রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সে সম্পর্কটা যেমন মানসিক, তেমনি আত্মীয়তার। জমিদারি কাজের তদারকি করার জন্যও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন বেশ কয়েকবার। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিময় কিছু জায়গার পর্যটন নিয়ে জানাচ্ছে পর্যটন ডেস্ক
শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি
কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিকানা পান। এখানে বসেই কবি রচনা করেন সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতাসহ আরও অনেক রচনা। এখানে বসেই ১৯১২ সালে কবি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাদুঘর।
রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি ও নানাবাড়ি
খুলনা ও যশোর জেলার শেষ সীমানায় খুলনার ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণ। এটাই রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য দোতলা ভবন-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। অন্যদিকে খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানাবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবীর জন্ম এই গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকিমা ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এবং স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণডিহি গ্রামেরই মেয়ে। যৌবনে কবি দক্ষিণডিহি গ্রামে মামা বাড়িতে এসেছিলেন।
শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি ছিল। কবির দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকরদের একটি কুঠি নিলামে কিনে নেন। ২৯ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম শাহজাদপুরে জমিদারি তত্ত্বাবধান করতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত জমিদারির কাজে এখানে যাওয়া-আসা ও অবস্থান করেন কবি। জমিদারি খাজনা আদায়ের একটি পুরোনো দোতলা ভবন রয়েছে, বর্তমানে সেটা জাদুঘর।
পতিসর কুঠিবাড়ি
নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার পতিসর। এখানে নাগর নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাছারি ছিল এখানে। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ জমিদারি কিনেছিলেন। জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে প্রথম পতিসরে আসেন রবীন্দ্রনাথ। শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের মতোই প্রায় পতিসরের দোতলা কুঠিবাড়ি। বাড়ির সামনের প্রশস্ত খোলা মাঠ নাগর নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে থাকাকালীন ১৯০৫ সালে কবি পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। নোবেল পুরস্কারের এক লাখ টাকাও তিনি এই ব্যাংকে দান করেন।
কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত এই স্কুলটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই নোবেল পুরস্কারে পাওয়া অর্থ দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন। বাংলাদেশে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের তিনটি জমিদারি ছিল। সেগুলো হলো- কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর ও নওগাঁ জেলার কালীগ্রামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালীগ্রামের জমিদারের দায়িত্ব পেয়ে ১৮৯১ সালের ১৩ জুন কালীগ্রামে আসেন। শেষবার আসেন ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই। ওই বছরই কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারির দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৪৫ সালের দিকে দাম্পত্য সঙ্গী প্রতিমা দেবীসহ তিনি কালীগ্রামে আসেন। নিজের নামে নির্মিত ইনস্টিটিউশনের প্রতি তার টান ছিল। তিনি সেই সময় শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন সেই সময়ে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া আশীর্বাণী, চিঠি, প্রজাদের উদ্দেশে দেওয়া তার শেষ ভাষণ, তার দেওয়া বিভিন্ন বই এই ইনস্টিটিউশনে সংগ্রহ করা আছে। এই প্রতিষ্ঠানে কালীগ্রামের শেষ জমিদার রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর চিঠিসহ রবীন্দ্রনাথের অনেক স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ করা আছে।
জাহ্নবী