বাংলাদেশের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের সম্পর্ক ছিল গভীর। জীবদ্দশায় বর্তমান বাংলাদেশের ২৬টি জেলায় গিয়েছিলেন নজরুল। এবং সেখানে রেখে এসেছেন কিছু না কিছু স্মৃতি। সেসব স্মৃতির সবকিছুই এখন আর নেই।
ঢাকা
১৯৪০ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর অনুষ্ঠানে ঢাকায় এসেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তৎকালীন বর্ধমান হাউসে থাকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে রয়েছে কবির নানা স্মৃতি। ঢাকায় থাকাকালে কবির নিবাস ছিল বর্ধমান হাউসের দোতলার কক্ষটি। বরাবর সেখানেই থাকতেন তিনি। বর্তমানে বাংলা একাডেমির ‘নজরুল কক্ষ’ নামে পরিচিত সেই ঘর। তবে নিচতলায় লেখক ও সাহিত্য জাদুঘরে রয়েছে নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত নানা সংগ্রহ। কাজী নজরুল ইসলামের কিশোর বয়সের ছবি, ধ্রুব চলচ্চিত্রে তার অভিনেতা হিসেবে ছবি। চুরুলিয়া গ্রামের জন্মস্থানের সেই কুটির। নজরুল সম্পাদিত অগ্নিবীণা, লাঙল, বাঁধনহারা পত্রিকার প্রচ্ছদ। ধূমকেতুতে প্রকাশিত রবিঠাকুরের শুভেচ্ছা বাণী। নিষিদ্ধ বইগুলোর নিষেধাজ্ঞা অপসারণের জন্য বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে লেখা চিঠি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছে নজরুল মঞ্চ। ২০০৩ সালে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান নির্মিত নজরুলের আবক্ষ মূর্তিটিকে ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে এই মঞ্চটি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন স্থানে রয়েছে কবির সমাধি।
কাজীর শিমলা, ত্রিশাল
কাজী রফিজ উল্লাহ্ দারোগা ১৯১৪ সালে আসানসোলের রুটির দোকান থেকে কিশোর কবি নজরুলকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর শিমলায় নিজ গ্রামে নিয়ে আসেন। নজরুলকে ভর্তি করিয়ে দেন ত্রিশাল উপজেলা সদরের দরিরামপুর স্কুলে (বর্তমান নজরুল একাডেমি) সপ্তম শ্রেণিতে। কবি নজরুলের সেই বাল্যস্মৃতিকে ধরে রাখতে এই গ্রামেরই বটতলা নামক স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
কাজীর শিমলা দারোগাবাড়ি
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কাজীর শিমলা মোড় থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পশ্চিমে দারোগাবাড়ি। এখানে রয়েছে দুই তলাবিশিষ্ট নজরুল পাঠাগার ভবন।
দৌলতপুর
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ও তার স্ত্রী নার্গিসের স্মৃতিবিজড়িত স্থান কবিতীর্থ দৌলতপুর। ১৯২১ সালে (বাংলা ২৩ চৈত্র ১৩২৭) নজরুল ইসলাম কুমিল্লা হয়ে মুরাদনগরের দৌলতপুরে আসেন এবং ৭১ দিন অবস্থান করেন। নজরুল দৌলতপুরে বসেই ১৬০টি গান এবং ১২০টি কবিতা রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলোর মধ্যে- ‘বেদনা-অভিমান’, ‘অবেলা’, ‘অনাদৃতা’, ‘পথিক প্রিয়া’, ‘বিদায় বেলা’ প্রভৃতি।
বিচুতিয়া ব্যাপারীবাড়ি নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র
ত্রিশালের কাজীর শিমলা থেকে দরিরামপুর স্কুলের (ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমি) দূরত্ব ছিল বেশ। রোজ সেই স্কুলে আসা-যাওয়া করা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্য কঠিন ছিল। তাই স্কুলের কাছাকাছি একাধিক বাড়িতে জায়গির থাকতে হয়েছিল তাকে। সেখানে বিচুতিয়া ব্যাপারী নামের এক ব্যক্তির বাসায় জায়গির থাকতেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৯১৪ সালের শেষে ত্রিশাল ছেড়ে বর্ধমান চলে যান কবি।
কার্পাসডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের ভৈরব নদীর তীরে কবির স্মৃতিঘেরা কার্পাসডাঙ্গা। ১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে সপরিবারে এই কার্পাসডাঙ্গায় আসেন এবং টানা দুই মাস অবস্থান করেন।
জাহ্নবী