ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

ফল পর্যটন

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
ফল পর্যটন
নরসিংদীর লটকন বাগানে

বাংলাদেশ ফলের দেশ। বিভিন্ন ঋতুতে নানান রকম ফল পাওয়া যায় দেশে। বাংলাদেশে ফলের মাস জ্যৈষ্ঠ। এ মাসে যত ফলের সমাহার দেখা যায়, অন্য কোনো মাসে এত ফল পাওয়া যায় না। এ মাসে যেসব ফল পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে আম। তারপর কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, লটকন ইত্যাদি।

 দেশের একেক অঞ্চল একেক ফলের জন্য বিখ্যাত। যেমন আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রংপুর, রাঙামাটি, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ইত্যাদি। লিচুর জন্য বিখ্যাত পাবনা, দিনাজপুর, রাজশাহী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, পঞ্চগড়।

আর বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল উৎপাদনে বিখ্যাত জেলাগুলো হলো- গাজীপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কুষ্টিয়া, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ইত্যাদি। বরিশাল, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, যশোর, পাবনা, গাজীপুর, কুমিল্লা, রংপুর, নাটোর, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি হচ্ছে পেয়ারার জন্য প্রসিদ্ধ। এই বর্ষায় টক ও মিষ্টি স্বাদের লটকন না হলে ফলাহার কিন্তু পরিপূর্ণ হয় না। লটকনের জন্য প্রথমেই নরসিংদী জেলার নাম আসে। কলার জন্য বিখ্যাত মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর। আর আনারস বলতেই সিলেট, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও নরসিংদীর নাম আসে।

ফল মৌসুমে আম বাগানে প্রচুর পর্যটন  যায় 

তবে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফল উৎপাদন অনেক গুণে বেড়েছে। বেড়েছে ফলের বাগান। ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের অনেক পরিত্যক্ত জায়গায় ফল বাগান করে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার মিশ্র ফলের বাগান করে তৈরি করছেন ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত।

শারীরিক পুষ্টির পাশাপাশি ফল কিন্তু মানসিক প্রশান্তিও তৈরি করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফল বাগানভিত্তিক পর্যটন গড়ে উঠেছে। যদিও আমাদের দেশে এটা এখনো নতুন ও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের দেশে পর্যটন বলতেই আমরা বুঝি দৃষ্টিনন্দন বা ঐতিহাসিক কিংবা বিখ্যাত কোনো স্থানে ঘোরাঘুরি। তবে পরিকল্পিত ফলবাগানও হতে পারে সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র। ফল বাগান পর্যটনে টাটকা ফলের স্বাদ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পর্যটনের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তিও হয়।

ফল পর্যটনে গিয়ে নিজের হাতে গাছ থেকে টাটকা ফল পেড়ে খাওয়ার যে আনন্দ ও তৃপ্তি, সেটা কি বাজার থেকে কিনে নিয়ে ফল খাওয়ার মধ্যে আছে? নেই। আর নেই বলেই বাংলাদেশেও দিন দিন ফল পর্যটন জনপ্রিয় হচ্ছে। যদিও দেশে ফল পর্যটন এখন অবধি প্রাতিষ্ঠানিক সে রূপ এখনো পায়নি। তবে যেভাবে ফল বাগানে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে, তাতে বাংলাদেশে পর্যটনের নতুন দিগন্ত তৈরি হচ্ছে নিশ্চিত।

সিলেটে চান মিয়ার আনারস বাগানে পর্যটন ভিড় লেগেই থাকে 

বাংলাদেশে ফল পর্যটনের সম্ভাবনা ব্যাপক। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ফল পর্যটনের কিছু উদাহরণ এর মধ্যেই তৈরি হয়েছে। যেমন- নরসিংদীর কিছু কিছু লটকন বাগানে এরকম সুযোগ পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে যে কেউ বাগানে ঢুকে যত ইচ্ছে লটকন খাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। একইভাবে সিলেটের কয়েকটি আনারস বাগান, ঝালকাঠির পেয়ারাবাগানে এরকম পর্যটন শুরু হয়ে গেছে। তবে দেশের কোনো আমবাগানে এরকম পর্যটনের সুযোগ এখনো তৈরি হয়েছে বলে জানা নেই। আবার কিছু মিশ্র ফলের বাগানেও এরকম ফল পর্যটন শুরু হয়েছে।

ফল পর্যটন কেবল পর্যটন খাতই নয়, সমৃদ্ধ করতে পারে কৃষি খাতকেও। সিলেটে প্রায় ৮০০ পাহাড় ও টিলা রয়েছে। এসব পাহাড় বা টিলার বেশির ভাগই পতিত বা অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। এসব পাহাড় ও টিলা কমলা এবং আনারস চাষের জন্য ভীষণ উপযোগী। এসব টিলা ও পাহাড়কে চাষের আওতায় এনে প্রচুর পরিমাণে ফল উৎপাদনের পাশাপাশি, ফল পর্যটনের সম্ভাবনাও তৈরি করা সম্ভব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ফল বাগান- দুয়ে মিলে পর্যটনের নতুন দৃষ্টান্ত হবে অবশ্যই। বিশেষজ্ঞদের মতে টিলায় চাষাবাদ প্রাণ ও প্রকৃতিবিরোধী নয়। টিলাধস ও ভূমিক্ষয়ের শঙ্কাও থাকে না। বরং সেখানকার মাটি আরও দৃঢ় ও মজবুত হয়।

পরিকল্পিত ফলের বাগান হতে পারে টিলা বাঁচানোর দারুণতম উদ্যোগ। কেবল সিলেট নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে দেশের তিন পার্বত্য জেলাও। ২০২৩ সালে শুধু রাঙামাটিতেই আম, কলা, আনারস, লিচু ও কাঁঠাল- এই পাঁচটি ফলের উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন। যার বাজারমূল্য ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। শুধু মৌসুমি ফলের চাষ করেই এই তিন পার্বত্য জেলা থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। আর এর সঙ্গে পর্যটনের সম্ভাবনাও তৈরি হবে ফলের মৌসুমে।

এ জন্য প্রয়োজন সরকারি নীতিমালা ও উদ্যোগ। কিছু কিছু উদ্যোগ এর মধ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ, যাতে ফলের উৎপাদনের সঙ্গে পর্যটনের উন্নতি ঘটানো যায়। পর্যটন মৌসুমে শুধু নয়, তখন ওই পার্বত্য জেলাগুলোয় ফলের মৌসুমও হতে পারে পর্যটন মৌসুম।

 কলি

পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দেখা যায় পঞ্চগড় থেকে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের একটি সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়। অক্টোবর নভেম্বরের দিকে পঞ্চগড় থেকে হিমালয় পর্বতমালার অন্যতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। তাই এ সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষেরা ছুটে আসেন পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড়ে এলে একইসাথে দেখে নিতে পারেন আরো বেশকিছু স্থান। পঞ্চগড়ের দর্শনীয় স্থান, যাতায়াত ব্যবস্থা, আবাসিক ব্যবস্থা ও খাবার সম্পর্কে জানাচ্ছেন মোহনা জাহ্নবী

উপজেলাভিত্তিক দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং সদর উপজেলা থেকে অন্যান্য উপজেলার দূরত্ব

সদর উপজেলাঃ

-মহারাজার দিঘী
-ভিতরগড় ও ভিতরগড় দুর্গনগরী
-মীরগড়
-রকস মিউজিয়াম

তেতুলিয়া উপজেলাঃ (৩৯ কিলোমিটার)

-কাজী টি এস্টেট
-জিরো পয়েন্ট
-কাঞ্চনজঙ্ঘা 
-ডাকবাংলো (এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।)
-কাজী রেজওয়ান উল্লাহর জমিদার বাড়ি 

আটোয়ারী উপজেলাঃ (২২.৮ কিলোমিটার)

-আটোয়ারী ইমামবাড়া
-মির্জাপুর শাহী মসজিদ

বোদা উপজেলাঃ (১৯ কিলোমিটার)

-মাড়েয়া ফরেস্ট
-বদেশ্বরী মহাপিঠ মন্দির

দেবীগঞ্জ উপজেলাঃ (৪০.২ কিলোমিটার)

-নিপেন্দ্রনারায়ণ ডাকবাংলো
-নিপেন্দ্রনারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
-ময়নামতির চর
-কুচবিহার রাজার কাচারি ও অবকাশ ভবন
-জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি
-গোলকধাম মন্দির

জনপ্রিয় খাবার

-ডিম ভুনা
-মীরগড় এর ‘টোপা’ মিষ্টি
-এনায়েতপুরের তিশা সুইটস এর লুচি সবজি
-আনন্দ বাজার(আগের নাম মীনা বাজার) এর অর্গানিক মিষ্টি 

আবাসিক হোটেল

পঞ্চগড় সদরেই থাকার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট হোটেল পেয়ে যাবেন। যেমন:
-হোটেল মৌচাক
-হোটেল অগ্রদূত প্যালেস
-হোটেল প্রীতম
-সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ
-হোটেল এইচকে প্যালেস ইত্যাদি।

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যাতায়াত ব্যবস্থা

সড়কপথে:
নাবিল, হানিফ ও শ্যামলী পরিবহন এই পথে চলাচল করে। শ্যামলী, গাবতলী ও কলেজগেইট থেকে বাসে উঠতে হয়। ভাড়া নন এসি ও এসি ১১০০-১৯০০ টাকা পর্যন্ত। 
রেলপথে:
পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস এ পথে চলাচল করে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উঠতে হয়। ভাড়া ৬৯৫-২৩৯৮ টাকা পর্যন্ত। 

জাহ্নবী

ঘুড্ডি ট্রাভেল এইড বাংলাদেশের মিলনমেলা

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০২ পিএম
ঘুড্ডি ট্রাভেল এইড বাংলাদেশের মিলনমেলা
ঘুড্ডি ট্রাভেল এইড বাংলাদেশের মিলনমেলা ২০২৪

ফেসবুকভিত্তিক ভ্রমণ বিষয়ক গ্রুপ ঘুড্ডি ট্রাভেল এইড বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘মিলনমেলা ২০২৪’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শনিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা, ভিসা প্রসেসিং এবং ভ্রমণের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঘুড্ডি ট্রাভেল এইড বাংলাদেশের অ্যাডমিন মেজর (অব.) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ। 

স্বাগত বক্তব্যে তিনি ভ্রমণের গুরুত্ব এবং বৈশ্বিক সংস্কৃতির প্রতি আমাদের সচেতনতার ওপর আলোকপাত করেন। 

এরপর শুরু হয় মূল আলোচনা। এই পর্বে অতিথিরা তাদের অভিজ্ঞতা ও তথ্য শেয়ার করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রসেস নিয়ে কথা বলেন মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়ার ধাপগুলো বর্ণনা করেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দেন, যা ভিসা আবেদনকারীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাস্ট্রে ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে যাতে আবেদনকারীরা কোনো সমস্যায় না পড়েন।

শেনজেন ভিসা প্রসেসিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন আশফাকুর রহমান। তিনি শেনজেন ভিসা প্রাপ্তির ধাপগুলো ব্যাখ্যা করেন এবং ভিসা প্রসেসের সময় সাধারণত যে জটিলতা বা ভুলগুলো হয়, সেগুলো কিভাবে এড়ানো যায় তা আলোকপাত করেন। 

তিনি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ, প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং আবেদনকারীদের জন্য প্রাসঙ্গিক পরামর্শ দেন।

অস্ট্রেলিয়া ভিসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন মো. মোনারুল ইসলাম। তিনি অস্ট্রেলিয়া সফরের অভিজ্ঞতা থেকে অস্ট্রেলিয়া ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া, ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং ভ্রমণের প্রস্তুতির বিষয়গুলো আলোচনা করেন। 

কীভাবে তিনি অস্ট্রেলিয়া ভিসা পেয়েছিলেন এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং ভ্রমণের সময় প্রয়োজন এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন।

যুক্তরাজ্য ভিসা প্রসেস নিয়ে কথা বলেন মো. জুয়েল খান। তিনি যুক্তরাজ্যের ভিসা প্রক্রিয়ার ধাপগুলো বর্ণনা করেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দেন, যা ভিসা আবেদনকারীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। 

তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে যাতে আবেদনকারীরা কোনো সমস্যায় না পড়েন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল র‍্যাফেল ড্র। এতে প্রথম পুরস্কার ছিল ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা এয়ার টিকিট। এটি স্পন্সর করেছে আইএমএমআই কেয়ার।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ঘুড্ডি ট্রাভেল এইড বাংলাদেশ-এর ট্রাভেল ফটো কনটেস্টে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। যে কেউ তার ভ্রমণ সম্পর্কিত ছবি জমা দিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন এবং সুযোগ পেতে পারেন ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকেট জয়ের। 

এই ফটো কনটেস্ট ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ পর্যন্ত চলবে।

এ প্রসঙ্গে ঘুড্ডি ট্রাভেল এইড বাংলাদেশের অ্যাডমিন মাছুমুল হক জানান, এই আয়োজন ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা, তথ্য বিনিময়, এবং নতুন বন্ধু তৈরি করার একটি অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যা ঘুড্ডি ট্রাভেল এইডের লক্ষ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

অমিয়/

মন কেড়ে নেবে সাজেক ভ্যালি

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম
মন কেড়ে নেবে সাজেক ভ্যালি

 

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হচ্ছে সাজেক ভ্যালি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার ৮০০ ফিট উচ্চতায় এর অবস্থান। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হয়। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭৩ কিমি আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিমির মতো। ভ্রমণপিপাসুরা সাজেক ভ্যালিকে বাংলার ভূস্বর্গ নামে অভিহিত করেন। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, তুলার মতো মেঘ, এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাজেক ভ্যালি। প্রকৃতি এখানে সকাল-বিকেল রং বদলায়। দিনের প্রতিটি মুহূর্তে সাজেকের আলাদা রূপ দেখতে পাওয়া যায়।

 

কী কী দেখবেন সাজেক ভ্যালিতে

প্রকৃতিপ্রেমী হলে আপনার কাছে পুরো সাজেক ভ্যালিটাই দর্শনীয় মনে হবে। তার পরও বলতে হয় পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান কংলাকপাড়া। ছাড়া রুইলুইপাড়া, রক গার্ডেন, লুসাই ভিলেজ উল্লেখযোগ্য।

কংলাক হলো সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান। এটি লুসাই অধ্যুষিত পাড়া। কংলাকের চূড়া থেকে পুরো সাজেক ভ্যালি একনজরে দেখা যায়। ভাগ্য ভালো হলে দিগন্তে দেখা পাওয়া যায় রংধনুর। এই অপার সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য কংলাকের চূড়া পর্যন্ত উঠতে ৪০ মিনিটের মতো ট্রেকিং করতে হবে। বিকেল বেলা কংলাক ভ্রমণের আদর্শ সময়। চাইলে কংলাকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন।

সাজেকের নিচে একটি ঝরনা আছে। প্রচলিত ভাষায় এটি কমলক ঝরনা নামে পরিচিত। এর মূল নাম পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা। রুইলুইপাড়া থেকে এখানে ট্রেকিং করে যেতে চাইলে আসা যাওয়ায় চার ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।

সূর্যাস্তের পরও সাজেক তার রূপবদল থামাবে না। সন্ধ্যার পরপরই আকাশ ভরা নক্ষত্রের দেখা মিলবে। রাত যত বাড়বে তার রূপও তত গাঢ় হবে। দূষণমুক্ত পরিবেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রতিদিনই রাতের আকাশে তারার মেলা বসে। জ্যোৎস্না রাতে প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরও স্বর্গীয়! খোলা মাঠে বাতাসে গা এলিয়ে দিয়ে রাতের আকাশ দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাড সবচেয়ে চমৎকার জায়গা।

সাজেকে মেঘ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ভোরবেলা। সারা রাত জেগে থেকে যদি আপনি ভোর মিস করেন, তাহলে আপনি অনেক কিছুই মিস করবেন। ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবচেয়ে ফ্রেশ মেঘ দেখা যায়। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। মেঘের গায়ে যখন সূর্যের আলো পড়তে শুরু করে তখন অবর্ণনীয় এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। সময় প্রতি ১০ মিনিটে একবার করে প্রকৃতির রং বদলে যেতে থাকে। তাই খেয়াল রাখতে হবে সূর্যোদয় দেখা যেন কোনোভাবেই মিস না হয়। শুধু মেঘের গায়ে সূর্যোদয় দেখার জন্যই সাজেক ভ্যালি আসা যায়।

 

 

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সত্যি বলতে প্রতিটি মৌসুমে সাজেকের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য চোখে পড়ে। শীতের সাজেক এক রকম তো বর্ষায় সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাই ভ্রমণপিপাসুরা বছরজুড়ে সাজেকে ছুটে যান। তবে বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে সময় সাজেক বেশি সুন্দর। তখন সারা দিন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে-সেখানে। মেঘ এসে আপনাকে ঢেকে দিতে পারে যখন তখন।

 

সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়

সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ। তাই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির প্রধান বাস শান্তি পরিবহন। ছাড়া সৌদিয়া, শ্যামলী, ঈগল, হানিফ, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস আছে। নন-এসি বাসে ভাড়া ৫২০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে রয়েছে শান্তি, হানিফ, ঈগল সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস। এসি বাস ভাড়া ৯৫০ থেকে হাজার ২৫০ টাকা। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল আরামবাগ থেকে এসব বাস ছাড়ে। লাস্ট বাস রাত ১১টার মধ্যে ছেড়ে যায়। সরকারি ছুটির দিন বা বৃহস্পতিবার-শুক্রবার যেতে চাইলে অগ্রিম টিকিট কেটে রাখলে ঝামেলা এড়ানো যায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বাস থেকে শুরু হবে।

 

খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক ভ্যালি

খাগড়াছড়ির থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার জন্য কোনো লোকাল গাড়ি বা শেয়ার্ড জিপ নেই। গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে। এক্ষেত্রে চান্দের গাড়ি অথবা মাহেন্দ্র জিপ প্রধান বাহন। আপ-ডাউন রিজার্ভ জিপ ভাড়া পড়বে হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। এক গাড়িতে সর্বোচ্চ ১২ জন বসার অনুমতি আছে। যদি একা বা দুই থেকে তিনজন হন, তাহলে চেষ্টা করবেন অন্য কোনো গ্রুপের সঙ্গে যোগদান করতে। নিজে কোনো গ্রুপ ম্যানেজ করতে না পারলে জিপ সমিতির অফিসে গিয়ে বললেও হবে। তারাই আপনাকে কোনো গ্রুপের সঙ্গে যোগদান করিয়ে দিতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে।

খাগড়াছড়ি থেকে মোটরসাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ভ্যালি যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আগে থেকে দরদাম করে নিলে ভালো। ছাড়া যদি ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি দীঘিনালার বাসে ওঠেন, তাহলে দীঘিনালা থেকেও সাজেকের জিপ পাবেন। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে উঠলে সেটাও দীঘিনালা হয়েই যায়। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক যেতে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

দীঘিনালার পরের আর্মি ক্যাম্প থেকে আর্মি স্কর্ট দিয়ে প্রত্যেকটা গাড়ি সাজেকে নিয়ে যায়। স্কর্ট ছাড়ে সকাল ৯টা ৩০ মিনিট এবং দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। অর্থাৎ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ওখানে উপস্থিত থাকতে না পারলে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের স্কর্টে সাজেক যেতে হবে। দুপুরের স্কর্টেও যদি আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত না থাকতে পারেন, তাহলে ওই দিন আর সাজেক যেতে পারবেন না। পরদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর্মি স্কর্ট বাদে একা কোনো গাড়ির সাজেক যাওয়ার অনুমতি নেই।

 

রাঙামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ

রাঙামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ করার জন্য সড়ক নৌপথে আলাদা রুট আছে। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে বাঘাইছড়ির লঞ্চ ছাড়ে। যেতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। ছাড়া রাঙামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বাস ছাড়ে। ২০০ টাকা ভাড়া পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। বাঘাইছড়ি থেকে মোটরসাইকেলে সাজেক যাওয়া যায়। আসা-যাওয়া জনপ্রতি ৮০০ থেকে হাজার টাকা। তবে সাজেক যেতে চাইলে রাঙামাটি হয়ে না যাওয়াই ভালো। এই পথে গেলে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বেশি হবে, সময়ও বেশি লাগবে।

 

সাজেকে থাকার রিসোর্ট

সাজেকে ছোট-বড় মিলিয়ে বিভিন্ন কোয়ালিটির ১০০টির মতো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টে সর্বনিম্ন জনপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে। শুক্রবার বা সরকারি ছুটিতে যেতে চাইলে কমপক্ষে ১৫-২০ দিন আগে রুম বুকিং করে রাখা ভালো। নইলে ভালো রিসোর্টে রুম পাওয়া যায় না। রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রিসোর্টের কোয়ালিটি অবস্থানকে প্রাধান্য দিতে হবে। ভিউ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ সব রিসোর্ট থেকেই কমবেশি ভিউ পাওয়া যায়। রিসোর্ট থেকে বের হলে ভিউ তো আছেই।

রিসোর্টের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিছু রিসোর্ট আছে সাজেকের বাইরে। আবার কিছু রিসোর্ট এমন একটা অবস্থানে যেখান থেকে মূল পয়েন্টে আসতে অনেক বেশি সময় নষ্ট হবে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রিসোর্টের ভিউ তুলনামূলক ভালো, কিন্তু ইন্টেরিয়র ওয়াশরুম বেশ জরাজীর্ণ। তাই রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র কোয়ালিটি লোকেশনকে প্রাধান্য দিন। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কিছুটা বাড়লেও রিসোর্টের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ না করাই ভালো।

 

সাজেকে খাওয়ার ব্যবস্থা

সাজেকে খাওয়ার জন্য অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। ছাড়া অনেক রিসোর্টের নিজস্ব খাবার ব্যবস্থা রযেছে। জনপ্রতি প্রতি বেলা খাবার খরচ পড়বে ১২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। খাবারের মেনু হিসেবে পাবেন ভাত, মুরগি, আলু ভর্তা, সবজি ইত্যাদি। রাতে বারকিউয়ের ব্যবস্থা রয়েছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্টে। ছাড়া ভালো মানের রিসোর্টগুলোয় নিজস্ব চুলায় বারবিকিউর ব্যবস্থা আছে।

 

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ টিপস

শুধু রবি এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক রয়েছে সাজেক ভ্যালিতে। তাই রবি বা এয়ারটেল সঙ্গে রাখার চেষ্টা করুন।

সাজেকে বিদ্যুৎ নেই। সোলার জেনারেটরে পাওয়ার সাপ্লাই করে রিসোর্টগুলো। তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।

সাজেকের যাত্রাপথে জিপের ছাদে উঠবেন না। এটি করতে আর্মির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাছাড়া পাহাড়ি পথে জিপের ছাদে ওঠা বিপজ্জনক।

আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ভুলবেন না। এটা বেসিক ম্যানার।

পাহাড়িদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্য কেউ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগত।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থী

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২১ এএম
বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থী
নওগাঁ সদরের হাঁসাইগাড়ী বিলে প্রতিদিনই নৌকা ভাড়া করে সৌন্দর্য উপভোগ করেন আগত দর্শনার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ জেলার মিনি কক্সবাজার বলে খ্যাত হাঁসাইগাড়ী বিল। এর সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন বিকেলে দেখা যায় হাজারও মানুষের ভিড়। সব বয়সের নারী-পুরুষ এবং সব পেশার মানুষের উপস্থিতিতে হাঁসাইগাড়ী বিলের পাশের রাস্তাটি হয়ে ওঠে মুখরিত।

ইতোমধ্যে এই বিলের অবারিত রুপালি জলের ধারা বিনোদনপ্রিয় মানুষের কাছে আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

নওগাঁ ছাড়াও আশপাশের রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে দর্শনার্থী এখানে আসেন। 

জেলার সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নে এই বিলের অবস্থান। হাঁসাইগাড়ী বিলকে দুই ভাগ করে নির্মিত হয়েছে নওগাঁ জেলা সদর থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাটখইড় পর্যন্ত পাকা সড়ক। এই সড়ক নির্মাণের পর থেকেই হাঁসাইগাড়ী বিলের অবারিত সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।

জেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই বিলের অবস্থান। শহরের গোস্তহাটির মোড় থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে বিলে যাওয়া যায়। পুরো বর্ষা মৌসুমে প্রতি বিকেল দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই সড়কটি। এখানে এসে শুধু দাঁড়িয়ে রুপালি জলের অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করাই নয়, ব্যবস্থা রয়েছে নৌ-ভ্রমণেরও। চুক্তিভিত্তিক নৌকায় চড়ে বিলে ঘুরে বেড়ানো ভ্রমণপিপাসুদের বাড়তি আনন্দ যুক্ত হয়। এলাকার শতাধিক মানুষ নৌকা বেয়ে প্রতিদিন ভালো আয় করে থাকেন। তারা প্রতি ঘণ্টা নৌকার ভাড়া নিয়ে থাকেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। 

বিক্রি হয় পদ্মফুল, পদ্মখোঁচা। এভাবে অনেক পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। 

দুপুরের পর বিভিন্ন দিক থেকে ভ্রমণপিপাসুদের গন্তব্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে হাঁসাইগাড়ী বিল। বিকেল হতে না হতেই বিলপাড়ের এই রাস্তাটি হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। বর্ষাকালজুড়ে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। 

বর্ষা শেষে এখানকার চিত্র পুরোটাই পাল্টে যায়। বোরো ধানের আবাদে সবুজ হয়ে ওঠে। সেই সবুজ ক্রমেই সোনালি ধানের খেতে রূপান্তরিত হয়। হেমন্তের সেই আরেক সৌন্দর্য। 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ জানান, হাঁসাইগাড়ী বিলের অবারিত সৌন্দর্য খুবই আকর্ষণীয়। এখানে দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে আরও কীভাবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যায়, সে ব্যাপারে প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র: বাসস

ঘুরে আসুন নাফাখুম জলপ্রপাত

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
ঘুরে আসুন নাফাখুম জলপ্রপাত
নাফাখুম জলপ্রপাত

নাফাখুম জলপ্রপাত (Nafakhum Waterfall)-এর অবস্থান বান্দরবানের সর্বদক্ষিণের উপজেলা থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নে। আয়তন ও পানিপ্রবাহের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত। ঝরনাটি বাংলার নায়াগ্রা নামে পরিচিত। 

রেমাক্রি অঞ্চলটি মূলত মারমা অধ্যুষিত। মারমা ভাষায় খুম মানে জলপ্রপাত। রেমাক্রি খালের পানি পাথুরেপথে নামতে গিয়ে চমৎকার এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। সবুজ পাহাড়, বন আর পাথুরে ভূমির মাঝখানে স্বপ্নময় অসাধারণ একটি স্থান। নিজের চোখে দেখা ছাড়া এর বর্ণনা পড়ে কিছুই অনুধাবন করা যাবে না। তাই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা প্রকৃতির টানে নাফাখুম ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ছুটে আসেন।

কীভাবে যাবেন নাফাখুম জলপ্রপাতে
নাফাখুম যেতে চাইলে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। ঢাকা থেকে এসি, নন-এসি সব ধরনের বাসই বান্দরবান যায়। নন-এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর পূর্বাণী ও পূরবী নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে থানচি
বান্দরবান পৌঁছানোর পর আপনাকে যেতে হবে ৮২ কি.মি. দূরের উপজেলা থানচিতে। বাসে অথবা রিজার্ভ জিপে দুইভাবে থানচি যাওয়া যায়। জিপে গেলে ভাড়া পড়বে ৫৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা। আসা-যাওয়া ১২ হাজার টাকা। এক জিপে ১২-১৩ জন বসা যায়। জিপে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। বাসে যেতে চাইলে থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাস পাবেন। ভাড়া ২০০ টাকা। এক ঘণ্টা পরপর বাস ছাড়ে। লাস্ট বাস দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে ছেড়ে যায়। বাসে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। যাত্রাপথে পড়বে মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি।

থানচি থেকে রেমাক্রি
থানচি পৌঁছানোর পর আপনার প্রথম কাজ হবে গাইড ঠিক করা। গাইড সমিতির অফিস আছে, আপনি যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে। সমিতির অফিস ফি ১০০ টাকা এবং গাইড ফি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এরপর সাদা কাগজে আপনার টিমের সব ট্যুরিস্টদের নাম-ঠিকানা, পিতার নাম, ফোন নাম্বার, মাঝির নাম, গাইডের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ইত্যাদি জমা দিয়ে নাফাখুম জলপ্রপাত যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে। আপনার হয়ে গাইডই কাজগুলো করে দেবে।

রেমাক্রি যেহেতু নৌপথে যেতে হবে, তাই আপনাকে নৌকা নিতে হবে। আপডাউন নৌকা ভাড়া পড়বে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এক নৌকায় ৪ থেকে ৫ জন বসা যায়। থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত যেতে নোকায় সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মতো। শুকনো মৌসুমে সাঙ্গু (শঙ্খ) নদীতে পানি কম থাকে বলে কয়েক জায়গায় আপনাকে নৌকা থেকে নামতে হতে পারে। যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর অপার সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। যাওয়ার পথেই পড়বে পদ্মমুখ ঝিরি, ভূস্বর্গখ্যাত তিন্দু, রাজাপাথর বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ফলস।

একটা বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, দুপুর ৩টার পর ঘাট থেকে কোনো নৌকা রেমাক্রির উদ্দেশে ছাড়ার পারমিশন পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ আপনাকে দিনে দিনে রেমাক্রি পৌঁছাতে চাইলে দুপুর ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। অন্যথায় ট্যুর শেষ করতে ১ দিন বেশি সময় লাগবে।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাত
বান্দরবান থেকে সকালে রওনা দিলে রেমাক্রি পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়। ওইদিন আর নাফাখুম জলপ্রপাত যাওয়া যায় না। সবাই সাধারণত পরদিন ভোরে নাফাখুমের উদ্দেশে রওনা দেয়। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম হেঁটে যেতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগে। কত সময় লাগবে তা মূলত নির্ভর করে আপনার টিমে যিনি সবচেয়ে আস্তে হাঁটেন তার হাঁটার গতির ওপর। বর্ষায় রেমাক্রি খালের পানি বেশি থাকে। এমনকি কোথাও কোমর-সমান বা তার বেশি পানি থাকতে পারে। এসব জায়গায় পার হতে আপনার গাইডই আপনাকে সহায়তা করবে। আপনি চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই এক সময় নাফাখুমের গর্জন শুনতে পাবেন!

নাফাখুম ভ্রমণে রাতে কোথায় থাকবেন
থানচিতে থাকার জন্য একটি সরকারি রেস্ট হাউস আছে। রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। কিন্তু থানচিতে রাতে না থাকাটাই উত্তম, অযথা টাকা ও সময় নষ্ট। সময় বাঁচাতে চাইলে রেমাক্রিতে থাকাই ভালো। এখানে আদিবাসীদের ঘর ও তাদের ছোট কটেজ আছে। জনপ্রতি থাকার খরচ পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

খাবেন কোথায়
থানচি বাজারে মোটামুটি মানের কয়েকটা হোটেল আছে। এর যে কোনোটাতে খেতে পারেন। আর রেমাক্রিতে খাওয়ার ব্যবস্থা হয় আদিবাসীদের বাড়িতে অথবা দোকানে। খেতে চাইলে আগে থেকে বলে রাখতে হবে। খাবার সাধারণত প্যাকেজ সিস্টেমে বিক্রি করে। প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে ১২০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে।

নাফাখুম ট্যুর প্ল্যান কীভাবে সাজাবেন
যেখান থেকেই রওনা করেন, সকাল বেলাতে বান্দরবান থাকার চেষ্টা করবেন। এরপর সময় নষ্ট না করে বাস অথবা জিপে থানচিতে চলে আসুন। থানচিতে আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নৌকায় রেমাক্রিতে চলে আসুন বিকেলের মধ্যে। রাতটা রেমাক্রিতে কাটিয়ে দিন। পরদিন সকালে রেমাক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাতের উদ্দেশে রওনা করলে দুপুরের মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন। এরপর সময় নষ্ট না করে নৌকায় করে আবার থানচির উদ্দেশে রওনা করুন। তারপর বাসে অথবা জিপে সন্ধ্যার মধ্যে বান্দরবান শহরে ফিরে আসুন। এদিন রাতে চাইলে বান্দরবান থাকতে পারেন অথবা রাতের বাসে ঢাকা বা আপনার গন্তব্যে ফিরতে পারবেন।

নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণের সময়
সারা বছরই নাফাখুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে। তাই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষজন বছরজুড়েই ছুটে যান নাফাখুম ভ্রমণের উদ্দেশে। বর্ষায় বেশিরভাগ সময় নাফাখুমের পানি বিপৎসীমার বেশি থাকে বলে এ সময় নাফাখুম ভ্রমণের অনুমতি দেয় না স্থানীয় প্রশাসন। আবার শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত পানি অনেক কম থাকে বলে অনেকে এই সময়টায় যেতে পছন্দ করেন না। মোটের ওপর বলা যায়, বর্ষার শেষ থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত নাফাখুম ভ্রমণের সবচেয়ে সেরা সময়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে যে মৌসুমেই যান না কেন, নাফাখুম ভ্রমণ আপনার জীবনে উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে আজীবন।

নাফাখুম ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা
নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন। খরচ কমাতে চাইলে দলগতভাবে ভ্রমণ করুন। ট্রেকিংয়ের জন্য প্লাস্টিক অথবা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। পানির বোতল, শুকনো খাবার, টর্চলাইট, স্যাভলন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ফার্স্টএইড বক্স সঙ্গে রাখুন। বর্ষায় নাফাখুম জলপ্রপাত দেখতে গেলে রেমাক্রি খাল পার হওয়ার জন্য দড়ি লাগবে। নিজেরা নিলে ভালো, অন্যথায় গাইডের কাছেও পাওয়া যাবে। বর্ষায় লাইফজ্যাকেট মাস্ট লাগবে। থানচির পর বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ডিভাইস চার্জ দেওয়ার জন্য পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন। থানচির পর পান করার জন্য ঝিরির পানিই একমাত্র উৎস। একা একা কোথাও যাবেন না, পাহাড়ে পথ হারালে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দলবদ্ধভাবে থাকুন। সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। পাশের জনকে সহায়তা করুন। নাফাখুম জলপ্রপাত অনেক গভীর এবং নিচে বড় বড় পাথর ছড়ানো-ছিটানো আছে।

কোনোভাবেই ওপর থেকে জলপ্রপাতে লাফ দেবেন না। পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। প্লাস্টিকসহ কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড় ঝরনা ঝিরিতে ফেলবেন না।

জাহ্নবী