ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম
আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪, ০৭:৫২ এএম
সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটে টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ২০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় জেলার দুই উপজেলার সবকটি পর্যটনকেন্দ্র সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে দুই উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় সবকটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, মায়াবী ঝর্ণা, বিছানাকান্দি, রাতারগুল জলাবন, পান্থুমাই এবং কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর, উৎমা ছড়াসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আপাতত যেতে পারবেন না পর্যটকরা।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘সিলেটের গোয়াইনঘাটে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, জনস্বার্থে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।’

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিৎ কুমার সিংহ বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় জননিরাপত্তার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পর্যটন কমিটির সভায় উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে।’

শাকিলা ববি/অমিয়/

বৃষ্টির মৌসুমে চায়ের দেশে

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০১ এএম
বৃষ্টির মৌসুমে চায়ের দেশে
চা কন্যা ভাস্কর্য এবং একটি চা বাগান। ছবি: শরিফ মাহমুদ

বৃষ্টির মৌসুমে চা বাগান তার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য লাভ করে। চারপাশ তখন আরও সবুজ হয়ে ওঠে। বৃষ্টির জলে সবকিছু খুব সজীব ও প্রাণবন্ত রূপ ধারণ করে। তাই চায়ের দেশ ভ্রমণের জন্য বৃষ্টির মৌসুমকেই বেছে নিয়েছিলাম। শ্রীমঙ্গলে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম থেকে। উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পর্যন্ত যায়। রাত ১০টায় ট্রেন ছেড়েছিল, পৌঁছেছিলাম ভোর ৫টায়।

স্টেশন চত্বর থেকেই চায়ের দেশের চা পান করলাম সবার প্রথমে। তখন নরম আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে চারপাশে। স্টেশন থেকে পানসী রেস্টুরেন্টের দূরত্ব খুব বেশি নয়। চা পান করা শেষে ইঞ্জিনচালিত রিকশায় চড়ে চলে গেলাম সেখানে। খিচুড়ি আর মাংস দিয়ে সকালের নাশতা সেরে নিলাম। খাবারটা বেশ ভালো লেগেছে, দামও ছিল তুলনামূলক কম। হয়তো এজন্যই রেস্টুরেন্টটি এত জনপ্রিয়।

পানসী থেকে সকালের শীতল আবহাওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম বধ্যভূমি ৭১-এ। সকাল ৮টার আগে সেখানে প্রবেশ করতে দেয় না। তবু আমরা অনুরোধ করে প্রবেশ করলাম। এত সুন্দর বধ্যভূমি আগে কখনো দেখিনি। বিজিবির অধীনে বিধায় এত পরিপাটি ও সুন্দর। বৃষ্টিস্নাত পরিবেশে আমরা সেখানে ঘুরে বেড়ালাম। সবুজের সমারোহের ভেতর ছোট একটা সরু নদী বয়ে যাচ্ছে। ছোট হলেও পানিতে বর্ষার জোয়ার টের পাওয়া যাচ্ছিল বেশ। সেখানে খাবারের দোকান ও মনিপুরি শাড়ির দোকানও আছে। শাড়ির দোকানের ভেতর আরও বাহারি কিছু পণ্য রয়েছে। সব মিলিয়ে দেখার ও সময় কাটানোর জন্য শান্ত সুন্দর একটা জায়গা। বধ্যভূমিতে যারা শায়িত আছেন, তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।

১০টার দিকে একটা সিএনজি রিজার্ভ করি। প্রথম গন্তব্য চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, চা জাদুঘর ও লাল পাহাড়। একসময় চা জাদুঘর ও চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দিত, এখন দেয় না। সেই তথ্য জানা না থাকায় আমরা গেটের কাছ থেকেই ফিরে আসি। লালপাহাড়টা বেশ ভেতরে। সিএনজি মূল রাস্তায় নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক হেঁটে পৌঁছাতে হয় লালপাহাড়ে। আমরা পথ খুঁজে খুঁজে যাচ্ছিলাম। এত নীরব নিঝুম চারপাশ, শুধু চা বাগান আর চা বাগান। অনেকটা পথ গিয়ে সিদ্ধান্ত নিই, যেহেতু আমরা তিনজন মেয়ে কেবল, আর কেউ সঙ্গে নেই, এমন নিরিবিলি পরিবেশে কোনো বিপদ হলেও হতে পারে। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে খানিকটা দূর থেকে লালপাহাড় দেখে আমরা ফেরার পথ ধরি।
তারপর অটোতে করে গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের কাছে চলে আসি। গ্র্যান্ড সুলতানের পাশেই খাবারের হোটেল আছে। সেখান থেকে আরেক দফায় সকালের নাশতা সেরে নিই পরোটা, সবজি, ডিমভাজি দিয়ে। এরপর সিএনজি নিয়ে চলে যাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। জনপ্রতি ৫০ টাকা প্রবেশমূল্য দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি। সেখানে অনিন্দ্য সুন্দর এক বনাঞ্চলের দেখা পাই। বনের মাঝ দিয়ে ইট বিছানো পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মেলে একটা রেলপথের। সেখানে দুটি সিনেমার শুটিং হয়েছিল, সাইনবোর্ডে সে ব্যাপারে লেখা আছে। আরও কিছুক্ষণ সেখানে থেকে চলে যাই পরবর্তী গন্তব্য মাধবপুর লেক ও রাবার বাগান।

শ্রীমঙ্গলে একাধিক রাবার বাগান রয়েছে। মাধবপুর লেকে যাওয়ার পথেই একটা রাবার বাগানের দেখা পেলাম। সিএনজি থামিয়ে সেখানে অল্প কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করে মাধবপুর লেকের উদ্দেশে ছুটলাম। মাধবপুর লেকে ঢুকতে কোনো প্রবেশমূল্য নেই, তবে সিএনজি পার্কিংয়ের জন্য ২০ টাকা দিতে হয়। গেটের কাছে কয়েকটা দোকান আছে। সেখানে মণিপুরী শাড়ি ও বাহারি পণ্য পাওয়া যায়। হাঁটতে হাঁটতে আমরা মাধবপুর লেকে গিয়ে বসলাম। অসাধারণ সুন্দর একটা লেক, সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেওয়া যায়। চারপাশে পাহাড়, চা বাগান, মাঝখানে লেক, লেকে শাপলা ফোটে। একদম ছবির মতো, কল্পনার মতো ল্যান্ডস্কেপ। আমরা ছোট একটা পাহাড়েও উঠলাম। পাহাড়ের নিচে কয়েকজন চা শ্রমিক দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। আমাকে ডেকে মুখে খাবার তুলে দিলেন পরম স্নেহে। চা পাতা আর চানাচুর দিয়ে তারা এক বিশেষ ভর্তা বানায়। সেই ভর্তা দিয়েই খেলাম কয়েক লোকমা। মাধবপুর লেকের স্মৃতি যতদিন মনে থাকবে, সেই অকৃত্রিম ভালোবাসার কথাও মনে থাকবে।

মাধবপুর লেক থেকে আমরা গেলাম কমলগঞ্জ বর্ডারে। সেখানে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ রয়েছে। একপাশে বাংলাদেশ, অন্যপাশে ভারত, চারপাশে চা বাগান ও সবুজ ফসলের খেত। এত সুন্দর একটা জায়গায় হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ দেখে মুগ্ধ হলাম। স্মৃতিসৌধের পাশেই একটা ছোট সংগ্রহশালা রয়েছে। সংগ্রহশালাটি বন্ধ ছিল। কর্তৃপক্ষকে বলার পর তারা আন্তরিকভাবে খুলে দিলেন। ভেতরে প্রবেশ করে আমরা দেখতে থাকলাম সবকিছু। চারপাশ কাচ দিয়ে ঘেরা থাকার কারণে সেখান থেকে চা বাগান দেখা যায় পরিপূর্ণরূপে, যা সংগ্রহশালাটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।

এরপরের গন্তব্য ছিল নূরজাহান টি এস্টেট। শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর চা বাগান এই নূরজাহান টি এস্টেট। ক্যালেন্ডারের পাতায় যেই চা বাগানের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতাম ছোটবেলায়, বড় হয়ে তা স্বচক্ষে দেখার অনুভূতি যে কী অসাধারণ, বলে বোঝানো যাবে না। শ্রীমঙ্গলে যখন তখন বৃষ্টি হয়। সারা দিনে কয়েকবার আমরা বৃষ্টির কবলে পড়লাম। যখন নূরজাহান টি এস্টেটে গেলাম, তখনো হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামল। সে কী ঝুম বৃষ্টি। সিএনজি থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকলাম মনের আনন্দে। চারপাশ অপার্থিব সুন্দর লাগছিল তখন। ছোট ছোট টিলাজুড়ে চা বাগান, আঁকাবাঁকা পথ, কিছুদূর পরপর শনের ছাউনি দেওয়া দেয়ালবিহীন খোলা ঘর। আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা বৃষ্টির স্মৃতি জমা হলো সেখানে।

এরপর আমরা শ্রীমঙ্গল সদরে চলে এলাম। তখন বিকেল। পোশাক বদলে লাঞ্চ শেষ করে গেলাম আদি নীলকণ্ঠি টি কেবিন এ সাতরঙা চা খেতে। নীলকণ্ঠিতেও আছে মণিপুরী শাড়ি ও বাহারি পণ্যের সমাহার। চা ছাড়াও অন্যান্য খাবারও পাওয়া যায়। সাতরঙা চা খেতে ভালো লাগেনি তেমন, তবে না খেলে অপূর্ণতা থেকে যাবে চায়ের দেশ ঘোরার। আর হ্যাঁ, নীলকণ্ঠিতে যাওয়ার পথেই আরও একটা নীলকণ্ঠির দেখা মিলবে, যা পরবর্তী সময়ে তৈরি করা হয়েছে। আমার মতে, আদি নীলকণ্ঠি কেবিনে যাওয়াই শ্রেয়। চা খেয়ে সেখানেই চা বাগানের মাঝ দিয়ে পিচঢালা পথে হাঁটলাম কিছুক্ষণ। তখন নীলরঙা সন্ধ্যা নামছে। এক অপূর্ব অনুভূতি হচ্ছিল। এরপর আবার গেলাম বধ্যভূমি ৭১-এ। সেখানে রাতের দৃশ্যটা অন্যরকম সুন্দর। বৃষ্টিভেজা পরিবেশে চা খেতে খেতে আমরা হাঁটলাম, গল্প করলাম। চায়ের দেশে এক দিনের গল্প সেখানেই শেষ হলো।

কীভাবে যাবেন
বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকেই সেখানে যেতে পারবেন। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে যেতে পারবেন শ্রীমঙ্গলে। রেলপথে ভাড়া ২৬৫-১১০০ টাকা। সড়কপথে ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ প্রভৃতি স্থান থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী, এনা প্রভৃতি বাস চলাচল করে। ভাড়া সাধারণত ৩৮০-৭০০ টাকা। শ্রীমঙ্গল ঘোরার প্রয়োজনে সিএনজি রিজার্ভ করুন। একদিন ঘোরার জন্য ১৫০০-২০০০ টাকায় সিএনজি পেয়ে যাবেন।

কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজেট হোটেল এবং সুন্দর রিসোর্ট রয়েছে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি কোনো হোটেল নিতে পারেন। তবে বৃষ্টির মৌসুমে পর্যটক বেশি থাকার কারণে তখন হোটেল ভাড়াও বেড়ে যায়।

সতর্কতা
কোথাও কোনো ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না। বর্ষায় পথঘাট পিচ্ছিল হয়ে যায়। সতর্কভাবে চলাফেরা করবেন।

জাহ্নবী

সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৬ পিএম
সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর

সুনামগঞ্জের প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। অথই পানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও চোখ জুড়ানো সবুজ এই হাওরকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ৬,৯১২ একর। তবে বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন বেড়ে প্রায় ২০,০০০ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে। টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ এবং ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপের সমন্বয়ে জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। শীতকালে এই হাওরে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে।

টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়গুলো দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট-বড় ঝর্ণা টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে মিশেছে। এই হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। এর আশপাশের পানি খুবই স্বচ্ছ হওয়ায় ওপর থেকে হাওরের তলা দেখা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট-বড় প্রায় ৪৬টি দ্বীপের মতো ভাসমান গ্রাম বা দ্বীপ গ্রাম আছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে Ecologically Critical Area (ECA) হিসেবে ঘোষণা করে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে কখন যাবেন
বর্ষাকাল টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হাওর ভ্রমণ করা ভালো। বছরের অন্য সময় সাধারণত পানি অনেক কম থাকে। তবে ভিন্ন এক পরিবেশের টাঙ্গুয়ার হাওর এবং সেই সঙ্গে অতিথি পাখি দেখতে চাইলে শীতকালেই যেতে হবে আপনাকে।

হাওর ভ্রমণে কী কী দেখবেন টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ শুধু হাওর দেখা নয়, সঙ্গে আরও কিছু স্পট সাধারণত সবাই ঘুরে দেখে থাকে। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ প্যাকেজের সঙ্গে ছোট ছোট সোয়াম্প ফরেস্ট, ওয়াচ টাওয়ার, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক), শিমুল বাগান, বারিক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাউড়ের গড়সহ আরও বেশকিছু স্পট ঘুরে দেখা যায়।

টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায়
দেশের প্রায় সব জেলা থেকে সুনামগঞ্জে বাসে আসা যায়। সুনামগঞ্জ হয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই সুনামগঞ্জ জেলা শহরে আসতে হবে।

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: প্রতিদিন সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মামুন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় এনা পরিবহনের বাস। সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় লাগে।

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ: সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার লোকাল ও সিটিং বাস আছে। যেতে দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। অথবা শাহজালাল মাজারের সামনে থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার লাইট গাড়িতে করে যাওয়া যায়।

সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়া: সুনামগঞ্জ থেকে লেগুনা/সিএনজি/বাইক করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ্য অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে বেড়িয়ে আসুন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে। তবে শীতকালে পানি কমে যায় বলে লেগুনা/সিএনজি/বাইকযোগে যেতে হবে সোলেমানপুর। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নিতে পারবেন।

হাউসবোট ও নৌকা ভাড়া
বর্তমানে নানা ধরনের নানা মানের হাউসবোট, সেমি হাউসবোট কিংবা গতানুগতিক নৌকা পাওয়া যায় টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখার জন্য এবং প্রয়োজনে রাতে থাকার জন্য। প্যাকেজ অনুযায়ী বিভিন্ন মানের হাউসবোটের ভাড়া একেক রকম। সাধারণত এক রাত থাকা, সব বেলার খাবার ও টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের সব স্পট ঘুরে দেখার প্যাকেজ প্রিমিয়াম বোটগুলোর ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৬,০০০-১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মোটামুটি মানের সেমি হাউসবোটগুলোর প্যাকেজ ৪,৫০০-৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া পুরো হাউসবোট রিজার্ভ করলে মান ও ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ৪০,০০০-৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত হাউসবোটগুলোর প্যাকেজে সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকে। তার পরও বুকিং বা ভাড়া করার আগে তাদের প্যাকেজ দেখে নিন, প্রয়োজনে দরদাম করে নিন। শুধু ডে ট্রিপ হলে খরচ কিছুটা কম হবে।

এ ছাড়া খরচ কমানোর জন্য লোকাল বডির নৌকা ভাড়া করতে পারেন। তবে ভাড়া করতে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখুন। যেমন নৌকায় বাথরুম আছে কি না, বিদ্যুৎ, লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা ব্যবস্থা আছে কি না। নৌকা ভাড়া করতে দরদাম করে নিন। নৌকা ভাড়া মূলত ৩টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। নৌকায় ধারণক্ষমতা, নৌকার সুযোগ-সুবিধা, কী কী ঘুরে দেখবেন, রাতে থাকবেন নাকি ড্রে ট্রিপ এবং সিজনের ওপর।

সাধারণত ছোট নৌকা ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা, মাঝারি নৌকা ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা এবং বড় নৌকা ৫০০০ থেকে ১০,০০০ টাকায় সারা দিনের জন্য ভাড়া করা যায়। এক রাত নৌকায় থাকতে চাইলে টাকার পরিমাণ বাড়বে। রান্নার জন্য নৌকার মাঝিকে খরচের টাকা দিলে সে বাবুর্চি নিয়ে যাবে কিংবা নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে ফেলবে। কী করবেন তা অবশ্যই মাঝির সঙ্গে আগে আলোচনা করে দরদাম ঠিক করে নেবেন।

কোথায় থাকবেন
পর্যটকরা সাধারণত হাউসবোটেই রাত যাপন করে থাকেন। এ ছাড়া আপনি চাইলে টেকেরঘাট বাজারে রাতে থাকতে পারবেন। চাইলে সুনামগঞ্জ এসে সেখানের কোনো হোটেলে রাত যাপন করতে পারবেন। তবে টাঙ্গুয়ার হাওর বেড়াতে গেলে হাওরের নৌকায় অন্তত এক রাত থাকা উচিত। এই অভিজ্ঞতা অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে।

খাবার ব্যবস্থা
হাউসবোট প্যাকেজ খাবারসহ হয়ে থাকে। নতুবা নিজেদের খাবার নিজেরা ব্যবস্থা করে নিতে হবে। দিনে দিনে ঘুরে চলে এলে তাহিরপুরে খাবার হোটেল থেকে রওনা হওয়ার আগে সকালের ও ফিরে আসার পর দুপুরের খাবার হাওরের প্রায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে নিজের পছন্দের মাছ দিয়ে আহারপর্ব সেরে ফেলতে পারেন। এ ছাড়া খেতে পারবেন টেকেরঘাটেও।

যদি রাতে থাকার পরিকল্পনা থাকে এবং নিজেরা রান্না করে খেতে চান, তবে তাহিরপুর থেকে নৌকায় ওঠার আগে যে কয়দিন অবস্থান করবেন, সেই কয়দিনের বাজার করে নিতে পারেন। তাজা মাছ কেনার জন্য হাওরের মাঝখানের ছোট বাজারগুলোয় যেতে পারেন। এ ছাড়া সঙ্গে নিতে পারেন দেশি হাঁস কিংবা দারুণ সব শুঁটকি।

টাঙ্গুয়া ভ্রমণের সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ
হাওর ভ্রমণকালে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিন। যেকোনো কিছুর জন্য দামাদামি করে নেবেন। একসঙ্গে গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে। ৪-৫ জন বা ৮-১০ জনের গ্রুপ হলে ভালো। হাওরে বজ্রপাত হলে নৌকার ছইয়ের নিচে অবস্থান করুন। খাবারের অতিরিক্ত অংশ/উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট ইত্যাদি হাওরের পানিতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বা যন্ত্র পরিহার করুন। রাতে অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন করবেন না। টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছ, বন্যপ্রাণী কিংবা পাখি ধরা বা এদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। টাঙ্গুয়ার জলাবনের কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন না করার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

ভ্রমণে সঙ্গে নিন
টর্চ ব্যাকআপ ব্যাটারিসহ পাওয়ার ব্যাংক, ক্যাম্পিং মগ, চাদর, রেইনকোট বা ছাতা, নিয়মিত সেবনীয় ওষুধ, টয়লেট পেপার, ব্যাগ ঢেকে ফেলার মতো বড় পলিথিন, প্লাস্টিকের স্যান্ডেল (চামড়ার স্যান্ডেল পরিহার করা ভালো হবে), সানগ্লাস, ক্যাপ বা হ্যাট, গামছা (যা সহজে শুকাবে), খাবার পানি, হাফ প্যান্ট এবং সহজে শুকায় এমন জামাকাপড়।

জাহ্নবী

নীলসাগর পেরিয়ে ভিন্ন জগত

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
নীলসাগর পেরিয়ে ভিন্ন জগত
ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ

হুট করেই ‌‘দে-ছুট ভ্রমণ সংঘে’র চার বাউন্ডুলে বের হয়ে যাই ঘর ছেড়ে। কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ঠিক রাত ১১টার বাসে উঠে পড়লাম। গন্তব্য নীলফামারী। গাবতলী পার হয়ে পাগলা ড্রাইভার ছুটছে বীরদর্পে। যেতে যেতে বগুড়ায় ব্রেক। ২০ মিনিটের বিরতি। বগুড়ার বিখ্যাত দই চেখে বসলাম গিয়ে বাসে। ক্ষ্যাপাটে ড্রাইভার, সেটা আগেভাগেই বুঝতে পেরেছিলাম। আজ রাতে দুই চোখের পাতা এক করাটাই হবে দায়। উড়াধুড়া বাস চালিয়ে সকালে সৈয়দপুর গিয়া ড্রাইভার তার চেহারা থেকে কাপড় সরাতেই জসিম আবিষ্কার করেন, আরে ড্রাইভার তো আমগো মহল্লার ভাঙাড়ির দোকানি। হা-হা-হা!

ওদের দুজনার মধ্যে খাজুরা প্যাঁচাল হতে হতে নীলফামারীর বড়ভিটা বাসস্ট্যান্ডে নেমে পড়ি। নাশতা সেরে অটোতে চড়ে সোজা চলে যাই নীলসাগর। নির্ধারিত ৩০ টাকা প্রবেশ ফি’র বিনিময়ে ভেতরে গিয়ে হাঁটতে থাকি। কিছু দূর যেতেই চোখ আটকায় দীঘির জলে। প্রথম দেখায় লাগেনি। তাতে কী। খুঁজে দেখি। দীঘির পাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে সৃজন করা বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে পড়ি। ধীরে ধীরে লাগতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে পুরো নীলসাগর দীঘি চক্কর দেওয়ার পর মনের মধ্যে অন্যরকম এক লাগার অনুভূতি বিরাজ করে।

সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা মৌজায় প্রায় ৫৪ একর জায়গাজুড়ে নীলসাগর পার্কের অবস্থান। এর মধ্যে মূল দীঘির আয়তন প্রায় ৩৩ একর। আনুমানিক খননকাল অষ্টম শতাব্দীর কোনো এক সময়ে। পাশা খেলায় হেরে যাওয়া নির্বাসিত পাণ্ডবদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিরাট রাজা এই দীঘিটি খনন করে দিয়েছিলেন। তখনকার সময়ে এর নাম ছিল বিন্না দীঘি। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক বিন্না দীঘিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এর নাম দেন নীলসাগর। বর্তমানে নীলসাগর উত্তরাঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।

দীঘিতে সারা বছর কম-বেশি অতিথি পাখির কলতান দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। একটু খেয়াল করলে নানান জীববৈচিত্র্যেরও দেখা মেলে। নজর কাড়ে দীঘির জলে ফুটে থাকা সারি সারি নীলপদ্ম। আরও দেখা যায় সুন্দর বর্ণের সাপ।

এবারের গন্তব্য কিশোরগঞ্জ। ছুটলাম অটোতে। যেতে যেতে ট্যাংগনমারী। আগেই সেখানে ওত পেতে ছিলেন কাইউম ভাই। তার খপ্পরে পড়ে স্থানীয় এক হোটেলে মজাদার গরুর গোশত ভুনা দিয়ে উদর পূর্তি হলো। মালাই চা খেয়ে চলে গেলাম ধাইজান গ্রামে। ওয়াও! সেই রকম সৌন্দর্যময় গ্রাম! রাতটা ধাইজান কবরস্থানের জমিতে তাঁবু খাটিয়ে থাকব। এখানে উল্লেখ করে রাখি, আমরা ভ্রমণকালীন প্যারানরমাল ব্যাপারগুলো বেশ উপভোগ করতে পছন্দ করি।

যাই হোক, গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করি। ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা নামে। কিষান-কিষানিরা মাঠ ছেড়ে বাড়ি ফেরে। আমরাও ফিরে আসি কবরস্থানে। শুরু হয় তাঁবু টানানো। গভীর রাত অবধি চলে বারবিকিউ। পরদিন সকালে চলে যাই ভেড়ভেড়ী। এখানে রয়েছে প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো চাঁদখোসাল জামে মসজিদ। মসজিদটি ঘিরে নানান মিথ চালু রয়েছে। মসজিদের ইমাম সাহেব জানালেন, চাঁদখোসাল মসজিদটি এক রাতেই নাকি জিনের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। বক্তব্যের পক্ষে নানান যুক্তিও দাঁড় করালেন তিনি। মসজিদটি বাইরে থেকে তেমন দৃষ্টিনন্দন না হলেও এর ভেতরের কারুকার্য বেশ নান্দনিক। মূল অবকাঠামোর তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট, দৈর্ঘ্য ৪০ এবং প্রস্থে প্রায় ১০ ফিট। চুন, সুরকি ও পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি ভিন্ন আঙ্গিকের কারুকার্যশোভিত চাঁদখোসাল মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ করা অতীব জরুরি।

এবারের গন্তব্য ভিন্ন জগত। অটোভ্যানে করে ছুটলাম। ভেড়ভেড়ী থেকে ভিন্ন জগত প্রায় ২২ কিলোমিটার। তপ্ত রোদে বসে আছি ভ্যানে। এটাও এক প্রকার ভ্রমণকালীন মজাদার ফিলিংস। মাঝেমধ্যে সুন্দর কিছু দেখলে থেমে গিয়েছি। কখনো-বা আবার গ্রামের সহজসরল মহিলাদের সঙ্গে আনিস ভাই মজা করার চেষ্টা করেছে! স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগে জানা যায়, রংপুর বিভাগের মেয়েদের বিয়ে করলে নাকি প্রচুর পণ মেলে। 
যাক এ প্রসঙ্গে আর না। সামনে এগোই। মূলত ভ্রমণ করতে গিয়ে সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদের যাপিত জীবন সম্পর্কে ধারণা নেওয়াটাও এক প্রকার অভিজ্ঞতা। ভ্রমণ মানেই নানান বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন। দলবেঁধে গেলাম আর হই-হুল্লোড় করে ফিরে এলাম- এ রকমটা কখনো সমৃদ্ধ ভ্রমণের সঙ্গে যায় না। ভ্যানওয়ালা তাড়া দিলে ভিন্ন জগতের কথা মনে পড়ে। যেতে যেতে পার্কের সদর দরজায় হাজির। আগেভাগেই আমাদের সম্মানে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার আকরাম ভাই সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে রেখেছিলেন। ধন্যবাদ দিয়ে তাকে ছোট করব না। কারণ তিনি মানুষটাই এমন। জবিয়ান ভাই-ব্রাদার পেলে তার বাসার পারদ তুঙ্গে উঠে যায়। পার্কের ভেতরে ঢোকামাত্রই চোখ ছানাবড়া। বিশাল এরিয়া। রোদে পুড়ে শরীরটা ছিল তপ্ত। তাই প্রথমেই নেমে যাই ভিআইপি সুইমিংপুলে। ইচ্ছেমতো জলকেলিতে মেতে উঠি। এর পর বিভিন্ন রাইড ঘুরে যাই ভূতের জগতে। প্রবেশ করার পরই বাতি অফ করে দেওয়া হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুরু হয় ভূতের তাণ্ডব।

লাইটিং সিস্টেমের মাধ্যমে দাদি-নানিদের কাছ থেকে কিচ্ছাকাহিনি শোনা ভূতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের শো প্রদর্শনী শুরু হয়। মাত্র ৬-৭ মিনিটের থিম। কিন্তু মনে হয়েছিল সত্যি সত্যিই ভূতের তাণ্ডব চলছিল। এক কথায় অসাধারণ লাগলো। সাধারণত আমরা বনজঙ্গলে ঘোরা মানুষ। এ রকম কৃত্রিম পার্কে যাওয়ার তেমন অভ্যাস নেই। কিন্তু ভিন্ন জগতের বিশাল গণ্ডির মাঝে নানান ফুলের সমারোহ ও প্রকৃতিবান্ধব পার্কটি বেশ ভালো লাগার মতো। বলা যেতে পারে, নামের সঙ্গে অবিচার করা হয়নি।

যাবেন কীভাবে: ঢাকার গাবতলী থেকে বাস ও কমলাপুর থেকে ট্রেন। সরাসরি নীলফামারী কিংবা রংপুর হয়েও যেতে পারেন।

থাকা-খাওয়া: হোটেল-মোটেল প্রচুর রয়েছে। চাইলে ভিন্ন জগতের রিসোর্টেও থাকা-খাওয়া যাবে।

জাহ্নবী

সুন্দরবনের গহিনে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
সুন্দরবনের গহিনে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ
সুন্দরবনে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

সুন্দরবনের সুন্দর কথাটি বলতে হলে সুন্দরবন ঘুরে আসা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বহু দর্শনীয় স্থান ঘুরলেও সুন্দরবন দেখার সুযোগ বা সৌভাগ্য সেভাবে কখনো হয়ে ওঠেনি। সেই আফসোস মেটাতে পেরেছি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আমার বিভাগ পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ফিল্ড ট্রিপের মাধ্যমে। বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ মোট ৭০ জন ঘুরে এলাম রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল, বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাহারি গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু ঘেরা গা ছমছম করা সুন্দরবনে।

সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ১৯৯৭ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যার বাংলাদেশের অংশে আছে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন।

জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রাণী। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়।

গহিন অরণ্যে ঘেরা সুন্দরবন ভ্রমণ ছিল খুবই রোমাঞ্চকর এবং আকর্ষণীয়। ভ্রমণকাহিনি নিয়ে দারুণ একটি অ্যাডভেঞ্জার গল্পের বই লিখে ফেলা সম্ভব, সেখানে অল্প কথায় সুন্দরবন নিয়ে কিছু লেখা আমার কাছে কষ্টসাধ্য বটে।

ঢাকা থেকে বাসে করে রাতে ৭০ জনের দলবল নিয়ে যাত্রা শুরু করি। বাসের ভেতর হই-চই, গান-বাজনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে শেষে ভোরবেলায় পৌঁছে গেলাম খুলনায়।

খুলনা ৪নং বিআইডব্লিউটিএ নদীবন্দরে আমাদের জন্য অপেক্ষারত ছিল পূর্বনির্ধারিত এজেন্সির জাহাজ। জাহাজে উঠে যার যার অবস্থান বুঝে নিলাম। জাহাজে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা খুব ভালো ছিল। সবাই দলবদ্ধভাবে সুন্দরবন ঘুরে দেখা আর প্রতিদিনই প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত জাহাজের ডেকে বসে খোলা আকাশের নিচে গান ও জম্পেশ আড্ডায় মেতে থাকতাম। সকালে ঘুম ভাঙত বনের পাখির কলরবে। আমরা সবাই যেন আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব আবারও ফিরে পেয়েছিলাম।

এজেন্সির ব্যবস্থাপনায় আমাদের টিমের সঙ্গে যুক্ত হয় দুইজন গাইড ও একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বন্দুকধারী নিরাপত্তাকর্মী। তাদের দিকনির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় আমরা নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে সুন্দরবন পরিদর্শন করি। পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখার জন্য বন বিভাগের যাবতীয় ফরমালিটিজ এজেন্সির মাধ্যমে আগেই সম্পন্ন করে রাখা হয়েছিল।

সুবিশাল বন সুন্দরবন পুরোটা ভ্রমণ করতে না পারলেও আমরা হাড়বাড়িয়া, করমজল, কটকা, জামতলি বিচ, কচিখালি, শরণখোলা, টাইগার পয়েন্ট, ডিমেরচরে যেতে পেরেছি। সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত ছিল যখন জাহাজ সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা করে, আমাদের সবার সে কী উচ্ছ্বাস! যেন কোনো এক অজানা গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম সবাই।

প্রথম দিন সকালের নাশতা করে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল হাড়বাড়িয়া। সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও একই সঙ্গে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে হাড়বাড়িয়া। এই হাড়বাড়িয়া বাঘের বাড়ি নামেও পরিচিত। দীর্ঘ কাঠের সাঁকো দিয়ে বনের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে সুন্দরী, গোলপাতা, জাম, কেওড়াসহ নানা রকম বৃক্ষ। যদিও সুন্দরী গাছ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। বনের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় হরিণ, বানর ও বন্য শূকরসহ নানা বৈচিত্র্যময় প্রাণী ও পাখি চোখে পড়বে। সচরাচর বাঘ দেখা না গেলেও হাড়বাড়িয়া ট্যুরিজম স্পটে টাটকা বাঘের পায়ের ছাপও খুব সহজে দেখতে পাওয়া যায়।

হাড়বাড়িয়া ভ্রমণ শেষে আমরা চলে আসি জাহাজে, দুপুরের খাওয়া শেষ হলেই শুরু হয় শিলা নদী ধরে আন্ধারমানিকের উদ্দেশে রওনা। আন্ধারমানিক সুন্দরবনের নতুন একটি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। আন্ধারমানিক গিয়ে নামতেই চোখে পড়ে হরিণের প্রজনন কেন্দ্র। সেখানেও চোখে পড়ে সুন্দরী গাছসহ নানান প্রজাতির গাছ। তারপর লম্বা একটি ফুট ট্রেইলের ওপর দিয়ে পাখির কলরব শুনতে শুনতে হেঁটে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।

সন্ধ্যা নামার আগেই আমরা আবার ফিরে যাই জাহাজে। এবার যাত্রা কটকার উদ্দেশে। কটকা সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জে অবস্থিত। সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কটকা অন্যতম। আমরা রাতে পৌঁছে যাই কটকা ফরেস্ট অফিসের পাশেই। গাইডের কাছ থেকে জানতে পারি কটকা আসার সময় অনেকটুকু পথ সমুদ্রের ওপর দিয়ে আসতে হয়। যদিও আড্ডা, গল্পের ভিড়ে সেটা কেউই টের পাইনি।

দ্বিতীয় দিন খুব ভোরে আমরা ঘুম থেকে উঠে সবাই ঘুম ঘুম চোখে হালকা চা-বিস্কুট খেয়ে বেরিয়ে পড়ি কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের পথে। প্রথমে কিছুদূর হাঁটতেই চোখে পড়ে ওয়াচ টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ারের ওপর থেকে আশপাশে অনেকটুকু অঞ্চলই খুব সুন্দরভাবে দেখা যায়। ওয়াচ টাওয়ার পিছু ফেলে সোজা উত্তরে তিন কিলোমিটার হেঁটে আমরা পৌঁছালাম জামতলা সমুদ্রসৈকতে। পথে পথে নানা আকারের জামগাছের জন্যই সমুদ্রসৈকতের নামকরণ করা হয়। সৈকতে যেতেই দেখলাম প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্য। যা আমাদের পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আমরা ৭০ জনের টিম নিয়ে বিচ ক্লিনিং কর্মসূচি পালন করি। কর্মসূচি শেষে একই পথ ধরে রওনা করি জাহাজের উদ্দেশে। পথের মধ্যে দেখতে পাই বিশাল একটি চিত্রা হরিণের দল। বনের ভেতর দক্ষিণ দিকে হাঁটলেই পরপর তিনটি টাইগার টিলা খুঁজে পাওয়া যায়। কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্র ঘুরে দেখার পর আমরা চলে আসি জাহাজে। পরবর্তী গন্তব্য ডিমেরচর।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছালাম ডিমেরচরে। জানতে পারি ডিমের মতো আকৃতি হওয়ায় এই চরের নাম ডিমেরচর। লাইফ জ্যাকেট পরে সবাই নেমে পড়লাম পানিতে। ডিমেরচর সৈকতটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। ডিমেরচরের হই-হুল্লোড়ের পর আমরা চলে যাই কচিখালিতে। কচিখালি সুন্দরবনের আরেকটি আকর্ষণীয় স্পট।

ভ্রমণের শেষ দিন আমরা গেলাম করমজলে। করমজল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কারণ সুন্দরবনের প্রবেশপথে ও মোংলা বন্দরের সবচেয়ে কাছে করমজল অবস্থিত। করমজলে নামতেই চোখে পড়বে ছোট-বড় নানা সাইজের বানর। মানুষের কাছ থেকে ব্যাগ-মোবাইল ছিনিয়ে নিতে পারলেই তাদের শান্তি মেলে। করমজলে ডলফিন, হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্রও চোখে পড়েছে। এ ছাড়া এখানে লবণাক্ত পানির কুমির, ডুবহাঁস, বানর, সাপ, শিয়াল, নদীর ডলফিন চোখে পড়ার মতো। পাখিপ্রেমীদের জন্য এটি চমৎকার একটি জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমুগ্ধ হওয়ার মতো।

সুন্দরবন এতটাই সুন্দর যে বনের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু দিন দিন সুন্দরবন নানা রকম ক্ষতির মুখে পড়ছে। এইভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ হারাতে বসবে প্রাকৃতির এই অপার সৌন্দর্যকে, হারাবে জৈববৈচিত্র্য। সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুস হয়ে যেমন আমাদের রক্ষা করছে, তেমনি করে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সৃষ্ট হওয়া নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও আমাদের রক্ষা করছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন একটি। এই বনকে রক্ষা করতে দ্রুত আমাদের উদ্যোগী হওয়া দরকার। সবার সুন্দর মনই পারে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে। পরিশেষে বলা যায়, অনেকগুলো সুন্দর মন, বাঁচাতে পারে সুন্দরবন।

জাহ্নবী

এক দিনে পাহাড় সমুদ্র ঝরনা

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
এক দিনে পাহাড় সমুদ্র ঝরনা
গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ও সুপ্তধারা ঝরনা

পাহাড়, সমুদ্র কিংবা ঝরনা দেখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মৌসুম হচ্ছে বর্ষা। প্রতিবছর বর্ষাকালে তাই এসব পর্যটন স্পটে উপচে পড়া ভিড় থাকে। ব্যস্ত জীবনে বেশি সময় বের করাটাই কঠিন। কিন্তু মাত্র এক দিনেই যদি পাহাড়, সমুদ্র আর ঝরনা দেখার সুযোগ মেলে, তা হলে কেমন হয়? ঢাকা থেকে এক দিনের ভ্রমণে একসঙ্গে সবকিছু দেখার গল্প শোনাচ্ছেন মোহনা জাহ্নবী

বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে ঢাকা শহর সেদিন জলে টইটুম্বুর। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরই হয় না। কিন্তু আমার ভ্রমণপিপাসু মন কোনো বাধা মানল না। মাইলের পর মাইল হাঁটুজল, কোমরজল পেরিয়ে কিছু পথ সিএনজি, কিছু পথ রিকশায় করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছলাম। গন্তব্য সীতাকুণ্ড।

আমাদের পরিকল্পনা ছিল যাওয়ার সময় মেইল ট্রেনে যাব, ফেরার সময় বাসে ফিরব। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেন ছাড়ে রাত পৌনে বারোটায়। সেদিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেই কি না জানি না, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসতে দেরি করল। ছাড়ল আরও দেরিতে। তবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে মন্দ লাগছিল না।

ট্রেন ছাড়ল রাত দেড়টায়। স্টেশনের বাইরের হোটেল থেকে রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম। আর ট্রেনে খাওয়ার জন্য রুটি, কলা সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। পুরোটা পথ কখনো বৃষ্টি, কখনো বৃষ্টি শেষের নিটোল আবহাওয়া পেলাম। যখন ভোরের আলো ফুটছিল, তখন ট্রেনের জানালা দিয়ে বৃষ্টিভেজা সবুজ প্রকৃতি, পাহাড় দেখতে বেশ ভালো লাগছিল! এ ভ্রমণ যেন বৃষ্টির সঙ্গে এক অনিন্দ্য সুন্দর পথচলার গল্প।

সকাল সাড়ে আটটায় আমরা সীতাকুণ্ড নামলাম। সীতাকুণ্ড বাজারের এক হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাশতা সেরে নিলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্য বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। সিএনজি করে চলে গেলাম সেখানে। সকালের নরম আলোতে নিরিবিলি সমুদ্রসৈকত দেখতে খুব প্রশান্তি লাগছিল। এ সৈকতটি এখনো একদম প্রাকৃতিক অবস্থায় আছে। কোথাও কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া লাগেনি বলেই হয়তো বেশি সুন্দর লাগছিল। মানুষও খুব কম ছিল। তাই সমুদ্রযাপন আরও উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। একপাশে সবুজ ঘাসের আস্তরণ, গাছের শ্যামলিমা; অন্যপাশে সমুদ্রের অথৈ জলরাশি। একটা বড় সাঁকোও রয়েছে সেখানে। যখন প্রবল জোয়ারে সবকিছু প্লাবিত হয়ে যায়, তখন সাঁকো ব্যবহার করে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। আমরা যখন যাই, তখন জোয়ার কম ছিল। তাই খালি পায়ে হেঁটেই সমুদ্র দেখেছি। মাটির গায়ে কাঁকড়ার নকশা বোনা দেখেছি।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল ইকোপার্ক। জনপ্রতি ৫০ টাকা টিকিট দিয়ে আমরা ইকোপার্কে প্রবেশ করলাম। ইকোপার্ক থেকে সিএনজি ভাড়া করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সুপ্তধারা ঝরনা, সহস্রধারা ঝরনা, শালটিলা, গোধূলি চত্বর, বিমানবাহিনী ক্যাম্প, দুটো পিকনিক স্পট, ক্যাকটাস হাউস, র‌্যাব ক্যাম্প, হৈমন্তী চত্বর, গোলাপ চত্বর- এসবও দেখতে পারবেন। আমরা ইকোপার্কের ভেতরের খাবার হোটেলে ব্যাগ জমা রেখে দুপুরের খাবার অর্ডার দিয়ে পোশাক বদলে নিলাম। এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে সুপ্তধারা পয়েন্টে এসে ৯১ ফুট নিচে নামলাম। তারপর আরও প্রায় এক কিলোমিটার দুর্গম ঝিরি পথ পাড়ি দিয়ে দেখা মিলল প্রকৃতির রানী সুপ্তধারা ঝরনার। প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুন সেখানে পৌঁছানোর পথটা আরও একটু কঠিন হয়ে উঠেছিল পর্যটকদের জন্য। তবে পৌঁছে ঝরনার রূপ দেখেই মন ফুরফুরে হয়ে গেল। ঝরনার শীতল পানিতে এক ঘণ্টা ইচ্ছেমতো আনন্দস্নান করে আবার ফেরার পথ ধরলাম।

ফিরে পোশাক বদলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। খাবার আহামরি ভালো মানের ছিল না। তবে সবাই খুব ক্ষুধার্ত ছিল বলে পেট পুরে খেল। খেয়েই আমরা বেরিয়ে পড়লাম শেষ গন্তব্য গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে। গুলিয়াখালী যখন পৌঁছালাম, তখন প্রকৃতিতে শেষ দুপুরের সোনা রোদ। আমরা সমুদ্রতীরে গিয়ে গাছের ছায়ায় বসলাম। সমুদ্রে তখন বেশ জোয়ার ছিল। গুলিয়াখালীর সৌন্দর্য ম্যানগ্রোভ বনের কোলঘেঁষে থাকা অনিন্দ্য সুন্দর সৈকতের মতো। ঢেউ এসে ছুঁয়ে দিচ্ছিল আমাদের। দেখতে দেখতে পড়ন্ত বিকেল নেমে এলো। আমরা পেয়ারা মাখা খেলাম। খুব মজার ছিল। তারপর কয়েকজন ঘাসের ওপর শুয়ে চোখ বন্ধ করলাম; সমুদ্রের গর্জন শুনব বলে। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এমন অদ্ভুত প্রশান্তি নিয়ে ঘুমাইনি বহুদিন। যখন ঘুম ভাঙল, তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সৈকতের দোকানগুলোতে আলো জ্বলে উঠল। আমরা সেখানে গিয়ে কালোজিরার ঝালমুড়ি আর চা-কফি খেলাম। আকাশে তখন মায়াবী চাঁদ নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে, সাথে হাজার হাজার তারা। এই অপার সৌন্দর্য কোনো শব্দ দিয়েই প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

সন্ধ্যা যাপন শেষে আমরা ফেরার পথ ধরলাম। তখন গাঢ় অন্ধকার। মেঠোপথে হাঁটছিলাম ফোনের আলো জ্বেলে। হঠাৎ আলো নিভিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। চাঁদের আলো পড়েছে পথের পাশে জমে থাকা সমুদ্রের জলে। অদূরে গাছের সারি সমুদ্রকে আড়াল করেছে। তার পেছনে রঙিন আলোকরশ্মি আকাশের সঙ্গে মিশেছে যেন। হয়তো নোঙর করা জাহাজের আলো। চাঁদের আলোর সঙ্গে সেই আলো মিলে এক অলৌকিক সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছে। এক বিমুগ্ধ আবেশে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। জেলেরা সামুদ্রিক মাছ নিয়ে তখন সেই পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল লোকালয়ের দিকে। তাদেরকে থামিয়ে মাছ দেখলাম। বাঁশের পাত্র ভর্তি ইলিশ আর চিংড়ি মাছ। এত ভালো লাগছিল! মনে হচ্ছিল, এই মাটির জীবন ছুঁয়ে থেকে যাই সেখানেই।

কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে ফিরতেই হলো। সিএনজি নিয়ে সীতাকুণ্ড বাজারের অদূরে বিখ্যাত ‘ভাবীর হোটেল’-এ রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। সেখানকার চুইঝাঁল, মুরগির মাংস আর দইয়ের প্রশংসা না করলেই নয়। খাওয়া শেষে হাইওয়ে ধরে এক কিলোমিটার হেঁটে এসে কাউন্টার থেকে বাসের টিকিট সংগ্রহ করলাম। রাত সাড়ে নয়টায় বাস ছাড়ল। ঢাকা পৌঁছালাম প্রায় সাড়ে তিনটায়। একটা আশ্চর্য সুন্দর দিন মনের ডায়েরিতে আঁকা হয়ে গেল।

কীভাবে যাবেন 
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে যেতে পারেন। মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৪০ টাকা। অন্যান্য ট্রেনের ভাড়া ৪০০-৯০০ টাকা। এ ছাড়া বাসও এভেলেবল রয়েছে। কলাবাগান, গাবতলী, পান্থপথ, আবদুল্লাহপুর প্রভৃতি স্থান থেকে বাস ছাড়ে। ভাড়া ৪৭০-১৫০০ টাকার ভেতর। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পর্যটন স্পটগুলোতে যেতে সিএনজি ভাড়া করতে পারেন। তা হলে ভ্রমণ আরামদায়ক হবে। সিএনজি ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিন। ভাড়া খুব বেশি নয়।

কোথায় থাকবেন
কেউ যদি এক বা দু-রাত থাকতে চান, সেক্ষেত্রে সীতাকুণ্ড বাজারেই পর্যাপ্ত বাজেটের হোটেল (১০০০-২০০০ টাকা) পেয়ে যাবেন থাকার জন্য। তবে যারা সীতাকুণ্ড ঘুরতে যায়, বেশিরভাগ পর্যটকই একদিনের জন্যই যান।

সতর্কতা
বৃষ্টিভেজা পরিবেশে পাহাড়ে না ওঠাই ভালো। তবু তখন পাহাড় বা ঝরনায় গেলে সতর্ক থাকতে হবে। বৃষ্টির সময় সাপের প্রকোপ বাড়ে। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও কোনো বর্জ্য ফেলবেন না। স্থানীয় মানুষ কিংবা অন্য পর্যটকদের সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করবেন। সঙ্গে বাড়তি পোশাক এবং মৌলিক কিছু ওষুধ রাখবেন।

জাহ্নবী