বৃষ্টির মৌসুমে প্রকৃতি যেন তার আপন রূপ মেলে ধরে। বাংলার চিরায়ত সবুজ শ্যামল সৌন্দর্য মেলে ধরে বর্ষা। বর্ষায় ঘুরে দেখার জন্য দেশের কিছু জায়গা সম্পর্কে জানাচ্ছেন মোহনা জাহ্নবী
সিলেট
পানি আর সবুজ পাহাড়বেষ্টিত সুন্দর একটি জেলা সিলেট। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ভরা এ জেলায় রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। যেমন- জাফলং, বিছানাকান্দি, লোভাছড়া, লক্ষণছড়া, ডিবির হাওড়, হাকালুকি হাওড়, লালাখাল, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা, পান্থুমাই ঝরনা, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, জৈন্তা হিল রিসোর্ট ইত্যাদি।
মৌলভীবাজার
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চা বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার দরুন চা বাগান তার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য মেলে ধরে। চা বাগান ছাড়াও মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, হাকালুকি হাওড়, হামহাম জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ক্যামেলিয়া লেক ইত্যাদি এ জেলার পর্যটন স্থান।
সুনামগঞ্জ
বর্ষা মৌসুম হাওড়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ জেলায় জনপ্রিয় টাঙ্গুয়ার হাওড় ছাড়াও রয়েছে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। যেমন- বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, নীলাদ্রি লেক ইত্যাদি।
হবিগঞ্জ
বৃষ্টির দিনে হবিগঞ্জজুড়ে বিস্তৃত বনাঞ্চল আরও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। হবিগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেমাকালেঙ্গা অভয়ারণ্য, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, লক্ষ্মীবাউর জলাবন, সাগরদী ঘি ইত্যাদি।
সিরাজগঞ্জ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল এবং সমৃদ্ধতম জলাভূমি চলনবিল তিনটি জেলাজুড়ে বিস্তৃত। জেলা তিনটি হচ্ছে নাটোর, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ। বর্ষায় চলনবিল পানিতে ভরপুর থাকে। তখন তার সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহু গুণ।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জে রয়েছে মিঠামইন হাওড়, ইটনা হাওড়, নিকলী হাওড়, অষ্টগ্রাম হাওড় ইত্যাদি। হাওড়ের মাঝখান দিয়ে দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণের ফলে বিগত কয়েক বছর এর জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছে অনেক গুণ। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে আরও রয়েছে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কবি চন্দ্রাবতী মন্দির, এগারসিন্দুর দুর্গ, ইটনা শাহী মসজিদ, সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি, এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়া।
বরিশাল
ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাজার। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে এই পেয়ারা বাজার। বৃষ্টি নামলে পেয়ারা বাজারের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে ভ্রমণের জন্য এটি খুব উপযুক্ত স্থান।
ভোলা
ভোলা বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপবেষ্টিত জেলা, যা কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ নামেও পরিচিত। জেলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জল-স্থলের অপূর্ব সুন্দর ল্যান্ডস্কেপের জন্য বর্ষা মৌসুমে ভোলা জেলা আরও নান্দনিক হয়ে ওঠে। ভোলার কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরিমুকরি, তালুকদার জমিদার বাড়ি ইত্যাদি।
খুলনা
এ জেলাকে বলা হয় সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার। বৃষ্টির সঙ্গে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করার আগ্রহে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য বর্ষা মৌসুমকেই বেশি উপযুক্ত মনে করেন প্রকৃতি ও ভ্রমণপ্রেমী মানুষ। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম এ জেলায় রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। ভূতিয়ার পদ্মবিল, পুটনী দ্বীপ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ও শ্বশুরালয়, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড, করমজল পর্যটন কেন্দ্র, কটকা সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।
বাগেরহাট
বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষা এ জেলায় রয়েছে কচিখালী সমুদ্র সৈকত, দুবলার চর, মোংলা বন্দর, খাঞ্জেলী দিঘি, যা বর্ষা মৌসুমে ঘুরে দেখার জন্য উপযুক্ত স্থান।
শেরপুর
শেরপুর জেলাও বন পাহাড়ে ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর একটি প্রাকৃতিক জেলা। বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলে গজনী অবকাশ কেন্দ্র, বনরানী ফরেস্ট রিসোর্ট, মধুটিলা ইকোপার্ক প্রভৃতি স্থান তার আপন সৌন্দর্য মেলে ধরে।
নেত্রকোনা
বিরিশিরি আর সোমেশ্বরী নদীর জন্য জনপ্রিয় জেলা নেত্রকোনা। বর্ষায় সোমেশ্বেরী নদী নবযৌবনা হয়ে ওঠে। একদিকে সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানি, অন্যদিকে গাঢ় সবুজ পাহাড় মিলিয়ে অপূর্ব সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ। নেত্রকোনায় আরও রয়েছে কমলারানীর দিঘি, ডিঙ্গাপোতা হাওড়, সাত শহীদের মাজার ইত্যাদি।
ফেনী
ফেনী জেলায় রয়েছে বেশ কিছু ছোট-বড় দিঘি। বর্ষায় সেসব দিঘি পানিতে টইটম্বুর হয়ে থাকে। তার মধ্যে পরীর দিঘি, বিজয়সিংহ দিঘি, রাজাঝির দিঘি, শমসের গাজীর দিঘি অন্যতম।
রাঙামাটি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরা রাঙামাটি দেশের বৃহত্তম জেলা এবং সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে পুরো জেলাটিই একটি কৃত্রিম হ্রদের ওপর অবস্থিত, যা কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে ঘোরার কথা মনে হলেই পাহাড়, ঝরনা, হ্রদ এসবের কথা মনে পড়ে। আর রাঙামাটি জেলায় এগুলো সবই আছে। ঝরনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হাজাছড়া, কমলক, মুপ্পোছড়া, ধূপপানি এবং শুভলং। আর যে জায়গাটির কথা না বললেই নয়, তা সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালির মেঘ ভেসে বেড়ানো পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য পর্যটকদের বারবার সেখানে টেনে নিয়ে যায়।
খাগড়াছড়ি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর খাগড়াছড়ি জেলায় রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক লেক মাতাই পুখিরি, হার্টিকালচার হেরিটেজ পার্ক, মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি, তৈদুছড়া ঝরনা, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির, স্বর্গের সিঁড়ি বা হাতিমাথা, নিউজিল্যান্ড পাড়া, রিসাং ঝরনা, আলুটিলা গুহা, মায়াবিনী লেক প্রভৃতি।
বান্দরবান
পাহাড়, নদী আর ঝরনা মিলে অপূর্ব সুন্দর জেলা বান্দরবান। বর্ষায় ঝরনা আর নদীগুলো যখন পানিতে ভরপুর থাকে, পাহাড় আরও সবুজ হয়ে ওঠে, তখন তা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- দেবতাখুম, সাতভাইখুম, আমিয়াখুম জলপ্রপাত, ঋজুক ঝরনা, জাদিপাই ঝরনা, মিলনছড়ি, ডিম পাহাড়, মারায়নতং, তিন্দু, দামতুয়া ঝরনা, আলীর
সুড়ঙ্গ, চিংড়ি ঝরনা, নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, শৈলপ্রপাত ঝরনা, স্বর্ণমন্দির, কেওক্রাডং, বগালেক, সাইরু হিল রিসোর্ট, নাফাখুম প্রভৃতি।
চট্টগ্রাম
পাহাড় আর সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত, মহামুণি বৌদ্ধ বিহার, রাঙ্গুনিয়া চা বাগান, ফয়েস লেক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পারকি সমুদ্র সৈকত, বাওয়াছড়া লেক, প্রজাপতি পার্ক, হাজারিখিল অভয়ারণ্য, বাঁশখালী ইকোপার্ক, সোনাইছড়ি ট্রেইল, সুপ্তধারা ঝরনা, সহস্রধারা ঝরনা, খৈয়াছড়া ঝরনা, ঝরঝরি ঝরনা, কমলদহ ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা ও ট্রেইল, ভাটিয়ারী লেক, ওয়ার সিমেট্রি, চন্দ্রনাথ পাহাড়, মহামায়া লেক, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, কুমিরাঘাট ইত্যাদি।
জাহ্নবী