ভ্রমণের জন্য কুমিল্লা জেলা একটি চমৎকার গন্তব্য। প্রাচীন ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, বৌদ্ধ বিহার, ঐতিহাসিক মসজিদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই জেলা। ময়নামতি, শালবন বিহার ও লালমাই পাহাড় ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়। অন্যদিকে ধর্মসাগর ও পার্কগুলো পরিবারসহ সময় কাটানোর জন্য উপযোগী। শহরের খাবার, বিশেষ করে কুমিল্লার রসমালাই পর্যটকদের মন জয় করে। ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সহজে যাওয়া যায়। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে কুমিল্লা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। আসুন জেনে নেই কুমিল্লা জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
১. ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ও স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এটি বাংলার প্রাচীনতম বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন বহন করে।
২. ধর্মপুর বাজার ও ঘাট স্থানীয় নদীকেন্দ্রিক বাজার, প্রাচীন নৌ-বাণিজ্যের স্মৃতিবহ।
৩. ময়নামতি জাদুঘর প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে প্রাপ্ত মূর্তি, মুদ্রা, কঙ্কালসহ অনেক দুর্লভ নিদর্শন রয়েছে এখানে।
৪. ওয়ান্স আপ অন এ টাইম পার্ক পর্যটন ও বিনোদনের জন্য একটি আধুনিক থিম পার্ক। শিশুদের জন্য রাইড, বোটিং ও বিভিন্ন মডেল স্থাপনা রয়েছে।
৫. ধর্মসাগর দিঘি মহারাজা ধর্মমাণিক্য কর্তৃক খননকৃত বিশাল দীঘি। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যার চারপাশে হাঁটার পথ এবং বসার জায়গা রয়েছে।
৬. রানীর কুঠি ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য রানীদের বাসভবন ছিল এটি। এখনও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে আকর্ষণীয়।
৭. বিজয়পুর মৃৎশিল্প গ্রাম এখানে বিখ্যাত টেরাকোটা শিল্প তৈরি হয়। মাটির তৈরি মনোহর জিনিসপত্র পর্যটকদের মন কাড়ে।
৮. লালমাই পাহাড় প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। এটি ময়নামতির সঙ্গে সংযুক্ত এবং বন্যপ্রাণী ও গাছপালার আধার।
৯. ইটাখোলা মুড়া বৌদ্ধ স্থাপত্যের আরেকটি নিদর্শন। এটি একটি উঁচু টিলায় অবস্থিত মন্দিরসদৃশ স্থাপনা।
১০. কোটবাড়ি এলাকায় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র পর্যটন ছাড়াও শিক্ষামূলক ঘুরতে যাওয়ার জায়গা। নানা রকম ফসল ও কৃষিপদ্ধতি দেখা যায়।
১১. কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ।
১২. মতির মসজিদ (বরুড়া) প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো, অনন্য মাটির নকশা ও নির্মাণশৈলী বহন করে।
১৩. নবাব বাড়ি (চান্দিনা) ঐতিহাসিক নবাবদের বাসস্থান হিসেবে পরিচিত, প্রাচীন স্থাপত্য দর্শনীয়।
১৪. বড় কাটারা মসজিদ মুঘল আমলের ঐতিহাসিক মসজিদ, কুমিল্লা শহরের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৫. বড় কবরস্থান ঐতিহাসিক ইসলামি সমাধিক্ষেত্র, বিশিষ্ট আলেম-ওলামা ও ব্যক্তিত্বদের কবর রয়েছে এখানে।
১৬. সোনারগাঁও বাজার (মেঘনা সংলগ্ন) প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখানে এখনও ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প পাওয়া যায়।
১৭. চিওড়া শাহী মসজিদ ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ, ১৭শ শতকে নির্মিত। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ও ধর্মীয় ঐতিহ্য বহন করে।
১৮. শ্রীকাইল চা বাগান অল্প বিস্তৃত হলেও এটি কুমিল্লার একমাত্র চা বাগান হিসেবে পরিচিত, সবুজ প্রকৃতি ঘেরা।
১৯. নবীনগর নদী পার্ক বিকল্প বিনোদনের জন্য জনপ্রিয়, নৌকা ভ্রমণ ও সন্ধ্যাকালীন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
২০. শালবন বিহার ৮ম-৯ম শতকের বৌদ্ধ বিহার, যেখানে একসময় সহস্রাধিক সন্ন্যাসী বসবাস করতেন। মঠাকৃতির অবকাঠামোটি ঘুরে দেখা যায়।
শালবন বিহার।
২১. জগন্নাথ ধাম (চৌদ্দগ্রাম) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান, বার্ষিক উৎসবের সময় বহু দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
২২. কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
২৩. চান্দিনা রেলওয়ে স্টেশন প্রাচীনতম রেল সংযোগগুলোর একটি, ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যিক গুরুত্ব রয়েছে।
২৪. আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্মৃতি কেন্দ্র বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট গবেষক ও সংগ্রাহকের স্মরণে গড়ে উঠা কেন্দ্র।
ভ্রমণের সময় নিচের সতর্কতাগুলো অবলম্বন করা উচিত — • প্রচণ্ড গরম ও রোদ থেকে বাঁচতে হালকা পোশাক, ছাতা ও পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। • ঐতিহাসিক স্থানে চলাফেরায় সচেতন থাকুন। প্রাচীন স্থাপনায় না চড়ুন বা ক্ষতি করবেন না। • স্থানীয় রীতিনীতি ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখান। মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানে শালীনতা বজায় রাখুন। • স্থানীয় খাবার খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। পরিষ্কার ও ভেজালমুক্ত কিনা যাচাই করুন। • ভিড়পূর্ণ স্থানে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সাবধানে রাখুন। চুরি প্রতিরোধে সতর্ক থাকুন। • নদী, দীঘি বা পাহাড়ে ঘোরার সময় সাবধান থাকুন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে অনুসরণ করুন। • স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন। অপরিচিত এলাকা ভালোভাবে ঘুরতে সহজ হবে।
খুলনা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ জেলার দক্ষিণে বিস্তৃত বিশ্বখ্যাত সুন্দরবন, যা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। খুলনা শহর জেলার প্রধান নগরী এবং দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত। এটি রূপসা ও ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত, যা শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। খুলনা শিল্প ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে সমৃদ্ধ, বিশেষ করে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও চিংড়ি শিল্পে দেশের অগ্রণী ভূমিকা রাখে। এখানকার মংলা বন্দর দেশের দ্বিতীয় প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে পরিচিত। খুলনায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যাদুঘর, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে। এখানকার লোকজ সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবনধারা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক বৈচিত্র্যে খুলনা জেলা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিত। আসুন দেখে নেই খুলনার কিছু দর্শনীয় স্থান।
১. সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমির ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও উদ্ভিদের আবাসস্থল।
২. শাটখোলা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের প্রবেশপথে থাকা এই বনভূমি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এবং নৌকাভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।
৩. দাকোপের ফাতেখান মসজিদ মোগল আমলের প্রাচীন মসজিদ। সুন্দর কারুকাজ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
৪. লাবণ্যবতী নদী এই নদী দর্শনার্থীদের কাছে নৌকা ভ্রমণ ও প্রকৃতির শোভা উপভোগের জন্য জনপ্রিয়।
৫. রূপসা সেতু খুলনা শহরের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংযোগ স্থাপনকারী গুরুত্বপূর্ণ সেতু। এটি রূপসা নদীর উপর নির্মিত।
৬. খুলনা শহীদ হাদিস পার্ক স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত একটি পার্ক ও মুক্তমঞ্চ।
শহীদ হাদিস পার্ক
৭. খুলনা জেলা যাদুঘর এখানে প্রাচীন নিদর্শন, ছবি, অস্ত্র ও নানান ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষিত আছে।
৮. ত্রিশ মাইল বাজার (মংলা রোড) এটি খুলনা-মংলা মহাসড়কে অবস্থিত একটি বিখ্যাত বাজার ও জংশন।
৯. মংলা সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর। এটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় একটি স্থান।
১০. শিববাড়ি মন্দির খুলনা শহরের একটি প্রাচীন ও পূণ্যত্ম মন্দির যা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১১. দাকোপের কোটাকালিনগর গ্রাম গ্রামীণ জীবনের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা একটি নিরিবিলি গ্রাম।
১২. পাইকগাছার হরিনখোলা নদীঘেরা গ্রাম এবং পাখিদের জন্য বিখ্যাত একটি স্থান।
১৩. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বিস্তৃত সবুজ ক্যাম্পাস এবং আধুনিক স্থাপত্যে ঘেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
১৪. খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ ঐতিহাসিক ও শিক্ষাবিষয়ক গুরুত্বসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান যার চত্বর সাজানো ও সবুজে ঘেরা।
১৫. দিঘলিয়ার ঐতিহাসিক রুপসা ঘাট এখান থেকে রূপসা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, যা অনেক সাহিত্যেও উঠে এসেছে।
১৬. তেরখাদা বিলাঞ্চল বর্ষাকালে নৌকাভ্রমণ এবং শীতকালে শুশুক ও পরিযায়ী পাখির জন্য বিখ্যাত।
১৭. জয়মন্তপুর জমিদার বাড়ি পুরনো জমিদার আমলের বাড়ি, যা ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ ও দৃষ্টিনন্দন।
১৮. বটিয়াঘাটা গির্জা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রাচীন উপাসনালয় এবং স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য।
১৯. সোনাডাঙ্গা পার্ক শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই পার্কে শিশুদের খেলার জায়গা ও পরিবার নিয়ে ঘোরার উপযোগী পরিবেশ রয়েছে।
২০. গল্লামারি স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ। এটি ঐতিহাসিক এবং আবেগঘন একটি স্থান।
গল্লামারি স্মৃতিসৌধ
সতর্কতা
ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা ও প্রস্তুতি মেনে চললে ভ্রমণটি হবে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সতর্কতা তুলে ধরা হলো— নিরাপত্তা— • অচেনা এলাকা বা জঙ্গলে (বিশেষ করে সুন্দরবন) একা প্রবেশ করবেন না। • সুন্দরবনে গেলে অভিজ্ঞ গাইড বা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে যান। • স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা ও সময়সূচি মেনে চলুন। স্বাস্থ্য— • মশাবাহিত রোগ (ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া) প্রতিরোধে মশার স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করুন। • বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখুন, বোতলজাত পানিই ভালো। আবহাওয়া— • বর্ষাকালে বন্যা বা অতিরিক্ত বৃষ্টির ঝুঁকি থাকে, সে সময় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। • সানস্ক্রিন, ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখুন। প্রাকৃতিক পরিবেশ— • সুন্দরবনে প্লাস্টিক বা দূষণকারী কিছু ফেলবেন না। • বন্যপ্রাণীর প্রতি সম্মান দেখান। ওদের বিরক্ত করবেন না। সাধারণ পরামর্শ— • জরুরি নম্বর, গাইড বা স্থানীয় হোটেলের যোগাযোগ তথ্য সঙ্গে রাখুন। • স্থানীয় সংস্কৃতি ও আচরণবিধি সম্মান করুন। • পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।
নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর অঞ্চল। এখানে রয়েছে পুরাতন জমিদার বাড়ি, সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা, চরাঞ্চল, দ্বীপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এই গাইডে তুলে ধরা হয়েছে নোয়াখালীর ১৫টি দর্শনীয় স্থান, সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ।
১. নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বাড়ি (লক্ষ্মীনারায়ণপুর) উনিশ শতকে নির্মিত এই নবাব বাড়িটি নারী শিক্ষার পথিকৃত নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত। স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের জন্য এটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
২. সোনাপুর সৈকত সমুদ্র ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা শান্ত একটি বীচ। সূর্যাস্ত দেখা এবং সমুদ্রের ধ্বনি উপভোগের জন্য উপযুক্ত।
৩. হাতিয়া দ্বীপ নোয়াখালীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এটি জীববৈচিত্র্য ও নদী-সাগরের মিলনস্থলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ।
৪. বঙ্গোপসাগরের নিজামপুর বীচ কম পরিচিত ও নিরিবিলি পরিবেশের একটি বীচ, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।
৫. কুতুবদিয়া পয়েন্ট পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত এই স্থানটি প্রকৃতিপ্রেমী ও পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য উপযুক্ত।
৬. মাইজদী কোর্ট ভবন ঔপনিবেশিক আমলের একটি প্রাচীন আদালত ভবন, যা ঐতিহাসিক স্থাপত্যে ভরপুর।
৭. চর কেয়ারী নতুন জেগে ওঠা চর এলাকা যেখানে পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাকৃতিক নিসর্গে সমৃদ্ধ।
৮. নবাবপুর জমিদার বাড়ি ঐতিহাসিক জমিদার আমলের নিদর্শন, যা ইট ও কাঠের কারুকাজে সমৃদ্ধ।
৯. বেগমগঞ্জ থানা ভবন (পুরাতন) ঔপনিবেশিক শাসনামলে নির্মিত একটি প্রশাসনিক ভবন, যা দর্শনার্থীদের কাছে ইতিহাসের গল্প বলে।
১০. চর আলেকজান্ডার চরাঞ্চলের সৌন্দর্যে ভরপুর এই স্থানটি ধানক্ষেত, নদী ও পাখির জন্য পরিচিত।
১১. মাইজদী পার্ক পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য শহরের মাঝে এক শান্ত পরিবেশে সাজানো পার্ক।
১২. সুধারামপুর জামে মসজিদ ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন এই মসজিদ ধর্মীয় ও স্থাপত্যিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
১৩. নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এর সবুজ ক্যাম্পাস, লেক ও নির্মাণশৈলী দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
১৪. চর জব্বর চরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে কৃষি, মাছ ধরা ও নদীজীবন কাছ থেকে দেখা যায়।
১৫. নতুন বাজার ঘাট ও নদীর পাড় নৌচলাচল ও স্থানীয় জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। নদীর ধারে সময় কাটানো এবং বাজার দেখা আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে।
এই স্থানগুলোর সৌন্দর্য, ইতিহাস ও বৈচিত্র্য পর্যটকদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলবে। নোয়াখালী ঘুরে আসুন আর আবিষ্কার করুন এক নতুন বাংলাদেশ।
নোয়াখালী ভ্রমণের সময় নিচের সতর্কতাগুলি মেনে চলা উচিত • চরাঞ্চলে গেলে জোয়ারের সময় জেনে নিন – আকস্মিক জলবর্ধনের ঝুঁকি থাকে। • স্থানীয় গাইড সঙ্গে রাখুন – দূরবর্তী বা দুর্গম স্থানে গেলে। • পর্যাপ্ত পানি ও খাবার বহন করুন – বিশেষ করে দ্বীপ বা চর এলাকায়। • মশা ও কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা পেতে ব্যবস্থা নিন – বিকেলে ও রাতে সতর্ক থাকুন। • স্থানীয় সংস্কৃতি ও নিয়ম-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। • প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ফাস্ট এইড সঙ্গে রাখুন। • দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।
মাদারীপুর, পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা একটি শান্ত ও মনোরম জেলা, যা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন। ঢাকার দক্ষিণে অবস্থিত এই জেলা সহজেই সড়ক ও নদীপথে যাতায়াতযোগ্য হওয়ায় এখন দিন দিন পর্যটকদের নজর কাড়ছে। চলুন দেখে নিই মাদারীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান ও কীভাবে সেখানে ভ্রমণ করলে আপনি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা পাবেন।
১. শাকুয়ার চর পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত শাকুয়ার চর একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকা। বর্ষায় এই চর ভিন্ন রূপ নেয়, আর শীতে এটি পরিণত হয় খোলামেলা সবুজ প্রান্তরে। নৌকাভ্রমণ, পিকনিক কিংবা ছবি তোলার জন্য আদর্শ স্থান।
২. রাজই দীঘি ও রাজবাড়ি (কালকিনি) ঐতিহাসিক এই দীঘি ও রাজবাড়ি মাদারীপুরের প্রাচীন ইতিহাস বহন করে। জমিদার আমলের স্থাপত্য, দীঘির চারপাশের প্রকৃতি ও পটভূমি একে করে তুলেছে অনন্য। ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকদের জন্য এটি একটি ‘মাস্ট ভিজিট’ স্থান।
৩. মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ মাদারীপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই স্মৃতিস্তম্ভ ১৯৭১ সালের বীর শহীদদের সম্মান জানাতে নির্মিত। এটি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়।
৪. গোপালপুর মঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। মঠটি শত বছরের পুরনো এবং মঠ এলাকার স্থাপত্যশৈলী ও পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
৫. ইচলাদী ফেরিঘাট পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত ইচলাদী ফেরিঘাট একটি মনোমুগ্ধকর নৌযাত্রার সূচনা বিন্দু। এখান থেকে ঘুরে দেখা যায় নদীর বিশালতা, নৌযান চলাচল এবং সুমিষ্ট বাতাসে হৃদয় ভরে যায়।
৬. দিগরাজ দীঘি ও মাজার শরীফ এটি একটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে প্রখ্যাত সুফি সাধকের মাজার অবস্থিত। প্রতি বছর অসংখ্য ভক্ত এখানে আসেন।
৭. শিবচরের জমিদার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে অবস্থিত জমিদার বাড়িটি প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যকলার চিহ্ন বহন করে। এর পাশের দীঘি ও গাছপালা ঘেরা পরিবেশ পর্যটকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
যেভাবে যাবেন ঢাকা থেকে সড়কপথে: গুলিস্তান বা গাবতলী থেকে বাসে (সাকুরা, দোলা, ইত্যাদি) সরাসরি মাদারীপুর। সময় লাগবে ৩.৫–৪.৫ ঘণ্টা। নৌপথে: ঢাকা সদরঘাট থেকে মাদারীপুর রুটে লঞ্চে।
স্থানীয় খাবার মাদারীপুরের বিখ্যাত দই, খেজুর রস, দেশি হাঁসের ঝোল ও নদীর টাটকা মাছ খুবই জনপ্রিয়। স্থানীয় বাজার বা হোটেলগুলোতে এসব খুঁজে পাবেন।
ভ্রমণ টিপস • নদীভ্রমণের সময় সঙ্গে অতিরিক্ত পোশাক ও পানীয় পানি রাখুন। • ধর্মীয় স্থানে প্রবেশের সময় সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখুন। • ক্যামেরা আনলে ভালো হবে, কারণ অনেক “ইনস্টাগ্রাম-মোমেন্ট” অপেক্ষা করছে!
মাদারীপুর শুধু একটি জেলা নয়—এটি স্মৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাসের মেলবন্ধনে গড়া এক অনন্য গন্তব্য। পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে একদিনের ট্যুর হোক কিংবা সপ্তাহান্তের ছুটিতে একটু শান্তির খোঁজ—মাদারীপুরে আপনি মুগ্ধ হবেনই।
টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। ১ মে শ্রমিক দিবস এবং শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি একত্রে পাওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন। প্রখর রোদেও পরিবার পরিজন নিয়ে জাফলং, সাদা পাথরের জল পাথরে, সবুজ গাছে ঘেরা জলাবন, বিস্তীর্ণ চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপ্রেমীরা।
সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র যেমন- সাদাপাথর, জাফলং, রাতারগুল, মায়াবি ঝর্ণা, উৎমাছড়া, তুরুংছড়া, রাংপানি ঘুরে তারপর মানুষজন নগরীর আশপাশের দর্শনীয়স্থানও দেখেতে যান। বিশেষ করে সিলেট নগরীর আশপাশের চা বাগান, হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার, চাঁদনিঘাট এলাকায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়িঘর দেখতে পর্যটকরা সেখানে যান।
সিলেট নগরীর লাক্কাতুড়া চা বাগানের মা ও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ঢাকার নারায়ণগঞ্জের মাহবুবুর রহমান। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, আমি অনেকবার সিলেটে এসেছি। ছুটি পেলেই সিলেটে ঘুরতে আসি। তবে এবার এসেছি আমার মায়ের জন্য। আমার মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল সিলেটের চা বাগান দেখার। তাই মাসহ সবাইকে নিয়ে এলাম। একটু গরম বেশি। তারপরও সবুজ প্রকৃতির মাঝে ঘুরে ভালই লাগছে।
এদিকে পর্যটক বাড়লে সিলেট নগরীর হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতেও ভিড় বাড়ে। বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকেই সিলেটের হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। বিশেষ করে সিলেটের জনপ্রিয় পানসি, পাঁচভাই রেস্টুরেন্টে মানুষজনের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এমনকি সিলেটের হোটেল রিসোর্টগুলোতেও ছিল ভিড়। বিশেষ করে নগরীর জিন্দাবাজার, দরগাহ গেট ও আম্বরখানা এলাকার কোনো হোটেলে রুম খালি ছিল না।
সিলেট নগরীর দরগাহ গেট এলাকার গ্র্যান্ড মোস্তফা হোটেলের মার্কেটিং ম্যানাজার হুমায়ুন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে সিলেটের বাইরে থেকে অনেক পর্যটক এসেছেন। তাই পর্যটকদের সুবিধার্তে আমরাও আমাদের সেবা নিশ্চিত করছি। এই তিন দিন সিলেটের বেশিরভাগ হোটেলেই রুম খালি নেই।
সিলেট নগরীর পানসী রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, সারা বছরই আমরা ব্যবসা করি। কিন্তু পর্যটক কম হলে আমাদের ব্যবসায়ও প্রভাব পড়ে। কারণ এই পর্যটনশিল্প আমাদের ব্যবসাতে আরও তরান্বিত করে। তাই ছুটির দিনে আমাদের রেস্টুরেন্টে ভিড় বেশি থাকে। কারণ ওই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা সিলেটে আসেন। তাই আমরা চাই, দেশে যেন শান্তি বিরাজ করে। তাহলে মানুষজন নিরাপদে ঘুরাঘুরি করবেন। এতে ব্যবসায়ীদের লাভের পাশাপাশি দেশেও অর্থনৈতিক উন্নতিও হবে।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, তিনদিনের টানা ছুটি তাই সিলেটে পর্যটক বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রের ভেতরে না থাকলেও কেন্দ্রগুলোর বাইরে আমাদের পুলিশের টহল সবসময় আছে। কারও সমস্যা হলে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।