
এভারেস্ট ও লুৎসে পর্বত জয়ী বাবর আলী বলেছেন, এভারেস্ট জয় করার চেয়ে কঠিন হলো এর জন্য তহবিল জোগাড় করা। পৃষ্ঠপোষক পাওয়া।
বুধবার (২৯ মে) চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বাবর আলী বলেন, আগে নিজের সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে পর্বতারোহনের নেশা পূরণ করতাম। এভারেস্টে যাওয়া আমাদের মতো মানুষের জন্য অনেক ব্যয়বহুল। নিজের সঞ্চয়ে থাকা অর্থের পাশাপাশি আমি এবার স্পন্সরের কাছে গেছি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের অনেক তরুণ এভারেস্ট জয় করতে পারবে বলে আমি মনেকরি।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম ১ এপ্রিল। এটা ছিল দুমাসের অভিযান। এক অভিযানে দুইটা পর্বত জয় করা অনেক কঠিন আর চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সুস্থভাবে ফিরে আসতে পেরেছি, এতেই খুশি।
পর্বত জয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বাবর আলী বলেন, এবার অভিযানে প্রথম থেকেই অনেক বাধা ছিল। আমি ১ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ১০ এপ্রিল বেস ক্যাম্পে পৌঁছাই। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এবার সবচেয়ে কম তুষারপাত হয়েছে। কুমু আইসফলের (বরফের প্রপাত) রাস্তা তখনো ওপেন হয়নি। এ সড়কটি অ্যালুমিনিয়ামের সিঁড়ি দিয়ে পার হতে হয়। প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। নেপালি একজনকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করতে হয়েছিল। এবার ব্লু আইস বেড়ে যায়। ফলে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।
বিশ্বের সবচেয়ে উচু পর্বত এভারেস্টের চূড়ায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এভারেস্টের উচ্চতা বেশি হলেও লোৎসে আরোহন তুলনামূলক কঠিন। লোৎসে আরোহন আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এভারেস্ট ও লোৎসের চূড়া থেকে দেখা নিচের পৃথিবীর দৃশ্য এ জীবদ্দশায় ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে কাজটা কঠিন ছিল, আমার চার কেজি ওজন কমেছে। তবে পর্বতে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর আবহাওয়া বিবেচনা করতে হয়। আমি এটা অনুসরণ করতাম। বাংলাদেশের একজন আবহাওয়াবিদ আমাকে দারুণ সহযোগিতা করেছেন।
এ সময় অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান, ভার্টিকাল ড্রিমস ক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বাবর আলী। এরপর রাত ৯টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রামে ফেরেন।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স টিমের সদস্যরা।
গত ১৯ মে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন বাবর আলী। হিমালয়ের শীতিধার চূড়াটি পর্বতের ১৫ হাজার ৫০০ ফুট ওপরে।
এরপর ২১ মে নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে লোৎসে পর্বত শিখর স্পর্শ করেন ৩৩ বছর বয়সী এই যুবক। পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট লোৎসের শীর্ষে লাল-সবুজের অলংকার এঁকে করলেন নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে ১১ বছর পর এমন সফলতা বয়ে আনেন তিনি।
নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই সামিটে বাবরের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং পর্বতারোহণ গাইড বীর বাহাদুর তামাং।
তারেক মাহমুদ/অমিয়/