
তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ বা ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো বড় ক্ষতিগুলোর কথা তোমরা নিশ্চয়ই জানো। এছাড়া বয়সভেদে ধূমপানের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব। সাধারণত কিশোর বয়সেই কৌতুহল বশত ধূমপানে অভ্যস্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্ত কৈশোরের শারীরিক বিকাশ ও মানসিক অবস্থায় ভিন্নতা থাকায় এসময় ধূমপানে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সবচেয়ে বেশি। কিশোর বয়সে ধূমপান করার রয়েছে বিশেষ কিছু ক্ষতি।
- ধূমপানের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হিসেবে ধরা হয় বয়ঃসন্ধিকাল থেকে সদ্য তরুণকাল পর্যন্ত। এ সময় মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ বেশি থাকায় সিগারেটের প্রতি আসক্তি তৈরি হয় সহজে। সাধারণত ২৪ বছর বয়স থেকে কেউ নতুন করে সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হন না। তাই কিশোর বয়সে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে বাকি জীবন অধূমপায়ী হিসেবে কাটানো মোটেই কঠিন নয়।
- আমেরিকায় ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীই প্রথম সিগারেট খাওয়া শুরু করেন তাদের টিনএজ বয়সে। পৃথিবীর সব দেশেই এই চিত্র প্রায় একই রকম। কৈশোরে সাধারণত কৌতূহলবশত কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে মজার ছলেই সিগারেট খেতে শুরু করে ছেলেমেয়েরা। এর ভেতর ৩০ শতাংশ টিনএজারের ধূমপানের এই অভ্যাস থেকে যায় সারা জীবন।
- ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ধূমপায়ীদের একই বয়সের অধূমপায়ীদের তুলনায় মদ্যপানের ঝুঁকি পাঁচগুণ এবং গাঁজা আসক্তির ঝুঁকি ১৩ গুণ বেশি থাকে। আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জরিপে ওঠে এসেছিল এমন তথ্য। পাশাপাশি ধূমপায়ী কিশোররা বেশি হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভোগেন বলেও জানায় গবেষণা।
- বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতোই ফুসফুসের বৃদ্ধি ও কার্যক্ষমতার বিকাশ ঘটতে থাকে। তাই প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কিশোর-কিশোরীরা ধূমপানের কারণে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ধূমপায়ী কিশোর-কিশোরীদের হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের ক্ষমতা কম থাকা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- কিশোরদের জন্য বাজারে পাওয়া যায় ভ্যানিলা, চকলেট, ব্লুবেরি এমনকি বিভিন্ন ফলের স্বাদ-গন্ধযুক্ত সিগারেট। তরুণদের জন্য বাজারে রয়েছে ইলেকট্রনিক সিগারেট, হালকা ও ফিল্টারযুক্ত তামাকদ্রব্য। নতুন স্বাদযুক্ত আধুনিক এসব মাদকদ্রব্যে স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়- তামাক কোম্পানির এমন প্রচারণা কিন্তু এটি একদমই সত্য নয়। বরং অতিরিক্ত লাভের আশাতেই এমন মিথ্যা প্রচারণা চালায় তামাক কোম্পানিগুলো। বাস্তবে দীর্ঘদিন ধরে টিনএজার ও তরুণরা আধুনিক এসব তামাকদ্রব্যে ঝুঁকলেও মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে গত ৫০ বছরের চেয়েও বেশি।
- সারা বিশ্বে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সিগারেট, ইলেকট্রনিক সিগারেট বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে অভ্যস্ত। ২০১৭ সালে এই তথ্য জানিয়েছে আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক প্রতিবেদন। পৃথিবীর সব দেশেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কিশোর ধূমপায়ীর সংখ্যা। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ জানায়, বাংলাদেশেও ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত। তবে সিগারেট বা মাদকদ্রব্য থেকে দূরে রাখতে বাবা-মায়ের কড়া শাসনই সমাধান নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বরং বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের সহজ সম্পর্ক, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে সচেতনতা ও ইতিবাচক বন্ধু নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।