
কিশোর-তরুণদের ঈদ উদযাপন চলে কয়েক দিনব্যাপী। আত্মীয়দের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, দূরে কোথাও ভ্রমণ ঈদের ছুটিকে ঘিরে চলে কত পরিকল্পনা! ছুটির এই সময়টায় পরিবারের ভাইবোন একসঙ্গে বসে রাত জেগে সিনেমা দেখার আবেদন কোনো যুগেই হারায়নি। ছুটি উপভোগ করতে ভাইবোনদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে দেখার মতো কিছু ক্লাসিক সিনেমার কথা জেনে নাও।
হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম? (১৯৮৭)
আট বছর বয়সী ইরানি বালক আহমেদ একদিন ভুলবশত তার সহপাঠীর জরুরি একটি নোটবুক নিজের বাড়িতে নিয়ে চলে আসে। সে জানত এই নোটবুকটি ফেরত দিতে না পারলে ওই সহপাঠী বন্ধু চরম বিপদে পড়বে। নোটবুক ফেরত দিতে সহপাঠীর বাড়ি খুঁজতে আহমেদ বেরিয়ে পড়ে পাশের গ্রামের উদ্দেশে। গল্পের এই প্লটের মধ্য দিয়ে উঠে আসে বন্ধুত্ব, নৈতিকতা, বালকের জীবনবোধ, পারিবারিক, সামাজিক সীমাবদ্ধতার এক স্বচ্ছ, বাস্তব চিত্র। বিশ্বখ্যাত নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামির সহজাত সিনেমাটোগ্রাফি, গল্প বলার স্বচ্ছ ধরন আর শিশু-কিশোরের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারার অনন্য ক্ষমতায় সিনেমাটি কিশোর-তরুণ ক্লাসিক সিনেমা হিসেবে সব যুগেই চির নতুন।
স্পিরিটেড অ্যাওয়ে (২০০১)
স্পিরিটেড অ্যাওয়ে জাপানি অ্যানিমেটেড ঘরানার কিশোর সিনেমা। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, দশ বছর বয়সী চিহিরো ওগিনো নামের এক মেয়েকে। চিহিরো বাবা-মায়ের সঙ্গে নতুন বাড়িতে স্থানান্তর হলে হঠাৎই এক বিস্ময়কর টানেলের মধ্য দিয়ে ভিন্ন এক অচেনা জগতে প্রবেশ করে। ভিন্ন জগৎ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা, বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়ার প্রয়াস, এক কিশোরীর দুশ্চিন্তা, সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় গল্পের প্লট। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি নির্মাণ করেন অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি। রূপকথার গল্পের আদলে নির্মিত হলেও অ্যানিমেশন জগতের আধুনিক শিল্পশৈলী, কিশোর মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্ম উপস্থাপন এবং গল্পের টানটান উত্তেজনার মুহূর্ত এই সিনেমাকে করে তুলে অ্যানিমেশন জগতের ক্লাসিক সিনেমা।
সানলাইট, মুনলাইট, আর্থ (২০১৩)
সাত বছর বয়সী নার্জেসের গ্রামে আসে এক মধ্যবয়স্ক আগন্তুক শেখ। অচেনা এই আগন্তুকের সঙ্গে সদ্ভাব করতে গ্রামবাসীর অনেকেরই আপত্তি। ঘটনাক্রমে কেউ কেউ জড়িয়ে যায় গোপন শত্রুতায়। একমাত্র ছোট্ট নার্জেসের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয় মধ্যবয়স্ক এই আগন্তুকের। নার্জেসের প্রিয় ছোট ঘোড়াকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল শেখ। পরবর্তী সময়ে প্রকাশ পায় শেখের সঙ্গে এই গ্রামের মানুষের রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ইরানি পরিচালক আলী ঘাভিতানের নির্মাণে এই সিনেমায় উঠে এসেছে ইরানি সমাজের গ্রামীণ জীবনচিত্র, অসাধারণ জীবনবোধ, মানুষের মধ্যকার যোগাযোগ ও জটিলতার গল্প।
মিস্টার হল্যান্ড ওপাস (১৯৯৫)
গল্পের নায়ক গ্লেন হল্যান্ড একজন বস্তুনিষ্ঠ সুরকার। তার স্বপ্ন পৃথিবী বিখ্যাত হবে এমন কিছু সুর সৃষ্টি করা। কিন্তু ঘটনাক্রমে হল্যান্ড একটি স্কুলের গানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শুরুর দিকে শিক্ষকতা পেশায় বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয় হল্যান্ডকে। ধীরে ধীরে ছাত্রদের সঙ্গে হল্যান্ডের হয়ে উঠে নিবিড় বন্ধুত্ব। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন, তহবিল জোগাড় করতে হল্যান্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষকতার জগতে। এমনকি প্রতিবন্ধী ছেলে ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেও পারতেন না হল্যান্ড। তবে স্কুলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও শিক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কয়েকজন শিক্ষক। একসময় গান, খেলাধুলার প্রয়োজন নেই বলে চাকরিছাড়া করে হল্যান্ডকে। হতাশাগ্রস্ত হল্যান্ড অনেক বছর পর খুঁজে পান তার কাজের মূল্যায়ন। স্টিফেন হেরেক নির্মিত আমেরিকান এই সিনেমায় উঠে এসেছে পরিবর্তনশীল আমেরিকার চিত্র, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বন্ধুত্ব ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের চিত্র।

ক্লুলেস (১৯৯৫)
নব্বই দশকের কয়েকজন আমেরিকান টিনএজার শিক্ষার্থীদের গল্পের প্লট নিয়ে নির্মিত ড্রামা জনরার চলচ্চিত্র ক্লুলেস। সিনেমাটি জনপ্রিয় নারী লেখক জেন অস্টেনের এমা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র চের হরোভিটস ১৫ বছর বয়সী একজন সুন্দরী, ধনী ও প্রাণবন্ত কিশোরী। চের এর কৈশোর জীবনের উত্থান-পতনকে ঘিরে সাজানো হয়েছে সিনেমার প্লট। গল্পের শুরুতে চেরকে মনে হতে পারে পরোয়াবিহীন, আত্মকেন্দ্রিক, সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত থাকা এক চঞ্চল কিশোরী। কিন্তু ক্রমেই ফুটে উঠে স্কুলে বন্ধুত্ব, সামাজিকতা, ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা সমবয়সীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো এক সংবেদনশীল চরিত্র। কিশোর নির্ভর এই সিনেমাটি নির্মাণ করেন অ্যামি হেকারলিং। কিশোর বয়সের অনুভূতি, স্কুল জীবনের অভিজ্ঞতা যারা পর্দায় দেখতে চায় তাদের জন্য আজও এই সিনেমা জনপ্রিয়।

মানিবল (২০১১)
ক্রীড়াপ্রেমীদের একসঙ্গে বসে উপভোগ করার মতো সেরা একটি ক্লাসিক সিনেমা মানিবল। সিনেমাটি সল্প পরিচিত ওকল্যান্ড বেসবল দলের ২০০২ মৌসুমে টানা ২০টি গেম জেতার বিস্ময়কর ঘটনা এবং দলের প্রধান ব্যবস্থাপক বিলি বিন-এর চরিত্র অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন বেনেট মিলার।