ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

উচ্চতায় সবাইকে ছাড়িয়ে অলিভার

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০২:০৮ পিএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:২২ পিএম
উচ্চতায় সবাইকে ছাড়িয়ে অলিভার
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা টিনএজার অলিভার রিউক্স। ছবি সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা টিনএজার হিসেবে পরিচিত কানাডিয়ান টিনএজার অলিভার রিউক্স। ৭ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার অলিভার ২০২১ সালে উচ্চতায় সবচেয়ে দীর্ঘ টিনএজার হিসেবে নাম লেখান গিনেজ ওয়ার্লড বুকস রেকর্ডে। শিগগিরই সবচেয়ে লম্বা কলেজ বাস্কেটবল প্লেয়ার হিসেবেও রেকর্ড করতে যাচ্ছেন এই বাস্কেটবল খেলোয়াড়। 

অলিভার রিউক্সের জন্ম ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কানাডার কুইবেক স্টেটের টেরেবোন শহরে। তিনি বর্তমানে পড়াশোনা করছেন আমেরিকার ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি তিনি একজন নিবেদিত বাস্কেটবল প্লেয়ার। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা টিনএজার হিসেবে কলেজে জনপ্রিয় ও পরিচিত মুখ অলিভার। তাই বাসা থেকে কলেজ কিংবা বাস্কেটবল প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর সময় কোনো কোনোদিন পথচারী ও বন্ধুরা অলিভারের ছবি দিলেন শত শত। তবে সবগুলো ছবিই হয় উল্লম্ব চিত্র। কেননা সমতল বা আনুভূমিক অন্য কোনো ফ্রেমেই ধরা যায় না অলিভারের উচ্চতাকে। তবে ছবি তোলার এই ঘটনায় মোটেই বিচলিত হন না ১৯ বছর বয়সী এই কিশোর। এর কারণ হিসেবে পারিবারিকভাবেই তিনি পরিচিত এই জনপ্রিয়তার সঙ্গে। কেননা অলিভারের পরিবারের বাবা, মা ও ভাইও উচ্চতায় বেশ লম্বা। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বের হলে বরাবরই পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন তারা। 

অলিভার তার এই উচ্চতাকে কাজে লাগিয়েছেন বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই এই খেলায় অলিভারের ছিল আলাদা আগ্রহ। কানাডিয়ান প্লেয়ার হিসেবে ২০২১ সালে অলিভার এফআইবিএ অনূর্ধ্ব ১৬ প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক জয়ী হন। ২০২৪ সালে আর্জেন্টিনায় ফিবা অনূর্ধ্ব ১৮ আমেরিকা কাপে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয়বারের মতো ব্রোঞ্জ পদক জয়ী হন। কলেজ পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠন সাউথইস্টার্ন কনফারেন্সের একজন নিয়মিত বাস্কেটবল প্লেয়ার অলিভার। বর্তমানে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজিয়েট পর্যায়ে বাস্কেটবল প্লেয়ার হিসেবে খেলছেন তিনি। শিগগিরই কলেজ পর্যায়ে সবচেয়ে লম্বা বাস্কেটবল প্লেয়ারের রেকর্ডটিও যাবে অলিভারের ঝুলিতে তার অপেক্ষায় রয়েছেন খেলাপ্রেমী ভক্ত-অনুরাগীরা। তবে ক্রীড়া জগতে অন্যতম জনপ্রিয় লিগ ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন (এনবিএ)। অলিভারের স্বপ্ন এনবিএ লিগে নিজের নাম লেখানো। এই লিগের সবচেয়ে লম্বা সাবেক খেলোয়াড়দের চেয়েও অলিভার এখন পাঁচ সেন্টিমিটার বেশি লম্বা। ২০২৮ সালের সম্ভাবনাময় এনবিএ বাস্কেটবল প্লেয়ার হিসেবেও রয়েছে অলিভারের নাম।

নিজের ব্যতিক্রমী উচ্চতা নিয়ে এই টিনএজারের রয়েছে মিশ্র অনুভূতি। অনেকটা আনন্দ নিয়েই অলিভার জানান, অন্যান্য মানুষের তুলনায় উচ্চতা বেশি হওয়ায় দূরের যেকোনো কিছুও তিনি সহজে দেখতে পান। অন্যদের চেয়ে দেখার দৃষ্টিকোণটাও তাই আলাদা। তা ছাড়া নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসেন অলিভার। উচ্চতার কারণে পৃথিবীর যে প্রান্তেই তিনি যান না কেন সবার নজরে পড়েন। তখন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব পাতাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এই উচ্চতা। তবে অনেকটা মজার ছলেই বলেন, আমার উচ্চতার আশপাশে লম্বা এমন কিশোর হয়তো কম আছে। অতিরিক্ত উচ্চতার জন্য দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে এবং পোশাক নির্বাচনে বেশ বেগ পোহাতে হয় তাকে। তবে তার এই উচ্চতাকে অহংকার কিংবা উপদ্রব হিসেবে দেখতে নারাজ এই কিশোর। বরং শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে ইতিবাচক কাজে ভূমিকা রেখে যেতে চান তিনি।

 

ইন্ডি গেমের জগতে

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
ইন্ডি গেমের জগতে

ভিডিও গেমের জগতে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইন্ডিপেনডেন্ট বা ইন্ডি ঘরনার গেম। সহজলভ্যতা, স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম আর বৈচিত্র্যময় গল্পের জন্য কিশোর ও তরুণদের মধ্যে গেমগুলো বেশ জনপ্রিয়। সারা বিশ্বের মতো জেন জি প্রজন্মের ভেতর বাংলাদেশেও ইন্ডি গেমস নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। অনেক তরুণ গেমার নিজেদের গেম তৈরি করার স্বপ্ন দেখছেন। 

ইন্ডি গেম কী ও কীভাবে এলো

ইন্ডি গেম হলো এমন এক ধরনের ভিডিও গেম- যা একক কোনো ব্যক্তি, ছোট দল বা ডেভেলপাররা বড় কোনো গেম প্রকাশনী ও তাদের প্রযুক্তিগত সাহায্য ছাড়াই তৈরি করে। স্বাধীনভাবে ডেভেলপ করা যায় বলে ভিন্নধারার গল্প, মৌলিকতা, সৃজনশীল উপস্থাপন এই গেমের বৈশিষ্ট্য।
১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে ভিডিও গেমজগতে প্রথম ইন্ডি গেমের ধারণা গড়ে ওঠে। ইন্ডি গেমের চর্চা প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সারাবিশ্বেই এটি ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্ম স্টিম চালু হলে বিভিন্ন ইন্ডি-ফ্রেন্ডলি মাধ্যমের উত্থান হয়। নব্বই থেকে দুই হাজার দশকে ‘শেয়ারওয়্যার’ মডেলের মাধ্যমে ব্যক্তি উদ্যোগে বা ছোট গ্রুপ করে অনেক ডেভেলপার তাদের গেম ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন। সে সময় ডুম, ব্রেইড এবং মাইনক্রাফটের মতো গেমগুলো ইন্ডি গেমকে মূলধারায় নিয়ে আসে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডি গেম ডেভেলপারদের বড় রকমের অবদান ছিল।

কেন বাড়ছে জনপ্রিয়তা

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানির মতো দেশগুলোতে ইন্ডি গেমের রয়েছে বিস্তর আধিপত্য। ইন্ডি গেমের জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে এর বিশাল বাজার। অ্যানিমেশন শিল্পের জন্য পরিচিত দেশ জাপান ইন্ডি গেমের উপস্থাপনেও অনন্য শৈলীর নজর রেখেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে গড়ে উঠেছে নানারকম ইন্ডি গেম ফেস্টিভ্যাল ও কমিউনিটি। আবার বাংলাদেশের মতো ভিডিও গেমজগতে তুলনামূলক নতুন দেশগুলোর কিশোর ও তরুণ গেমাররাও ঝুঁকছে ইন্ডি গেমের দিকে। ইন্ডি গেমের এই জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে গেম ডেভেলপ করার সুযোগ। এখানে তরুণ প্লেয়াররা শুধু গেম খেলারই না। বরং নিজেদের ইচ্ছামতো গেম তৈরি করার সুযোগও পান। আবার মানুষ স্বভাবতই নিয়মিত নতুন কিছু খুঁজতে ভালোবাসে। সহজে গেম ডেভেলপ করা যায় বলে এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত উঠে আসে নতুনত্ব, আকর্ষণীয় গল্প। এ ছাড়াও যারা চাপমুক্তভাবে বিনোদনের উদ্দেশ্যে গেম খেলতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ইন্ডি গেম সেরা প্ল্যাটফর্ম। সাধারণত ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী গেমারদের মধ্যে দেখা যায় ইন্ডি গেমের সবচেয়ে জনপ্রিয়তা। ইন্ডির সহজলভ্যতা ও মনমতো সাজানো গল্প এই গেমকে জনপ্রিয় করে তুলেছে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী টিনএজার গেমারদের কাছে। আবার এই গেমে দেখা মেলে রেট্রো গ্রাফিক্স এবং গেমপ্লে মেকানিক্সের ব্যবহার। তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে ইন্ডি জনপ্রিয় এমন সব নস্টালজিক সৃজনশীল ও শৈল্পিক গ্রাফিক্সের কারণে।

নতুনদের জন্যে

ভিডিও গেমের জগতে যারা নতুন প্লেয়ার, তাদের শুরুর যাত্রায় চমৎকার মাধ্যম হতে পারে ইন্ডি গেম। ইন্ডি গেম সাধারণত এককভাবে খেলা যায় এবং তুলনামূলক কম প্রতিযোগিতামূলক। আবার অন্যান্য গেমের তুলনায় ইন্ডি গেম শেখা ও আয়ত্ত করাও অনেকটা সহজ। তা ছাড়া যেকোনো বড় আকারের AAA গেমের তুলনায় ইন্ডি ঘরানার গেমগুলো কম দামেও পাওয়া যায়। ইন্ডির নতুন গেমার হিসেবে খেলতে পারেন ‘এমং আস’ বা  ‘স্টারডিউ ভ্যালি’-এর মতো গেমগুলো। আবার চাইলে ইন্ডি গেম নিজেই তৈরি করতে পারেন তরুণ, এমনকি টিনএজাররাও। তবে এর জন্য প্রয়োজন গেম ইঞ্জিন ব্যবহারের দক্ষতা, গেম ডিজাইন ও আর্ট সম্পর্কে ধারণা এবং প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত দক্ষতা। 

জনপ্রিয় কিছু ইন্ডি গেম

বিশ্বব্যাপীই বেশকিছু ইন্ডি গেম কিশোর ও তরুণ প্লেয়ারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবার বাংলাদেশি তরুণদের তৈরি কয়েকটি ইন্ডি গেমও আমাদের গেমজগতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

  • মাইনক্রাফট একটি জনপ্রিয় ওপেন-ওয়ার্ল্ড স্যান্ডবক্স গেম। যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের মতো করে দুনিয়া তৈরি করতে পারেন।
     হলো নাইট একটি চমৎকার ২ডি অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার গেম। এখানে গভীর গল্প ও চ্যালেঞ্জিং যুদ্ধ রয়েছে।
  • আন্ডারটেল একটি আরপিজি গেম, যেখানে খেলোয়াড়দের পছন্দ অনুযায়ী গল্প পরিবর্তিত হয়।
  • সেলেস্তে একটি কঠিন প্ল্যাটফর্মার গেম, যেখানে আত্মোন্নয়ন ও সংগ্রামের গল্প বলা হয়েছে।
  • আগন্তুক বাংলাদেশি তরুণদের তৈরি একটি জনপ্রিয় অ্যাকশনধর্মী গেম।
  • হিরোজ অব একাত্তর আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি জনপ্রিয় ইন্ডি গেম।

ইন্ডি গেম সম্পর্কিত টুর্নামেন্ট

বিশ্বব্যাপী ইন্ডি গেমকে ঘিরে বেশকিছু টুর্নামেন্ট এবং প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিযোগিতায় গেম ডেভেলপারদের নিজেদের ভাবনা ও গেম প্রদর্শনীর সুযোগ থাকে। আমাদের দেশে এখনো ইন্ডি গেমের সরাসরি আয়োজন না থাকলেও অনলাইনভিত্তিক এই টুর্নামেন্টগুলোতে অংশ নেওয়া যায়। 

ইন্ডিপেনডেন্ট গেমস ফেস্টিভ্যাল 
১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ইন্ডি গেম প্রতিযোগিতাগুলোর এটি অন্যতম। প্রতিবছর এটি গেম ডেভেলপারস কনফারেন্সের অংশ হিসেবে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ডেভেলপাররা তাদের গেম জমা দিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিততে পারেন।

গেম ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ
এটি একটি বার্ষিক ইন্ডি গেম প্রতিযোগিতা-  যেখানে ইন্ডি ডেভেলপার, ছাত্র এবং গেমিংয়ে উৎসাহীরা অংশ নিতে পারেন। অনলাইনে আয়োজিত হয় বলে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করা সম্ভব।  

গ্লোবাল গেম জেম  
এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (৪৮ ঘণ্টা) নতুন একটি গেম তৈরি করতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে যেকোনো বয়সী ইন্ডি গেম ডেভেলপার। গেম ডেভেলপারদের মধ্যে এটি অন্যতম জনপ্রিয় আয়োজন।

 

 

শখ থেকে সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
শখ থেকে সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা
ডমিনিক স্কালেই। ছবি: সংগৃহীত

জার্মানির সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ডমিনিক স্কালেই। ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে খুঁটিনাটি পরীক্ষা আর আঁকাআঁকির নেশা থেকে একসময় পেয়ে বসে বড় কিছু করার ইচ্ছা। ২০২৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে চালু করে নিজের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান নুডাইম থ্রিডি। বিভিন্ন করপোরেটের মাধ্যমের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখন এই টিনএজারের ক্রেতা। চলো জেনে নেই স্কালেই এর সফলতা ও স্বপ্নের গল্প।

শুরুর গল্প

সাধারণ প্রিন্টার থেকে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার অনেকটাই আলাদা। এই প্রিন্টারে রয়েছে স্তরে স্তরে নকশা তৈরি করে বিভিন্ন জিনিসের বাস্তবধর্মী ত্রিমাত্রিক অবয়ব তৈরি করার সুযোগ। প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা আর কিছু ধাতব পদার্থ কাজে লাগিয়ে আধুনিক এই প্রিন্টিংব্যবস্থা নিয়ে শৈশব থেকে ডমিনিক স্কালেইয়ের ছিল আলাদা আগ্রহ। ২০২২ সালে ১১ বছর বয়সী স্কালেই উপহার পায় একটি ব্যক্তিগত ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার। তখন থেকেই শুরু হয় তার শখের প্রিন্টিং যাত্রা। প্রিন্টার মেশিনের মধ্য দিয়ে স্কালেই কখনো ফুটিয়ে তুলত জ্যামিতিক নকশা, প্রাকৃতিক দৃশ্য কখনো বা রোবোটিক্স চিত্র। তবে কাজ করতে গিয়ে সে বুঝতে পারে শখের তোলা সত্যিকার অর্থেই আশি টাকা। কেননা, থ্রিমাত্রিক প্রিন্টারে ভালো নকশা ফুটিয়ে তোলার কাজটি মোটেই সহজ নয়। পরিপূর্ণ একটি ডিজাইন করতে চাইলে প্রয়োজন গভীর ভাবনা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং প্রিন্টার ব্যবহারের নানান কলাকৌশল। আর কিশোর স্কালেই এই সবকিছুতেই ছিল অনভিজ্ঞ। তবে হার মানতে নারাজ ছিল সে। একসময় স্কালেই বুঁদ হয়ে যায় নিজে নিজেই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের বিস্তারিত ব্যবহার শেখার কাজে। নতুন নতুন উপাদান ব্যবহার আর সমস্যা সমাধান করতে করতে ক্রমেই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টশিল্পে দক্ষ হয়ে ওঠে এই কিশোর। স্কালেই এর দক্ষতা যতই বাড়ছিল ততই বড় হচ্ছিল তার স্বপ্ন। আধুনিক বিশ্বে ফ্যাশন, বিজ্ঞান, নির্মাণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টশিল্পের চাহিদা। সেই থেকে তার মনে প্রশ্ন জাগে, শখকে যদি ব্যবসায় পরিণত করা যায় তবে কেমন হয়!

চ্যালেঞ্জ ও সফলতা

১৩ বছর বয়সে নিজের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালু করার পরিকল্পনা স্কালেই এর সমবয়সী বন্ধু ও স্বজনদের কাছে ছিল কল্পনাতীত। তারা কিশোর মনের ছেলেমানুষি কিংবা মজার ছলে বলা কথা হিসেবেই ধরে নিয়েছিল এই ভাবনাকে। তবে সে ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ২০২৪ সালের শুরুতে কিশোর স্কালেই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার প্রতিষ্ঠান চালুর লাইসেন্স চেয়ে আদালতে আবেদন করে। ছয় মাস অপেক্ষার পর সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত লাইসেন্স। নুডাইম থ্রিডি নামে চালু করে তার ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট। এটি ছিল তার কাজের প্রথম ধাপ। তবে কাজ শুরুর পর ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করতে স্কালেইকে পাড়ি দিতে হয়েছিল কঠিন পথ। বয়সে ছোট হওয়ায় তার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করতো না কোনো প্রতিষ্ঠান। সেই সময় বারবার নিজের ভালো কাজের জন্য পাওয়া প্রশংসাপত্র দেখিয়ে ক্রেতাদের ভরসা আদায় করত স্কালেই। বর্তমানে নুডাইম থ্রিডি সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং এ প্রোটোটাইপ, লিথোফেনস, আলংকরিক নকশা সরবরাহ করে। তবে ব্যাংকিং খাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন করতে এখনো দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্কালেইকে। তার মতে, প্রতিভা ও দক্ষতা কোনো নির্দিষ্ট বয়সে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক কিশোর-তরুণরাই পৃথিবীব্যাপী সফল উদ্যোক্তা। তাই কিশোর উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ব্যাংকিংব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে স্কালেই।

 স্বপ্ন

ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ডমিনিক স্কালেই। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থ্রিডি প্রিন্টিং নিয়ে করা যাবে চমৎকার সব কাজ। প্রযুক্তিপ্রেমী সৃজনশীল কিশোর ও তরুণদের অন্যতম শখ ও মেধা যাচাইয়ের কাজ হতে পারে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিংশিল্প। এখন এআইয়ের মাধ্যমে ভয়েজ অ্যাক্টিভিটেড থ্রিডি প্রিন্টারের অপেক্ষায় স্কালেই। যেখানে মুখে বর্ণনার মধ্য দিয়েই আঁকা ও মুদ্রণ করা যাবে বিভিন্ন নকশা। সেই সঙ্গে নিজের ব্যবসাকেও আন্তর্জাতিক রূপ দিতে চায় এই কিশোর উদ্যোক্তা।

টিন ফ্যাক্ট

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১২ পিএম
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম
টিন ফ্যাক্ট
ছবি সংগৃহীত
  • টিনএজাররা খুব বেশি সময় মন খারাপের অনুভূতি নিয়ে থাকতে পারে না। কৈশোরে আনন্দ, উত্তেজনা ও উচ্ছ্বাসের মাত্রা থাকে বেশি।এই অনুভূতির প্রতিফলন দেখা যায় ভার্চুয়াল জীবনেও। সামাজিক মাধ্যমে টিনএজারদের সবচেয়ে বেশি 😂বেসামাল হাসির এই ইমোজি ব্যবহার করতে দেখা যায়।
  • জীবনের সব পর্যায়েই কমবেশি নতুন মানুষ, নতুন বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তবে গবেষণা জানায়, টিনএজ জীবন বা মাধ্যমিক স্কুল জীবনের বন্ধুত্বগুলোই সবচেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বেশি টিকে থাকতে দেখা যায় এই সময়ের বন্ধুত্বগুলোই।
  • টিনএজ বয়সে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এর কারণ কাজের প্রতি অবহেলা এমনটাই কিন্তু নয়। এ বয়সে মস্তিষ্কের স্মৃতি নিয়ন্ত্রণকারী জায়গাগুলো সবেমাত্র পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। তাই এসময় নিজেদের করণীয় কাজগুলো মনে রাখতে রুটিন জীবন, ডায়েরি লেখার অভ্যাস তৈরি করলে ভালো কাজে দেয়।
  • টিনএজারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ইউটিউব। তবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের রয়েছে আলাদা পছন্দ। টিকটক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলো কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। অন্যদিকে কিশোররা টুইচ, রেডিট, ইউটিউব বেশি ব্যবহার করে থাকে।
  • টিনএজ বয়সে সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা কাজ করতে গিয়ে ছোটখাটো ভুল করে ফেলা খারাপ কিছু নয়। অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায়, বয়ঃসন্ধিতে ভুল করার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে বিচক্ষণ মানুষ হতে সাহায্য করে। বরং অতিরিক্ত বাঁধাধরা জীবনের কারণে ভুল করার সুযোগ না পেলে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে বড় ধরনের অন্যায় কাজ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আহার ব্যাধির বিড়ম্বনা

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০১ পিএম
আহার ব্যাধির বিড়ম্বনা
মডেল: আরাবী। ছবি: আদিব আহমেদ

শৈশবে প্রিয়তা করিম (ছদ্মনাম) দেখতে নাদুস-নুদুস হওয়ায় আদর করে তাকে কোলে তুলে নিতেন স্বজনরা। কিন্তু বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর পরও স্বাস্থ্য না কমায় এবার তার সুস্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু করেন পরিবার-পরিজন। আবার আয়নায় নিজেকে স্বাস্থ্যবান দেখে হীনম্মন্যতায় ভুগতে শুরু করে সে নিজেও। একসময় প্রিয়তা শুরু করে কঠোর ডায়েটিং। ক্রমেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওজন কমতে থাকে তার। দেখা দেয় অনিয়মিত ঘুম, শারীরিক দুর্বলতা। কিন্তু সে লক্ষ করে, একসময় খেতে ভালোবাসলেও এখন খাবারের প্রতি তার তৈরি হয়েছে তীব্র অনীহা। প্রিয়তার মতোই বিভিন্ন কারণে কিশোর-কিশোরীদের দেখা দেয় খেতে না চাওয়ার এই রোগ ইটিং ডিজঅর্ডার বা আহার ব্যাধি।

আহার ব্যাধি কি

খাবার খাওয়া নিয়ে বিপত্তি হলেও আহার ব্যাধি মূলত একটি মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে কেউ কেউ বেশি খায়। কারও আবার তৈরি হয় খাবারের প্রতি চরম অনীহা। বিভিন্ন কারণে খাবার নিয়ে আমাদের আবেগ, চিন্তা ও খাদ্যাভ্যাসের আচরণের পরিবর্তনই হলো আহার ব্যাধি। যেকোনো বয়সেই মানুষ আহার ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সারা বিশ্বেই কিশোর-কিশোরী ও নবীন তরুণদের মধ্যে আহার ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।

কৈশোরে কেন হয়

আধুনিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীব্যাপীই কিশোর-কিশোরীদের আহার ব্যাধির বেড়েই চলছে। আমাদের দেশেও আহার ব্যাধিতে আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা কম নয়।
কৈশোরে আহার ব্যাধির অন্যতম কারণ সামাজিক ও পরিবেশগত চাপ। কিশোর-কিশোরীরা স্বভাবতই নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে বেশি সচেতন এবং আবেগপ্রবণ থাকে। সামাজিক মাধ্যম এবং মিডিয়ায় সুন্দরের একতরফা সংজ্ঞা ভাবিয়ে তুলে স্বাস্থ্যবান টিনএজারদের। আবার শারীরিক গঠন নিয়ে বন্ধু, পরিচিতদের নেতিবাচক মন্তব্য প্রভাব খেতে চাওয়া-না চাওয়ার ইচ্ছার ওপর। খাবার খেতে গিয়ে কোনো অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা, অপমানজনক পরিস্থিতির শিকার হলেও দেখা দিতে পারে আহার ব্যাধি। এ ছাড়া ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি কিশোর-কিশোরীদের অতিরিক্ত আগ্রহ তৈরি করে অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাসের মতো আহার ব্যাধি।
আবার জিনগত কারণেও হতে পারে আহার ব্যাধি। সাধারণত পরিবারের বড় সদস্যদের মধ্যে কখনো কারও আহার ব্যাধি থাকলেও শৈশবে তার প্রভাব পড়ে না। তবে কৈশোরে পা দেওয়ার পর দেখা দিতে পারে এই জিনগত বৈশিষ্ট্য।
কিশোর বয়সে অনিয়মিত ঘুম, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, হতাশাও তৈরি করতে পারে আহার ব্যাধি। খাবার খাওয়ার সঙ্গে রয়েছে মনের সম্পর্ক। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কিংবা বিষণ্ন থাকলে কিশোরীদের মধ্যে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কিংবা খাবারে অনিচ্ছা দেখা দেয়।
আবার কৈশোরের শুরুতে বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের সময় দেখা দেয় বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। কোনো কিছু নিয়ে শুচিবায়ু তৈরি হলেও সেগুলো সাধারণত শৈশবের পর বয়ঃসন্ধিকালেই দেখা দেয়। এ সময় খাবার সম্পর্কিত কোনো শুচিবায়ু দেখা দিলেও হতে পারে আহার ব্যাধি।

আহার ব্যাধির ধরন

আহার ব্যাধি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। কৈশোরে যে ধরনের আহার ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয় বেশি সেগুলো জেনে নাও।

অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা
এই রোগে আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের শারীরিক গড়ন ও স্বাস্থ্য নিয়ে অযথাই দুশ্চিন্তা ও হীনম্মন্যতায় ভুগে। ওজন বাড়ার ভয়ে খাবার খেতে অনীহা বা একরকম শঙ্কা তৈরি হয়। ফলে দিনদিন তাদের খাবারের চাহিদা কমতে থাকে।

বুলিমিয়া নারভোসা
বুলিমিয়ায় আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীরা খাবার খাওয়ার পর খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ নিয়ে অনুতাপ বোধ করে। ফলে খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বমি করার ইচ্ছা তৈরি হয়। কেউ কেউ আবার গলায় আঙুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করে। এই স্বভাব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আবার অনিয়মিত ঘুম, বিষণ্নতা থেকেও খাওয়ার পর বমির উদ্রেক হয়। অনেকের এই অবস্থা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। খাওয়ার পরের এই অস্বস্তিকর অবস্থা খাবারে অনীহা বাড়িয়ে তুলে।

বিনজ ইটিং ডিজঅর্ডার
এটি হলো অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতার আহার ব্যাধি। প্রায়ই জাংক ফুড খেতে অভ্যস্ত এমন কিশোর-কিশোরীরা সাধারণত এই রোগে বেশি ভুগে। এ ছাড়া কৈশোরে আকস্মিক হরমোনাল পরিবর্তনের কারণেও অনিয়ন্ত্রিত খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

ক্ষতিকর প্রভাব

কৈশোরকাল আমাদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সময়। মানুষের জীবনের প্রায় বেশির ভাগ বিকাশই সম্পন্ন হয় এ সময়। কৈশোরে আহার ব্যাধির কারণে পুষ্টিকর ঘরোয়া খাবারেই সাধারণত বেশি অনীহা তৈরি হয়। এতে করে উচ্চতা বৃদ্ধি, হাড় ও মাংসপেশি গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। আবার এ সময় মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যও অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। খাদ্যে অনীহার কারণে মস্তিষ্কের বিকাশও বাধার সম্মুখীন হয়।

সমাধান ও করণীয়

আহার ব্যাধি খুব দ্রুত সমাধানযোগ্য রোগ নয়। রোগ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তাও হিতে বিপরীত অবস্থা তৈরি করতে পারে। এ সময় বাবা-মায়েরা জোর করে খাওয়ালে বা খাবার হঠাৎ কমিয়ে দিলে মানসিক চাপ ও শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। তাই নিজের ভেতর আহার ব্যাধির লক্ষণ দেখলে বাবা-মা বা পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাউকে খুলে বলো। খেতে গেলে কি অনুভব করো তা অনুযায়ী সমাধানের পরিকল্পনা করো। পাশাপাশি একজন মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নাও। ধৈর্যের সঙ্গে আহার ব্যাধি মোকাবিলা করা সম্ভব।

 

আড্ডায় সিনেমা

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম
আড্ডায় সিনেমা
হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি সংগৃহীত

কিশোর-তরুণদের ঈদ উদযাপন চলে কয়েক দিনব্যাপী। আত্মীয়দের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, দূরে কোথাও ভ্রমণ ঈদের ছুটিকে ঘিরে চলে কত পরিকল্পনা! ছুটির এই সময়টায় পরিবারের ভাইবোন একসঙ্গে বসে রাত জেগে সিনেমা দেখার আবেদন কোনো যুগেই হারায়নি। ছুটি উপভোগ করতে ভাইবোনদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে দেখার মতো কিছু ক্লাসিক সিনেমার কথা জেনে নাও।


হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম? (১৯৮৭)
আট বছর বয়সী ইরানি বালক আহমেদ একদিন ভুলবশত তার সহপাঠীর জরুরি একটি নোটবুক নিজের বাড়িতে নিয়ে চলে আসে। সে জানত এই নোটবুকটি ফেরত দিতে না পারলে ওই সহপাঠী বন্ধু চরম বিপদে পড়বে। নোটবুক ফেরত দিতে সহপাঠীর বাড়ি খুঁজতে আহমেদ বেরিয়ে পড়ে পাশের গ্রামের উদ্দেশে। গল্পের এই প্লটের মধ্য দিয়ে উঠে আসে বন্ধুত্ব, নৈতিকতা, বালকের জীবনবোধ, পারিবারিক, সামাজিক সীমাবদ্ধতার এক স্বচ্ছ, বাস্তব চিত্র। বিশ্বখ্যাত নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামির সহজাত সিনেমাটোগ্রাফি, গল্প বলার স্বচ্ছ ধরন আর শিশু-কিশোরের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারার অনন্য ক্ষমতায় সিনেমাটি কিশোর-তরুণ ক্লাসিক সিনেমা হিসেবে সব যুগেই চির নতুন।

স্পিরিটেড অ্যাওয়ে (২০০১)
স্পিরিটেড অ্যাওয়ে জাপানি অ্যানিমেটেড ঘরানার কিশোর সিনেমা। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, দশ বছর বয়সী চিহিরো ওগিনো নামের এক মেয়েকে। চিহিরো বাবা-মায়ের সঙ্গে নতুন বাড়িতে স্থানান্তর হলে হঠাৎই এক বিস্ময়কর টানেলের মধ্য দিয়ে ভিন্ন এক অচেনা জগতে প্রবেশ করে। ভিন্ন জগৎ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা, বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়ার প্রয়াস, এক কিশোরীর দুশ্চিন্তা, সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় গল্পের প্লট। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি নির্মাণ করেন অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি। রূপকথার গল্পের আদলে নির্মিত হলেও অ্যানিমেশন জগতের আধুনিক শিল্পশৈলী, কিশোর মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্ম উপস্থাপন এবং গল্পের টানটান উত্তেজনার মুহূর্ত এই সিনেমাকে করে তুলে অ্যানিমেশন জগতের ক্লাসিক সিনেমা।

সানলাইট, মুনলাইট, আর্থ (২০১৩)
সাত বছর বয়সী নার্জেসের গ্রামে আসে এক মধ্যবয়স্ক আগন্তুক শেখ। অচেনা এই আগন্তুকের সঙ্গে সদ্ভাব করতে গ্রামবাসীর অনেকেরই আপত্তি। ঘটনাক্রমে কেউ কেউ জড়িয়ে যায় গোপন শত্রুতায়। একমাত্র ছোট্ট নার্জেসের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয় মধ্যবয়স্ক এই আগন্তুকের। নার্জেসের প্রিয় ছোট ঘোড়াকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল শেখ। পরবর্তী সময়ে প্রকাশ পায় শেখের সঙ্গে এই গ্রামের মানুষের রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ইরানি পরিচালক আলী ঘাভিতানের নির্মাণে এই সিনেমায় উঠে এসেছে ইরানি সমাজের গ্রামীণ জীবনচিত্র, অসাধারণ জীবনবোধ, মানুষের মধ্যকার যোগাযোগ ও জটিলতার গল্প।

মিস্টার হল্যান্ড ওপাস (১৯৯৫)
গল্পের নায়ক গ্লেন হল্যান্ড একজন বস্তুনিষ্ঠ সুরকার। তার স্বপ্ন পৃথিবী বিখ্যাত হবে এমন কিছু সুর সৃষ্টি করা। কিন্তু ঘটনাক্রমে হল্যান্ড একটি স্কুলের গানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শুরুর দিকে শিক্ষকতা পেশায় বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয় হল্যান্ডকে। ধীরে ধীরে ছাত্রদের সঙ্গে হল্যান্ডের হয়ে উঠে নিবিড় বন্ধুত্ব। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন, তহবিল জোগাড় করতে হল্যান্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষকতার জগতে। এমনকি প্রতিবন্ধী ছেলে ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেও পারতেন না হল্যান্ড। তবে স্কুলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও শিক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কয়েকজন শিক্ষক। একসময় গান, খেলাধুলার প্রয়োজন নেই বলে চাকরিছাড়া করে হল্যান্ডকে। হতাশাগ্রস্ত হল্যান্ড অনেক বছর পর খুঁজে পান তার কাজের মূল্যায়ন। স্টিফেন হেরেক নির্মিত আমেরিকান এই সিনেমায় উঠে এসেছে পরিবর্তনশীল আমেরিকার চিত্র, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বন্ধুত্ব ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের চিত্র।

ক্লুলেস সিনেমার চরিত্ররা। ছবি: সংগৃহীত

 

 

ক্লুলেস (১৯৯৫)
নব্বই দশকের কয়েকজন আমেরিকান টিনএজার শিক্ষার্থীদের গল্পের প্লট নিয়ে নির্মিত ড্রামা জনরার চলচ্চিত্র ক্লুলেস। সিনেমাটি জনপ্রিয় নারী লেখক জেন অস্টেনের এমা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র চের হরোভিটস ১৫ বছর বয়সী একজন সুন্দরী, ধনী ও প্রাণবন্ত কিশোরী। চের এর কৈশোর জীবনের উত্থান-পতনকে ঘিরে সাজানো হয়েছে সিনেমার প্লট। গল্পের শুরুতে চেরকে মনে হতে পারে পরোয়াবিহীন, আত্মকেন্দ্রিক, সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত থাকা এক চঞ্চল কিশোরী। কিন্তু ক্রমেই ফুটে উঠে স্কুলে বন্ধুত্ব, সামাজিকতা, ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা সমবয়সীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো এক সংবেদনশীল চরিত্র। কিশোর নির্ভর এই সিনেমাটি নির্মাণ করেন অ্যামি হেকারলিং। কিশোর বয়সের অনুভূতি, স্কুল জীবনের অভিজ্ঞতা যারা পর্দায় দেখতে চায় তাদের জন্য আজও এই সিনেমা জনপ্রিয়।

বিলি বিনের চরিত্রে অভিনেতা ব্র্যাড পিট। ছবি: সংগৃহীত

 

মানিবল (২০১১)
ক্রীড়াপ্রেমীদের একসঙ্গে বসে উপভোগ করার মতো সেরা একটি ক্লাসিক সিনেমা মানিবল। সিনেমাটি সল্প পরিচিত ওকল্যান্ড বেসবল দলের ২০০২ মৌসুমে টানা ২০টি গেম জেতার বিস্ময়কর ঘটনা এবং দলের প্রধান ব্যবস্থাপক বিলি বিন-এর চরিত্র অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন বেনেট মিলার।