গত ৫০ বছরের চেয়েও বেশি।
সারা বিশ্বে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সিগারেট, ইলেকট্রনিক সিগারেট বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে অভ্যস্ত। ২০১৭ সালে এই তথ্য জানিয়েছে আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক প্রতিবেদন। পৃথিবীর সব দেশেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিশোর ধূমপায়ীর সংখ্যা। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ জানায়, বাংলাদেশেও ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত। তবে সিগারেট বা মাদকদ্রব্য থেকে দূরে রাখতে বাবা-মায়ের কড়া শাসনই সমাধান নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বরং বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের সহজ সম্পর্ক, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে সচেতনতা ও ইতিবাচক বন্ধু নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
আর্থিক কর্মসংস্থানের স্মার্ট মাধ্যম হিসেবে পুরাদস্তুর জায়গা করে নিয়েছে মুক্তপেশা বা ফ্রিল্যান্সিং। ঘরে বসে প্রযুক্তির সাহায্যে আয় করা যায় বলে কিশোর-তরুণদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে অনেকে আবার দ্বিধায় থাকেন কীভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা। নতুনদের জন্য রমজান হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং শুরুর সুবর্ণ সুযোগ।
যে কারণে সেরা সময় রমজান
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আগে কাজে দক্ষতা অর্জন, পোর্টফোলিও তৈরি, অ্যাকাউন্ট খোলা, অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত সময় ও শ্রম দিতে হয়। স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকা অবস্থায় এই অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আবার রমজানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির সময়কে কেন্দ্র করে এ সময় শুরু হয় ফ্রিল্যান্সিং শেখার বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি অনলাইন কোর্স। ঘরে বসে এই অবসর সময়ে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে নিজেকে দক্ষ এবং স্বাবলম্বী করে তোলা যায় সহজে।
যেভাবে হয়ে উঠবেন ফ্রিল্যান্সার
বিষয় নির্বাচন করুন ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাজ কঠিন, কিছু আবার সহজ। কিশোর-তরুণদের মধ্যে ডেটা এন্ট্রি, কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রেজেন্টেশন তৈরি ও প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন কাজ জনপ্রিয়। সবার আগে নিজের পছন্দ ও যোগ্যতা বিবেচনা করে কাজ নির্বাচন করুন। একসঙ্গে অনেক কাজ শেখার চেষ্টা না করে প্রথমে দু-একটি কাজে দক্ষ হয়ে উঠুন। কাজ শেখার জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। অথবা পরিচিত সফল তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের পরামর্শ ও সাহায্য নিতে পারেন।
প্রজেক্ট তৈরি করুন আপনি যে কাজগুলোতে দক্ষ সেগুলোর ওপর কিছু প্রজেক্ট তৈরি করুন। এতে করে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণ হবে। তা ছাড়া পোর্টফোলিওতে যুক্ত করার জন্যও নিজের কিছু প্রজেক্ট তৈরি করতে হবে।
পোর্টফোলিও তৈরি করুন পোর্টফোলিও হলো আপনার দক্ষতা নির্ণয়ের পরিচয়পত্র। এতে আপনার সব কাজ বা প্রজেক্টগুলো সাজানো থাকবে। অনলাইনে এই পোর্টফোলিও দেখার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়। তাই একটি নিরাপদ, শক্তিশালী পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করুন।
অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন কিশোর-তরুণদের জন্য জনপ্রিয় কিছু ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম পিপল পার আওয়ার, ট্রুল্যান্সার, ফাইভার, সিম্পলি হায়ার্ড প্রভৃতি। পোর্টফোলিও তৈরির পর এবার আপনার কাজের জায়গা অনুযায়ী যেকোনো একটি প্ল্যাটফর্মে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। পড়াশোনার ক্ষতি না করে সীমিত পরিসরে এর মাধ্যমে কাজ করুন।
সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের কিশোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়ে নিজের মেধা পাকাপাকিভাবে যাচাই করে নিতে আয়োজিত হয় বিভিন্ন শিক্ষামূলক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশি টিনএজার শিক্ষার্থীদের জন্য এমন কিছু প্রতিযোগিতা সম্পর্কে আজকের লেখা।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (আইএসও) শিক্ষার্থীরা যারা বিজ্ঞান ও গণিত ভালোবাসে তাদের জন্য অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতা। অন্যান্য দেশের মতো ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে এই প্রতিযোগিতায়। সাধারণত পদার্থ, রসায়ন, গণিত, কম্পিউটার ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এখানে। আইএসওর রয়েছে কয়েকটি ধাপ। জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হওয়া প্রতিযোগীরাই অংশ নিতে পারে আন্তর্জাতিক পর্বে।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও) গণিতের এই উৎসব বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় একটি প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশি কিশোর গণিতবিদদের অনেকেই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে রেখেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। ২০ বছর বয়সের নিচে যেকোনো শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারে গণিত অলিম্পিয়াডে। আমাদের দেশে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের তত্ত্বাবধানে চারটি স্তরে এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হয়। বিজয়ী হতে গেলে প্রতিযোগীকে পার হতে হয় সবগুলো ধাপ।
বিশ্ব রোবট অলিম্পিয়াড (ডব্লিউআরও) এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও ইতোমধ্যে সাফল্যের ছাপ রেখেছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ক্ষুদে ও কিশোর শিক্ষার্থী। প্রযুক্তি ও রোবটিক্স কার্যক্রম যারা ভালোবাসে তাদের জন্যই মূলত ডব্লিউআরও প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণকারীরা দলগতভাবে রোবট ডিজাইন, তৈরি ও প্রোগ্রামিং করে থাকেন। ৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে এই প্রতিযোগিতায়।
মডেল ইউনাইটেড নেশনস (এমইউএন) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, বিশ্ব ব্যাংক প্রভৃতির সমন্বয়ে ৪-৫ দিনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজনে। তবে মজার বিষয় এই সম্মেলনে কূটনৈতিক হিসেবে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে আলোচনা, বিতর্কতে যোগ দেয় অংশগ্রহণকারীরা। বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরীদের জন্য এই আয়োজনে অংশ নিতে পারে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা।
আন্তর্জাতিক রচনা প্রতিযোগিতা জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো এবং তরুণদের নিয়ে কাজ করা গোই পিস ফাউন্ডেশন পৃথিবীব্যাপী আয়োজন করে এই রচনা প্রতিযোগিতার। শান্তি, সমাধান ও টেকসই পৃথিবী সম্পর্কিত বিষয়ে সাধারণত রচনা লিখে পাঠায় বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিশোর ও তরুণরা অংশ নিতে পারে এই রচনা প্রতিযোগিতায়।