ঢাকা ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫
English

ঘুরে এলাম নিঝুম দ্বীপ

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
ঘুরে এলাম নিঝুম দ্বীপ

অনেক দিন থেকেই হ্যাংআউটে বের হওয়া হচ্ছিল না। একটা রিফ্রেশমেন্টের খুব প্রয়োজন ছিল। তাই হঠাৎ করেই তিন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম, পরীক্ষা শেষ হতেই নিঝুম দ্বীপ ট্যুরে যাব এবং রীতিমতো অ্যাডভেঞ্চার করব।

নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে একটু প্রাথমিক ধারণা দিয়ে রাখি। এটা বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত উপজেলা হাতিয়া দ্বীপের পাশে (হাতিয়া থেকে ৬০ কি.মি. দক্ষিণে) অবস্থিত ৬৩ বর্গমাইল আয়তনের একটি ছোট দ্বীপ।

তো পরীক্ষা শেষ হতেই আমরা রওনা হয়ে গেলাম। বাসে করে চলে এলাম সদরঘাট। উঠলাম এমভি ফারহান ৩-এ। বিশাল লঞ্চ, ডোবার আশঙ্কা কম। ঠিক সাড়ে ৫টায় লঞ্চ ছেড়ে দিল। লঞ্চের সর্বশেষ গন্তব্য হাতিয়া দ্বীপের তমরুদ্দিন ঘাট। আমরা ওখানেই যাব। জার্নিটা ছিল মোট ১৭ ঘণ্টার। রাতে চাঁদের আলোতে লঞ্চের ছাদে উঠেছিলাম। ছাদের সে আড্ডায় আমাদের খাঁচা-ছাড়া মনের কথাগুলো জোছনার মতো ঝরছিল।

সকালে মনপুরায় মালামাল নামাতে লঞ্চ থামল প্রায় ১ ঘণ্টা। আমরাও টুপ করে নেমে গেলাম মনপুরা দ্বীপে। সকালের নাশতাটা সেখানেই সেরে ফেললাম। ৯টার দিকে পৌঁছলাম আমাদের গন্তব্যে- হাতিয়া দ্বীপের তমরুদ্দিন ঘাটে।

নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে হাতিয়া দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে হয়। যাওয়ার উপায় দুটি। সরাসরি বাইকে, সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০০-৩০০ টাকা। অথবা তমরুদ্দিন ঘাট থেকে জাহাজমারা ঘাট পর্যন্ত বেবিট্যাক্সিতে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। এরপর জাহাজমারা থেকে মোক্তারিয়া ঘাট/নিঝুম দ্বীপ ঘাট পর্যন্ত বাইকে জনপ্রতি ১০০ টাকা। বলে রাখি- তমরুদ্দিন ঘাট থেকে সরাসরি বেবিট্যাক্সি নেবেন না। কেননা জাহাজমারারও কিছুদূর পর পর্যন্ত পাকা রাস্তা, কিন্তু এরপরের রাস্তা এতটাই খারাপ যে, বেবিট্যাক্সি প্রায় সময়ই উল্টে যায়। মোক্তারিয়া ঘাটে এলেই আপনি প্রথম দেখতে পাবেন ওপারের নিঝুম দ্বীপ।

মোক্তারিয়া ঘাট থেকে নদী পার হতে হবে ইঞ্জিন নৌকায়। সময় লাগে ৫ মিনিট, ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। নদী পার হলেই চলে আসবেন স্বপ্নের সেই নিঝুম দ্বীপে!

আমরা নিঝুম দ্বীপে নেমেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলাম। আসল গন্তব্য কিন্তু নিঝুম দ্বীপের অপর প্রান্তের নামাবাজার। এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তের ১৪ কি.মি. পাকা রাস্তা আছে। আমরা সাথে দ্বীপের সব ধরনের ম্যাপ নিয়েছিলাম। সাথে ছিল কম্পাস। প্ল্যান ছিল এ ট্যুরে সর্বোচ্চ মাত্রায় পরিশ্রম করব, অ্যাডভেঞ্চার করব। কম্পাস আর ম্যাপ দেখে দিক বুঝে নিজেরাই ঘোরাঘুরি করব এবং সে হিসেবে দ্বীপে নামার পর ও-প্রান্তে হেঁটেই চলে যাব।

কিন্তু দ্বীপ যে নেহায়েতই ছোটও নয়, রাস্তা যে ১৪ কি.মি., সে ধারণা ছিল না। বন্দরটিলা বাজার পার হয়ে অনেক দূর আসার পর যখন শুনলাম নামাবাজার আরও ১১ কি.মি. দূরে, তখন আমরা পাথর বহনকারী একটা লরিভ্যানে উঠলাম। লরিটি আমাদের পাকা রাস্তা শেষের প্রায় কাছাকাছিতে নামিয়ে দিল এবং আমাদের থেকে কোনো ভাড়াই নিল না।

মাঝের কিছু অংশ রাস্তা বনের ভেতর দিয়ে গেলেও বাকি রাস্তার ডানপাশে ছিল বন আর বামপাশে ছিল সমুদ্র। এরপরের ৩ কি.মি. রাস্তা এখনো কাঁচা, তবে রাস্তা পাকাকরণের কাজ চলছে দেখে এসেছি। বাকি রাস্তা আমরা হেঁটেই চলে এলাম। অবশেষে লঞ্চ ছাড়ার ২১ ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রকৃত গন্তব্য নিঝুম দ্বীপের নামাবাজারে এসে পৌঁছলাম।

সেখানে দুপুরের লাঞ্চ সেরে বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে। কারণ বনে ঘোরার এবং রাতে সমুদ্রের পাড়ে ক্যাম্প করার ব্যাপারে অনুমতি নিতে হবে। শুনেছিলাম পুলিশের অনুমতি পেতে অনেক ঝামেলা হয়। স্টুডেন্টশিপের প্রমাণ দিতে হয়... হেন-তেন। কিন্তু সেখানে সম্পূর্ণই ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো। দ্রুতই অনুমতি পেয়ে গেলাম।

হরিণ থাকে বনের একদম ভেতরে। ওরা বের হয় বনের ডানপাশের নদীর দিকে। আরও একটা কথা, হরিণ বের হয় শুধু আসরের পর। অর্থাৎ হরিণ দেখার সময় আসর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্ল্যান করলাম, হেঁটে বনের ভেতর দিয়ে ওপাশে চলে যাব। বনে ঢুকতেই টের পেলাম, একা একা বনে যাওয়া সহজ কথা নয়। যতই ম্যাপ আর কম্পাস থাক, শ্বাসমূল ভরা বনে প্রচুর রাস্তা। ঠিক কোন রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন তা মনে রাখা দুষ্কর তো বটেই, এর থেকেও বড় সমস্যা বনের মাঝের খালগুলো। যেগুলো পারাপারের কোনো সাঁকো নেই। একমাত্র উপায় ট্রলার অথবা নৌকা।

অবশেষে একটা নৌকা ভাড়া করলাম ৭০০ টাকা দিয়ে। নদী হয়ে ঘুরে বনের ওপাশে চৌধুরীর খাল দিয়ে বনে ঢুকলাম। ঢুকতেই একদম কাছ দিয়ে এক পাল বন্য মহিষ খাল পার হয়ে গেল। বনের ভেতরে একটু ঢুকতেই দেখা পেয়ে গেলাম সোনার হরিণের। আস্তে আস্তে ওদের কাছে যেতে লাগলাম। কিন্তু সমস্যা হলো, সমস্ত বনে শুকনা পাতা বিছানো। চলতে গেলে এগুলোয় পাড়া পড়বেই। আর শব্দ হলেই হরিণ চলে যাবে। হরিণ অনেক দূর থেকে শুনতে পায়, তাই আস্তে কথা বলাও নিষেধ। সম্পূর্ণ ইশারায় আমরা তিনজন ও মাঝি দুজন তিন দিক থেকে ৩টি ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে লাগলাম। বিশ্বাস করেন, প্রেমিকার কাছে প্রেম নিবেদনের সময় যেমন হার্টবিট বেড়ে যায়, তেমনি হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। হয়তো একটু অসতর্কতায় পাতার ওপর দিয়ে চলার শব্দে হরিণ চলে যাবে। আমার ভুলে অন্য তিনজনেরও হরিণের ফটো তোলা হবে না। গেরিলা হয়ে মাটি ঘেঁষে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, হার্টবিটের শব্দেই বুঝি হরিণ চলে যাবে!

কিন্তু না, হরিণ চলে গেল পাখির শব্দে। হঠাৎ গাছের ডালে বসা পাখিরা এমন কিচির-মিচির শব্দ করা শুরু করল, সে শব্দেই হরিণ ভাইয়া সিগনাল পেয়ে গেল। দিল দৌড়। আমরা কিছুক্ষণ গাছের আড়ালে মাটিতে গামছা বিছিয়ে শুয়েও ছিলাম। মনে আশা, আধঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পর হরিণ আবার আসবে। তখন কাছ থেকে দেখা যাবে। কিন্তু বুঝতে পারলাম এদিকে যেহেতু ঝামেলা হয়েছে, সেহেতু এদিকে হরিণ আর আসবে না।

বনের ভেতরে ঢোকা শুরু করলাম। বেশ খানিক যাওয়ার পর দেখলাম এক পাল হরিণ হেঁটে যাচ্ছে। পাশে হরিণ শাবকও লাফাতে লাফাতে চলে গেল। ফেরার পথে বন থেকে শুকনো কাঠ নিয়ে এলাম, যাতে রাতে ক্যাম্পে ফায়ারিং করতে পারি।

সৈকতে লাকড়ি ফেলে কাছের বাজারে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে এলাম। ফিরে এসে প্রথমেই ক্যাম্প করে ফেললাম। ক্যাম্প বানাতে স্বেচ্ছায় সাহায্য করলেন গ্রামের এক চাচা। এমনকি কেরোসিন দেওয়ার পরও যখন লাকড়িতে আগুন ধরছিল না, তখন চাচা পাশের এক খেজুর গাছে উঠে শুকনো ডাল পেড়ে আনলেন। আগুন জ্বলল।

ইচ্ছা ছিল পূর্ণিমার রাতে একই সাথে জোছনাস্নান ও সমুদ্রস্নান করব। কিন্তু খেয়ালই ছিল না, রাতে ভাটা থাকে। সে সময় সমুদ্রে নামা যায় না। আমরাও পরিশ্রমে ক্লান্ত ছিলাম। তাই এক সময় আগুন নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। মাঝরাতের পর হঠাৎ প্রচণ্ড আলোতে ঘুম ভেঙে গেল। দেখি চাঁদের আলো এত তীব্র, এত তীব্র হয়েছে যে, আমাদের ক্যাম্পের ত্রিপল ভেদ করে চোখে পড়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আর থাকতে পারলাম না, তাঁবু থেকে বের হয়ে এলাম। দেখি চাঁদের আলোর সত্যিই বাঁধ ভেঙেছে। চারপাশ একদম দিনের মতোই পরিষ্কার। সে আলোয় আমরা সমুদ্র পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটলাম। সমুদ্রপাড় থেকে ফিরে আসতেই পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিল। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাজারে এলাম সকালের নাশতার জন্য।

নাশতার পর হোটেলে উঠেই দিলাম ঘুম। এক ঘুমেই দুপুর। ঘুম থেকে উঠেই চলে এলাম সৈকতে। সমুদ্রস্নানের পর পাড়ে বসে বিশ্রাম নিলাম। ঘুড়ি বানিয়ে ওড়ালাম অনেকক্ষণ। হরিণ দেখা তো হয়েছেই, শুধু ফটো তোলা হয়নি।

কিন্তু ক্যামেরায় তো চার্জ নেই। তাই আর বনে না গিয়ে দ্বীপটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। রাতে ফানুশ ওড়ালাম। এরপর উঠলাম সৈকত থেকে বের হওয়া খালে থাকা মাঝধরা ট্রলারে, তাদের সাথে গল্পগুজব করলাম।

হাতিয়া থেকে ঢাকার লঞ্চ ছাড়ে সাড়ে ১২টায়। তাই পরদিন ভোরে উঠে নাশতা সেরেই রওনা হলাম ঢাকার উদ্দেশে। ভালোমতো ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। বারবার চেক করে নিলাম সবকিছু ঠিকঠাক মতন নিয়েছি কি না। কিন্তু তারপরও নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে আসার সময় থেকে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, কি যেন নিয়ে আসিনি, কি যেন ফেলে এসেছি, কি যেন রেখে এসেছি!

জাহ্নবী

ভ্রমণের ব্যাগ গোছাতে যে বিষয়গুলো ভুলবেন না

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
ভ্রমণের ব্যাগ গোছাতে যে বিষয়গুলো ভুলবেন না
ব্যাগ গোছানোর আগে একটি চেকলিস্ট তৈরি করা অত্যন্ত উপকারী। ছবি এআই

ভ্রমণ মানেই আনন্দ, রোমাঞ্চ আর নতুন কিছু দেখার অভিজ্ঞতা। কিন্তু এই অভিজ্ঞতাটি নিখুঁতভাবে উপভোগ করতে হলে যাত্রার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ব্যাগ গোছানো। ঠিকঠাকভাবে ব্যাগ গোছানো না হলে যাত্রাপথে নানান রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকলে বা অতিরিক্ত জিনিস বোঝা হয়ে দাঁড়ালে সেই আনন্দযাত্রা এক সময় কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। তাই ব্যাগ গোছানোর সময় কিছু বিষয়ের প্রতি সচেতন দৃষ্টি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভ্রমণের ধরণ ও স্থানের ওপর নির্ভর করে প্যাকিং

প্রথমেই ভাবুন আপনি কোথায় যাচ্ছেন এবং কতদিন থাকবেন। পাহাড়ে, সমুদ্রে, শহরে না-কি বিদেশে? আবহাওয়া শীতল না গরম? জায়গার ধরন অনুযায়ী পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করুন। শীতের জায়গায় যাচ্ছেন কিনা সেটা বিবেচনায় নিয়ে মোটা কাপড়, গ্লাভস, হুডি কিংবা জ্যাকেট রাখুন। অন্যদিকে, সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণের জন্য হালকা, বাতাস চলাচল উপযোগী পোশাক ও সানস্ক্রিন ক্রিম নেওয়া দরকার।

 

একটি তালিকা তৈরি করুন

ব্যাগ গোছানোর আগে একটি চেকলিস্ট তৈরি করা অত্যন্ত উপকারী। এতে করে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তালিকাটি ভাগ করে নিতে পারেন—পোশাক, ওষুধ, কাগজপত্র, ইলেকট্রনিকস, টয়লেট্রিজ ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে। তালিকা অনুসরণ করে একে একে সবকিছু ব্যাগে ঢোকান এবং প্রতিটি আইটেমের পাশে টিক চিহ্ন দিন।

 

হালকা ব্যাগ, সহজ যাত্রা

অতিরিক্ত জিনিসপত্র ব্যাগে না রাখার চেষ্টা করুন। ভ্রমণ যত হালকা হবে, চলাফেরা তত সহজ হবে। অনেকেই ‘যদি দরকার হয়’ ভেবে এমন অনেক কিছু ব্যাগে পুরে ফেলেন, যেগুলোর একটিও শেষ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয় না। তাই ব্যবহারিক ও প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরে অপ্রয়োজনীয় কিছু নিলে তা শুধু জায়গা নষ্ট করবে না, বরং যাত্রা ক্লান্তিকরও করে তুলবে।

 

আবশ্যিক কাগজপত্র নিরাপদে রাখুন

ভ্রমণের সময় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স কপি, টিকিট, হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ ইত্যাদি কাগজপত্র এক জায়গায় গুছিয়ে রাখুন। এগুলো পাসপোর্ট হোল্ডার বা ডকুমেন্ট ফোল্ডারে ভরে ব্যাগের এমন জায়গায় রাখুন, যাতে হাতের নাগালে থাকে এবং সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

 

প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যাগে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছবি এআই

 

ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী

নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যাগে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের ওষুধ নিয়মিত নিতে হয়, তাহলে সেগুলোর পর্যাপ্ত মজুত থাকা দরকার। পাশাপাশি ব্যথানাশক, পেটের ওষুধ, স্যালাইন, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, ও ইনহেলার জাতীয় প্রাথমিক চিকিৎসার সামগ্রী রাখলে যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয়।

 

স্মার্ট ও সংগঠিত প্যাকিং

ব্যাগ গোছাতে চাইলে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। যেমন রোল করে কাপড় গুছিয়ে রাখলে জায়গা কম লাগে এবং কাপড়ে ভাঁজ পড়ে না। শূন্য জায়গা ব্যবহার করতে পারলে অনেক জিনিস সংরক্ষণ করা যায়। জুতার ভেতর মোজা গুঁজে দেওয়া, কসমেটিক্স বা টয়লেট্রিজ আলাদা ছোট ব্যাগে রাখা এগুলো ভালো অভ্যাস।

 

ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও চার্জার

বর্তমানে ভ্রমণে স্মার্টফোন, চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক, হেডফোন, ক্যামেরা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ডিভাইস বহন করা হয়। এসব ডিভাইস ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা আগেই দেখে নেওয়া উচিত। সব ডিভাইসের চার্জার ও অতিরিক্ত মেমোরি কার্ড বা ব্যাটারি নেওয়া হলে পথে প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনা এড়ানো যায়।

 

সতর্কতা ও নিরাপত্তা

ভ্রমণে যাত্রার সময় মূল্যবান জিনিস যেমন গহনা, বেশি নগদ অর্থ কিংবা অতিরিক্ত কার্ড নেওয়া ঠিক নয়। প্রয়োজনে একাধিক জায়গায় অর্থ রাখুন যাতে এক জায়গা থেকে হারিয়ে গেলে পুরোটা না যায়। ব্যাগে একটি ছোট তালা ব্যবহার করলে নিরাপত্তা বাড়ে। এছাড়া, মানিব্যাগে বা মোবাইলে জরুরি যোগাযোগ নম্বর লিখে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

অতিরিক্ত জিনিসপত্র ব্যাগে না রাখার চেষ্টা করুন। ছবি এআই

 

টয়লেট্রিজ ও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী

হোটেলে টয়লেট্রিজ পাওয়া গেলেও নিজের ব্যবহার উপযোগী জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়াই ভালো। যেমন ব্রাশ, পেস্ট, সাবান, শ্যাম্পু, রেজর, টিস্যু, তোয়ালে ইত্যাদি। নারী ভ্রমণকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি পণ্য সঙ্গে রাখা আবশ্যক।

 

পরিশেষে, ভ্রমণের ব্যাগ যেন হয় আপনার সঙ্গী

আপনার ব্যাগটি যেন হয় বহনযোগ্য, টেকসই এবং আরামদায়ক। বিশেষ করে দীর্ঘপথের যাত্রায় ব্যাকপ্যাক বা ট্রলির মধ্যে যেটি আপনি সহজে বহন করতে পারেন, সেটিই বেছে নেওয়া উচিত। ব্যাগের ওজন ৭-১০ কেজির মধ্যে রাখলে চলাফেরা সহজ হয়।

ভ্রমণ সবসময়ই এক ধরনের প্রস্তুতির দাবি করে। আর তার শুরুটা হয় ব্যাগ গোছানো থেকে। ঠিকঠাকভাবে প্রস্তুতি নিলে যাত্রা হয় স্মরণীয় এবং আনন্দদায়ক। তাই ব্যাগ গোছানোর কাজটিকে অবহেলা নয়, বরং গুরুত্ব দিয়েই সম্পন্ন করুন। নিরাপদ ও আনন্দময় হোক আপনার প্রতিটি সফর।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা
ছবি: খবরের কাগজ

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

শনিবার (৩০ মে) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।

টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে টানা বর্ষণের ও পাহাড়ি ঢলে ফলে কোম্পানীগঞ্জ ধলাই নদীর পানি বেড়ে তলিয়ে যায় জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা সাদাপাথর। ঢলের পানিতে অস্থায়ী অবকাঠামো এবং স্থানীয় কয়েক শ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মালামাল ভাসিয়ে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

ঢল নামার সময় কিছু পর্যটক বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্পটে অবস্থান করছিলেন। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই তারা নিরাপদ স্থানে চলে আসেন। এরপর শনিবার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাধীন সাদাপাথর পর্যটন স্পট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া স্থিতিশীল হলে পরবর্তীতে উক্ত পর্যটনকেন্দ্রটি খুলে দেওয়া হবে।

শাকিলা ববি/রিফাত/

মহাস্থানগড়  ভ্রমণ অতীতকে ছুঁয়ে দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতা

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
অতীতকে ছুঁয়ে দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য যদি আমাদের আত্মপরিচয়ের মূল ভিত্তি হয়, তবে মহাস্থানগড় নিঃসন্দেহে সেই ভিত্তির অন্যতম প্রাচীন গৌরবময় স্তম্ভ। এটি শুধু একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নয়, বরং আমাদের অতীতের জানালা, যা দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায় হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো সভ্যতা, সংস্কৃতি রাজনীতির চিত্রপট। তাই মহাস্থানগড় ভ্রমণ শুধু একটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নয়, এটি ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মহাস্থানগড় এক সময় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর রাজধানী ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে শুরু করে পাল সেন শাসনামলের শেষ পর্যন্ত এই শহর ছিল রাজনৈতিক ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন গোকুল মেধ, শীলাদেবীর ঘাট, দুর্গ প্রাচীর এবং পোড়ামাটির ফলকে উৎকীর্ণ চিত্র- সবই এক সমৃদ্ধ অতীতের প্রমাণ বহন করে।

মহাস্থানগড়ে ভ্রমণ ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জীবন্ত শ্রেণিকক্ষ। প্রাচীন স্থাপত্য, প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি অন্যান্য নিদর্শন পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বইয়ের পাতার বাইরের জ্ঞান অর্জন করতে পারে। গবেষকদের জন্য এখানে রয়েছে অজস্র অনুসন্ধানযোগ্য তথ্য নিদর্শন যা এখনো অনেক রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায়।

যে জাতি তার অতীতকে জানে না, সে ভবিষ্যতের পথ হারিয়ে ফেলে। মহাস্থানগড় সেই পরিচয়চিহ্ন, যা আমাদের পূর্বসূরিদের জ্ঞান, দক্ষতা সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলে। এটি আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে তাদের সংস্কৃতি ইতিহাস জানার আগ্রহ সৃষ্টি করতে।

মহাস্থানগড় হিন্দু, বৌদ্ধ মুসলিম- তিন ধর্মেরই নিদর্শন বহন করে। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের প্রতীক, যেখানে ধর্মীয় সহাবস্থান সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানানো হয়েছে যুগ যুগ ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান সমাজে সহনশীলতা সংহতির জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।

মহাস্থানগড় ভ্রমণ মানে শুধুই একটি ভ্রমণ নয়, এটি আত্মজাগরণের একটি রূপ। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। তাই মহাস্থানগড়কে শুধু ভ্রমণকেন্দ্র নয়, বরং একটি জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র, গবেষণাগার পরিচয়ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

আজকের এই দ্রুতগতির পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আমরা যখন নিজেদের হারিয়ে ফেলি, তখন মহাস্থানগড়ের মতো স্থান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- আমাদের শিকড় কতটা গভীরে, আর ইতিহাস কতটা গৌরবময়।

 

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে গাবতলী বা কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি বগুড়া যাওয়া যায়। বিআরটিসি, এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ এবং ঐশী এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বাস চলে। ভাড়া সাধারণত ৫৫০-৯০০ টাকা (নন-এসি/এসি) সময় লাগে সাধারণত - ঘণ্টা। তবে রাস্তার অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।

বগুড়া শহর থেকে মহাস্থানগড়ের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। অটোরিকশা, সিএনজি বা লোকাল বাসে সহজেই পৌঁছানো যায়। সময় লাগে ২০-৩০ মিনিট। ভাড়া প্রায় ৫০-১০০ টাকা (যানবাহনের ধরন অনুযায়ী) ট্রেনে ঢাকা থেকে মহাস্থানগড় যেতে চাইলে ঢাকা থেকে সান্তাহার পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তনগর ট্রেন রয়েছে। যেমন- লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস। সান্তাহার থেকে বগুড়া বাসে বা লোকাল ট্রেনে যাওয়া যায়। সময় লাগে - ঘণ্টা। ভাড়া ২০০-৮০০ টাকা (শ্রেণিভেদে)

বগুড়ায় বিমানবন্দর নেই। তবে আপনি চাইলে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর/রাজশাহী হয়ে ফ্লাইটে যেতে পারবেন। সেখান থেকে বগুড়া সড়কপথে (- ঘণ্টা) যেতে হয়।

 

মহাস্থানগড় ভ্রমণে সতর্কতা

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গৌরবের এক অমূল্য নিদর্শন। এই প্রাচীন স্থানের সৌন্দর্য ইতিহাস উপভোগ করতে গেলে কিছু সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হওয়ায় এর সংরক্ষণ প্রয়োজন এবং ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হয়।

মহাস্থানগড়ে খাবার পানীয়ের সুবিধা সীমিত, বিশেষ করে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায়। তাই ভ্রমণে পানি হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো। বিশেষ করে গরমকালে ডিহাইড্রেশন এড়াতে পানি অবশ্যই প্রয়োজন। এখানের মাটির পথ ধূলিকণা অনেক সময় হাঁটার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তাই চমৎকারভাবে হাঁটার জন্য হালকা, আরামদায়ক কাপড় এবং মজবুত, বন্ধ জুতা পরিধান করুন।

মহাস্থানগড় বিশাল একটি এলাকায় ছড়িয়ে আছে। একটি অভিজ্ঞ স্থানীয় গাইড ভ্রমণকে সহজ, তথ্যবহুল এবং নিরাপদ করে তোলে। গাইড আপনাকে ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে দূরে রাখবে।

পুরোনো স্থাপনা নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের অধীনে রয়েছে। সেগুলোতে হাত দেওয়া, ছোঁয়া বা ভাঙচুর করা নিষেধ। ভ্রমণকালে এই বিষয়টি অবশ্যই মেনে চলুন। বড় জায়গায় ভিড় কম থাকার কারণে সুরক্ষার দিক থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখুন এবং একা দূরবর্তী এলাকায় যাওয়া এড়িয়ে চলুন।

মহাস্থানগড়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘোরার জন্য ভালো করে সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করবেন না, কারণ বেশ কিছু অংশ হাঁটাহাঁটি করতে হয়। সকালবেলা বা বিকেলের আগে যাওয়া ভালো, কারণ দুপুরে গরম বেশি থাকে।

বৃষ্টি বা বন্যার সময় সেখানে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে যাওয়া উচিত। মহাস্থানগড়ের মতো ঐতিহাসিক স্থানকে পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব। কোনো ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকুন এবং সঠিক স্থানে আবর্জনা ফেলুন।

 

ভ্রমণ পরামর্শ

মহাস্থানগড় ভ্রমণের জন্য শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযোগী সময়। বগুড়া শহরে ভালো মানের হোটেল গেস্ট হাউস রয়েছে থাকার জন্য। জাদুঘর প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ টিকিট নিতে হয় (বাংলাদেশি বিদেশি দর্শনার্থীর জন্য আলাদা হার)

 

বগুড়ার আরও দর্শনীয় স্থান

বগুড়া জেলায় দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। এর মধ্যে আছে রাজার পাহাড়ি মসজিদ, হাটিখাঁড়, পীরগাছা হিল, বগুড়া জাদুঘর, গোকুল মেধ, গাবতলী মসজিদ, শিবগঞ্জ প্রাচীন মন্দির, বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন, মাধবপুর লেক ইত্যাদি।

বর্ষাকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা মেনে চলবেন

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম
আপডেট: ২৯ মে ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম
বর্ষাকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা মেনে চলবেন
সব জায়গা বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত নয়। ছবি এআই

বাংলার প্রকৃতি বর্ষাকালে অনন্য সৌন্দর্যে মোড়া থাকে। নদী, পাহাড়, ঝর্ণা, সবুজ মাঠ, কুয়াশা ঢাকা পথ – সবকিছু যেন নতুন রূপে ধরা দেয় এই ঋতুতে। অনেকেই বর্ষাকালকে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন, বিশেষত যারা প্রকৃতির রোমাঞ্চ খুঁজে বেড়ান। তবে বর্ষাকালে ভ্রমণ যেমন রোমাঞ্চকর হতে পারে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে যদি প্রয়োজনীয় সতর্কতা না নেওয়া হয়। নিচে বর্ষাকালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতার বিষয় তুলে ধরা হলো —

▶ আবহাওয়ার পূর্বাভাস যাচাই
বর্ষাকালে আবহাওয়া অত্যন্ত অনিশ্চিত থাকে। যে কোনো সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে, আবার কোথাও ভারী বর্ষণের ফলে বন্যাও দেখা দিতে পারে। তাই যাত্রার পূর্বে এবং যাত্রাকালে নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট দেখা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ, গুগল ওয়েদার কিংবা টিভি ও সংবাদ মাধ্যমে সহজেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়।

 

বর্ষাকালে আবহাওয়া অত্যন্ত অনিশ্চিত থাকে। ছবি এআই

 

▶ সঠিক গন্তব্য নির্বাচন
সব জায়গা বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত নয়। পাহাড়ি অঞ্চল, নদীর পার কিংবা দুর্গম এলাকা বর্ষার সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভূমিধস, পাহাড়ি ঢল কিংবা জলাবদ্ধতা ভ্রমণকারীদের জন্য মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। তাই গন্তব্য নির্বাচন করার সময় এলাকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, অতীতের বন্যা বা দুর্যোগের ইতিহাস ও নিরাপত্তা বিষয় বিবেচনা করা উচিত।

 

▶ উপযুক্ত পোশাক ও জুতা পরা
বর্ষাকালে পোশাক নির্বাচনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হালকা, দ্রুত শুকায় এমন কাপড় পরা ভালো। তুলার বা জিন্সের কাপড় ভিজে গেলে শুকোতে সময় নেয় এবং তা ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বাড়ায়। রেইনকোট বা ছাতা অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
জুতার ক্ষেত্রে পানি নিরোধক (ওয়াটারপ্রুফ) ও ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা নির্বাচন করা উচিত। পিচ্ছিল পথে চলতে গেলে হঠাৎ পড়ে গিয়ে আঘাত লাগার ঝুঁকি থাকে। স্যান্ডেল বা খোলা জুতা পরলে পা কাদায় ভরে যেতে পারে বা জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

 

▶ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রথমিক চিকিৎসার সামগ্রী সঙ্গে রাখা
বর্ষাকালে সর্দি-কাশি, জ্বর, ত্বকে ফুসকুড়ি বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন: প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, ব্যান্ডেজ, এন্টিসেপটিক, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা লবণ-গ্লুকোজ সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। যদি পাহাড়ি বা দুর্গম এলাকায় যান, তাহলে প্রথমিক চিকিৎসার একটি কিট অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন।

 

▶ খাবার ও পানির নিরাপত্তা
বর্ষাকালে খাবার-দাবার খেয়াল করে খেতে হয়। বাহিরের খোলা খাবার খেলে সহজেই পেটের অসুখ হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন ঘরে তৈরি শুকনো খাবার যেমন চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, বাদাম, খেজুর ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে। পানির ক্ষেত্রেও সচেতন থাকতে হবে। অচেনা জায়গার কাঁচা পানি না খেয়ে বোতলজাত পানি বা নিজস্ব ফিল্টার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে খাওয়াই ভালো।

 

বর্ষাকালে রাস্তায় জলাবদ্ধতা, যানজট অথবা হঠাৎ বন্যার কারণে যাত্রা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ছবি এআই

 

 

▶ ব্যাকআপ পরিকল্পনা রাখা
বর্ষাকালে রাস্তায় জলাবদ্ধতা, যানজট অথবা হঠাৎ বন্যার কারণে যাত্রা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই ভ্রমণের পরিকল্পনায় বিকল্প পথ বা বিকল্প গন্তব্য রাখলে বিপদে পড়লে সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এছাড়া প্রয়োজনীয় নম্বর যেমন: স্থানীয় প্রশাসন, হোটেল, নিকটস্থ হাসপাতাল, আত্মীয়-স্বজন—এসব সংরক্ষিত রাখা জরুরি।

 

▶ ইলেকট্রনিক ডিভাইস সুরক্ষা
বর্ষার ভ্রমণে ফোন, ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব ডিভাইস ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে রাখা উচিত। চাইলে জিপলক ব্যাগ বা পলিথিন দিয়েও মোড়ানো যেতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত পাওয়ার ব্যাংক এবং চার্জার সঙ্গে রাখলে দরকারের সময় ডিভাইস বন্ধ হয়ে পড়বে না।

 

▶ স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা
যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানে কোনো ধরনের সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক সমস্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলছে কি না তা জানা অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে কিংবা সংবাদ মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা উচিত।

 

 

উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সতর্কতা মেনে চললে বর্ষাকাল ভ্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। ছবি এআই

 

▶ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
বর্ষাকালে পানিবাহিত রোগ যেমন: ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি বেড়ে যায়। তাই মশার প্রতিরোধে রিপেলেন্ট ব্যবহার করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ও যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের ক্ষতি না করে প্লাস্টিক বা অন্যান্য বর্জ্য যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।

 

সবশেষ 
বর্ষাকাল ভ্রমণের জন্য এক অনন্য সময়, কিন্তু এর রূপের মধ্যে যেমন রোমাঞ্চ রয়েছে, তেমনি আছে কিছু ঝুঁকি। উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সতর্কতা মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। নিরাপদ ভ্রমণ কেবল আনন্দদায়কই নয়, এটি দায়িত্বশীল ভ্রমণকারীর পরিচয়ও বহন করে।
সুতরাং, এই বর্ষায় প্রকৃতির টানে যদি বেরিয়ে পড়েন, তবে নিরাপত্তার কথাও যেন ভুলে না যান। স্মার্ট পরিকল্পনা আর সচেতনতার মাধ্যমে বর্ষাকালের ভ্রমণ হয়ে উঠুক উপভোগ্য ও ঝুঁকিমুক্ত।

রহস্যঘেরা জুগিরকান্দি মায়াবন: সিলেটের এক জলজ রূপকথা

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
রহস্যঘেরা জুগিরকান্দি মায়াবন: সিলেটের এক জলজ রূপকথা
জুগিরকান্দি মায়াবন বাংলাদেশের বৃহত্তম জলাবনগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট অঞ্চল শুধু চা-বাগান আর পাহাড়-নদীর জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানকার জলাবনগুলোও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অপার বিস্ময়। তেমনই একটি প্রাকৃতিক রত্ন হলো জুগিরকান্দি মায়াবন—যা স্থানীয়ভাবে শুধু ‘মায়াবন’ নামেই অধিক পরিচিত। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত এই বনটি প্রকৃতি আর রহস্যে মোড়া এক অনন্য জলাবন।
প্রায় এক হাজার একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত জুগিরকান্দি মায়াবন বাংলাদেশের বৃহত্তম জলাবনগুলোর মধ্যে অন্যতম। আয়তনে এটি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বড়, যদিও এখনও পর্যটকদের কাছে ততটা পরিচিত নয়। এই গহিন জলাবনে সারি-সারি হিজল, জাম, বরুণ, করচসহ বিভিন্ন জলপ্রিয় গাছ সারাবছরই দাঁড়িয়ে থাকে অথই জলের উপর। বনের উত্তর পাশে রয়েছে সারি ও পিয়াইন নদীর মিলনস্থল, যা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আরও সমৃদ্ধ করেছে।

কখন যাবেন?
বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) জুগিরকান্দি মায়াবন ঘুরে দেখার সবচেয়ে আদর্শ সময়। এ সময় বনজুড়ে পানি ভরে যায়, গাছগুলো অর্ধনিমজ্জিত হয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। তবে শীতকালেও (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) এই বনে যাওয়া যায়। তখন পানির পরিমাণ কম থাকলেও হাঁটতে কিংবা নৌকা ছাড়াও জায়গাটি উপভোগ করা যায়।

বন ও প্রাণবৈচিত্র্যের রাজ্য
মায়াবনের প্রকৃতি যেন কোনো রূপকথার কাহিনির মতো। সূর্যরশ্মি পাতার ফাঁক গলে জলে প্রতিফলিত হয়ে তৈরি করে এক মায়াবী পরিবেশ। পশ্চিমে রয়েছে হিদাইরখাল (সরকারি নথিপত্রে ‘বাউলিখাল’), যার তীরে অবস্থিত বনবিভাগের মালিকানাধীন দেশের অন্যতম বৃহৎ মূর্তা বাগান। বনটি বিভিন্ন পাখি ও বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। এখানে দেখা মেলে মাছরাঙা, বক, ডাহুক, ঘুঘু, দোয়েল, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ অসংখ্য পাখির। এছাড়া বানর, কাঠবিড়ালী, উদবিড়াল, মেছোবাঘ এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাপও এই বনের বাসিন্দা।

কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সিলেট বাসে যেতে চাইলে ফকিরাপুল, সায়দাবাদ বা মহাখালী থেকে গ্রীন লাইন, শ্যামলি, এনা, এস আলম বা সৌদিয়া পরিবহনের বাসে যাওয়া যায়। এসি বাসের ভাড়া আনুমানিক ১৫০০ টাকা এবং নন-এসি বাসের জন্য ৭০০ টাকা।
ট্রেনে যেতে চাইলে পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করে। ট্রেন ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১,৩৩৮ টাকার মধ্যে।
সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়ক ধরে ৩৭ কিলোমিটার দূরের বেখরা ব্রিজ পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে ছোট নৌকায় বেখরা খাল ধরে দেড় কিলোমিটার উত্তরে গেলেই মায়াবনের দেখা মিলবে।

কোথায় থাকবেন, কী খাবেন?
সিলেট শহরে রয়েছে নানা মানের হোটেল ও রিসোর্ট—যেমন হোটেল স্টার প্যাসিফিক, হোটেল হিলটাউন, হোটেল রোজ ভিউ ইত্যাদি। খাওয়ার জন্য শহরের রেস্টুরেন্টগুলোয় সাত রঙের চা, শুঁটকি ভর্তা, তাজা মাছের তরকারিসহ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠ টি কেবিনে সাত রঙের চা চেখে দেখা যেতে পারে।

জরুরি পরামর্শ
নৌকা ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
প্রকৃতি নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকুন।
আবর্জনা ফেলবেন না—বনের পরিবেশ রক্ষায় সচেতন থাকুন।
স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন, যাতে ভ্রমণ নিরাপদ ও তথ্যবহুল হয়।

শেষ কথা
জুগিরকান্দি মায়াবন এখনো পর্যটকদের ভিড়ে ঘন হয়ে ওঠেনি। তাই এখনই সময়, যখন নির্জনতা আর প্রকৃতির নিস্তব্ধতা একসাথে উপভোগ করা যায়। একটু সচেতনতা আর শ্রদ্ধাবোধ থাকলেই এ সৌন্দর্য দীর্ঘকাল ধরে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।